Breaking News

সাইকো লাভার । পর্ব -০৮



এই ছয় মাসে নন্দিনীর জীবনে ঘটে গেছে অনেক বড় একটি ঘটনা…..
হ্যাঁ এতদিন সে তার স্বামীর থেকে মুক্তি চাই তো দূরে সরিয়ে রাখতে।
তবে এখন সে তাকে হারিয়ে তার মর্ম বুঝতে পারছে।
সে জানে আকাশ তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসতো,
আর আজ সেই মানুষটিই কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সাড়ে ছয় মাস ধরে কোথায় আছে কি করছে তার কোন খবর নেই, আচ্ছা মানুষটা ভালো আছে তো।
খুব কষ্ট হয় এখন তার আকাশের জন্য খুব ইচ্ছা করে তাকে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করে তাকে ছুঁয়ে দেখতে। আমায় ক্ষমা করে দাও আকাশ আমি ভুল করেছি ।
( এসব ভেবে রাতের পর রাত বালিশ ভিজে যায়)
যে শশুর এবং তার ফুফু শাশুড়ি কে একদিন তার অসহ্যকর ছিলো,
আর সেই দুটো বয়স্ক মানুষ ছাড়া তার জীবনের আর কোন অবলম্বন নেই। তার ভীষণ অনুশুচনা হয়।
ও সবার সাথে প্রতারণা করেছে, যার কারণে নিজের মা-বাবা ভাই ভাবি তাকে ত্যাগ করেছে।
কিন্তু এই মানুষ দুটো তাকে সম্মানে গ্রহণ করেছে।

সাধারণ কোনো দোষ ঠিক তখনই তার মাত্রা রাখে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে দোষী নিজে বুঝতে পারে।
সে দোষ করে তবে এক্ষেত্রে নন্দিনীর অনুশুচনায় তাকে তার ঘর ফিরিয়ে দিয়েছে,
এবার সেই প্রসঙ্গে আছি
( নন্দিনীর জীবনে কি ঘটেছিলো তা জানার জন্য তার অতিতের কথায় যেতে হবে)
ফ্লাশব্যাক……….
—আজ থেকে তিন মাস আগে নন্দিনীর যে বয়ফ্রেন্ড ছিল তার সঙ্গে নন্দিনীর
একটু অন্য ধরনের সম্পর্ক হয়। আশাকরি বুঝতে পারবেন আমি কোন সম্পর্কে ইঙ্গিত করছি।
হ্যাঁ নন্দিনীর সঙ্গে একটি ছেলের দীর্ঘ 3 বছর যাবৎ সম্পর্ক ছিল, এই ছেলেটিই আয়ান,
পুরো নাম আয়্যান চৌধুরী। নন্দিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বিগত তিন বছর ধরে।
ওইযে কথায় আছে না প্রথম প্রথম সব ভালোবাসায় মধুর হয় তবে যতদিন
যেতে থাকে ভালবাসার ভিতটাও আলগা হতে থাকে।
নন্দিনীর আর আয়ানের ভালবাসাতেও তাই ঘটেছিল।
নন্দিনী এবং আয়নের আলাপ ওদের কলেজে হয়, নন্দিনী যখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।
তখন নন্দিনী প্রথম প্রথম যায় তখন একদিন সিনিয়রদের কাছে র্র্যাগিং হওয়া থেকে বাঁচিয়ে ছিলো আয়ান।

