Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৫০



ওদিকে চৌধুরী বাড়িতে কেমন যেনো একটা নিরবতা ছেঁয়ে গেছে।
আলমাস চৌধুরী গতকাল রাত থেকে ঘুমাতে পারেনি।
সেদিকে কারো খেয়াল নেয়।
যে যার মতো করে সময় পার করছে।
লিলি বিষয়টি কয়েকবার খেয়াল করেছে তার স্বামী সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়েছে।
কিন্তু লিলি রাগে কিছু বলেনি।
কারণ সাজ্জাদের বৌ এই বাড়িতে আসার পর থেকে আলমাস কখনো তার পক্ষ নেয়নি বরং সবসময় সাজ্জাদের বৌ রেবার কথা বিশ্বাস করে।
তার সাথে ঝগড়া করেছে।
তাকে যা নয় তায় বলেছে।
যেনো তাদের ছেলের বৌ, ধোয়া তুলসী পাতা ।
আর সে জঘন্য অপরাধী যার কাজ বৌকে কষ্ট দেওয়া।
যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
স্বামী এসব আচরণ তার মোটেও পছন্দ হতো না।
এজন্য আজকাল স্বামীর সাথে তার দুরত্ব বেড়ে গেছে।
তাহলে আজকে কোথায় তার সেই আদরের ছেলের বৌ?
আমি তার খোঁজ কেনো নিবো কেন?
আমি তো দজ্জাল মহিলা।
লিলি ভাবে এক সময় সে টাকা পয়সা ক্ষমতা ছাড়া কিছুই বুঝতে চায়নি ।
কিন্তু রেবা এই বাড়িতে আসার পর থেকে লিলি হারে হারে টের পেয়েছে , এক জীবনে শিখার শেষ নেয়।
কারণ যে টাকা পয়সা ও ক্ষমতার জন্য মৌরি, রেশমা ও বড় বোন সমতূল্যে জাল শৈলীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।
তাদের দিনের পর দিন কষ্ট দিয়েছে।
যে জবাকে ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো দেখেছে।
সেই মেয়েকে নিজের স্বার্থে চরিত্রহীন বলতে দ্বিধা করেননি।
টাকার মোহে পড়ে ভাসুর ননাশ কারো সাথেই একটু ভালো ব্যাবহার করেননি।
বরং তার নিজের আচরণের কথা মনে হলে নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
তবে আল্লাহ্ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।
তাইতো একদিন ওদের সাথে যা করেছে এখন নিজের সাথে তাই হচ্ছে।
বলতে গেলে তার থেকে বেশি হচ্ছে।
লিলি মনে করে আজকে তার এই অবস্থার জন্য তার লোভ লালসায় দায়ী।
তার জীবনে শেষ ভাগে এসে বুঝতে পারছে,টাকা পয়সা ও ক্ষমতা সব নয়।
আজকে তারেই পাপের জন্য সাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে।
লিলি এতদিন জানতো না যে ,
তার ছেলে সাদ মৌরির বোনকে ভালোবাসে।
হঠাৎ করে ছবি না দেখলে তো কখনো বিশ্বাস হতো না।
এইতো সেদিন সাদের আলমিরা খুলতে গিয়ে রেশমা ছবি পান লিলি।
ছবি দেখে বোঝায় যাচ্ছে রেশমার অজান্তেই ছবিটি তুলা হয়েছে।
লিলি ছবি দেখে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলে তার ছেলের হঠাৎ করে পরিবর্তন হওয়া , নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেওয়া ।
একে একে সব সূত্র মিলে যায়।
ছেলে তার এই মেয়ের জন্য দেবদাস হয়ে আছে কথাটা ভাবতেই রাগ চেপে যায় মাথায়।
অপেক্ষা করে সাদের বাসায় আসার জন্য।
আর সেদিন সাদ বাসায় এলে লিলি তার উপরে চড়াও হয়।
কেন সাদ সামান্য একটা মেয়ের জন্য জীবন নষ্ট করছে।
এর থেকেও ভালো মেয়ে সাদ ডিজার্ব করে।
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে সাদ সেদিন চুপ থাকতে পারেনি।
সাদ মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, হ্যাঁ রেশমা কে আমি ভালোবাসি।
যতদিন বেঁচে থাকবো ভালোবেসে যাবো।
আজকে তোমার এমন স্বভাবের জন্য আর বিশেষ করে তোমাদের সন্তান হওয়ার জন্য রেশমাকে হারিয়েছি।
আর তুমি কি বললে রেশমার থেকে ভালো মেয়ে আনবে আমার জন্য তাহলে শুনে রাখো, আমার রেশমার থেকে ভালো মেয়ে আর পাবেই না।
আনবে কি করে?
