Breaking News

ভালোবাসি তাই । পর্ব -১১

এংগেজমেন্টের পর কেটে গেছে আরও তিনটা দিন।
এ কদিনে ইরাম ভাইয়া আমার সাথে নানান কথাই বলার জন্য কল দিয়েছেন।
কিন্তু আমি প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলি নাই। আসলে আমার কথা বলতেই ভালো লাগে না।
হুমম যদি ইরাম ভাইয়ার জায়গায় সায়ন ভাইয়া হতেন তাহলে অন্য কথা ছিল।
আমি বোধহয় কখনোই ইরাম ভাইয়ার সাথে এডজাস্ট করতে পারবো না।
আমি কি তবে ইরাম ভাইয়ার সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে ভুল করেছি?
এখন তো ওনার জীবনটাও নষ্ট হবে । ওনি তো আমাকে পছন্দ করেন।
কিন্তু আমার মনে তো ওনার জন্য তেমন কিছুই নাই।
থাক সবার খুশীর জন্যই তো রাজি হয়েছি এ বিয়েতে।
ওনার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে ওনাকে সব খুলে বলবো তাতে যদি ওনি আমাকে বোঝেন ভালো কথা।
না বুঝলে আমিও ওনার সাথে সংসার করতে বাধ্য নই।।
সকাল থেকেই মন -মেজাজ ভালো নেই।
ইরাম ভাইয়ার আম্মু কল করে বলেছেন ওনাদের বাসায় যেতে। কি সব গয়না – গাটি আমাকে পরিয়ে দেখবেন
কোনটা ভালো লাগে। আমার এসব গয়না -গাটির প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নাই।
ঐ বাসায় যাওয়ার কথা শুনেই আমার মন -মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু এ কথা তো আর সবাইকে বলা যায় না। তাই চুপচাপ ভাবছিলাম কি করবো? যাবো নাকি যাবো না?
.
না গেলে ভদ্র মহিলা আমাকে বেয়াদপ ভাববেন। তার থেকে ভালো যাই।
কিছুক্ষণ ঘুরে আসি। মনটাও ফ্রেশ হবে। সারাকে ফোন করে বললাম আসার জন্য।
বিয়ের আগে একা একা শ্বশুড়বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে না তাই আম্মুই বলেছে সারাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।।
.
বিকেলের দিকে সারা আর আমি ইরাম ভাইয়াদের বাসার উদ্দ্যেশে বেরিয়ে পরলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছেও গেলাম। ওনাদের বাসা আমাদের বাসা থেকে এক ঘন্টার পথ।
সারা এমনভাবে কথাবার্তা বলছে মনে হয় যেন এ জায়গাটা আমাদের কত কাছের যত্তসব।
নতুন জায়গায় আসলে মানুষ চুপচাপ থাকে কিন্তু সারাকে দেখে মনে হচ্ছে
আগেও এই জায়গায় আমরা বহুবার এসেছি। খুব চেনা – জানা জায়গা এটা। সারার এই এক স্বভাব।
.
আমার খুব বিরক্ত লাগছে।ইরাম ভাইয়া যদি বাসায় থাকেন তাহলে আমার খুব অস্বস্থি হবে এখানে থাকতে। সারা কলিংবেলে চাপ দিল। আন্টি হাসিমুখে দরজাটা খুললেন।
ভদ্রমহিলাকে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমাদের দুজনকে নিয়ে ওনি ড্রয়িংরুমে সোফায় বসালেন।
আমাদের সামনে নানান ধরণের নাস্তা নিয়ে এলেন আন্টি।
কিন্তু আমি লজ্জায় -অস্বস্থিতে কিছুই মুখে তুলতে পারছিলাম না। আর সারা খেয়েই যাচ্ছে খেয়েই যাচ্ছে।
মেয়েটার লজ্জা -শরম বলতে বোধহয় কিছুই নেই।
সারা বুঝতে পারছে আমি তার উপরে খুব রেগে যাচ্ছি তারপরও এরকম করছে।
আন্টির সাথে এমনভাবে কথা বলছে যেন আন্টি সারার শতজনমের চেনা।
আমার সারার এই ব্যবহারে রাগ লাগলেও আন্টির সামনে কিছুই বলতে পারছিলাম না।
ইরাম ভাইয়া সম্ভবত বাসায় নেই। সেজন্য আমি একটু ফ্রী ভাবে বসে আছি।
ওনি থাকলে আমায় খুবই অস্বস্থিতে পড়তে হতো।।
.
