মধ্য যুগে নারী নির্যাতন বনাম হিন্দু ধর্মে নারী নির্যাতন

(খ) মধ্য যুগে নারী নির্যাতন বনাম হিন্দু ধর্মে নারী নির্যাতন :
.
মধ্য যুগে হিন্দু ধর্মে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারত না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাে
দূরে থাক, তারা কোন বিবাহ-শাদী কিংবা কোন ভােজ অনুষ্ঠানেও যেতে পারত
! মধ্য যুগে নারীদের আরাে একটি নির্যাতনের কথা জানা যায় তা হচ্ছে, বহু  বিবাহ।
কুলিন বিবাহ। যার যত ইচ্ছা সে তত বিবাহ করতে পারবে । সেকারণ একজন পুরুষের অনেক স্ত্রী ছিল।
ফলে কোন কোন স্ত্রী হয়তবা মাসে একদিনও স্বামীর মুখ দেখতে পেত না ।
হিন্দু ধর্মে নারীদের জীবন এতটাই বিপন্ন ছিল যে, একজন নারীর স্বামী মারা
যাওয়ার পরেই তার আর বেঁচে থাকার অধিকার ছিল না। তাকেও স্বামীর
চিতায় জীবন দিতে হত। এ কোন্ বিভৎস কর্মকাণ্ড! একজন মৃত মানুষের সাথে
আরেকজন জীবিত মানুষ কিভাবে নিজেকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করে? এই
জঘন্য প্রথাকে ‘সতীদাহ প্রথা’ বলা হয়।
এই ধর্মে বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক ‘সতীদাহ প্রথা’র নানাবিধ নিয়ম ছিল ।
সেকালে ভারতবর্ষে প্রায় চার নিয়মে সতীদাহ প্রথা হত নীচে ‘সতীদাহ প্রথার কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হল :
(ক) স্বামী মারা গেলে স্ত্রী একটা আমের শাখা হাতে করে মৃত স্বামীর পায়ের নিকট বসে থাকত।
নাপিত এসে পায়ে আলতা পরিয়ে দিলে সে মন করে নতুন শাড়ী পরত এই সময় বিশেষ ধরণের ঢাক বাজানাে হত। এরপর চিতা সাজানাে হত। পুরােহিত এসে বিধবাকে মন্ত্র পাঠ করাতেন। মন্ত্রে বলা হত,
তার মাথার যত চুল আছে ততবছর সে তার স্বামীর সাথে স্বর্গে সুখে বাস
ররে স্বর্গের নর্তকীরা সেই সময় তাদের সেবা করবে’। এভাবে মন্ত্র পাঠ
শেষে বিধবা তার গহনাগুলাে খুলে সাথীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হাতে লাল
সুতা বাধত। কপালে সিঁদুর পরত। কাপড়ের এক কোনে কড়ি ও ভাজাচাল
বাধত। মৃত দেহকে ঘি ও তেল দিয়ে দান করানাের পর নতুন কাপড় পরানাে
হত। আবার পুরােহিত মন্ত্র পাঠ করত এবং মৃতের ছেলে কুণ্ডলি তৈরি করে
পিতার মুখে দিত ।
.
এরপর চিতার উপর প্রথমে দড়ি এবং নতুন কাপড় বিছিয়ে
দেওয়া হত। তার উপর মৃত দেহকে শুইয়ে দেওয়া হত। এরপর বিধবা ভাজা
চাল ও কড়ি ছড়াতে ছড়াতে চিতাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করত। তারপর বিধবা
চিতার উপর উঠে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়ত এবং কিছু গহনা বুকের উপর রেখে
দিত। এবার উক্ত দড়ি দিয়ে শক্ত করে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে বাধা হত। ছেলে পিতার
মুখে আগুন দেয়ার সাথে সাথে চিতার বিভিন্ন দিক হতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া
হত। চিতায় যাওয়া অধিকাংশ বিধবাই গ্রহণ করতে পারত না। আবার অনেকেই
স্বেচ্ছায় গ্রহণ করত। তবে ইচ্ছায় গ্রহণ করুক আর অনিচ্ছায় গ্রহণ করুক আগুন
লাগার সাথে সাথে তাদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠত
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url