আরে আমি তো ওর জন্য তোমাদের কেও ছাড়তও রাজি ছিলাম ।
কিন্তু রেশমার সেটা পছন্দ হয়নি।
আমাকে স্বার্থপর বলেছে।
আর সে কোনো স্বার্থপর ছেলেকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।
আরে মা না কি সন্তানের কষ্ট বুঝতে পারে কিন্তু তুমি এমন মা যার জন্য আমার সারাজীবন বরবাদ হয়ে গেছে।
সেদিন সাদের কথা শুনে লিলি ক্ষেপে যায়।
কয়েকদিন ছেলের সাথে কথা বলেনি।
কিন্তু এরপর সাদ একদিন তার রুমে এসে বলে,মা সরি,
সেদিন তোমার সাথে এমন আচরন করা আমার উচিত হয়নি।
তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছো।
আমার জন্য দশমাস কতো কষ্ট করেছো আর আমি একটু কষ্ট পেয়ে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করেছি যা ভুল ছিল।
কারণ তোমার ভুলগুলো শুধরে না দিয়ে রাগারাগী করা আমার উচিত হয়নি।
সেদিন লিলি সাদের কথা শুনে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।
সাদ নিজেও মাকে জড়িয়ে ধরে।
মায়ের রুমে থেকে যাওয়ার আগে সাদ শুধু মাকে বলে,মা আমাদের সবার ভুলে,মৌরি ভাবী ও রেশমার মতো মেয়েকে হারিয়েছি।
তুমি টাকা পয়সা ও ক্ষমতা এক সাইডে রেখে ঠান্ডা মাথায় কথাটা ভেবো তাহলে বুঝতে পারবে আমার কথা মিথ্যা নয়।
তারপর থেকে লিলি এটা নিয়ে ভেবে দেখো।
তার পর সাজ্জাদের বৌ রেবা এই বাড়িতে এলে বুঝতে পারে টাকা পয়সা সব নয়।
আর আসলেই তার জন্য আজকে সাদের জীবন নষ্ট হওয়ার পথে।
লিলি নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত।
এটা নিয়ে সবসময় হীনম্মন্যতায় ভোগে।
সে থেকে লিলি কেমন অনুভূতিহীন হয়ে গেছে।
নাহলে তার পাশে থাকা স্বামী নামের মানুষটার অস্থিরতা সহ্য করছে কেমনে?
যেখানে কিছুদিন আগে স্বামীর একটু অসুস্থ্য বোধ করলে বা প্রেসার ফল করলে সব রেখে তার জন্য অস্থির হয়ে যেত।
আর আজ?
অন্যদিকে আলমাসের কিছু ভালো লাগছে না।
কারণ ছোট ছেলেটা গতকাল থেকে বাসায় আসেনি।
সে নিয়ে কারো কোনো চিন্তা নেয়।
লিলি তার উপরে রেগে ছেলের বিষয়ে জানতে চায়নি।
আর এমনকি সাজ্জাদের বৌ রেবাও নিজের স্বামী নিয়ে চিন্তিত না।
খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমাচ্ছে।
আর তার স্বামী যে নিরুদ্দেশ সে খবর আছে?