আন্টি কখন থেকে আমাকে গয়না পরাচ্ছেন। এটা পরিয়ে দেখছেন কেমন লাগে? সেটা পরিয়ে দেখছেন কেমন লাগে? আর আমার বেস্টু নামের হারামী তো আছেই। আন্টিকে এটা পরাতে বলছে ওটা পরাতে বলছে। ইচ্ছে করছে সারার দু- গালে দুইটা থাপ্পড় দেই। মেজাজ আমার ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সারা ঠিক বুঝতে পারছে আমার অস্বস্থি লাগছে তাই জন্যই আরো বেশি এরকম করছে। আমাকে আরো বেশি অস্বস্থিতে ফেলার জন্য। আমি চিন্তায় আছি কখন ইরাম ভাইয়া বাসায় চলে আসেন সেটা ভেবে। ওনার সাথে এংগেজমেন্ট হওয়ার পর থেকেই ওনার সামনে আসতে আমার কেমন জানি অস্বস্থি লাগে। তাই আমি তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার চিন্তা করছি। কিন্তু সারার কারণে সেটা হচ্ছে না। সারাই দেরি করাচ্ছে আন্টিকে।আন্টিও কেমন জানি সারার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আমি যদি আন্টির জায়গায় থাকতাম এতক্ষণে সারার গালে দুইটা থাপ্পড় পড়ে যেত। সারা হঠাৎ বলে উঠলো,
.
– আন্টি এই ঝুমকোটা পরিয়ে দেখুন না কেমন লাগে? এই ঝুমকোটা খুব সুন্দর না?
– হ্যাঁ ঠিক বলেছো। এই ঝুমকোটা তো দেখিনি এতক্ষণ। কিন্তু এর আগে দুইটা ঝুমকো তো পছন্দ করেছি।
– সমস্যা কি আপনার একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা এক জোড়া ঝুমকো বেশি হলে সমস্যা কি?
আন্টি সারার এমন কথা শুনে কেমন চুপ করে গেলেন। যেন হঠাৎ করেই কোনো চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমার এবার ইচ্ছে করছে সারার চুলগুলো ছিঁড়ে দেই। কি দরকার ছিল একজোড়া ঝুমকো বেশি নেওয়ার কথা বলার। নিশ্চয়ই আন্টি এখন ভাবছে মেয়েটা কত বড় অভদ্র। কিন্তু আমার ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে আন্টি মুচকি হেসে বললেন,
– হুমম সারা ঠিক বলেছো তিন জোড়া ঝুমকোই নেব। তবে একটা কথা তুমি ভুল বললে মালিহা আমার একমাত্র ছেলের বউ না।
সারা আর আমি আন্টির কথায় অনেকটাই অবাক হলাম। আমরা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সারা কি মনে হতে বলে উঠলো,
– মালিহা আপনার একমাত্র ছেলের বউ না তার মানে কি ইরাম ভাইয়া আগেও একটা বিয়ে করেছে?
আমি সারার এমন হ্যাবলার মত প্রশ্ন শুনে নিজেই হ্যাবলা হয়ে গেলাম। বলে কি মেয়েটা? এর মাথায় কি খোদা বুদ্ধি বলতে কিছুই দেয়নি? আন্টি সারার এমন কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন।
– তুমি যে কি বলো না সারা? ইরাম বিয়ে করতে যাবে কেন? মালিহা আমার একমাত্র ছেলের বউ না মানে ইরাম আমার একমাত্র ছেলে না। আমার আরও একটা ছেলে আছে।
.
