Breaking News

কাছে থেকেও সে অচেনা । পর্বঃ ৩৯

কোবরা প্রিন্সের কথা শুনে হো হো করে হেসে বলেন,তুই এখন বেঁচে ফিরলে তো আমায় মারার কথা ভাববি?
আজ আমার হাতে তোর মৃত্যু নিশ্চিত কথাটা বলে প্রিন্সের দিকে পিস্তল তাক করে সুট করতে নেয়।
রনি প্রিন্সের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,তা শেষ বারের মতো ছেলে এবং ভাইকে দেখার ইচ্ছে আছে?
যদি তাদের জীবতো অবস্থায় দেখতে চাস তো পিস্তল নামা।
বসের দিকে পিস্তল তাক করতে তোর হাত কাঁপেনি?
আমি তো তোর সাহস‌ দেখে অবাক হচ্ছি।
রনির কথাটা শুনে কোবরা বলেন, এই তুই আমাকে থ্রেট দিস?
এই কোবরা কে!
প্রিন্সের চেলা হয়ে লিডার সাজতে আসিস না।
তাহলে মারা পারবি।
.
এমনিতেই সাহস বেশি দেখিয়ে ফেলেছিস।
রনি কোবরার কথা শুনে বললো,আমি বসের চলা হয় আর যায় হয় না কেন?
এতে তোর সমস্যা কি?
তুই তোর ছেলে ও ভাইয়ের চিন্তা কর।
রনির কথা শুনে কোবরা রেগে বলেন,আমাকে উল্টাপাল্টা কথা বলে বোঁকা বানাতে এসেছিস হারামজাদা।
তা তুই কি জানিস, আমাকে তুই করে বলার জন্য তোকে এই মুহূর্তে মাথার খুলি উড়িয়ে দিতে পারি তা কি জানিস?
তোর প্রিন্স বাপ ও কিন্তু তোকে বাঁচাতে পারবে না।
প্রিন্স কোবরার কথা শুনে বললেন, কুত্তার বাচ্চা ওর খুলি উড়িয়ে দেওয়ার আগে তোর এবং তোর পরিবারের কী হবে একবার ভেবে দেখেছিস?
আর রনি তোকে বোঁকা বানাতে যাবে কেন?
তুই যে রাম ছাগল তা তো সবাই জানেয়।
তোর ভাগ্যে ভালো যে রনি তোকে শুধু তুই বলেছে গালি দেয়নি জানোয়ার।
আমার তো এই মুহূর্তে তোকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু না এতো সহজে তোর মৃত্যু হতে পারে না।
.
তোর মতো অসভ্য জানোয়ারের সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না!
রনি আমার ভাই,এই প্রিন্স মাহমুদের ছোট ভাই তাকে গালি দেওয়ার সাহস হয় কি করে?
প্রিন্সের কথা শুনে কোবরা মুচকি হেসে বললো, বাহবা বাহ্ সাধারণ পিএসের জন্য কতো দরদ !
প্রিন্স তোর পিএস রনি যে যে তোর ভাই সেটা আমায় বলে ভালোয় করেছিস।
কারণ এখন তোর সো কল্ট ভাইকে তোর সামনে তাকে কুকুরের মতো মাররো।
আর তোকে…
কোবরার কথা শেষ করায় সময় পেল না তার আগেই প্রিন্স হিংস্র বাঘের মতো গর্জে উঠে বললো,তুই এই প্রিন্সের ভাইকে মারবি কুত্তার বাচ্চা?
তোকে তো বলেয়, কোবরার দিকে তেড়ে গিয়ে মেহেক কে কোলের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরে রাখে যাতে পরে না যায়।
.
গায়ের সব শক্তি দিয়ে কোবরাকে লাথি মারে।
কোবরা ভাবতে পারেনি বৌকে কোলে নিয়েয় প্রিন্স ওকে লাথি দিবে।
তাইতো কোবরা প্রিন্সের লাথি খেয়ে পিস্তলসহ ছিটকে দূরে পড়ে যায়।
কোবরা হঠাৎ আক্রমণ সামলাতে না পেরে ওর হাতে থেকে পিস্তল পড়ে গেছে।
রনি সাথে সাথে তা তুলে নিয়ে কোবরার দিকে তাক করে রেখে বলে,কি কোবরা তুই তো দেখছি আমার বসের সামান্য লাথি সহ্য করতে পারলি না।
ছিঃ ছিঃ এই শক্তি নিয়ে বসের সাথে লড়াইয়ে নেমেছিস ভাবতেয় তো আমার লজ্জা হচ্ছে।
এই শক্তি নিয়ে বুঝি নতুন নতুন মেয়েদের কাছে যাস?
