Breaking News

শেষ বিকেলের রোদ । পর্ব -১৪



জিনাত সাজছে আর জেরিন ওকে সাহায্য করছে। লাল বেনারসিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। এমনিতেই জিনাত বেশ সুন্দরী। ওর চোখের মায়ায় যেকোনো কেউ জড়াতে বাধ্য, যদিও এক্ষেত্রে দৃষ্টির ভিন্নতা থাকে।
লাল বেনারসি, মায়ের গয়নাগুলো পড়েছে, মেকআপও প্রায় শেষের দিকে, এখন শুধু লাল নেটের দোপাট্টা লাগানো বাকি। এমনসময় রুমে আসে ওদের ফুপাতো বোন সামিয়া। সামিয়াকে দেখে জেরিন মুচকি হাসে। জিনাত একবার দরজার দিকে তাকায়।
সামিয়া দুষ্টুমি করে বলে,
“আমি গো আমি, আলিয়ার ভাই এখনো অফিসে। অফিস থেকে এসে দেখবে তার ভালোবাসার মানুষ তার বউ হতে চলেছে। বিশ্বাস কর খুশিতে আলিয়ার ভাই আর কথাই বলতে পারবে না।”
জেরিন জিনাতের কাঁধে হাত দিতে বলে,
“কথা না বলতে পারলে কবুল কিভাবে বলবে?”
দুজনে একসাথে হাসতে থাকে।
জিনাত মাথানিচু করে ফেলে। কিন্তু ভয় তো রয়েই গেছে, সত্যিই কি আলিয়ার ওকে মেনে নিবে? আলিয়ার যদি বিয়েটা না করে? জিনাত একটা ঢোক গিলে।
প্রত্যাশা এসে রুমে ঢুকে চেঁচিয়ে বলে,
“জিনু।”
জিনাত ওকে দেখে হেসে উঠে। এতোক্ষণে ওর বুকে প্রাণ এলো। প্রত্যাশা এসে বলে,
“একটা বিশেষ কাজ করে এসেছি।”
“কি কাজ?”(জেরিন ও সামিয়া একসাথে)
“আলিয়ার ভাইয়ের রুমটা সাজিয়ে এসেছি।”
“কিভাবে কিভাবে?”
প্রত্যাশা বেশ ভাব নিয়ে বলল,
“টাটকা গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে। ঘ্রাণে চারদিক ম ম করছে। এর মাঝে আমাদের…”
এইটুকু বলে প্রত্যাশা থামে। তারপর তিনজন একসাথে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
“জিনাত বসবে।”
জিনাত মাথানিচু করে মুচকি হাসে। আলিয়ারের সামনে জীবনে অনেকবার বসেছিল সে, কিন্তু আজ আলিয়ারের সামনে বসবে ভেবেই লজ্জা পাচ্ছে সে।
সুলতানা দরজার বাইরে থেকে বলে,
“জেরিন, সামিয়া একটু আয় তো মা। নাস্তাগুলো সাজিয়ে রাখ।”
“আসছি।”
দুজনে বেরিয়ে যায়।
জিনাত প্রত্যাশার হাত ধরে ওর পাশে বসিয়ে বলে,
“আলিয়ার যদি ঝামেলা করে?”
“আরে, কিছুই হবে না। সবার সামনে তোকে নিশ্চয়ই অপমান করবে না আর এই রূপ দেখে পাগল না হয়ে যাবে কোথায়?”
জিনাতের মুখে তবুও চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে। প্রত্যাশা ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“এতো চিন্তা করিস না, যা হবে ভালোই হবে।”
“হুম।”
একটু পর প্রত্যাশা বলল,
“তুই থাক, আমি ক্যান্ডেলগুলো সাজিয়ে আসি।”
“ক্যান্ডেল?”
প্রত্যাশা মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
“বাসরঘরে ক্যান্ডেল না থাকলে কি রোমান্টিক মুড আসবে?”
