Breaking News

শেষ বিকেলের রোদ । পর্ব -১৯



ফজরের নামাজের পর জিনাতের দেয়া চিঠিটা পড়তে বসেছে মুগ্ধ। একজন বিবাহিত মেয়ে ওকে ঠিক কি কারণে চিঠি দিবে তাই ওর মাথায় ঢুকছে না। কিছুটা বিরক্তি নিয়েই চিঠির খাম খুলে সে। চিঠিটা পড়তে শুরু করে,
“আমার মুগ্ধতা,
প্রথম কাউকে এভাবে ৯০ দশকের মতো চিঠি লিখলাম। আপনার নামের শেষে তা যোগ করে মুগ্ধতা করে দিলাম। কি করতে পারি? আপনাতে আমি মুগ্ধ, মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছি আমি। এটা হয়তো আপনার নামের স্বার্থকতা বা আমার ভাবনা।
কি ভাবছেন, আমি কেন চিঠি লিখলাম? ভাবছেন, এক বিবাহিত মেয়ে কেন আপনার মাঝে মুগ্ধতা খুঁজলো? হা হা, বোকা আপনি। আমি কিন্তু অবিবাহিত, সেদিন বললাম আর বিশ্বাস করলেন? এতো বিশ্বাস কেন করেন আমাকে? সেদিন আলিয়ার (এইটুকু লিখে কেটে দিয়েছে জিনাত)
আপনার সাথে কথা বলা শুরু করার পর আপনাকে নিজের প্যারা মনে হতো। কিন্তু কথা বন্ধ হওয়ার পর বুঝলাম আপনি প্যারা না আপনি আমার নিঃশ্বাস।
আপনি আমাকে কোনো মায়াজালে নয় বরং একটা অন্তর্জালে জড়িয়ে ফেলেছেন। তাই একটা অমোঘ আকর্ষণের পিছু পিছু যাচ্ছি আপনার সাথে দেখা করতে।
মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য খুবই খারাপ। এরা সময় থাকতে অনেক কিছুই বুঝে না, যখন বুঝে তখন সময় থাকে না।
ভালোবাসা বোঝার পরিবর্তে আবেগে পিছনে ছুটে জীবন নষ্ট করে শেষে পস্তাতে হয়, যেমনটা আমার হচ্ছে। আপনার ডাকা সেই পিচ্চি নামটা আজ আমায় খুব টানছে। কাছে নিয়ে যাচ্ছে আপনার। হবেন আমার পথচলার সাথী? যদি অন্যকাউকে আপনি নিজের পথচলার সঙ্গী করে নেন, তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
রিকশায় বসে চিঠিটা লিখলাম, হাতের লেখা ভালো হয়নি একটু বুঝে নিয়েন। এ ব্যাপারে কাউকে কিছু না জানালেই খুশি হবো।
ইতি
বোকা হয়েছেন যার কাছে সেই জিনাত।”
মুগ্ধ এখনো ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না। কি করে পারবে? এ মেয়ে যে ওকে ঘোরের দেশে পাঠিয়ে দিলো। অথচ ওর বিয়ে হয়ে গেছে ভেবে যদি অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যেতো তবে তো একটা অনুভূতির পৃথিবী থেকেই আলাদা হয়ে যেতো।
মুগ্ধ বসে বসে নিজের মাথার চুল টানছে। কি করবে এখন? জিনাতকে চিঠি দিবে নাকি কল করবে?
সাতপাঁচ ভেবে জিনাতকে কল দিয়েই ফেলে মুগ্ধ। দুবার বেজে তৃতীয়বারে জিনাত রিসিভ করে। দুজনেই চুপ করে থাকে।
নিরবতা ভেঙে মুগ্ধ বলল,
“কেমন আছো?”
জিনাত একটা ঢোক গিলে কিছুটা আমতাআমতা করে বলে,
“ভা.. ভালোই।”
মুগ্ধ স্বাভাবিকভাবেই বলল,
“চিঠি কেন দিয়েছো?”
জিনাত চুপ করে আছে। মুগ্ধ আবারো বলল,
“চিঠিটা কি সত্যি? যা লিখেছো তা কি সত্যি?”
“হুম, সত্যি।”
মুগ্ধ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আর কিছু বলবে না?”
“কল তো আপনি দিয়েছেন।”
“তাই বলে কি তুমি কোনো কথা বলবে না?”
জিনাত একবার গলা খাকিয়ে বলে,
“আপনার জীবনে কোন নারী আছে?”