আমারতো সন্দেহ হচ্ছে তুই আসলেয় পুরুষ কিনা?
প্রিন্স রনির দিকে তাকিয়ে বললো, রনি অযথা এখানে সময় নষ্ট করছো।
ওকে তোমার মোবাইলে থাকা বিদেশি যে নতুন ছবি আছে না সেই ছবির ট্রেইলার দেখাও!
প্রিন্সের কথা শুনে রনি পকেটে থেকে মোবাইল বের করে কিছু একটা বের করে কোবরার চোখের সামনে ধরে।
কোবরা ভিডিওটি দেখে বলতে লাগলো ,না এ হতে পারে না।
তোরা আমার সাথে চালাকি করছিস?
.
কোবরার কথা শুনে প্রিন্স রনিকে কিছু ইশারা করতেই রনি অন্য পকেটে থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে কাউকে ফোন দিয়ে বললো, ওদের কেমন খাতির যত্ন হচ্ছে একটু দেখি তো কথাটা বলে কোবরার সামনে এসে ফোনটা রনির হাতে রেখে কোবরাকে বলে,দেখ তো চেনা যায় কিনা?
কোবরা সেদিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে!
দুই জন লোক তার ভাইকে ইচ্ছে মতো মারছে আর তার ছেলেকেও ছাড় দিচ্ছে না ।
ওরা চিৎকার করে বাঁচাও,বাঁচাও , হেল্প হেল্প বলছে ।
ওদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসছে না।
আর ভিডিও কলে রনি ওকে সরাসরি তা দেখাচ্ছ।
কোবরা ভেবে পাচ্ছে না ওখানে কি হচ্ছে!
প্রিন্সের ভয়ে তো সে তার ছেলে ও ভাইকে বিদেশে পাঠিয়েছে।
যাতে প্রিন্স ওদের ক্ষতি করতে না পারে।
কোবরা প্রিন্সের থেকে বয়সে অনেক সিনিয়র হলেও এই লাইনে প্রিন্স ওর সিনিয়র।
তা জানে কোবরা।
ওর থেকে ছোট হওয়ার পরেও প্রিন্সের স্বভাব ও শক্তি যে ওর থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে সে সম্পর্কে কোবরা ভালো করেই জানতো।
.
সেজন্যয় ছেলে ও ভাইকে আত্মগোপনে থাকতে বিদেশে পাঠিয়েছে।
কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো না।
এখন ছেলে ও ভাইকে ওর কবল থেকে বাঁচাবে কেমনে!
কথাটা ভেবে কোবরা প্রিন্সকে বলে,দেখ তোর সাথে আমার শত্রুতা কিন্তু ওদের না।
ওদের ছেড়ে দে।
ওরা তোর সাথে কিছু করেনি।
তোর লোকদের ওদের এভাবে মারতে নিষেধ কর।
এভাবে মারলে ওরা বাঁচবে না।
প্রিন্স মুচকি হেসে কোবরা কে বলে,তোর সাথেও তো মেহেকের কোনো শত্রুতা ছিল না।
তবুও আমার সন্তান সম্ভবনা স্ত্রীকে বন্দি করে কষ্ট দিয়েছিস।
তোর লোকেরা ওর এমন অবস্থা করেছে যে আমার স্ত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
আমার সন্তানকে পৃথিবীতে আসার আগেই শেষ করে দিয়েছিস।
তারপরও তুই আমার সামনে এখনো অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিস ভাগ্য।
আমার সন্তানকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি
তাই তোর ভাই ও ছেলেকে আমি ছাড়বো না।
প্রিন্সের কথা শুনে কোবরা আঁতকে উঠে !
উঠবে না কেন?
.
প্রিন্স এট কি বললো?
ওর স্ত্রী সন্তান সম্ভবনা ছিল ?