এদিকে সে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে শানের কথা ভেবে,
যে জন্য স্থির থাকতে পারছে না।
আলমাস চৌধুরী নিরুপায় হয়ে লোকটাকে মৌরির ইনফরমেশন দিয়েছে।
নাহলে কখনো এমন কাজ করতো না।
সে তো জানে শান মৌরির এবং তার ছেলেকে কি পরিমান ভালোবাসে।
কিন্তু তার হাত পা যে বাঁধা ছিল।
তাছাড়া লোকগুলোর বলেছে তারা মৌরিকে তেমন কিছু করবে না।
যাষ্ট একটু ভয় দেখাবে,
আদৌও তারা সে কথা রাখবে কী না তা বলা মুশকিল।
এই জীবনে হয়তো আরেকটি অন্যায় সে করে ফেললো।
নিজের অপকর্মের জন্য ছেলে সমতূল্যে ভাতিজার সাথে কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না।
কথাটা মনে হলে কষ্টে বুকের ভিতরে অস্থির লাগছে।
তারমধ্যে ছোট ছেলে এখনও ফিরছে না।
এদিকে
মৌরির জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে।
শান মৌরির জ্ঞান ফিরেছে শুনে ওর সাথে দেখা করতে আইসিইউর ভিতরে যেতে চায় ।
কিন্তু ডাঃ তাকে ভিতরে যেতে নিষেধ করেন।
তাদের কথা হচ্ছে , মাত্র জ্ঞান ফিরেছে।
এখন কোন চাপ বা কথা তার শরীর নাও নিতে পারে।তাই আজকে রাত পর্যন্ত মৌরিকে অবজারভেশন করে সব যদি ভালো থাকে তাহলে ভোরের দিকে কেবিনে দেওয়া হবে।
তখন শান দেখা করতে পারবে।
শান মৌরির সাথে দেখা করতে না পেরে আইসিইউর বাহিরে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে।
তবে মৌরির জ্ঞান ফিরেছে শুনে শান মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া আদায় করেছে।
অন্যদিকে
রিফাতদের দার্জিলিং থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ভোর হবে।
আজকে দুপুর পর্যন্ত রিফাত মৌরিকে ফোন করে গেছে।
কিন্তু পায়নি।
মৌরিকে ফোনে পেয়ে রিফাতের মৌরির জন্য চিন্তা হচ্ছিল।
হঠাৎ করে মনে পড়ে শান যেহেতু মৌরির এনজিওতে কাজ করছে তাহলে মৌরির খবর বার্তা শানের কাছে থেকে নিলেই তো হয়।
এতক্ষন কেন এই কথাটা মাথায় এলো না।
শানের কথা মনে হওয়ার সাথে সাথে শানকে ফোন করে ।
সে সময়ে শান কথা বলার অবস্থায় ছিল না।
শানের ফোন সাদের কাছে ছিল।
সাদ আননোন নাম্বার দেখে একবার ফোন কেটে দেয়।
কিন্তু আবারও ফোন এলে রিসিভ করে।
রিফাত শানের ফোন সাদের কাছে কেন তা জানতে চায় ?
সাদ তখন রিফাত কে মৌরির এক্সিডেন্ট হয়েছে তা জানায়।
এও জানায় মৌরির অবস্থা এই মুহূর্তে আশঙ্কাজনক।
ডাঃ কিছু বলতে পারছে।
মৌরির অবস্থা দেখে শান ভাইয়ের হৃদয় ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে।
রিফাত সে মুহূর্তে সাদের মুখে মৌরির কথাটা শুনা মাত্র ওখানেই বসে পড়ে।
রিফাতের হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। তার ভালোবাসার মানুষটি কষ্টে আছে কথাটা জানতে পেরে।
এজন্য দুই দিন ধরে তার মন এতো অস্থির হয়ে ছিল।
কিন্তু সে এই অস্থিরতা কারণ বুঝতে পারেনি।
তার হৃদয়ের রানী ওখানে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে
আর সে কিনা এখানে বসে আছে!
এই মুহূর্তে তার মৌরির কাছে থাকা বেশি দরকার।
শুধুমাত্র মেহরাবের কথা ভেবে এতদিন নিজেকে মৌরির কাছে থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
তাই বলে মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলবে ভাবলেই দমবন্ধ হয়ে আসছে।
রিফাতের ধাতস্থ হতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো।
ধাতস্থ হয়ে রোহানকে মৌরির কথা জানায় এবং এ কথা আপাতত রেশমা ও মেহরাব জানাতে নিষেধ করে।
আর যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে বলে।
রোহান ভাইয়ের মুখে কথাটা শুনে চমকে উঠে।
তাহলে এজন্য রেশমা ছটফট করছিল।
রোহান বুঝতে পারে রেশমার হৃদয়ে তার বোনের জন্য কতটা টান আছে।
বোনের অসুস্থতার খবর রেশমার মন আরও আগেই টের পেয়ে গেছে।
ভাইয়ের কথা মতো রোহান তখনেই টিকেট কাটতে যায় কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় দুপুরে টিকেট পায়নি ‌।
তাইতো আসতে ভোর হবে।
অন্যদিকে শান আইসিইউর বাহিরে থেকে কাঁচের মধ্যে দিয়ে মৌরিকে,,,
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com