জিনাত মুচকি হাসে। প্রত্যাশা বেরিয়ে যায়।
জিনাতের ফোন বাজছে। জিনাত ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্যারা মানে মুগ্ধ কল করেছে। জিনাত কেটে দেয়। আজকে ওর সবচেয়ে আনন্দের দিন, আজকে কোনো প্যারার সাথে ও কথা বলতে চায় না।
আবারো কল আসে। জিনাত রিসিভ করে ধমক দিয়ে বলে,
“লজ্জা নেই আপনার, এতো অপমান করি তবুও কল দিয়েই যান।”
মুগ্ধ একটা কাশি দিয়ে বেশ শান্তসুরে বলে,
“আমি কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছি, অস্ট্রেলিয়াতে যাচ্ছি। কিছুদিন হয়তো তোমাকেও জ্বালাবো না।”
“খুব ভালো, খুশি হলাম আপনি জ্বালাবেন না শুনে। (একটু থেমে) আর হ্যাঁ, গিয়ে মরে যায়, তাতেও আমার কিছুই আসে যায় না।”
“দেখি শকুনের দোয়ায় গরু মরে কিনা?”
জিনাত চেঁচিয়ে উঠে,
“কি? আপনি আমাকে শকুন বললেন?”
মুগ্ধ হেসে হেসে ভণিতা করে বলল,
“আহ, কথা বলি সবার মাঝে যার কথা তার বুকে বাজে।”
“সবাই বলতে কে আছে?”
“আমি কি করে জানবো? এনিওয়ে, ভালো থেকো। আর অপেক্ষা করবো তোমার একটা কলের জন্য। আগামীকাল সকাল ৬ টায় ফ্লাইট, তার আগে একটা কল আশা তো করতেই পারি?”
জিনাত বাঁকা হেসে বলে,
“আজ আমার বিয়ে, কিছুক্ষণ পরই বিয়ে শুরু হবে। লাল বেনারসি পড়ে বসে আছি আমি।”
মুগ্ধ অবাক হয়ে শুনছে এসব কথা। ওর কান কি ভুল শুনছে? পায়ের নিচের মাটিও সরে যাচ্ছে হয়তো, শেষ আশার আভাগুলোও মুছে গেল কালো মেঘের চাদরে। মুগ্ধ ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। চোখের কোণায় পানিগুলো সব এসে জমাট বেঁধেছে, বাঁধন খুললেই হয়তো গড়িয়ে পড়বে। খুব দেরি হয়ে গেছে, ভালোবাসি কথা বলার আগেই ওর ভালোবাসার মানুষ অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে।
মুগ্ধ আবারো ফোনটা কানের কাছে এনে বলে,
“Good luck for your future life.”
মুগ্ধ কলটা কেটে দেয়। মুগ্ধকে কষ্ট দিতে পেরেছে এটা ভেবেই হাসছে জিনাত। কিন্তু ইট মারলে পাটকেল যে খেতে হয় তা সে ভুলতে বসেছে।
ছেলেদের নাকি কাঁদতে হয় না। এমন প্রবাদকে মিথ্যা করে দিয়ে মুগ্ধ কাঁদছে। হ্যাঁ, মুগ্ধ কাঁদছে, চোখের জলের বাঁধ কতক্ষণ আটকে থাকবে। ভালোবাসার জোয়ারে সেই বাঁধ ভেঙে গেছে।
মুগ্ধ ভাবছে,
“ভালোবাসা মানে ভালো রাখা, ওকে ভালো থাকতেই দিই। না, কখনোই আর ওর জীবনে দখল দিতে যাবো না। আর কেন যাবো? কোন অধিকারে?”
মুগ্ধ রাগে নিজের ফোনটাকে ছুড়ে মারে। ভেঙে একাকার হয়ে যায় সেটি।
“ও যেভাবে ভালো থাকতে চায় সেভাবেই ভালো থাকতে দিবো। ঠিক সেভাবেই।”
মুগ্ধ জানে না নিজের ভাবনাটুকুকে কতটা বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারবে কিন্তু সে নিজের অনুভূতির দেয়ালের উপর দুর্গ নির্মাণ করবে যে দুর্গ ভেঙে ফেলা সহজ হবে না। যে দুর্গে জিনাত নামের কারো প্রবেশ নিষেধ, শুধু জিনাত নয় কোনো মেয়েই স্থান পাবে না সেখানে।
অন্যদিকে,
তাজিমের জন্মদিন আগামীকাল। মহসিন ও তওবার রুমটা বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে তুবা। ফ্লোরেও বেলুন ছড়িয়ে রেখেছে। রাত ৮ টা বেজে গেছে, আর মাত্র ৪ ঘন্টা। তারপরই ওর একমাত্র বড় ভাইয়ের জন্মদিন। যে ভাই ওদেরকে সুখে রেখেছে, নিজের কষ্টগুলো লুকিয়ে ওদেরকে ভালো রেখেছে।
অনু রান্নায় ব্যস্ত। তাজিম বাসায় আসার আগেই সব ব্যবস্থা করতে হবে। তাজিমকে আজ সারপ্রাইজ দেয়ার প্ল্যান আছে সবার।
তুবার ফোনে কল আসে। তুবা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আলিয়ার। তুবা রিসিভ করে,
“হ্যালো।”
“তুবা, তুমি কি এখন আমার সাথে দেখা করতে পারবে?”
