Breaking News

ভালোবাসি তাই । পর্ব -২১

জীবন জীবনের গতিতে চলতে থাকে। জীবনকেকোনো উপমার সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে
যেজীবন একটি চলন্ত রেলগাড়ির মত। রেলগাড়ি যেমনমাঝপথে থামতে থামতে পারে না
তেমনি জীবনওহঠাৎ করে থামতে পারে না। জীবনে যতই দুঃখ -কষ্টআসে না
কেন জীবন সেগুলোকে নিয়েই নিজেরগতিতে চলতে থাকে। কখনোই থেমে থাকে না।
জীবনেচলতে হলে দুঃখ -কষ্ট সুখ -আনন্দ সবকিছু মানিয়েইচলতে হয়।
রেলগাড়ি যেমন প্রত্যেকটা স্টেশনেপুরাতন যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে নতুন যাত্রীদের নিয়েপথ চলে।
ঠিক তেমনি জীবনেও অনেক পুরাতন মানুষবিদায় নিয়ে নতুনের আগমন ঘটে।
পুরাতনেরবিদায়তে যেমন খুব কষ্ট হয় তেমনি নতুনের আগমনেজীবনটাই বদলে যায়।
এটাই হয়তো এই বিচিত্রপৃথিবীতে সবচেয়ে বিচিত্র একটা জিনিস।
এরমতবিচিত্র জিনিস হয়তো হাজার খুঁজেও আর পাওয়াযাবে না।
পুরাতনের বিদায় হোক বা নতুনের আগমনহোক জীবনটা কিন্তু থেমে নেই,
সে তার নিজেরগতিতেই চলছে এবং চলবে।
কখন যে জীবন কোনদিকে বাঁক নিবে সেটা জীবনও বোধহয় জানে না।
কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে আপুআর পুলিশ মেহরাবের কথা -বার্তা শুনে যা মনেহয়েছে
আমার তাই আরকি। আমি ওনাদের কথা শুনেযতটা অবাক হয়েছি ততটাই কষ্টও পেয়েছি।
কিছুক্ষণআগের ঘটনাটা ছিল এমন,,,
ইরাম ভাইয়া চলে যাওয়ার পর মেহরাব নামের পুলিশঅফিসারটি আপুর দিকে এগিয়ে এল।
আপুর মুখেরদিকে তাকিয়ে স্নান হেসে বলল,
– কেমন আছো মারিয়া?
– যেমন তুমি রেখেছিলে তেমনি আছি।
আপুর কথায় কিছুটা রাগ, কিছুটা অভিমান মিশ্রিতছিল। এবার আমার মনে হচ্ছে সত্যিই আপুর আর এইমেহরাবের কোনো একটা কেমিস্ট্রি তো নিশ্চয়ই আছেকিন্তু সেটা কি?
– মারিয়া তুমি আজও আমায় ক্ষমা করতে পারলে না?তুমি তো জানো কোন সিচুয়েশনে পড়ে আমি এমনকরেছি?
– হুমম জানি সব জানি। জানি বলেই হয়তো আজওতোমায় ঘৃণা করে আমি দূরে সরে যেতে পারিনি।আজও আমি তোমার অপেক্ষায় আছি। হয়তো সেটাতুমি জানো না বা বুঝতে পারো না।
– আমি কিন্তু তোমায় বলেছি সবটা নতুন করে শুরুকরো।
আপু স্নান হেসে বলল,
– শুরু করো বললেই কি শুরু করা যায় নাকি?
– চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই পারবে।
– চেষ্টা কি কম করেছি? বাদ দাও এসব তোমারওয়াইফ কেমন আছে?