মুগ্ধ দুষ্টামি করে বলে,
“আছে তো, অবশ্যই আছে।”
জিনাত চমকে ওঠে,
“কে?”
“কে আবার? আমার মা।”
জিনাত স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“আর কেউ নয়?”
মুগ্ধ হেসে দেয়,
“জানতে চাচ্ছো আমার কোন প্রেমিকা আছে কিনা?”
জিনাত হকচকিয়ে যায়,
“না ব্যাপারটা তা না, তবে…”
জিনাতের কথার মাঝেই মুগ্ধ বলে,
“ব্যাপারটা কি তা আমি জানি যদি আমি চিঠির যে অর্থবুঝেছি তুমি যদি তাই বুঝাও।”
“কি বুঝেছেন আপনি?”
“ঠিক বুঝেছি নিশ্চয়ই, তোমার চাঞ্চল্য তাই জানান দিচ্ছে।”
জিনাত চুপ করে মুগ্ধে সাথে তর্ক করে ও পারবে না। কি করে পারবে? মুগ্ধের মুগ্ধতায় ও যে হারিয়ে গেছে। সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছে, আবেগ ছেড়ে অনুভূতি বুঝতে শিখেছে।
সকাল ৬ টা,
ইব্রাহিম, আহমেদ, সুলতানা, আছিয়া ড্রইং রুমে বসে আছে। জরুরী বিষয় নিয়ে কথা বলছেন ওনারা। আলিয়ার ও জিনাতকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ওরা দুজন আসলে ইব্রাহিম বলল,
“বসো, তোমরা।”
আলিয়ার আছিয়ার পাশে গিয়ে বসলো আর জিনাত একটা চেয়ারে এনে ড্রইং রুমের দরজার কাছে বসলো। দুজনের চোখেই উৎসাহ, উৎকন্ঠা।
ইব্রাহিম বলা শুরু করে,
“আমাদের দুজনেরই বয়স হয়েছে,,কতদিন বাঁচি তা তো আর বলা যায় না। তাই আমরা সকলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের সম্পত্তি ভাগ হবে। আলিয়ার এবং জিনাত তোমরা জানো তোমাদের দাদা মারা যাওয়ার পরও আমরা দুই ভাই আর তোমার ফুফুরা কখনোই সম্পত্তি নিয়ে ভাগাভাগি বা দ্বন্দ্ব করিনি। আশা করি, ভবিষ্যতে তোমরাও করবে না।”
আছিয়া শুধুই শুনছে। হ্যাঁ না কিছুই বলেনি এমনকি এসবে কোনো প্রকার কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করেনি। আলিয়ার মাথা নিচু করে কথা শুনছিল। হঠাৎ বলে ওঠে,
“বাবা, তোমরা বড়রা যা ভালো মনে করো তাই করবে কিন্তু আমার মতে এসব ভাগাভাগি কিংবা সম্পত্তি হিসেব করার সময় এখনও আমাদের হয়নি।”
আহমেদ বলে,
“সময় হয় কি হয়নি তা তোমার থেকে আমরা ভালো বুঝি।”
“তা তো অবশ্যই কাকা।” (আলিয়ার)
ইব্রাহিম কিছু কাগজ আলিয়ারের দিকে এগিয়ে দেয়। আলিয়ার কাগজগুলো হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। ইব্রাহিম বলল,
“এখানে আমার ও আহমেদের সব কাগজপত্রগুলো আছে। কিছুদিন ধরে এসব দলিল করা নিয়েই আমি ব্যস্ত ছিলাম। তুমি দেখে জিনাতকে দাও, দুজনে দেখো। তারপর এ বিষয়ে বাকি আলোচনা হবে।”
আলিয়ার ইব্রাহিম ও আহমেদের দিকে তাকালে আহমেদ বলে,
“আগামী সপ্তাহে আমরা সবাই গ্রামে যাব। আর তোমরা বাচ্চারাও যাবে, অনেকদিন গ্রামে যাই না।”
“অফিসে কাজ আছে, কাকা। এই অবস্থায় কি করে গ্রামে যেতে পারি?”