তুবা কিছু ঘাবড়ে যায় আলিয়ারের কথায়। আমতাআমতা করে বলে,
“এখন? কি.. কি করে সম্ভব? আমি বা.. বাসায় আছি।”
আলিয়ার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“তুমি কি এখনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না?”
“না না, তা নয়।”
“তবে এতো আমতাআমতা করছো কেন?”
“আ.. আসলে ওইই…”
তুবার কথার মাঝেই আলিয়ার বলে,
“বুঝেছি, আন্টি-আংকেল বাসায় তাই তো?”
“হুম।”
“ঠিক আছে, দেখা করতে হবে না। একটু বারান্দায় আসো।”
তুবা ফোন কানে রেখেই দৌঁড়ে বারান্দায় যায়। আলিয়ার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আলিয়ারকে দেখেই মুচকি হাসে তুবা। আলিয়ার ফোনটাকে মুখের সামনে এনে বলে,
“ওই হাসি দেখলে পাগল হয়ে যাবো আমি। এখানে কি আমি পাগল হতে এসেছি।”
তুবা উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,
“এভাবে কেউ বলে?”
“তো কিভাবে বলবো? শিখিয়ে দাও।”
“পারবো না।”
অনু এসে তুবাকে বলে,
“এখানে কি করছো? এখনো কতকাজ বাকি।”
তুবা চোখের ইশারায় নিচে তাকাতে বলে, অনু নিচে এক ছেলেকে দেখে তুবাকে বলে,
“আলিয়ার?”
“হুম।”
“কথা বলো।”
অনু মুচকি হেসে চলে যায়। তুবা আলিয়ারকে বলে,
“বাসায় আসেন, আমার ফ্যামিলির সাথে দেখা করাই।”
“না, অন্য একদিন। সেদিন না হয় আমার মায়ের জন্য লাল টুকটুকে বউ নিয়ে যাবো।”
“আমি লাল না কালো কুচকুচে হবো।”
আলিয়ার হেসে বলে,
“তাহলে আমার কালো সুন্দরী করেই নিয়ে যাবো।”
তুবা হেসে দেয়। আলিয়ার বলে,
“এখন কি চলে যাবো ম্যাডাম?”
“আচ্ছা, যান। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।”
“কাকে জান বললে?”
“আমি জান বলিনি যান বলেছি মানে যেতে বলেছি।”
“তাহলে আপনার মায়াময় মুখটা একবার দেখান।”
তুবা আবার বাইরের দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। আলিয়ার মুচকি হেসে বলে,
“কিউটি, গেলাম আমি।”
“হুম।”
আলিয়ার কল কেটে গিয়ে গাড়িতে উঠে। তুবা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে তারপর আবারো আগের কাজে যায় সে।
আলিয়ার বাসায় পৌঁছে গ্যারেজে গাড়ি রেখে বাসার ভিতরে যায়। লিফটে উঠেই মনে পড়ে কাল তো মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। আলিয়ার উপরে পৌঁছে মুগ্ধকে কল করে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখায়। কয়েকবার ফোন দিয়েও কল লাগাতে পারে না আলিয়ার।
বাসার বেল বাজায় আলিয়ার। সুলতানা দরজা খুলে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়। আলিয়ার ভিতরে ঢুকে ড্রইংরুমে দেখে ওর মা-বাবা, কাকা আহমেদ, ফুপ্পি-ফুপ্পা, খালা-খালু, মামা-মামী, দাদী, নানা, সব কাজিনরা বসে আছে। বুঝতে বাকি থাকে না আলিয়ার-জিনাতের বিয়ের উদ্দেশ্যে সবাই এখানে এসেছে।
আলিয়ার সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?”