তার মানে তখন ওর ধাক্কা খেয়ে মেয়েটার ব্লিডিং হয়েছে এজন্যয়।
আর ও ভেবেছে এটা মেয়েলি ব্যাপার।
এখন তো প্রিন্সের কথা শুনে ওর জান যায় যায় অবস্থা।
কারণ প্রিন্স যদি একবার জানতে পারে কোবরার জন্য ওর সন্তান মারা গেছে তাহলে ওকে শেষে করে ফেলবে।
নিজে না বাঁচলে সন্তান ও ভাইকে বাঁচাবে কেমনে?
তাছাড়া আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
এতো তাড়াতাড়ি কোবরা মরতে চায় না।
এখানে থাকলে নির্ঘাত মৃত্যু হবে।
কথাটা ভেবে কোবরা কোনো রকম উঠে দাঁড়িয়ে রনির চোখে ধূলো ছুড়ে পালিয়ে যেতে নিলে রনি দৌড়ে ওকে ধরতে যেতে নেয়।
তা দেখে প্রিন্স বলে,রনি ওকে যেতে দাও।
আমাদের এখন দ্রুত মেহেককে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।
এছাড়া এক সপ্তাহ ওকে বাঁচার শেষ চেষ্টা করতে দাও।
আমিও দেখতে চায় কোবরা আমার হাত থেকে ওর ছেলে ও ভাইকে মুক্ত করতে পারে কিনা?
এবং এক সপ্তাহ ওকে মুক্তির স্বাধ পেতে দাও রনি।
কথাটা বলে প্রিন্স মেহেককে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রনি আজ অন্য এক প্রিন্সকে দেখছে।
আগের প্রিন্স হলে কোবরা কে এখনেই গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিতো।
ওদিকে,
রনি তো আর জানে না প্রিন্সের মাথায় কি চলছে।
প্রিন্স এক মাস তন্ন তন্ন করে মেহেককে খুঁজেছে।
কোবরার জন্য এক মাস ওর ঘুম , খাওয়া দাওয়া সব চলে গেছে।
এই এক মাস কতটা মানসিক কষ্ট পেয়েছে তা কাউকে বুঝাতে পারবে না।
আর যে লোকটা ওকে এমন কষ্ট দিয়েছে তাকে এতো সহজে মৃত্যু তো প্রিন্স দিবে না।
অবশ্য প্রিন্স ওকে মারার আগে ওর বেঁচে থাকার আশায় শেষ করে দিবে।
এই এক সপ্তাহ ওর ঘুম, নাওয়া খাওয়া হারাম হয়ে যাবে।
নিজেকে বাঁচাতে একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে যখন নিরাশ হবে তখন প্রিন্স ওকে আটক করবে।
তা তো রনি জানে না।
দুইদিন পর
মেহেকের গতকাল রাতে জ্ঞান ফিরেছে।
হসপিটালে ভর্তি করার পর ডাক্তাররা ভেবেছিল মেহেককে বাঁচাতে পারবে না।
কারণ প্রেশেন্টের মানে মেহেকের অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়েছে।
প্রিন্সকে বলেছিলেন , আপনার রুগীকে আপনি শেষ বারের মত দেখে নিন।
কিন্তু প্রিন্স ডাক্তারের কথা শুনে রেগে ডাক্তারকে বলেছেন, তাহলে আপনি আপনার পরিবারের সাথে শেষ বার কথা বলে নিন।
কারণ মেহেক যে মুহূর্তে মারা যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে আপনাকে আমি উপরে পাঠিয়ে দিবো।
ডাঃ ইজাজ প্রিন্সের কথা শুনে বলল,ভাই মাথা ঠান্ডা রাখুন । ভাবীর কিছুই হবে না।
আর আপা আমি জানি আপনি পারবেন ভাবীকে সুস্থ্য করতে।
সে বিশ্বাসেয় আপনাকে ভাবীর চিকিৎসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
হসপিটালের সবাই জানে আপনার ছোঁয়ায় ও চিকিৎসায় যে কোনো রুগী সুস্থ হয়ে যায়।
তাহলে আপনি প্রথমেই হার মানার কথা বলছেন কেন?