“তুমি না গেলেও আমাদের যেতে হবে।”
বেশ সাবলীলভাবে বলল ইব্রাহিম।
জিনাত বলল,
“কিছুদিন পরে আমার ফাইনাল পরীক্ষা, আমার মনে হয় না এই অবস্থায় ক্লাস মিস দিয়ে গ্রামে যাওয়া ঠিক হবে। তারচেয়ে বরং তোমরাই যাও।”
জিনাত একটু থেমে আবার বলল,
“জেরিনও আমার সাথে বাসায় থাক। ওখানে এসব জায়গা জমির হিসাব ও বুঝবে না, ওর এসব বোঝার প্রয়োজনও নেই। কি বলো তোমরা?”
সুলতানা বেশ খুশি হয়ে যায়,
“জিনাত তো ঠিকই বলছে। আলিয়ার এখানে থাকলে রান্না-বান্না তো করা লাগবে, ওর তো খাওয়া লাগবে, তাইনা?”
সুলতানা ভাবছে আলিয়ার যাবে না বলে জিনাত থেকে যেতে চাচ্ছে। হয়তো জিনাত এইসময় একান্তে আলিয়ারকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করতে চায়। কিন্তু জিনাত এরকম কিছুই ভাবছে না। সে ভাবছে নিজের পরীক্ষা আর মুগ্ধের কথা।
আলিয়ার বেশ রাগী চেহারা করে জিনাতের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দুগালে দুটো চড় মারতে ইচ্ছে আলিয়ারের। আছিয়ারও ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি। সুলতানার নাচানাচিতে আরো বিরক্ত লাগছে।
ইব্রাহিম কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“ঠিক আছে, তোমরা থাকো। আমরা সবাই গিয়ে না হয় ঘুরে আসি আর কাজগুলোও সেরে নিই।”
“জি, বাবা।”
আলিয়ার জিনাতের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে কথাটা বলল।
অন্যদিকে,
তুবা একদম খাটের মাঝে বসে ঝিমাচ্ছে। হেলে পড়ে যাচ্ছে, তাও ঝিমাচ্ছে। অনু এসে রুমে ঢুকে ওর অবস্থা দেখে হেসে দেয়। তুবা চোখ খুলে রাগীদৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকায়।
রাত ৩ টায় বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে তাজিম। ভোর ৫ টায় ফ্লাইট, ইতালিতে যাচ্ছে ও। অফিসের কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে মালিকের ছেলের পরিবর্তে নাকি ওকে পাঠাচ্ছে। এইটুকুই জানে তুবা ও অনু। সারারাত ঘুম হয়নি, ৩ টার পরে ঘুমালেও এখন ফজরের পর আর ঘুমাচ্ছে না তুবা।
অনু এসে বসে বলল,
“কি গো ননদিনী, এতো ঝিমাচ্ছো কেন? ঘুমিয়ে পড়ো।”
“একটু পরে ভার্সিটিতে যেতে হবে।”
“আজ ক্লাস করা লাগবে না, ঘুমাও। আম্মু বলে দিয়েছে।”
তুবার খুশিয়ে লাফিয়ে উঠে। কিসের ঘুম আর কিসের ঝিমুনি। সব এখন গায়েব। মা যদি যেচে ক্লাস না করার কথা বলে তবে তো তা আনন্দেরই।
তুবা অনুকে নিয়ে শুয়ে পড়ে। অনুর উপর হাতপা উঠিয়ে দিয়ে বলে,
“ঘুমাও।”
অনু তুবাকে সরিয়ে উঠে বসে,
“আমি এখন ঘুমাবো না। তুমি ঘুমাও, আমার কাজ আছে।”
“কি আর কাজ করবে? সেই তো ভাইয়ার সাথে ভিডিও কলে খুচুরখুচুর করবে।”
বলেই দাঁত কেলায় তুবা।
অনু লজ্জা পেয়ে যায়। তুবা জোরে হেসে দিলে অনু তুবার গাল টেনে দিয়ে বলে,
“অনেক পেকে গেছো? এত পাকা ভালো না।”
তুবা মাথা চুলকে বলে,
“মানুষ কি পাকে নাকি?”
“ধুর, বাদ দাও তো। আমি গেলাম।”
অনু চলে যায়, তুবা একা একা শুয়ে হাসতে থাকে। অনুর সাথে বেশ ফাজলামি করেছে আর অনুর সেই লজ্জামাখা মুখটা মনে হতেই তুবা হো হো করে হেসে দেয়।
তিনদিন পর,
আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরেছে আলিয়ার। সাধারণত রাত ১০ টা বা আরো পরে বাসায় ফিরে সে, কিন্তু আজ সন্ধে সাতটায় ফিরেছে। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে শুয়ে পড়ে।
আছিয়া রুমে এসে ওকে ফোন ঘাটতে দেখে বলে,
“সারাদিন ফোন ছাড়া কি আর কিছু নেই?”