আলিয়ারের ফুপ্পি উত্তর দেয়,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভালো আছি বাবা।”
সুলতানা আলিয়ারকে বলে,
“তুমি আমাদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ওখানে কিছু জামার রাখা একা আছে সেগুলো পড়ে নিও।”
“কেন চাচী আম্মু? আমার তো নিজের জামা আছে আমার রুমে।”
আলিয়ার এমন ভাব করে কথা বলে যেন সে কিছুই জানেনা, কিছুই বুঝতে পারছে না। ইব্রাহিম মুচকি হেসে বলল,
“তোমার চাচী আম্মা যা বলছে তাই করো, যাও আলিয়ার।”
বাবার কথা মত আলিয়ার আহমেদের রুমে যায়, সেখানে বিছানার উপর শেরওয়ানি ও পায়জামা পায় সে। আলিয়ার মুচকি হেসে নিজে নিজেই বলে,
“বিয়ের সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছে, কিন্তু বিয়েটাই যে হবে না।”
আলিয়া ফ্রেশ হয়ে পরনে থাকা শার্ট ও প্যান্ট পরেই বেরিয়ে যায়। ড্রইং রুমের সবাই ওকে দেখে অবাক হয়।
সুলতানা বলে,
“আলিয়ার, তোমাকে বলেছিলাম বিছানা জায়গা কাপড়গুলো পড়তে। তুমি কেন পড়নি?”
আলিয়ার বেশ শান্ত সুরে বলে,
“আজকে আমার বিয়ে যে শেরওয়ানি পড়বো?”
জেরিন ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ ভাইয়া, আজ তোমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।”
আলিয়ার একবার জেরিনের দিকে তাকায় তারপর ইব্রাহিমকে বলে,
“ও কি সত্যি বলছে?”
“হ্যাঁ সত্যি, আজ জিনাতের সাথে তোমার বিয়ে।”
ইব্রাহিম এগিয়ে এসে আলিয়ারা সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“লুকিয়ে লুকিয়ে জিনাতের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারো আর আমরা বিয়ে দিয়ে দায়িত্বটুকু পালন করতেই পারি।”
“জিনাতের সাথে আমার সম্পর্ক?”
কথাটা বলে একটু থামে আলিয়ার তারপর আবারো বলে,
“জিনাতের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই যেটা তোমরা ভাবছো, যতটুকু আছে ততটুকু কেবলই ভাই বোনের সম্পর্ক অথবা বন্ধুত্ব এর চেয়ে বেশি কিছুই না। কিন্তু তোমরা সম্পর্কে যে নাম দিয়েছো তা মিথ্যা।”
“জিনাত নিজে আমাদের এ সম্পর্কে৷ বলেছে।”
ইব্রাহিম ধমক দিয়ে উঠে। আলিয়ার রেগে গেলেও নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রেখে বলল,
“তোমরা জিনাতের কথায় বিশ্বাস করেছে? হ্যাঁ, ও আমাকে ভালোবেসেছে সরি বেসেছে না বেসেছিল। সেটার ভালোবাসা নাম আমি দিব না, কারণ সেটা ছিল শুধুই আবেগ। আবেগের বয়সের নষ্ট আবেগ।”
আহমেদ উঠে বলে,
“আমার মেয়ে মিথ্যা বলেছে, তুমি কি তাই বলতে চাচ্ছো?”
“না, আমি তা বলছি না। ও পুরোটা সত্যি বলেনি। ও আমাকে ভালোবাসে এইটুকু সত্যি, কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি এটা মিথ্যে।”
সুলতানা এগিয়ে এসে আলিয়ারকে ধমক দিয়ে বলে,
“টাইম পাস করেছো আমার মেয়ের সাথে আর এখন যখন বিয়ের কথা উঠেছে তখন অস্বীকার করছো। মিথ্যাবাদী তুমি আমার মেয়ে নয়।”
আলিয়ার বাঁকা হাসে। মুখে মিট মিট করে হেসে বলে,
“আপনি আমাকে মিথ্যাবাদী বানাচ্ছেন? নিজের মেয়েকে খুব বিশ্বাস করছেন? এখন আমি যদি প্রমাণ করি ও মিথ্যাবাদী, তখন কোথায় মুখ লুকাবেন, চাচী আম্মা?”
ইব্রাহিম ধমক দিয়ে বলে,
“আলিয়ার, ভদ্র ভাষায় কথা বলো।”
সুলতানা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,
“কি প্রমাণ করবে তুমি?”
