Breaking News

ভালোবাসি তাই । পর্ব -১৯

আজ তিনদিন পর সারা কোথা থেকে উদয় হলো।আজ সারা হসপিটালে আমাকে দেখতে এসেছে।আসার পর থেকেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনসারা কোনো বড়সড় অপরাধ করেছে।
– কিরে এতদিন পর আমাকে দেখার কথা মনে হয়েছেতোর? কোথায় ছিলি?

সারা কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিল।আমি হ্যাবলার মত বসে আছি। কিছুই বুঝতে পারছিনা সারার আবার কি হলো। সারা আমাকে এভাবে ধরেরেখেই বলতে লাগলো,
– তুই আমাকে ক্ষমা করে দে মালিহা। আমার জন্যইআজ তোর এ অবস্থা। আমি যদি সেদিন তোর সাথেযেতাম তাহলে তোর কিছুই হতো না। সব দোষ আমার।আমার তোকে একা যেতে দেওয়া উচিত হয়নি। তাইতো এ কদিন তোর সামনেও অপরাধবোধের কারণেআসতে পারিনি।

আমি সারার কথায় তাজ্জব বনে গেলাম। বলে কিমেয়েটা? শেষপর্যন্ত কিনা আমার এ অবস্থার জন্য ওনিজেকে দায়ী করে বসে আছে? বিধাতা তুমি কি এরমাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি বলতে কিছুই দাও নি? আরে বাবাআমি তো এক্সিডেন্ট করেছি নিজের অসতর্কতারকারণে। আর ও কিনা ভেবে বসে আছে যে ওর কারণেআমি এক্সিডেন্ট করেছি?

– আচ্ছা সারা তোর মাথায় কি বিধাতা বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুইদেননি?
সারা এবার আমায় ছেড়ে নাক টানতে টানতে বলল,
– তুই একথা কেন বলছিস হুমম?
– আমার তো মনে হয় তোর মাথায় বুদ্ধি বলতে কিছুইনেই। যদি থাকতো তাহলে আমার এক্সিডেন্টের জন্যনিজেকে দায়ী করতি না।

– আমি কি ভুল কিছু বলেছি হ্যাঁ?
– পুরোটাই ভুল বলেছিস। আমার এক্সিডেন্ট তোরকারণে না আমার নিজের অসর্তকতার কারণে হয়েছেবুঝেছিস? দয়া করে নিজেকে এর জন্য দায়ী করা বন্ধকর।
– হুমম সে ঠিকাছে। কিন্তু ইরাম ভাইয়া তোকে কেনডেকেছে? এখন তো ইরাম ভাইয়া যেন উধাও হয়েগেছেন। তোর এ অবস্থা ওনি কি শুনতে পাননি?

– জানি না। ওনি আজ পর্যন্ত আমার সামনেইআসেননি। কিন্তু ওনার আম্মু আমাকে দেখতেএসেছিল। ওনি বললেন বিয়ের দিন থেকেই ইরামভাইয়া উধাও হয়ে গেছেন। আন্টি এটাই জানেন না যেইরাম ভাইয়া কোথায় আছে?
– আচ্ছা তোর এই এক্সিডেন্টের সাথে ইরাম ভাইয়ারকোনো হাত নেই তো?
– সারা কি বলছিস তুই এসব? ইরাম ভাইয়া এরম কেনকরতে যাবে। আর আমার তো পার্ক থেকে অনেকটাদূরেই এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখানে ইরাম ভাইয়ার কোনোহাত নেই। অন্তত পক্ষে আমি এটাই মনে করি।

– হুমম সেসব তো বুঝলাম। কিন্তু ইরাম ভাইয়া গেলেনকোথায়?
– কি জানি আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।আচ্ছাআমাকে হসপিটালে কে নিয়ে এসেছে। মানে আমি তোরাস্তায় পরেছিলাম।

– ঐদিন তুই যখন একঘন্টা পরেও বাসায় ফিরেআসলি না আমার তখন খুব চিন্তা হতে লাগলো।.
মারিয়া আপুও বারবার তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল।
আমি না পারতে মারিয়া আপুকে সবটা খুলে বললাম।তখন আপুরও চিন্তা হতে লাগলো।
একপর্যায়ে আমরা দুজনেই বেরিয়ে পরলাম তোকে খোঁজার জন্য। তুইতো ফোনটাও ভুলে রেখে গেছিলি।

আমরা হাঁটতেহাঁটতে কিছুদূর যেতেই রাস্তার মধ্যে দেখলাম মানুষজড়ো হয়ে আছে।
ওখানে গিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেসকরতেই মানুষজন বললো একটা মেয়ে এক্সিডেন্টকরেছে।
বোধহয় ওর আজকে বিয়ে ছিল। বধূবেশেসেজে ছিল।
আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম এটাতুই। আমি ওনাদের তোর কথা
জিজ্ঞেস করতেইওনারা বলল তোকে নাকি হসপিটালে পাঠিয়ে দেওয়াহয়েছে।
তারপর আমি আর আপু সবাইকে কল করেহসপিটালে আসতে বললাম। আমরাও হসপিটালেচলে এলাম।

