রক্তাক্ত লাশ । পর্ব -০২

ওসিঃ তার মানে সে তোমাকে ভালোবাসেই নাই। তো নিজে স্ট্যাব্লিশ হয়ে তাকে দেখাবে না? যে তুমিই তার জন্য বেটার অপশন ছিলা?
আমিঃ দেখুন স্যার আপনি আমাকে যতই বুঝান না কেন আমি আমার ডিসিশন থেকে এক পা ও পিছু হাটব না। এ জীবন আর চাইনা আমার।
ওসিঃ সুইসাইড করবা ডিসিশন চূড়ান্ত। আচ্ছা তোমার প্রেমের গল্প টা শুনতে পারি?
মুচকি হাসি দিলাম।
আমিঃ স্যার মজা করছেন কেন? আমি মজার মধ্যেই নাই। প্রতিদিন কি কি ফেইস করতে হয় তা শুধু আমিই জানি।

ওসিঃ আচ্ছা। আমি জিগাসা করেছি কে তোমাকে বেশি ভালোবাসে? উত্তর দিছ তোমার আম্মু। জিগাসা করেছিলাম হোস্টেলে থাকতে সবথেকে বেশি খবর কে নিত। উত্তর দাও নি, তবে মুচকি হেসে বুঝিয়ে দিয়েছ তোমার আব্বু! তুমি সুইসাইড করতে চাও কারন তুমি কিছু করোনা বলে তোমার আব্বু তোমার আম্মুর সাথে প্রায়ই ঝগড়া বাধে। তাতে বুঝাই যাচ্ছে তোমার আম্মু সবসময় তোমার দিকে। আচ্ছা তোমার বয়স তো কম হলেও ২৫/২৬? তুমি কিছু করো না। 

তুমি জানো কি? সব বাবা মা তার ছেলে বা মেয়েকে এই বয়সে স্ট্যাব্লিশ দেখতে চায়। তোমার আব্বু তোমাকে কিছু করতে বলছে তাতে খারাপ কিছু তো দেখিনা। হোস্টেলে যখন থাকতে প্রতিদিন সকাল বিকাল খোজ খবর রাখত তোমার এই বাবাই। ছোট বেলায় কোনো কিছু চাইলে না করে নিশ্চয়ই যেভাবেই হোক তোমাকে এনে দিত। সুতরাং এখন তোমার জবের জন্য তোমাকে তাড়া দিচ্ছে তার মানে এই না যে সে তোমাকে ভালোবাসে না।

হাবিলদারঃ দেখো ভাই বয়স তো বেশিনা। আজ না হোক কাল হবে একদিন সফল হবেই। শুধু নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে সব বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে। আর বাড়ির আশে পাশের চাচা রা। আসলে ওনাদের জ্বলে বুঝছ? তাই নিজের ছেলের সাথে অন্যের ছেলে দের compare করতে চায়। আর এসব করতে গিয়া যে নিজেরাই নিজেদের সম্মান হানি করে তা তারা বুঝেনা।

ওসিঃ বাসায় বাবা মা ভাই বোন আছে। একবার তাদের চিন্তা করিও। দুনিয়া একটা পরিক্ষার মঞ্চ। পরিক্ষা ঠিক ঠাক দিতে পারলে বাকি সময় আরামে যাবে। আর হ্যা সো কলড গার্লফ্রেন্ড গুনতে নেই। যে যেখানে ভালো থাকে তাকে সেখানে ভালো থাকতে দাও। হাবিলদার ওরে বাসার সামনে নামাই দিয়া আসো।

হাবিলদারঃ কিন্তু স্যার ও তো কিছু বলছেনা। যদি সত্যি সত্যিই করে ফেলে সুইসাইড
ওসিঃ করলে করবে আমরা আর কি করতে পারব বলো। তবে যদি নিজের মাকে ভালোবেসে থাকে এইসব করবে না। আর দেরি করোনা রাত প্রায় দুটো বাজে ওরে বাসায় পৌছে দাও বাসায় নিশ্চয়ই চিন্তা করছে।
আমি তখনও হ্যাং হয়ে আছি। কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। কথাগুলো শুধু কানে দিয়ে ডুকল। তবে নিজের সিদ্ধান্ত কি নিব তা ঠিক করতে পারছিলাম না।
হাবিলদার আমাকে গাড়ি দিয়ে নামিয়ে দিয়ে গেল বাসার সামনে।
কলিং বেল চাপতেই আম্মু দরজা খুলল।
আম্মুঃ এতক্ষন কোথায় ছিলি? কতরাত হইছে দেখেছিস
কথা না বলে হাটতে লাগলাম।