– হুমম খুব ভালো আছে। এতটাই ভালো আছে যেসারা জীবনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে।
ওনার কথায় উপস্থিত সবাই অনেকটাই আঁতকেউঠলো। আমি আপুর আর ওনার কথা বার্তা শুনেএতটুকু বুঝতে পেরেছি যে আপুর আর মেহরাবভাইয়ার কোনো একসময় সম্পর্ক ছিল। যেটা হয়তোআজ নেই। তবে এখনো সবটা আমার কাছে ক্লিয়ারহয়নি। পুলিশের কথাবার্তা শুনে এতটুকু বুঝতেপেরেছি যে ওনি আপুকে খুব ভালোবাসেন। তবে কেনআপুকে বিয়ে না করে অন্য একজনকে বিয়েকরেছেন? এটাই আমার কাছে রহস্যময় লাগছে।আমার ভীষণ কৌতূহল হচ্ছে সবটা জানতে। আপুহঠাৎ বলে উঠলো,
– জানো মেহরাব দুইবছর আগে যেদিন তুমি পুলিশেচাকরি পেয়েছিলে সেদিন সবচেয়ে বেশি খুশি বোধহয়আমি হয়েছিলাম। সেদিন আমার কলেজে একটাফাংশন ছিল। তুমি বিকাল চারটার সময় আমার সাথেদেখা করবে বলেছিলে। আমরা দুজন একসাথেএতবড় খুশির দিনটা সেলিব্রেট করার প্ল্যানওকরেছিলাম। তাই আমি সেদিন অনেক সুন্দর করেসেজেছিলাম। নীল শাড়িতে আমায় কেমন লাগে সেটাতুমি দেখতে চেয়েছিলে। আমি সেদিন নীল শাড়িইপরেছিলাম। মনের মত করে সেজেছিলাম। ফাংশনশেষে বিকাল চারটার সময় যখন তুমি আমারকলেজের সামনে এলে না আমার তখন নানান চিন্তামাথায় আসছিল। কারণ তুমি কখনো দেখা করতেআসতে দেরি করো না। আমি বারবার তোমাকে কলকরছিলাম কিন্তু তোমার ফোন বারবার বন্ধ বলছিল।ঘড়ির কাঁটা চারটা থেকে সরে গিয়ে পাঁচটায় পৌঁছুলোকিন্তু তুমি আমার কাছে এসে পৌঁছালে না। আমার খুবকান্না পাচ্ছিলো তখন।সবাই প্রায় বাড়িতে চলে গেছে ।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করতেলাগলাম। সাড়ে পাঁচটার দিকে একটা গাড়ি এসেআমার সামনে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে তুমি নেমে এলেআমি তোমাকে দেখে যতটা খুশি হয়েছিলাম ততটাইসারপ্রাইজড হয়েছিলাম তোমার পেছনে তোমারনববিবাহিত বউকে দেখে।
এটুকু বলেই আপুর চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গালবেয়ে গড়িয়ে পড়লো। আমার আপুর কথা শুনে খুবকষ্ট লাগছিল। পুলিশ এবার আপুর চোখের পানি মুছেদিল। তারপর ধরা গলায় বলল,
– আমি তো নিজেও খুব সারপ্রাইজড হয়ে গেছিলামমারিয়া। আমি তো এটাই জানতাম না যে মা আমারবিয়ে আগেই ঠিক করে রেখেছে। বিশ্বাস করো আমিমাকে অনেক বুঝিয়ে বলেছিলাম যে আমি তোমাকেভালোবাসি আমি অন্য কারো সাথে ভালো থাকতেপারবো না কারণ আমার পুরোটা জুড়ে তুমিই আছো।কিন্তু মা আমার কোনো কথা শুনেনি সে তার নিজেরদেয়া কথা রাখার জন্য আমাকে বাধ্য করলো মীরাকেবিয়ে করতে। আর আমি তোমার থেকে কিছুইলুকোতে চাইনি তাই ওকে নিয়েই তোমার কাছে সবটাখুলে বলার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি ভুল বুঝলে।আমাকে আর মীরাকে বর কনের বেশে দেখে তুমি নাবলা অনেক কিছুই বুঝে গেছিলে। তাই আমাকে কিছুবলার সুযোগ না দিয়েই তুমি চোখে পানি মুখে হাসিনিয়ে বললে, ভালো থেকো তোমরা। আমি কিছুবলতেই পারলাম না। শুধু বললাম নতুন করে সবটাশুরু করো। এরপরই তুমি চলে এলে চিরদিনের জন্য।
– কে বলেছে আমি তোমায় ভুল বুঝে চলে এসেছি।সেদিন আমি সবটা না জানলেও তোমার মুখ দেখেএটুকু বুঝতে পেরেছি যে তুমি এ বিয়েটা নিজে ইচ্ছেকরো নি। আমি তো এ ভয়ে ওখান থেকে চলে এসেছিযে তোমাদের সামনে যেন কেঁদে না দেই। আর যাইহোক তোমার সামনে নিজেকে এতটা দূর্বল প্রমাণকরতে চাইনি। আমি চাইনি তুমি বলো যে যাকে আমিভালোবাসি সে এতটা দূর্বল আমি জানতাম না। সেদিনতোমার প্রতি আমার সম্মানটা আরও বেড়ে গেছিলোএটা দেখে যে ভালোবাসলে পেতে হবে এমন কোনোকথা নেই দূর থেকেও ভালোবাসা যায় তোমার এইচিন্তাধারা দেখে। তোমার থেকে আমি অনেককিছুশিখেছি তাই এতটা কষ্ট পেয়েও আমি শক্ত ছিলাম।আমি জানি তুমিও খুব কষ্ট পেয়েছো কিন্তু সেটা প্রকাশকরোনি। আমিও এরকমই নিজের সমস্ত কষ্টকেলুকিয়ে রেখেছিলাম এতদিন ধরে। তোমার কথা শুনেসবটা নতুন করে শুরু করার জন্যই বাবা -মার কথামত সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম।নিজের কোনো ইচ্ছেই ছিল না এ বিয়েটা করার।
আপুর কথা শুনে আপুর বিয়েতে এতটা উদাসীনথাকার কারণটা আমি বুঝতে পারলাম।
আর কলেজফাংশনে এতটা সাজার কারণও বুঝলাম। অবাকহলাম আপু নিজের ভেতর এতটা কষ্ট লুকিয়েরেখেছিল আর আমরা কেউ সেটা ঘুণাক্ষরেও টেরপেলাম না। এখন মনে হচ্ছে আমার থেকেও বেশি কষ্টআপু পেয়েছে। আপু আবার বলে উঠলো,
– মীরা কি অসুস্থ ছিল?