তারপর বন্ধুত্ব হয় আস্তে আস্তে তারা একের উপরের প্রেম
পড়ে যায়।আয়ানের বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় আর এদিকে নন্দিনীর বাবা
একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী ও তার ভাই কিছুদিন আগে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সিইও হিসেবে জয়েন করেছ।
তাই বুঝতেই পারছেন নন্দিনী ঠিক কতটা আদর-যত্নে মানুষ হয়েছে।
নন্দিনীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের এক বছরের মাথায় তারা রুম ডেট করে।
রুমডেট করে তখন ও আয়নের মধ্যে কোন বদল নন্দিনী লক্ষ্য করে নি।
এরপর আয়ান পাসআউট হলো। একটা চাকরিও পেল,
অনেকটাই কম মাইনের তবে এরপরে আস্তে আস্তে পাল্টাতে শুরু করলো।
আয়ান একমাস কাজটা করতে না করতেই তা ছেড়ে দিলো ।
নন্দিনীর সাথে তার একটা ছোট মতো ঝামেলা হয়।
আসলে সেই সময় আয়নের মাথায় ঘুরছিল নন্দিনীকে বিয়ে করার ফন্দি।
শুনেছিল নন্দিনীর নাকি একটি কুড়ি লক্ষ টাকার চেক ডিপোজিট রয়েছে,
যেটা আর এক বছর পরে ট্রার্মপ্লান কমপ্লিট হবে। তাই টাকার লোভ সামলাতে পারছিল না।
তবে এর মধ্যেও আয়ানের জীবনে আর একটি মেয়ে চলে এসেছিল।
তবে আয়ানের এই আশায় সম্পূর্ণ জল পড়ে যায়।

নন্দিনীর বাবা তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্কে জানতে পারে এরপর শুরু হয় পাত্র খোঁজার পালা।
নন্দিনীর বাবা ছেলেটিকে পরীক্ষা করার জন্য, ছেলেটি সত্যি তার মেয়েকে ভালবাসে কিনা
একথা জানার জন্য আয়ানের বাড়িতে যায়। আশেপাশে খোঁজখবর করে যা
জানতে পারে তা তার কাছে অস্বাভাবিক লাগেনি। ছেলেটি চরিত্রের দিক দিয়ে খুব বাজে,
তার বাবা অক্লান্ত পরিশ্রম করে, আর সেই ছেলে বাপের রক্ত জল করা টাকায় ফুটানি মারে।
এসব কিছু শোনার পরও নন্দিনীর বাবা আয়ানের বাড়িতে যায়। ওর সাথে কথা বলে।
নন্দিনীর বাবা আয়ানকে টাকার লোভ দেখায়, এবং সেটি কোন কম অ্যামাউন্ট নয় 5 লক্ষ টাকার।
তবে আয়ান প্রথমে রাজী হয় না পরে পাক্কা বিজনেসম্যান
বড়সর অ্যামাউন্ট এর মত আয়ান তার ভালোবাসাকে নিয়ে ব্যবসা করে।
15 লক্ষ টাকার বিনিময় হার আয়ান নন্দিনীকে ছেড়ে দেবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়।
নন্দিনীর বাবা আয়ানের এমন ব্যবহারে এতটুকু বিচলিত হয় না।

এরপর আয়ানের সাথে নন্দিনীর আর দেখা হয়নি বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত আকাশের সাথে বিয়ে ঠিক হয় নন্দিনীর অনেক চেষ্টা করেও আয়ানের কোনো খোঁজ পায়নি। নন্দিনী বিয়ে করে, আকাশের সেই কুঁড়েঘর টায় এসে ওঠে। নন্দিনীর ব নিজের বাড়ি বাঙলো। আবার হঠাৎ নন্দিনী আর আকাশের ফুলশয্যার পরের দিন, আয়ান নন্দিনীকে কল করেছিল, গলায় কান্না জড়ানো স্বুর এনে বলেছিল।
আমি তোমাকে ভালোবাসি নন্দিনী, তোমার থেকে দূরে না গেলে তোমার বাবা
আমাকে মেরে ফেলতো। আমাকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তোমার বাবা।
আমি পারেনি নন্দিনী আমাদের ভালোবাসা রক্ষা করতে। আমি অপরাধী
আমাকে ক্ষমা করো,
আমি পৃথিবী থেকে সরে যাব, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।
নন্দিনী তোমাকে ছাড়া
আমি বাঁচতে পারব না( আয়ান)

আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না আয়ান, কত খুঁজেছি তোমাকে কোথাও পাইনি।
তোমার ফোনে ফোন করেছি সুইচ অফ পেয়েছি। ( কথা গুলো বলে কাঁদতে থাকে নন্দিনী)
আর কি হবে নন্দিনীকে, এখন তুমি অন্য কারো স্ত্রী। সে তোমার দেহের উপর অধিকার খাটাবে। আমি বাঁচতে চাই না নন্দিনী, আমি বাঁচতে চাই না (আয়ান কথা শেষ করে ফোনটা কেটে সুইচ অফ করে দেয়)
সে জানে নন্দিনী তার কথায় ভুলবেই, এবং তাই হয় আয়ান আবারও নন্দিনীকে প্রেমের জালে
ফাঁসিয়ে ওর থেকে টাকা নিতে থাকে। এভাবে চলতে থাকে তিন চার মাস। এর মধ্যে আকাশকে
কিডন্যাপ করা তিথি যেটা করে। নন্দিনী ও সুযোগ পেয়ে যায় অায়ানের সাথে দেখা করার।
একবার তো তার শ্বশুর অর্থাৎ আকাশের বাবা সেই পুলিশ বন্ধু রিয়াজ যে আকাশের কিডন্যাপ
কেস টা দেখছিলেন, তিনি ওদের দুজনকে দেখে ছিলো। আই নক্স থেকে তাদের বেরোতে।
যারা আগের পর্ব গুলো পড়েছে তারা অবশ্যই খেয়াল করেছেএ বিষয়টি।

নন্দিনী শশুর মশাই তার ছেলের জন্য ছোটাছুটি করছেন এর মধ্যেই নন্দিনীর টার্মপ্লান কমপ্লিট হয়। সেটা আয়ান জানতে পারে এরপরে শুরু হয় আয়ানের নোংরা একটি প্রস্তাব দেওয়া। নন্দিনীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়, নন্দিনী প্রথমে না বললো পরে রাজি হয় সম্পর্ক স্থাপন তারা করবে। তবে নন্দিনীর অজান্তেই সম্পর্ণটা মনিটর ভিডিও করে আয়ান।
শারীরিক সম্পর্কের কিছুদিন পর নন্দিনীর সাথে দেখা করতে চায় আয়ান। নন্দিনী তার সাথে দেখা করে, আয়ান নন্দিনীকে বলে তার নাকি কুড়ি লক্ষ টাকা দরকার, আর নন্দিনী চাইলেই সে টাকা জোগাড় করে দিতে পারবে। নন্দিনী জানায় সে তার বাবার সাথে কথা বলে না, বাপের বাড়ি যায় না বললেও চলে। আর তার শ্বশুর মশাইয়ের থেকে টাকা চাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব সে পারবে বলে চলে আসে।

সেদিন রাতে আয়ান আবার ফোন করে, এরপর প্রায় এক সপ্তাহ এভাবেই অনুনয়-বিনয় করার পর যখন চিঁড়ে ভিজবে না মনে হলো আয়ানের তখন থেকে শুরু হল নন্দিনীকে তার ব্ল্যাকমেইল করা। নন্দিনীর মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। যখন সে তার নিজের পর্ণোগ্রাফি দেখলো বিশ্বাস হচ্ছিল না তার।যেই আয়ানকে সে এতটা বিশ্বাস করল, এত ভালবাসলো সেই আয়ান তার ভালবাসার এমন প্রতিদান দিল। আর তাকে হুমকি দেয় যদি 15 দিনের মধ্যে টাকা না আসে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পৌঁছে যাবে এমনই বলে।

