Breaking News

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি। পর্ব -০৩

এতো সুন্দর পুরুষালী কন্ঠ অনু কোনোদিন শুনে নি। তাই না চাইতেও অনু মাথা তুলে আদ্রের দিকে তাকালো। আদ্রকে দেখে অনু হা করে তাকিয়ে রইল। চোখ যেন আদ্রের দিক থেকে সরছেই না। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
–একটা ছেলে এতো সুন্দর কি করে হতে পারে? কি সুন্দর দেখতে! কি সুন্দর কন্ঠস্বর। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই। কিন্তু এই ছেলেটি খুব সুন্দর।
অনুর ভাবার মাঝেই সুমি আদ্রকে বলল,
–দেখ আদ্র এই মেয়েটা আমার সামান্য ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেছে। 
সত্যি খুব খারাপ লাগছে।

সুমির মুখে আদ্র নাম শুনে অনু অবাক হলো। মনে মনে অনু বলল,
–তারমানে এই ছেলেটাই আনোয়ার হোসেনের ছেলে আদ্র! ওয়াও কি সুন্দর দেখতে! 
কিন্তু ছেলেটা কেমন যেন রাগী। 
অবশ্য বিদেশে লেখাপড়া করেছে তার সবকিছু একটু বিদেশি ধরনেরই হবে।
আদ্র সুমিকে রাগী স্বরে বলল,
–তোর কি কোনো কমনসেন্স নেই সুমি? একটা বাচ্চা মেয়ে নিচে পড়ে আছে।
কোথায় তুই মেয়েটিকে উঠতে হেল্প করবি তা না করে তোর বাকি 
বন্ধুদের সাথে মেয়েটির মাটিতে পড়া নিয়ে মজা নিচ্ছিস?
সুমি আদ্রকে অবাক হয়ে বলল,
–তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন আদ্র? মেয়েটিকে তো আমি ইচ্ছে করে ফেলি নি। 
ভুলবশত ধাক্কা লেগেছে।

সুমির পাশ থেকে রিনি আদ্রকে বলল,
–সুমিকে আর বকিস না আদ্র। আমার মনে হয় এই মেয়েটা ইচ্ছে করে নিচে পড়ে গেছে।
আদ্র রিনিকে রেগে গিয়ে বলল,
–ইচ্ছে করে কেউ কখনো পড়ে না। যেখানে তোর বান্ধবী সুমি নিজেই বলেছে সে ধাক্কা দিয়েছে। 
আচ্ছা রিনি তুই তো মেয়েটিকে হাত বাড়িয়ে উঠাতে পারতি। তাহলে তুই কেন উঠালি না?
আদ্রের কথা শুনে রিনি মাথানিচু করে চুপ করে রইল। অনুর দিকে আদ্র তাকালেই দেখতে পেল অনু আদ্রের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্র মনে মনে বলল,
–এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটা কি দেখছে?
ওহ হ্যা তাকাতেই পারে। এমনিতেই তো মেয়েদের জ্বালাতনে আমি অসহ্য হয়ে গেছি।
আদ্র অনুর সামনে দাঁড়িয়ে ডান হাত বাড়িয়ে বলল,
–এই মেয়ে আমার হাত ধরো। এইভাবে আর কতক্ষণ মাটিতে বসে থাকবে?
অনু আদ্রকে মন খারাপ করে বলল,
–আমার পায়ে ব্যথা পেয়েছি। উঠতে পারবো না।
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–আমার হাতটা ধরে উঠার চেষ্টা করো।
অনু কোনোদিন কোনো ছেলের হাত ধরে নি। এখন আবার আদ্র হাত বাড়িয়ে রেখেছে। না ধরলে তো খারাপ ভাববে। তাই অনু কাঁপা হাতে আদ্রের হাত ধরলো। আদ্র অনুর হাত শক্ত করে চেপে ধরেই অনুকে টেনে তুলে ফেললো। এতো জোরে টান দেওয়াতে অনু পা পিছলে আদ্রের বুকের উপর পড়লো। অনু ভয়ে ভয়ে আদ্রের দিকে তাকালেই দেখতে পেল বেশ গম্ভীর দৃষ্টিতে আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রের কাছ থেকে অনু তাড়াতাড়ি দূরে সরে গেল। অনু বুকের ধুকপুকটা অনেক বেড়ে গেছে। অনু ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগল। আদ্রের বন্ধু শুভ এসব দেখে আদ্রকে হেসে বলল,
–কিরে বন্ধু এখন তো মনে হচ্ছে সরাসরি বাংলা সিনেমা দেখছি। হেব্বি মজা লাগছে রে।
আদ্র শুভকে বিরক্ত হয়ে বলল,