নিজের রুমে সোজা চলে গেলাম।
কিছুক্ষন পরেই শুরু হলো আব্বুর চিল্লা চিল্লি।
আব্বুঃ এই তোমার জন্যই ওর আজকে এত অবনতি। তোমার ছেলে নেশাটেশা করা শুরু করছে। দেখেছ ওর চেহারা টা। কোনোদিন তো ভালো রেজাল্ট করতেই পারেনাই।
আম্মুঃ আহা চুপ করোনা। ভাল্লাগেনা প্রতিদিন এক কাহিনি।
আব্বুঃ তোমার ছেলেকে বুঝাইতে পারো না। চাকরি বাকরি ঠিক করে নিতে। তাহলেই তো হয়। বাপের টাকায় আর কত খাবে?
কতক্ষন চিল্লাইয়া তারপর থামল।
আমি রুমে বসে আছি।
না সুইসাইড আমার করতেই হবে। এত অপমান সহ্য করতে পারছিনা। নিজের বাবাই যদি অপমান করে তাহলে বাহিরের মানুষ আর করবেনা কেন?
এমন সময়েই আম্মু খাবার নিয়ে আসল,,
আম্মুঃ আবার রেগে বসে আছিস? তুই জানিস ওনি বকবে এত দেরি কেন করলি?
আমিঃ তুমি তো জানোই না আজকে কেন আর কোনোদিনই ফিরতাম না যদি পুলিশ না আসত। ( মনে মনে)
আম্মুঃ আচ্ছা বাদ দে। খেয়ে নে।
আমিঃ খাব না।
আম্মুঃ উমম। আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি হা কর।
ইচ্ছে না থাকলেও খেলাম।

আমিঃ আম্মু আব্বু আমাকে দেখতে পারে না তাই না?
আম্মুঃ দূর কি বলিস। ওনি তো চাচ্ছে তুই যাতে নিজে কিছু করিস। এত বড় ছেলে এভাবে ঘরে বসে থাকলে কেমন দেখায় বল।
আমিঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো?
আম্মু এসে কপালে চুমু দিল।
আম্মুঃ নে এবার ঘুমিয়ে পড়।
আম্মু চলে গেল।
শুয়ে পড়লাম। কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। আম্মুর চেহারা টা বলছে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে। পরক্ষনেই আবার যখন আব্বুর আচরণ, প্রতিবেশি চাচাদের কথা বার্তা। নিজের চাকরি না পাওয়ার কথা ভাবি ইচ্ছে করছে মরে যাই। তাহলেই শান্তি। রোজ রোজ এত অশান্তি অসহ্যকর।
বর্তমান,
বাসায় আসতেই দেখি ছোট ভাই কে আব্বু বকতেছে। বকাগুলো এমন,,
আব্বুঃ পড়াশোনা করবা না। কি করবা? বড় ভাইয়ের মত হতে চাও? আকাইম্মার ঢেকি।
আমিঃ সবসময় আমার নাম না নিলে পেটে ভাত হজম হয়না তোমার তাই না?
আব্বুঃ কি বললি তুই কি বললি?

আমিঃ কি বলছি শুনোনাই। বকতেছ ওরে আমার নাম কেন নাও?
এমন সময় আম্মু আসল।
আম্মুঃ আরিয়ান কি করছিস চুপ একদম।
আর কিছু না বলে সোজা রুমে চলে গেলাম। দরজা বন্ধ করে দিলাম। ওদিকে আবার আমাকে বকা হচ্ছে। একরকম আব্বু আমার বদলে আম্মুকেই বকতেছে।
সিদ্ধান্ত নিলাম কয়েকদিনের জন্য বন্ধুর সাথে থাকব।
তো সে জন্যই বাসা থেকে জামা কাপড় গুছিয়ে চলে গেলাম শাওনের বাসায়। ফ্লাটে শাওন আর তুষার একাই থাকে। ওরা চাকরি করে।
শাওনঃ কিরে কাপড় গুছিয়ে চলে এসেছিস? আবার বাসায় ঝামেলা লাগাইছিস? কতবার বলছি একটা কিছু কর
আমিঃ ভাষন দিস না। চুপ করে থাক। থাকতে দিবি কিনা বল
তুষারঃ আরে রাগিস না। আয় ভিতরে আয়।
বিকালের দিকে,,
শাওনঃ চল