নন্দিনী বুঝতে পারে সে কথাটা ভুল ছিল, কাকে বলবে সে একথা। তবুও বাধ্য হয়ে এসেছে তার৷ নিজ বাড়িতে যায়, তার ভাবিকে জরিয়ে ধরে এসব কথা বলে। নন্দিনী তার বাবার কাছে তার ফিক্স ডিপোজিট এর কাগজপত্র চায়। তবু কেন কাছে চাইছে এ কথা তার বাবা কে বলতে পারে না। তার বাবার রাগের থেকে অবাক হন বেশি, তার মেয়ের হাতে কাগজপত্র তুলে দেয়। তবে তার মনে ভীষণ বড় প্রশ্ন জাগে।
নন্দিনী বাড়ি চলে আসে, এসে আয়ান কে ফোন করে, সে টাকাটা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এ ভিডিও তাকে তার সামনে ডিলিট করতে হবে। আয়ান শুধু বলে ঠিক আছে। বলেই নন্দিনীর ভাবি তার ভাইকে তার স্বামীকে এসব বলে, নন্দিনীর ভাই রাত্রে বেলাতে তার বাবাকে সব জানায় তার বাবা পরদিন সকাল বেলায় আয়নের বাড়িতে হাজির হয়। তার মা তাকে জানায় তার ছেলে এখন আর তাদের সাথে থাকে না, তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে উনারা। নন্দিনীর বাবা পুলিশের কাছে সবকিছু জানায় পুলিশ আয়ানের খোঁজ শুরু করে।

আবারো একটা অচেনা নাম্বার থেকে নন্দিনী এর কাছে,
কি ভেবেছিস তুই আমার থেকে পাড় পেয়ে যাবি। আরে তোর বাবা আমার সম্পর্কে তোকে যা যা বলেছিল সব ঠিক বলেছিল। আর তোর যা মধু খাওয়ার আমি তা আগেই খেয়ে নিয়েছি (আয়ান)
ছিঃ আয়ান তুমি এতটা নোংরা( নন্দিনী)
আরে নোংরা তো তুই বিয়ের পরওআমার সাথে সম্পর্ক রেখেছিস, আমার সাথে শুয়ে আছিস তোকে সমাজ কিভাবে নেবে তুই বুঝে দেখ (আয়ান)
আয়ান…. ( নন্দিনী)

আরে চুপ কর। তুই কি ভেবেছিস পুলিশকে ফোন করলে তুই বেচে যাবি। এবার দেখে নে তোকে আমি কিভাবে ভাইরাল করি । দুই মিনিট পর তোর কাছে নোটিফিকেশন যাবে তারপর দেখে নে।
আয়ান প্লিজ এমন করো না, নয় তো আমার মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। হ্যালো,,,, হ্যালো আয়ান(নন্দিনী)

না আটকাতে পারেনি নন্দিনীর বাবা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছিল কয়েকদিন এ ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় আয়নের ফোন ট্যাপ করে গ্রেফতার করা হয়। আয়ান এখন জেল কাস্টারিতে আছে। এখন নন্দিনীর পরিবারের সদস্যরা ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফেরাতে পারেনি কেবল ওর শ্বশুর মশাই, ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছে বুড়ো বয়সে এসে। এখন যদি এই ফুটফুটে মেয়েটিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তো ওর আর বাঁচার কোন মানে হয়না। ক্ষমা করে দেয় নন্দিনীকে। নন্দিনী এখন আকাশের বাবার মেয়ে হয়ে উঠেছেন।

যেভাবে পুলিশ অফিসার রিয়াজ তার ইনভেস্টিগেশন শুরু করেছিলেন, সেভাবে যদি ঠিক মত সবকিছু হয় তাহলে হয়তো আকাশকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল।
তারা তিনদিন পরে আবার সে জায়গায় যায়, হ্যাঁ আজ সেই চায়ের দোকান খোলা রয়েছে…. সেখানে গিয়ে পুলিশ অফিসার রিয়াজ এবং বাকিরা আকাশের ফটো দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন
দোকানদার জানায় সে ছেলেটিকে দেখিনি তবে এখান থেকে একটি ছেলেকে জোর করে একটা লাল গাড়িতে তোলা হয়। মোট চারজন ছিল চারজনকে চিনতে পারবে না তার কারণ তাদের মুখে মাক্স লাগানো ছিল।