–এসব ফান করা ভালো লাগে না শুভ। এই টপিক অফ কর। সব বিষয় মজা করা ভালো না।
আদ্রের কথায় শুভ চুপ করে গেল। 
সুমি, রিনি সেখান থেকে মন খারাপ করে ড্রইংরুমে চলে গেল। 
সুমি যেতে যেতেই মনে মনে বলল,
–কোথাকার ফালতু মেয়ের জন্য আদ্র আমাকে বকা দিল। 
এই মেয়েকে যদি আমি হাতের নাগালে পাই তাহলে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
শুভও তাদের সাথে চলে গেল। আশেপাশে আদ্রের আরও বন্ধু আর কিছু মেহমান ছিল তারাও সেখান থেকে চলে গেল। এখন শুধু মেইন দরজার সামনে অনু এবং আদ্র দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র অনুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনু আদ্রের দিকে তাকালেই তা বুঝতে পেরে ঘাবড়ে গেল। অনু মনে মনে বলল,
–উনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? এখন আমার কি কিছু বলা উচিত? কি বলবো? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। থাক কিছু বলা লাগবে না। আমি এখান থেকে যাই। আম্মু আব্বু কোথায় আছে খুঁজি গিয়ে। এখানে থেকে আমার কাজ নেই।

অনু আদ্রের সামনে থেকে চলে যেতে নিলে আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–এই মেয়ে দাঁড়াও।
আদ্র অনুকে এতো রাগী স্বরে দাঁড়াতে বলায় অনু ভয় পেয়ে গেল। অনুর বুকের ভিতরটা কাঁপতে লাগল। অনু পেছন ফিরে আদ্রকে ভয় পাওয়া স্বরে বলল,
–কিছু বলবেন ভাইয়া?
অনুর ভাইয়া ডাকটা হয়তো আদ্রের পছন্দ হলো না। তাই আদ্র কপাল কুঁচকে অনুকে বলল,
–হোয়াট? কি বললে তুমি? আমাকে ভাইয়া বললে কেন?এই মেয়ে আমি তোমার কোন জন্মের ভাই হই? আমি না তোমার ভাই আর না তোমার কাজিন। সো আমাকে একদম ভাইয়া বলে ডাকবে না।
অনু আমতা আমতা করে আদ্রকে বলল,
–তাহলে আপনাকে কি বলে ডাকবো?
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–আমার একটা নাম আছে ওকে? আমার নাম আদ্র। তাই তুমি আমাকে আদ্র বলে ডাকবে।
অনু হতাশ গলায় আদ্রকে বলল,
–আপনি বয়সে আমার অনেক বড় হবেন। আমি আপনাকে আদ্র বলে ডাকতে পারবো না।
আদ্র অনুর কথায় শান্ত স্বরে বলল,
–ওকে ফাইন। আমাকে তুমি কি বলে ডাকবে তুমিই তাহলে ভেবে বলো?
অনু আদ্রের কথায় অনেকক্ষণ ভাবলো। আসলেই আদ্রকে কি বলে ডাকা যায়? অনেকক্ষণ ভেবে অনু হাসিমুখে আদ্রকে বলল,