আন্টির উত্তর শুনে আমি খুবই অবাক হলাম। আমি আজ পর্যন্ত জানতাম না যে ইরাম ভাইয়ার কোনো ভাই আছে। আমি জানতাম ওনি একজনই। ওনার কোনো ভাইকে তো আমি আজ পর্যন্ত দেখলামই না। অবশ্য ওনার ব্যপারে আগে কখনো এভাবে গবেষণাও করি নাই। সারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফিস ফিস করে বলল,
– শোন না তোর যে দেবর আছে তার সাথে আমার একটু লাইন করে দে না। তুই ভাব তোর দেবরের সাথে যদি আমার লাইন হয়ে যায় আমি আর তুই এক বাড়িতেই থাকবো। কত মজা হবে ভেবেছিস। তোকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগবে না। আমি জানি তোরও ভালো লাগবে না। সেজন্য বলছি আইডিয়াটা ভালো না?
– আর যদি সেটা দেবর না হয়ে ভাসুর হয় তবে?
– আরে না দেবরই হবে। না হলে তো তোর জা কে দেখতি তাই না। আমি বলছি তোর দেবরই আছে।
– হুমম হয়েছে এখন চুপ কর। আন্টি শুনতে পাবে।
– আচ্ছা।
আমরা বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে যাবো তখনি কলিংবেলটা বেজে উঠলো। আমি বুঝে গেছিলাম যে ইরাম ভাইয়া চলে এসেছে। ভেবেছিলাম ইরাম ভাইয়া আসার আগেই চলে যাবো সেটা আর হলো না। বিধাতা বোধহয় চায়নি আমি একটু স্বস্থিতে থাকি। তাই ইরাম ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মানে হচ্ছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। আন্টি দরজা খুলে হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। ওনার পেছন পেছন ইরাম ভাইয়াও আসলেন। আমার বড়ই অস্বস্থি লাগছিলো। তাই নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। ইরাম ভাইয়া বোধহয় সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। ওনি সারার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের রুমে চলে গেলেন। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু বিধাতার বোধহয় তাতেও শান্তি হলো না। আন্টি হঠাৎ করে বলে উঠলেন,
– মালিহা মা তুমি তো আজই আমাদের বাসায় প্রথম এলে আমাদের বাড়িটা ঘুরে দেখো না। বিয়ের পর যে রুমে থাকবে সে রুমটাও দেখে আসো। ইরাম তো রুমেই আছে যাও দেখে আসো তোমার রুমটা।
আমি না বলবো তখনি সারা বলে উঠলো,
– হ্যাঁ যা যা আমি এখানেই আন্টির সাথে গল্প করছি। তুই দেখে আয়।
যত খুশি টাইম নেয় কোনো সমস্যা নেই আমি তোর জন্য সারাজীবন এখানে
বসেই অপেক্ষা করতে পারবো নো প্রবলেম।
রাগে আমার গা জ্বলে যেতে লাগলো। কিন্তু সেটা দেখাতে পারলাম না।
এখন মনে হচ্ছে এই সারাকে সাথে করে নিয়ে এসেই ভুল করেছি। সুযোগ পেয়ে
যে সারা আমাকে এতবড় গোল খাওয়াবে সেটা আমি বুঝতেই পারিনি।
আমি রাগে গজ গজ করতে করতে সিঁড়ির কাছে গেলাম। সারার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম,
– আমারও সময় আসবে চিন্তা করিস না।
সারা আমার কথা বুঝতে পেরে একটা শয়তানী হাসি দিয়ে ইশারায় বলল,
– সময়েরটা সময়েই দেখা যাবে।
আমি আর কিছু না বলে অস্বস্থি নিয়েই ইরাম ভাইয়ার রুমের দিকে এগুতে লাগলাম। আমার এখন ইচ্ছে করছে উড়ে বাসায় চলে যাই। কিন্তু কপাল খারাপ বিধাতা আমাকে উড়ার মত ডানা দেয়নি।

চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com