গাড়ির নাম্বার টা দেখেছো একটু কিছু চিন্তা করে যেন বলো( রিয়াজ)
নাম্বারটা বলতে পারব কিন্তু স্যার নাম্বারটা তো আমার ঠিক মনে পড়ছে না তবে লাল রঙের গাড়ি ছিল কিন্তু নাম্বারটা…. ( দোকানদার বলল)
মনে করার চেষ্টা করো তোমাদের এখানকার কলেজের শিক্ষক উনি গত কয়েক মাস ধরে ওনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ( রিয়াজ)
আমাকে একটু ভাবতে হবে স্যার (দোকানদার)
ভাবো আমরা অপেক্ষা করছি( রিয়াজ)
কিছু সময় পর, এবার মনে পড়েছে
কনস্টেবল নোট করো….. তারপর গাড়ির নাম্বারটা নোট করে ঠিক বলেছ তো.
হ্যাঁ স্যার এতোটুকুই মনে পড়েছে (দোকানদার)
ঠিক আছে প্রয়োজন পড়লে আমরা আবার আসব আর তোমার নাম্বারটা দাও (রিয়াজ)

এরপর শুরু করা হয় সেই গাড়ির হদিস খোজার। সপ্তাহ খানেক বাদে গাড়ির হদিস পাওয়া যায়। একটা ইন্সুরেন্স সেক্টরের প্রাইভেট অফিস থেকে গাড়ি বুক করা হয়েছিল। সাধারণত নীল নামের লোা গাড়িটি বুক করেছিল। খোঁজা শুরু হয় এই নীল কে, প্রায় 10 দিন পর তার হদিস মেলে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত লোকটির কাছে পৌঁছানোর আগেই সে সুইসাইড করেছিল। পুলিশ ভেবেছিল লোকটিকে খুন করা হয়েছে তবে। তার ময়নাতদন্তের পর এবং তার সুসাইড নোট দেখে সহজে প্রমাণ হয়ে যায় সে আত্মহত্যা করেছে, এবং ব্যবসায় মন্দার মূল কারণ।

এরপর পুলিশ আকাশের কলেজেও যায় তবে তারা এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে চাননি.…..
এড়িয়ে গিয়েছিলেন ব্যাপারটা। আকাশকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছিল।
আর বাড়ি কলেজ সংলগ্ন প্রত্যেকটি থানাতেও আকাশের ছবি এবং বাইয়োডেটা পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারছিল না। এমন সময় হঠাৎই,
নন্দিনীগানটা বেশ ভালো ছিল। সেই গান আছে হাজারো বেদনা।
আকাশের ফুফু রুমের সামনে যাওয়ার সময় দেখল সে গান গাইছে।
বৌমা কষ্ট পেয়োনা আকাশ ঠিক ফিরে আসবে তোমার কাছে…..
নন্দিনী ফুফু শ্বাশুড়ী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে নন্দিনী, আজ খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।
আকাশের ফুফুও মেয়েটিকে শান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
কিন্তু আকাশের ফুফু হঠাৎ লক্ষ্য করেন নন্দিনী আর কোন সাড়া পাচ্ছেন না।
নন্দিনী যেন তার কাঁধে কাছের নেতিয়ে পড়েছে।
 নন্দিনী…. .নন্দিনী কি হল তোর? ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো নন্দিনী কথা বলছে না।।

 কি রে কি হয়েছে(আকাশের বাবা)
ভাইয়া নন্দিনী কথা বলছে না এক্ষুনি গান গাইছিল তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদছিল আর এখন কোন কথা বলছে না। কি হবে ভাই এখন।র ব্ল্যাকমেল এর ঘটনাটা সামনে আসে। আয়ানকে শাস্তি পাওয়া তথ্যে।।
ঠিক তার পরে আস্তে আস্তে থিতিয়ে পড়তে থাকে আকাশের কিসটা।
আর তারপরে টুকু তো আপনারা জানেনই। দেখতে দেখতে আরও এক মাস পার হয়ে গেছে।
এখন সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নন্দিনীর কাদের তুলেছে। নন্দিনী রান্নার করা ঘর গোছানো ছাড়া,
যদিও তার আর কোন কাজ করতে হয় না। বাকি কাজের জন্য কাজের লোক আছে।
এখন সত্যি নন্দিনীর খুব কষ্ট হয় আকাশের জন্য।
আসলে আমরা তো সময়ে কোনো মানুষের মূল্য বুঝিনা।
যখন সে আমাদের থেকে দূরে চলে যায়, ঠিক তখনই আমার তার মূল্যটা বুঝতে পারি।
এখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে। নন্দিনী ঘরে একা একা বসে ছিল আর গান গাইছিলো।