–যেহেতু আপনার ভাইয়া ডাকটা পছন্দ নয়। আর আমিও আপনাকে শুধু নাম ধরে ডাকতে পারবো না। তাই আপনাকে আমি দুইটা ডাক নাম মিলিয়ে আদ্র ভাইয়া বলবো। আপনি আর না করবেন না।
অনুর কথা শুনে আদ্র হাসতে লাগল। অনু আদ্রের হাসি দেখে মনে মনে বলল,
–ওয়াও আদ্র ভাইয়া কি সুন্দর হাসে। হাসিটাও এতো সুন্দর কেন?
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
–ঠিক আছে তুমি আমাকে আদ্র ভাইয়া বলতে পারো।
অনু মুচকি হেসে আদ্রকে বলল,
–হুম আদ্র ভাইয়া।

অনু আর আদ্রের কথার মাঝেই আরমান রহমান এসে অনুকে বিচলিত হয়ে বলল,
–কিরে অনু মা তুই এতো ভীরের মাঝে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি? আর তোর মা তোকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না। আমিও তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এলাম।
অনু আরমান রহমানকে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
–আব্বু আমি বাসার ভিতরেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলাম।
আদ্র ভাইয়াই তো আমাকে টেনে তুলতে সাহায্য করেছে।
আরমান রহমান অনুর কথা শুনে একটু অবাক হলো। তারপর আদ্রকে আরমান রহমান বলল,
–আদ্র বাবা তোমাকে অনু ভীষণ জ্বালিয়ে তাই না? আমার মেয়েটা বুঝতে পারে নি। অনু কোনো ভুল করে থাকলে কিছু মনে করো না।

আদ্র আরমান রহমানকে শান্ত স্বরে বলল,
–না আংকেল আমি কিছু মনে করে নি। আর অনুও আমাকে একটুও জ্বালায় নি।
এরই মাঝে আনোয়ার হোসেন এসে আদ্রকে বলল,
–আদ্র তুমি এখানে? চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। কেক কাটতে হবে তো।
আদ্র আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–হ্যা বাবা আমি আসছি।
আনোয়ার হোসেন এতক্ষণ আরমান রহমানকে পাশ ফিরে খেয়াল করে নি। আরমান রহমানকে দেখে খুশি আনোয়ার হোসেন বলল,
–বন্ধু তুমিও এখানে? তোমাকেও তো আমি খুঁজছিলাম।
চলো ভিতরে চলো।
আরমান রহমান হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–হ্যা বন্ধু চলো।

আনোয়ার হোসেন আরমান রহমানকে হঠাৎ মন খারাপ করে হতাশ গলায় বলল,
–তোমাকে বলেছিলাম ভাবি আর তোমার মেয়ে অনুকে নিয়ে আসতে। তুমি নিয়ে আসলে না?
আরমান রহমান হাসতে হাসতে বলল,
–কি বলছো তুমি বন্ধু? তুমি আমাকে বলেছো আর আমি শুনবো না? তোমার ভাবি আর আমার মেয়ে অনুকে আমি সাথে নিয়েই এসেছি। তোমার ভাবি ড্রইংরুমের ভীরের মাঝে বসে অনুকে না পেয়ে চিন্তা করছিল। আমি অনুকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসি। তারপর আরমান রহমান অনুর দিকে তাকিয়ে আনোয়ার হোসনকে বলল,
–এই যে আমার মেয়ে অনু।

আনোয়ার হোসেন অনুকে দেখে আরমান রহমানকে হাসিমুখে বলল,
–বন্ধু তোমার মেয়ে অনু তো খুব মিষ্টি দেখতে হয়েছে।
তারপর আরমান রহমান অনুকে বলল,
–কেমন আছো অনু মামনী?
অনু মুচকি হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–জ্বি আংকেল আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আরমান রহমান অনুকে বলল,
–আমিও ভালো আছি মামনী।
আদ্র এবার দেয়ালে ঠেস দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
–আপনারা সবাই কি এখানেই দাঁড়িয়ে গল্প করবেন নাকি ভিতরেও যাবেন?
আমার কেক কাঁটার সময়টাও চলে যাবে হয়তো।
অনু আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়েই পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করল। তারপর সিগারেটে আগুন ধরিয়ে খেতে লাগল।