সারা রাত তোর জ্ঞান ছিল না।সকালবেলা আমি বাসায় চলে গেছিলাম।
খুব কষ্টহচ্ছিলো তোকে এভাবে দেখতে। বারবার মনে হচ্ছিলোআমিই এর জন্য দায়ী। দুপুরের পর তোর জ্ঞানফিরলো। এরপর তো তুই সবটাই জানিস। ডাক্তারবলেছিল তোকে ঠিক সময়
আনার কারণে বড় কোনোক্ষতি হয়নি। যদি আরও বেশি দেরি হতো তোর স্মৃতিশক্তিই নষ্ট হয়ে যেত।
আমি তো রাস্তার মানুষগুলোকেমনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিয়েছি যে তারা তোকেঠিক সময়ে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। না হলে যে কিহতো?
– হুমম বুঝলাম। কিন্তু তুই এটা নিয়ে নিজেকে দায়ীকরিস না প্লিজ।
– ওকে জানু।

আমাদের কথার মধ্যেই সায়ন ভাইয়া আসলেন। আজতিনদিন ধরেই তিনি আমার পেছনে ঘুরঘুর করছেন।আমি প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলি না ওনারসাথে। এখন এসে আবার হাজির হয়েছেন। সারাদিনআমার পেছনে আবার ঘুরঘুর শুরু করবেন। ওনিআমার পাশে এসে বসলেন। মুচকি হেসে জিজ্ঞেসকরলেন,
– কেমন আছিস?
– যেমন দেখছেন।
– তুই আমার সাথে এখন এভাবে কথা বলিস কেনমালিহা?
– ভালো লাগে না তাই। বুঝতে পারেন না সেটা আপনি?
– তোর ভালো লাগা না লাগার ধার আমি কখনোই ধারিনা। সেটা তুই ভালো করেই জানিস।
– হুমম জানি। আপনার এখানে কি কাজ?একটু পরআমাকে রিলিজ দিয়ে দিবে। আমি বাড়ি চলে যাবো।
– তো কি হয়েছে? আমি কি তোদের বাড়ি না ছিনিনাকি? আমিই তোকে নিয়ে যাবো।
– নাহ আমি আপনার সাথে কিছুতেই যাবো না। ভাইয়াআসছে আমাকে নিতে।
– কি ব্যাপার বলতো আজ কদিন ধরে খেয়াল করছিতুই আমাকে এড়িয়ে যেতে পারলেই যেন বাঁচিস?
– হুমম এড়িয়ে যেতেই তো চাই। আপনি বুঝতে পারেননা সেটা?
– তুই আমাকে আর ভালোবাসিস না মালিহা?
– না বাসি না। যান এখান থেকে।
– তুই বললি আর আমি শুনলাম।

এটা বলেই সায়ন ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল।সারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখে আমার দিকে অবাকচোখে তাকিয়ে রইলো। আমি ওর মুখটা দেখে একটাহাসি দিলাম।
– তুই সায়ন ভাইয়ার সাথে এরকম ব্যবহার করলি কেনমালিহা আমি তো বুঝলাম না। আর সায়ন ভাইয়াএকটুও রাগলো না কেন?
– এবার বুঝুক আমার সাথে যে এরকম করতো আমারকেমন লাগতো। আমাকে বলছে আমাকে নাকিভালোবাসেন ওনি। ভালোবাসাটা যে কত কষ্টের এটাআমি এবার ওনাকে প্রতিনিয়ত বুঝাবো। আমার সাড়েতিনবছরের কষ্ট আমি ওনাকে হাড়ে হাড়ে বুঝাবো।এতসহজে আর ওনি আমার ভালোবাসা পাবে না।

– গুড আইডিয়া মালিহা। অভিনয় করে যা যে তুইওনার উপর খুব বিরক্ত। ঠিক ওনি এতদিন ধরে যাকরে গেছেন তা এবার ওনাকে ফিরিয়ে দে।
– হুমম সেটাই তো করছি।
ডাক্তার আমার মাথার ব্যান্ডেজটা খুলে ড্রেসিং করেআবার ব্যান্ডেজ করে দিলেন। ভাইয়া, সায়ন ভাইয়াআর সারা আছে হসপিটালে। ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেইসায়ন ভাইয়া এসে আমার হাত ধরলেন। ভাইয়া আরসারা মুচকি মুচকি হাসছে ওনার কান্ড দেখে। আমিবিরক্ত মুখে ওনার দিকে তাকালাম। ওনি মুচকি হেসেআমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ওনার হাত ধরেবেড থেকে নেমে ওনার হাতটা ছেড়ে দিলাম। এগিয়েএসে ভাইয়ার হাতটা ধরলাম। ভাইয়ার দিকে তাকিয়েবললাম,
– সারাজীবন আমি তোর হাত ধরেই হাঁটতে শিখতে চাইভাইয়া।