আপনি আপনার সবটা দিয়ে একটু চেষ্টা করে দেখুন।
ডাঃ ইজাজের কথা শুনে,
ডাক্তার আপা তার জান জীবন দিয়ে মেহেককে বাঁচাতে চেষ্টা করে।
মেহেকের শরীরে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে।
তারপরেও মেহেকের জ্ঞান ফিরেছে না।
তা দেখে প্রিন্স মুনকে এখানে নিয়ে আসে।
প্রিন্স জানে মুনকে মেহেক কতটা ভালোবাসে।
মুনের ডাক মেহেক উপেক্ষা করতে পারবে না।
হয়েছেও তাই মুন এখানে এসে বোনকে এমন অবস্থায় দেখে মেহেকের বুকের উপর মাথা রেখে বোনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
আল্লাহর রহমত ছিল তাইতো মেহেক হয়তো বোনের ছোঁয়া পেয়ে জ্ঞান ফিরে আসে।
মুনকে চোখের সামনে দেখে মেহেক ঢুকরে কেঁদে উঠলো।
তা দেখে মুন ওর বোনকে কাঁদতে নিষেধ করেছে চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।
মেহেকের হাতে স্যালাইন লাগানো ছিল তা খেয়াল না করে মুনকে জড়িয়ে ধরে।
তাতে স্যালাইনের নল দিয়ে রক্ত উঠে যায়।
তা দেখে প্রিন্স মুনকে সতর্ক করে।
মেহেকর কাছে থেকে মুনকে একটু দুরত্ব বজায় রাখতে বলছেন।
মেহেক প্রিন্সের কথা শুনে সেদিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে!
মানুষটাকে এমন দেখা যাচ্ছে কেন?
আর ওকে এখানে প্রিন্স এনেছে?
তাছাড়া প্রিন্স ওর খোঁজ পেলো কোথায়?
কথাটা ভাবতেই মেহেকের সেদিন রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায়।
মনে পড়ে যায় বাচ্চাটার কথা।
মেহেক তা ভেবে ভয়ে প্রিন্সের দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নেয়।
মেহেকের মনে একদিকে সন্তান হারানোর কষ্ট অন্যদিকে ভয়।
ওর ভুলের শাস্তি ওদের বাচ্চটা পেয়েছে।
পৃথিবীতে আসার আগেই আল্লাহর মেহমান হয়ে গেছে কিন্তু প্রিন্স তা মানতে পারবে?
নাকি ওর ভুলের জন্য ভয়ানক শাস্তি পেতে হবে বা চরম মূল্য দিতে হবে।
মেহেক যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে প্রিন্স মুনকে বলে, এঞ্জেল কিছুক্ষণ এখানে থাকো আমি তোমার বোনের ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে কথা বলে এসে তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।
মুন প্রিন্সের কথা শুনে বলে,ভাইয়া আজকে আমি আপুর কাছে থাকি না?
প্রিন্স মুনের কথা শুনে বললেন, এঞ্জেল এখানে থাকার হলে আমার সাথে নিশ্চয় তোমাকে বাড়িতে যেতে বলতাম না?
তাছাড়া তোমার বোন যতদিন সুস্থ্য না হয় সে ক’দিন তুমি সোনালীর হেফাজতে থাকবে।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে দুই একদিনের মধ্যেই তোমার বোনকে বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
তোমার আর এখানে আসার দরকার নেয়।
মুন প্রিন্সের কথা শুনে বলল, ভাইয়া?
প্রিন্স বলে, এঞ্জেল এখন কি তুমি আমার অবাধ্য হতে চাও?
মুন প্রিন্সের কথা শুনে বললো,না না ভাইয়া।
তুমি রেগো না আমি সোনালী আপুর কাছেয় থাকবো।
এদিকে মেহেক সোনালী নাম শুনে চমকে উঠে!
আচ্ছা সোনালীটা আবার কে?
প্রিন্সের জীবনে অন্য কেও আছে বা এসেছে।
কথাটা ভেবে মেহেকের কষ্ট হচ্ছে।
তাহলে প্রিন্স কি ওকে আর ভালোবাসবে না।
এজন্যেয় কি ওকে মুনের বোন বলেছে,বৌ,মেহেক বা পরী বললো না।
তাছাড়া কেবিনের মধ্যে যতক্ষণ ছিল একবারও মেহেকের দিকে তাকায়নি।
আচ্ছা মানুষটা এমন নীরব হয়ে গেছে কেন?
নাকি এটা বড় কোন ঝড়ের পূর্বাভাস?
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com