“সেটা বলবো, আগে আপনার মেয়েকে এখানে নিয়ে আসুন।”
সুলতানা জেরিন ও সামিয়াকে বলে,
“যা মা, জিনাতকে নিয়ে আয়।”
“জি।”
জেরিন উঠে গিয়ে জিনাতকে নিয়ে আসে। লাল বেনারসি পড়া জিনাতের দিকে একবার মাত্র তাকায় আলিয়ার। পরক্ষনেই চোখ নামিয়ে নেয়৷ এটা লজ্জায় নয় ঘৃণায় হয়েছে। আলিয়ার এখন মনেপ্রাণে ঘৃণা করে জিনাতকে আর তার ভালোবাসার ঘরে তো কেবল তুবার বসবাস। মনের গভীরে যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে ওর ভালোবাসার মানুষকে, কাউকে দিবে না দেখাবেও না। লোকে যে বড় হিংসুটে, হিংসা করবে খুব।
আলিয়ার জিনাতকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“মিথ্যা বলেছিস কেন সবাইকে?”
প্রত্যাশা জিনাতের সাথেই ছিল। সে বলে,
“কি মিথ্যা বলেছে জিনাত? ও যা বলেছে সত্যি বলেছে।”
আলিয়ার প্রত্যাশাকে ধমক দিয়ে বলে,
“তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আমি?”
প্রত্যাশা চুপ করে। আলিয়ার জিনাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“ভেবেছিলাম তুই ভালো হয়ে গেছিস, জিনাত। এই সব মানুষের সামনে তোকে এভাবে অপমান করতে হবে তা কখনোই ভাবিনি।”
জিনাত মাথানিচু করে আছে, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আলিয়ার চেঁচিয়ে উঠে,
“ন্যাকা কান্না কাঁদবি না, থাপড়ে দাঁত ফেলে দিবো।”
জিনাত কেঁপে উঠে। উপস্থিত সবাই কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। আলিয়ার সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“কেউ আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বললে না কেন?”
সামিয়া কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে,
“আ…আমরা তো.. তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।”
আলিয়ার সামিয়ার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়। জেরিন কিছু বলতে গিয়েও থেকে যায়। আলিয়ার চিৎকার করে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
“এটা কি একদুইদিনের ব্যাপার? এটা কি জন্মদিন? কি এটা? বিয়ে, সারাজীবন থাকতে হবে একজনের সাথে। এটা কি মজা? এটা কি নাটক, সিনেমা? এটা জীবন। কেন এটা নিয়ে মজা নিলে তোমরা?”
আলিয়ার নিজের রুমে চলে যেতে নিলে ইব্রাহিম বলে,
“এভাবে সবাইকে অপমান করতে পারো না তুমি আলিয়ার। জিনাতকে এভাবে সবার সামনে প্রত্যাখ্যান তুমি করতে পারো না। এটা তো মস্করা নয়।”
আলিয়ার ফিরে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এই কথাটাই তোমাদের বোঝাতে চাচ্ছি, এটা কোনো মস্করা নয়।”
আলিয়ার জিনাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“সত্যটা কি বলবি, জিনাত?”
জিনাত এবারে জোরে কান্না করে দেয়। চিৎকার করে কান্না করতে করতে হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে জিনাত। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলে,
“মিথ্যা বলেছিলাম আমি, মিথ্যা বলেছিলাম। আলিয়ার আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি, কোনো সম্পর্ক ছিল না আমাদের মাঝে। কিন্তু…”
বলেই থামে জিনাত।
সবাই দাঁড়িয়ে যায়। জিনাতের কথাগুলো এবারে তিক্ত লাগছে সকলের। জিনাত একটা ঢোক গিলে বলল,
“কিন্তু আমি আলিয়ারকে ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি। জানি না সেটা আবেগ কিনা।”
জিনাত কান্না করেই যাচ্ছে। আলিয়ার বাঁকা হেসে সুলতানার দিকে তাকায়। সুলতানা মাথানিচু করে আছে।
প্রত্যাশা বলে,
“আ.. আসলে আমিই জিনাতকে বলেছিলাম এমনটা করতে।”
বলেই মাথানিচু করে ফেলে প্রত্যাশা।
আলিয়ার ডানেবামে মাথা নেড়ে বলে,
“ওরা হিন্দি সিরিয়াল দেখে অনুপ্রাণিত হয়তো আর তোমরাও।”
আলিয়ার নিজের রুমে চলে যায়। আছিয়া মনে মনে খুশি হলেও মুখে তা প্রকাশ করে না। সুলতানা ফ্লোরে বসে পড়ে। পুরো রুমে একটা গুমোট ভাব এসে পড়েছে।
.
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com