ভাইয়া আমার কাঁধে একটা হাত দিয়ে এগিয়ে চললসামনের দিকে। সায়ন ভাইয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আমি সারাকে চোখ মারতেই সারাও হাঁটা ধরলো।অগত্যা সায়ন ভাইয়াও আমাদের পেছন পেছন হাঁটতেলাগলো। আমার ওনার মুখটা দেখে খুব হাসি আসছে।অনেক কষ্টে হাসিটা দমিয়ে রাখলাম।।

দেখতে দেখতেই কেটে গেছে একসপ্তাহ। আমি এখনপুরোপুরি সুস্থ।
আজ আকাশে খুব মেঘ করেছে।যেকোনো সময়ই প্রচন্ড বৃষ্টি নামবে।
আমি ব্যালকনিতেদাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। চারদিকে মৃদুবাতাস।
আমি জোরে শ্বাস টেনে বাতাসের গন্ধ শুঁকছি।যদিও বাতাসের কোনো গন্ধ নেই।
আমার খুব বৃষ্টিতেভিজতে ইচ্ছে করছে। তাই ছাদে চলে এলাম।
আমিছাদে আসার কিছুক্ষণ পরেই বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিপরতে লাগলো।
আমিও চোখ বন্ধ করে দু হাত দুদিকেপ্রসারিত করে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করলাম।
খুবআনন্দ লাগছে আমার। বৃষ্টির ফোঁটা মুখে পরলেকেমন একটা শিহরণ জাগে মনে।
সুড়সুড়ি লাগে যেনমনে। আমি এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে বৃষ্টিতে ভিজছিলাম।তখনি পা টা ছাদে পিছলে গেল। আমি ভয়ে চোখ মুখবন্ধ করে ফেললাম। শিওর আজকেই আমার কোমরভাঙবে।
কিছুক্ষণ পরও যখন কিছু হলো না আমিচোখটা খুললাম। আমার মুখের খুব কাছেই সায়নভাইয়ার মুখ।
আমি সায়ন ভাইয়ার বাহু বন্ধনে আবদ্ধ।বৃষ্টির ফোঁটা ওনার চুল থেকে গড়িয়ে আমার চোখেমুখে পরছে।
ওনি কেমন জানি মুগ্ধতার সাথে আমারদিকে তাকিয়ে আছেন।
আজব এভাবে কতক্ষণ ধরেরাখবেন কি জানি? ওনার লজ্জা- শরম সব চলে যেতেপারে আমার তো যায়নি।

ওনি কখন ছাদে এসেছেনআমি দেখতেই পাইনি।
আমি যতই ওনাকে নাড়া দেইনা কেন ওনি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়েআছেন।
যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছেন। ওনার চুলগুলোভিজে কপালে লেপ্টে আছে।
আসল কথা হচ্ছেওনাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।
কিন্তু এখনওওনার শাস্তি পুরো হয়নি তাই আমি কিছুই বলবো নাওনাকে।
আমি এবার একটু জোরেই ওনাকে ঠেলাদিলাম।
ওনি যেন এবার হুঁশে এলেন। আমাকে সোজাকরে দাঁড় করালেন।
আমি ওনাকে কিছু না বলে চলেযেতে লাগলেই ওনি আমার হাত ধরে টান দেন।
যারফলে আমি একেবারে ওনার বুকের কাছে এসেপরলাম।
ওনি তখন আমার দু গালে হাত রেখে বলতেলাগলেন,
– তুই আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাস না মালিহা। আমারতোকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না।
প্লিজ আমারসাথে এরকম করিস না।

আমি ওনার হাতদুটো নামিয়ে দিলাম। তারপরবললাম,
– আপনি কেন আমার পেছনে পড়ে আছেন? দুনিয়াতেকি মেয়ের অভাব পরছে নাকি?
অন্তত আপনার জন্যতো মেয়ের অভাবই পরবে না। আপনি নতুন করে শুরুকরুন।
আমি কি আপনাকে বলেছি নাকি আমারপেছন পেছন ঘুরুন।
ওনি এবার রেগে আমায় একটা ঠেলা দিয়ে বললেন,
– ভালোবাসি তোকে। আর তোকেই ভালোবাসবো।
আর একটা কথা শুনে রাখ বিয়ে করলে আমি তোকেইকরবো।
তুই আমাকে এবার যতই এড়িয়ে যাস নাকেন?
আমি এবার পেছন ফিরে চলে আসলাম। আমার খুবহাসি আসছে ওনার অবস্থা দেখে।
মনে মনে ইচ্ছে মতহেসে নিলাম। এখন ওনাকে বুঝাতে হবে যে আমিওনাকে একদমই দেখতে পারি না।
এমন কষ্ট দিবো যেআর আমাকে কষ্ট দেওয়ার কথা মাথাতেও আনবেনা।।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com