দেখি সর আমি ওর চোখের জল ছিটা দিচ্ছি। আমাকে ওর পাল্সটা পরীক্ষা করতে দে।
আকাশের বাবা তার বোনকে বলে। ওর অবস্থা ভালো ঠিকছে না ডাক্তার রতনকে ফোন কর।
প্রায় এক ঘন্টা পর ডাক্তার আসে…
নন্দিনীকে ডাক্তার চেকআপ করার পর কতগুলো টেস্ট লিখে দেয়।
টেস্ট গুলো না করলে কিছু বলা যাবেনা।
নন্দিনী পেটে খুব ব্যথা করছে, বমি বমি পাচ্ছে।
পাল্স রেট খুব স্লো। ডাক্তার কতগুলো মেডিসিন লিখে দিলো।
আধাঘন্টা পরে ডাক্তার চলে গেলে আকাশের বাবা নিজে গিয়ে নন্দিনীর জন্য ওষুধ নিয়ে এসেছে।
কাল টেস্ট করার জন্য বাড়িতে এক ভদ্রলোক আসবেন। নন্দিনীর ফুফু ইতিমধ্যে নন্দিনীর জন্য গরম দুধ নিয়ে এসেছেন। নন্দিনীকে ডেকে তুলে বসিয়ে ওর মুখে খাবার তুলে দেন। আর বলতে থাকেন আচ্ছা নন্দিনী তোমার কি রকম মনে হয় মানে ভারি ভারি লাগে।

হ্যাঁ … আর সকালে উঠে কিছু ভালো লাগে না খুব দুর্বল লাগে এবং বমি পায়।(নন্দিনী)
ঠিক আছে কাল রিপোর্ট দেখি কি হবে আবার তোমার।
এখন যে আকাশকে বড্ড দরকার ছিল তোমার আমাদের।
আচ্ছা তুমি এখন খাবারটা খাও তো বৌমা, না খেয়ে থাকলে তোমার আরো কষ্ট হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
নন্দিনীর অজান্তেই চোখের থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
অনুশুচনায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা হয় ।
এই মানুষগুলোকে সে ঠকাচ্ছিল, তার মরে যাওয়া উচিত।(এসব ভাবতে থাকে নন্দিনী)
আবার কাঁদছো এবার কিন্তু খুব বকা খাবে আমার কাছে। (ফুফু)
না ফুফু কাদছিনা আমি।(নন্দিনী)

এভাবে আস্তে আস্তে খাইয়ে তারপর ওষুধ খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নন্দিনীকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়……
আকাশের ফুফু। রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমায় নন্দিনী । তবে আকাশের বাবা আর তার বোনের চোখে ঘুম নেই।
না জানি আরো কত বড় নতুন বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে তারা।
পরদিন সকালে আটটা নাগাদ টেষ্ট এর লোক এসে ইউরিন এবং ব্লাড এর স্যাম্পল নিয়ে গেলেন।
তিনি দুদিন পরে রিপোর্ট আসবে জানালেন। চোখের নিমেষে কাটল দুটো দিন।
আজ রিপোর্ট আসবে সকাল থেকে সবাই টেনশনে আছে আকাশের বাবা তার বোন আর পারছে
বসে থাকতে একবার বাইরে এদিক হাটছে তো আবার বসে থাকে। হঠাৎ দরজায় কড়া
নাড়ায় আকাশের বাবা ছুটে গিয়ে দরজা খোলেন। রিপোর্ট এসেছে আকাশে বাবাকে ফোন করে দিয়েছেন সে আসছেন

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com