অনু সিগারেটের ধোঁয়ায় কাশতে লাগল। আনোয়ার হোসেন আদ্রের এই কাজ দেখে বিরক্ত হলো। আরমান রহমান আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–আদ্র বাবা তুমি সিগারেট খাও?
আদ্র সিগারেট খেতে খেতেই বলল,
–হ্যা আংকেল। সিগারেট জিনিসটা ভালো না। তবুও খেতে ভালোই লাগে।
আরমান রহমান একটু অবাক হলো। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার আগে যখন আরমান রহমান আদ্রকে দেখেছিল তখন আদ্র খুব শান্ত এবং ভদ্র ছিল। এখন আদ্র কেমন যেন হয়ে গেছে। আনোয়ার হোসেন আরমান রহমানকে বলল,
–বন্ধু তুমি অনু মামনীকে নিয়ে ড্রইংরুমে যাও। অনুর হয়তো অসুবিধা হচ্ছে।
আরমান রহমান আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–ঠিক আছে বন্ধু।

অনু আরমান রহমানকে কাশতে কাশতে বলল,
–আব্বু এখানে অনেক ধোঁয়া। আমি ভিতরে গেলাম।
অনু ড্রইংরুমে চলে গেল। আরমান রহমানও মেয়ের পেছন পেছন চলে গেলেন। আরমান রহমান অবাক হয়ে মনে মনে বলল,
–আদ্র এতোটা বদলে গেল!
আদ্র সিগারেট খেতে খেতে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–কি হলো বাবা তুমিও যাও? আমি আসছি তোমাকে তো বললাম।
আনোয়ার হোসেন বিরক্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
–আমার বন্ধু ও তার মেয়ের সামনে এভাবে অভদ্রের মতো সিগারেট না খেলে তোমার হতো না?
আদ্র আনোয়ার হোসেনকে শান্ত স্বরে বলল,
–আমি অভদ্রের মতো সিগারেট খেলেও কি আর না খেলেও কি? কিছুই যায় আসে না বাবা।
আনোয়ার হোসেন মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–তোমাকে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠানোই আমার ভুল ছিল। তুমি এমন উশৃংখল হবে জানলে কখনও তোমাকে সুইজারল্যান্ড যেতে দিতাম না।

আদ্র হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–এখন আফসোস করে লাভ নেই বাবা। আমার সব বন্ধুরা সিগারেট খায়। আর আমি খেলেই দোষ? বিদেশে যাওয়ার আগেই আমি এমন ছিলাম। তুমি হয়তো কখনো খেয়াল করো নি।
আনোয়ার হোসেন আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–তোমার সাথে কথা বাড়ানোই বৃথা। সবাই তোমার কেক কাঁটার জন্য অপেক্ষা করছে। ড্রইংরুমে আসো।

আনোয়ার হোসেন সেখান থেকে চলে গেলেন। আদ্র সিগারেট খাওয়া শেষ করে সিগারেটের অংশটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেললো। আদ্র চোখের সামনে অনুর মুখটা বার বার ভাসতে লাগল। আদ্র চোখ বন্ধ করেও অনুর ভয় পাওয়া মুখটা দেখতে পেল। আদ্র হাত মুঠো করে বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,
–এই অনুর চেহারা বার বার আমার চোখের সামনে ভাসছে কেন? আমি চাইছি না অনুর কথা ভাবতে। তবুও কেন আমার মস্তিস্কে অনু আসছে? হোয়াই?

আদ্র ড্রইংরুমে যাওয়ার আগে মাটিতে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখল। হাঁটু গেড়ে বসে আদ্র দেখল একটা ওড়নার পাথরের ক্লিপ। আদ্র পাথরের ক্লিপটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল এটা কার হতে পারে? অনুর নাতো? নিজের অজান্তেই আদ্র পকেটে পাথরের ক্লিপটা নিল।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com