পুলিশ কিছুটা হকচকিয়ে বলল,
– অসুস্থ ছিল কি না জানি না। তবে বুঝতে পারতোআমি তাকে এড়িয়ে চলি।
কিছুতেই তার সাথেএডজাস্ট করতে পারছি না। সে আমার সামনে নাথাকলে আমি খুশি হই।
আমি অন্য কাউকে ভালোবাসিসেটাও হয়তো বুঝতে পেরেছিল।
তাই সে আমাদেরবাসায় আগাছার মতই থাকতে লাগলো।
আর বিয়েরএকমাস পর হঠাৎ করেই ঘুমের মধ্যে মারা যায়ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেছিল অতিরিক্ত টেনশনেরকারণে স্ট্রোক করে মারা গেছে মীরা।
সেদিন হয়তোআমার মা বুঝতে পেরেছিল যে আমি আর মীরা কেউইএই বিয়েতে সুখী ছিলাম না।
তাই আমার কাছেবারবার ক্ষমা চেয়েছিল আমার মা।
তোমাকেদেখানোর কথা আমাকে প্রায়ই বলতো কিন্তু আমিকোন মুখে দাঁড়াতাম তোমার সামনে? তাই আসতেপারিনি। কিন্তু আমি জানতাম না যে মালিহা তোমারবোন।
এখানে এসেই জানতে পেরেছি।
আপু হঠাৎ বলে উঠলো,
– আমি আজও তোমায় গ্রহণ করতে রাজি মেহরাব।আমি কখনো তোমায় ভুল বুঝিনি। আমি জানি আমারফ্যামিলির পর যদি কেউ নিঃস্বার্থভাবে আমাকেভালোবাসে সেটা তুমি। তাই বলছি নিজেকে কখনোদোষ দিও না।
– না মারিয়া তুমি আমার থেকেও ভালো কাউকেডিজার্ভ করো। আমি বাকিটা জীবন একাই কাটিয়েদিতে পারবো। তুমি ভালো দেখে কারো সাথে জীবনটানতুন করে শুরু করো।
– আমিও একাই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো।
এটা বলে আপুও মুখ ঘোমড়া করে রাখলো। আমরাসবাই ওদের এসব কথা -বার্তা শুনে অবাক হয়ে নীরবদর্শকের মত তাকিয়ে রইলাম। আম্মু হঠাৎ কাঁদতেকাঁদতে বলে উঠলো,
– আমার দুই মেয়ের মনেই এত কষ্ট জমে ছিল আরআমি মা হয়ে সেটা বুঝতেই পারলাম না। আমি বুঝতেপারছি না আমি কি মা হওয়ার যোগ্য? নাকি আমারদুই মেয়ে বেশি ধৈর্য্যশীল।
ভাইয়া আম্মুর কাঁধে হাত রেখে ছলছল চোখে বলল,
– তোমার তো গর্ব করা উচিত আম্মু। তোমার দুই মেয়েএই বয়সেই এতটা ধৈর্যশীল।
তোমার তো আনন্দ করাউচিত যে তুমি একেবারে আদর্শ দুইটা মেয়ের জন্মদিয়েছো।
তারা সবার সুখের জন্য নিজের সুখেরকথাটাই ভুলে যায়। কজন পারে বলো তো এতটাভাবতে?
তুমি তো ওদের যোগ্য মা তাই তো ওরা যোগ্যশিক্ষাটাই তোমার কাছ থেকে পেয়েছে।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখেও পানি চলো এল।
বাবা আমাদের দু বোনকে জড়িয়ে ধরলো সেই সাথেআম্মুও ধরলো।
ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে বলল আমি কেনবাদ যাবো।এটা বলে ভাইয়াও আমাদের জড়িয়েধরলো।
সায়ন ভাইয়া আর মেহরাব ভাইয়া পাশেদাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে।
কি মনে হতে মেহরাবভাইয়া কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে।
এই ছিল কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।
এসব ভেবেই আমারমনে হচ্ছে জীবনের মত বিচিত্র আর কিছুই নেই।
আমিযখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এসব চিন্তা করছিলামতখনি কেউ আমার চোখ ধরে ফেলল।।
চলবে,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com