আলিয়ার ফোন টিপতে টিপতেই বলে,
“কেন অফিস করি তো, সেখানে তো আর ফোন টিপি না।”
আছিয়া এসে আলিয়ারের পাশে বসে বলে,
“বাবা, বড় তো হয়েছো। এবারে বিয়ের চিন্তা করা যাক।”
“বিয়ে?”
“হুম।”
আলিয়ার বালিশ থেকে নিজের মাথাটা মায়ের কোলে ট্রানস্ফার করে। বেশ আদুরে কন্ঠে বলে,
“মা, তোমার ছোট্ট ছেলেটাকে বউয়ের মত প্যারার হাতে তুলে দিতে পারবে?”
বলেই আলিয়ার দুষ্ট হাসি হাসতে থাকে।
আলিয়ারের মাথায় একটা চাটি মেরে আছিয়া বলল,
“এসব কোন ধরনের কথা?”
“অচেনা-অজানা মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে তো তাই হবে।”
“তার মানে কি আমি তোমার বাবার প্যারা?”
“ছি ছি, আমি কি তা বলেছি নাকি?”
আলিয়ার চমকে ওঠে বলল। ও চেয়েছিল এ ধান্ধায় মায়ের কাছে তুবার কথাটা বলে দিবে।
আছিয়া কঠোর সুরে বলল,
“ঠিক আছে, তুমি যত যাই বলো এবার গ্রাম থেকে ফিরে আসি তারপর দেখছি কি করে তোমাকে বিয়ে দিতে হয়।”
আলিয়ার ন্যাকামি করে বলে,
“ওমা আমাকে বিয়ে দেওয়ার কি অন্য কোন নতুন নিয়ম আছে নাকি?”
আছিয়া আলিয়ারের কান টেনে ধরে। আলিয়ার চেঁচিয়ে বলে,
“লাগছে।”
আছিয়া আলিয়ারের কান ছেড়ে দেয।় আলিয়ার উঠে বসে কান ঘসতে ঘসতে বলে,
“আচ্ছা আম্মু,এসব জায়গা জমির ভাগ, এসব দলিলপত্র এখন কেন ঘাটাঘাটি হচ্ছে? না মানে আমি বা জিনাত দুজনই তো আনম্যারেড, এখন তো এসবের কোনো দরকার নেই। আরো পরেও তো এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করা যাবে নাকি?”
আছিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“কিছু করার নেই বাবা। সুলতানা বাসায় খুব অশান্তি করছে। বাসায় করছে বললে ভুল হবে, কারণ সে আহমেদের সাথে করছে। তাই আহমেদ তোমার বাবার সাথে কথা বলে এই ডিসিশন নিয়েছে।”
আলিয়ার ছোট্ট করে বলে,
“ওহ।”
আছিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা আম্মু।”
আছিয়া চলে গেলে, আলিয়ার তুবাকে কল দেয়। তুবা রিসিভ করে, আলিয়ার দুষ্টামি করে বলে,
“ও আমার বেড়াল, কেমন আছো গো?”
“আমি তো ভালই থাকি। আপনি কেমন আছেন?”
“হ্যাঁ ভালো, তা বেড়াল….”
আলিয়ারের কথার মাঝেই তুবা রেগে বলে,
“বারবার বেড়াল বেড়াল ভালো লাগেনা, অন্য নামে রাখেন।”
আলিয়ার মুচকি হেসে বলে,
“এত রেগে যাচ্ছো কেন? আমি তোমাকে বেড়াল বলেই ডাকবো।”
“ভালো লাগেনা।”
“ঠিক আছে ভালো না লাগলে কথাই বলব না।”
বলে আলিয়ার ফোন রেখে চলে যায়।
তুবা কলব্যাক করে কিন্তু আলিয়ার ওয়াশরুমে থাকায় কল রিসিভ করতে পারে না, তার উপর ফোন সাইলেন্ট করা।
এদিকে,
আছিয়া নাস্তার ট্রে সুলতানার হাতে দিয়ে বলে,
“আলিয়ারের রুম একটু দিয়ে আসো তো। ও এসেই নাস্তা না করে রুমে শুয়ে পড়েছে।”
সুলতানা ট্রে হাতে নিয়ে বলে,
“জিনাত কে পাঠাই?”