আমিঃকোথায়?
শাওনঃ আসবি তো। গেলেই দেখতে পারবি।
আমিঃ আচ্ছা চল।
শাওন আর আমি রেষ্টুরেন্টে বসে আছি। কিছুক্ষন পর দুটো মেয়ে আসল। শাওন দেখতেই দাঁড়িয়ে ওয়েলকাম জানাল।
বুঝলাম এখানে ও ওদের সাথেই দেখা করতে এসেছে। মেয়ে দুটোই অসম্ভব সুন্দরি।
শাওনঃ দোস্ত নিপার নাম শুনেছিসই। ও হচ্ছে নিপা। আর তুমি তো আমার ক্লোজ বন্ধু আরিয়ান এর নাম শুনেছ। ওই হচ্ছে আরিয়ান।
নিপাঃ Nice to meet you vaiya.. ও হ্যা ও হচ্ছে তাশফি। আমার ফুফাতো বোন।
আমি কিছু বললাম না। ওর গার্লফ্রেন্ড ওই কথা বলুক। এমনিতেই মেয়েদের এখন একদম দেখতে পারিনা। সবাই স্বার্থপর।
শাওনঃ কিরে কিছু বলছিস না যে? Any problem?
আমিঃ না আমি ঠিক আছি। তোরা কথা বল আমি একটু আসছি
উঠে চলে আসলাম ওয়াশরুমে। মুখে পানি দিতে লাগলাম। নেহার কথা মনে পড়তেছিল।
যাক ফ্রেশ হয়ে টেবিলে গিয়ে বসলাম।
শাওনঃ চলো একটু হাটাহাটি করব।

পার্কে গেলাম।
শাওন তার গার্লফ্রেন্ড নিপার সাথে হাটছে। অন্যদিকে আমি আনমনে হাটছি। এমন সময়,
তাশফিঃ আচ্ছা আপনি কি এমনি?
আমিঃ মানে?
তাশফিঃ মানে এই যে সেই কখন থেকে আমাদের সাথে আছেন। কিন্তু কোনো কথাই বলছেন না। any problem?
আমিঃ না আমি ঠিক আছি। আইসক্রিম খাবেন?
তাশফিঃ হ্যা খাওয়া যায়।
দুটো আইসক্রিম নিলাম। একটা তাশফি কে দিলাম। অন্যটা আমি খেতে লাগলাম।
তাশফিঃ আপনি তো দেখছি খুবই রোমান্টিক। এক ঝাটকায় আইসক্রিম।
আমি হাসি দিলাম।

তাশফিঃ আচ্ছা আপনি কি করেন?
এক মুহুর্তেই মাথায় রাগ উঠে গেল। এই একটা প্রশ্ন শুনতে শুনতে কান পচে গেল। আর নিতে পারছিনা। ইচ্ছে করছে কানের নিচে তিনটা দিয়া বলি। আমি কি করি না করি তা দিয়ে তোর কি কাজ? তোকে আমি খাওয়াব নাকি পড়াব?
রাগ কন্ট্রোল করে রাখলাম। আর উত্তর ও দিলাম না।
তাশফিঃ কি হলো উত্তর দিলেন না তো
কিছু বলতে যাব তখনি শাওন,,
শাওনঃ আরে ওদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তোরা পরিচিত হয়েছিস তো?
দুজন হাসি দিলাম।
নিপা আর তাশফি চলে গেল।
শাওনঃ কিরে মেয়েটা কেমন?
আমিঃ কচুর মত
শাওনঃ আমি নিপার কথা বলেছি
আমিঃ ভালো। করতে থাক। তবে উপদেশ রইল যদি পারিস বিয়েটা করে নে। মেয়েদের বিশ্বাস করা আর কচু গাছে ফাসি দেওয়া একই কথা।

শাওনঃ ধ্যাত তুইও না। চল বাসায় যাব।
রাতে শুয়ে আছি। মোবাইল টিপছিলাম। ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। তখনি একটা মেসেজ রিকুয়েস্ট আসল। লিখা,
=> এই যে মিস্টার
আমিঃ কে?
=> রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করুন।
আমিঃ জ্বী করলাম।
=> আমাকে চিনেন নি? আমি তাশফি
আমিঃ কে কোন তাশফি?
তাশফিঃ বিকালে ওই যে নিপা শাওন ভাইয়া আর আমি
আমিঃ ও আচ্ছা। তা কি মনে করে?
তাশফিঃ এমনিই। চেনা পরিচিতি থাকা ভালো।
আমিঃ ধন্যবাদ।

চলবে…
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url