“না, জিনাত এখন পড়ছে। কি দরকার ওকে বিরক্ত করার? তুমি পারলে দিয়ে আসো, না হলে রেখে যাও আমি দিয়ে আসবো।”
বেশ রাগ নিয়ে এবং জোর গলায় কথাগুলো বলে আছিয়া।
সুলতানা কিছুটা রেগে ট্রে হাতে নিয়ে আলিয়ার ঘরের দিকে চলে যায়। রুমে ঢুকে টেবিলের ওপর ট্রে রেখে আলিয়ারের ফোনের দিকে চোখ যায়, কল আসছে।
সুলতানা ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাম্বার সেভ করা “বেড়াল” দিয়ে। সুলতানা কপাল কুঁচকে কল রিসিভ করে।
তুবা অপরপাশ থেকে বলতে থাকে,
“আলি, ও আলি, এত রাগ করেন কেন? আপনি আমাকে যা খুশি বলতে পারেন, আমি মোটেও রাগ করবো না। আলি কথা বলুন, আই লাভ ইউ।”
সুলতানা বুঝতে পারে এ সুকণ্ঠি কে হতে পারে, আলিয়ারের যে কারো সাথে সম্পর্ক আছে আর এজন্যই যে তার মেয়ে জিনাতকে আলিয়ার গ্রহণ করেনি তাও বুঝতে পারে।
সুলতানা কল কেটে তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আলিয়ার ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে তুবা কল দিয়েছিল, সাথে অনেকগুলো মেসেজও দিয়েছে।
আলিয়ার কলব্যাক করে। তুবা রিসিভ করে কান্না করছে আর বলেই যাচ্ছে,
“সরি আলি, রাগ করে থাকবেন না প্লিজ। আমার কষ্ট হচ্ছে।”
একই কথা বারবার বলছে তুবা। আলিয়ার মুচকি হাসে তারপর বলে,
“ঠিক আছে, রাগ করিনি। আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম।”
“ফোন নিয়ে ওয়াশরুমে?”
তুবা চমকে উঠে বললো।
আলিয়ার এবারে জোরে হেসে দেয়। কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলে,
“আরে না, আমি তো মাত্রই রুমে আসলাম।”
“তাহলে কথা বললে না কেন? আমি যে এতগুলো কথা বললাম আপনি একটা জবাবও দিলেন না কেন?”
আলিয়ার ভাবছে তুবা কল করার পরপর যে কথাগুলো বলেছিল সেগুলোর কথা বলছে। আলিয়ার বলে,
“তোমার কথাগুলো ভাল লাগছিল, তাই কথা বলিনি। শুধুই শুনছিলাম।”
“ঘোড়ার ডিম।”
তুবার কন্ঠে অভিমানের ছাপ পাওয়া যায়।
আলিয়ার আবারো দুষ্টুমি করে বলে,
“ঘোড়ার ডিম কোথায় পাওয়া যায়?”
“আপনার মাথায়।”
বলেই জিভে কামড় দেয় তুবা। আলিয়ার হাসতে থাকে।
এমন সময় সুলতানা রুমে আসে। আলিয়ার নিচু কন্ঠে তুবাকে বলে,
“একটু পরে কল দিচ্ছি।”
“ঠিক আছে।”
তুবা কল কেটে দেয়।
সুলতানা এসে বেস্ট ন্যাকামো করে বলে,
“বাবা আলি, আমার ফোনে না ব্যালেন্স নেই, আমার বোনকে একটু কল দিতাম। আসলে অনেকদিন পর গ্রামে যাব তো আর আমাদের বাড়িও তো তোমাদের বাড়ির কাছেই। তাই ভাবছিলাম ওকে যেতে বলব, দেখা হয়ে যাবে। তোমার ফোনটা কি একটু দেয়া যাবে?”
“অবশ্যই, চাচি আম্মু।”
বলে আলিয়ার নিজের ফোনটা সুলতানার হাতে দেয়।
সুলতানা ফোন নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়, সেখানে গিয়ে তুবার নাম্বার নিজের ফোনে সেভ করা নেয়। তারপর নিজের বোনের নাম্বারে কল করে কিছুক্ষণ কথা বলে আলিয়ারের ফোন আবার আলিয়ারের কাছে দিয়ে আসে।
আলিয়ার বুঝতেও পারেনা সুলতানা তুবার নাম্বার নিয়ে নিয়েছে, ওকে মিথ্যা বলেছে। কিন্তু কি করবে সুলতানা তুবার নাম্বার দিয়ে?
.
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com