Breaking News

তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব - ০৭



সবক’টাই খারাপ,আপনি আর কখনো মিশবেন না ওদের সাথে।” জাবিন এগিয়ে এসে বললো,
– “কেন মিশবে নাম আম্মু মণি ড্যাড? তোমার কথায় সব হবে?” ইমান ছেলের কথা শুনে হাসি সামলে নিয়ে বললো,
– “একদম পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করবে না আমার সাথে।” জাবিন ইমান কে খোঁচা মেরে বললে,
– “তাহলে তুমি কেন পার্টিতে গিয়েছিলে সেটা বলো আগে?” ইমান বলল,
– “বলবো কেন? আমার কি সেখানে যাওয়া বারণ আছে?” জাবিন বলল,
– “আমার যেতে না পারলে তুমিও যেতে পারবেনা,কথা টা যেন মাথায় থাকে।” ইমান ছেলের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো,
.
– “একটু ফোঁটা এক আঙুল ছেলে,তার কত বড় সাহস? এসে শাসন করছে আমাকে?” রিকিয়া জগিং করে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে ইমান কে বলল,
– “ধরে একটা কানের নিচে দাও…সব বেয়াদবি বেড়িয়ে যাবে।” ইমান সাথে সাথেই রেগে গিয়ে বললো,
– “ভাগ্যিস…! আল্লাহ তাআ’লা একটি সন্তান দেয়নি আপনাকে,নিজেই বেলেল্লাপনা করে পাননা কুল…নজর কখন দিতেন বাচ্চার দিকে?” রিকিয়া অপমানিত হয়ে ইমান কে বলল,
– “যে নেই তার কথা ভেবে কি হবে? আর রইলো বেলেল্লাপনার কথা,আমি বেলেল্লাপনা করছিনা ইমান।
আমি ভালোবাসি তোমাকে আর চাইলে’ই আমি তোমার করা সমস্ত অপমানের জবাব আমি দিতে পারি।দিচ্ছি না,কারণ আমি ভালোবাসি তোমাকে…।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “সরি,আমি ভালোবাসি না আপনাকে…। আর আমার রুচি এতো টাও খারাপ না,যে বিয়ে বসবো নিজের মরহুম বড় ভাইয়ের প্রিয়তম স্ত্রীর সাথে…। হ্যাঁ,আমার বড় ভাই হয়তো বেঁচে নেই।কিন্তু তার সমস্ত স্মৃতি এই বাড়িময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।আমি আমার ভাই কে ভালোবাসি এবং সারাজীবন বড় বোনের নজরে দেখেছি আপনাকে..।কাজেই এমন এক্সপেক্টেশান’স আমার কাছ থেকে রাখবেন না,কারণ আমি এমন কোনো নির্দশন দেখাইনি আপনাকে…।” জাবিন এগিয়ে এসে রিকিয়া কে জিজ্ঞেস করলো,
– “বাংলাদেশ কি আর কোনো ছেলে নেই? তোমার কেনই শুধু আমার বাবা কে বিয়ে করতে হবে…?” রিকিয়া জাবিন কে চড় মারতে তেড়ে গেলো,মিম ওর হাত মুচড়ে ধরে বলল,
– “খবরদার আর এক পা ও তুমি এগোনোর চেষ্টা করবে না আমার বাচ্চার দিকে…।” রিকিয়া হুংকার ছেড়ে বললো,
– “আমার বাচ্চা মানে কি…? তুমি নিজের পেটে ধরেছ না কি এই বজ্জাত ছেলো দু’টো কে…!” মিম মৃদু হেসে জাবিন এবং আজিনের হাত চেপে ধরে বললো,
– “চলো বাবা…। কোনো বাজে কথা খরচ করার প্রয়োজন নেই এনার সাথে।” আজিন ভেংচি কেটে বলল,
– “দাদা ভাই অফিস থেকে ফিরুক,তারপর দেখবে আম্মুর মণি উনি কত নাটক করে তার কাছে বসে…।” মিম মুচকি হেসে আজিন কে আদর করে বলে,
.
– “এভাবে বলতে হয় না বাবা,চাচি হয় তোমার ‘সরি’ বলো তাকে।” আজিম চোখ পাকিয়ে রিকিয়া কে বললো,
– “সরি চাচি।” জাবিন যেতে যেতে বলল,
– “খবরদার,আমার আম্মুর নামে বানিয়ে বানিয়ে তুমি কোনো মিথ্যে কথা বলবে না দাদু ভাইয়ের কাছে।” জাবিনের মুখে সবাই ‘আম্মু’ শব্দ টা শুনে রীতিমতো চমকে গেছে।ইমান মিটিমিটি হেসে বিড়বিড় করে বললো,
– “একজনের ‘আম্মু মণি’ আরেক জনের ডিরেক্ট ‘আম্মু’…? আর এখন ওদের বাপের বউ হওয়াটা’ই আপনার শুধু বাকি রয়ে গেছে…?” ইতি ছেলের কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
– “তুই বাদ আছিস কেন বাবা? কাল থেকে তুই ও ‘বউ বউ’ বলে ডাকতে শুরু করেদে মেয়ে টা কে…?” ইমা এখন প্রমী বললো,
– “হুমম…! ভাইয়া,তুমি চাইলে হ্যাঁ গো,ওগো,শুনছো এসব বলেও ডাকতে পারো তাকে…। উই ডোন্ট মাইন্ড এ্যাকচুয়ালি,এনজয় করবো পুরো ব্যাপার টা কে…।” রিকিয়া সবার কথা শুনে বলল,
– “আদিক্ষেতা যতসব,গা জ্বলে যাচ্ছে এক একজনের ঢং দেখে।” ইমান হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে এলো,রাতে অফিস থেকে প্রমীর মুখে শুনলো ইফতি সাহেব খুব বকাবকি করেছেন মেয়ে (মিম) টা কে…।
আর তা শুনে ইমানের মেজাজ খারাপ ও সাথে সাথেই ছুটে গেলো ইফতি সাহেবের কাছে।ইফতি সাহেব ছেলে কে বললেন,
– “দেখ বাবা…! এই নিয়ে আমি কোনো তর্ক যেতে চাই না,কিন্তু একটা বাইরের মেয়ে হয়ে মিম কি করে বেয়াদবি করতে পারলো রিকিয়ার সাথে…?” ইমান ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
– “শুধু তোমার ভাগ্নীর বানোয়াট গল্প শুনলে তো হবে না বাবা…! অন্যের দিক টা ও শুনতে হবে।”
– “কিন্তু বাবা! রিকিয়া আমাদের বাড়ির মেয়ে,তুমি কি করে বারবার অপমান করতে পারো তাকে…?” ইমান রেগে গিয়ে বলল,
.
– “তুমি কি চাও বাবা…? যে শুধু অপমানের যোগ্য,আমি অহেতুক মাথায় তুলে রাখবো তাকে?” ইফতি সাহেব বললেন,
– “মাথায় তুলতে না পারো বাবা! অন্তত সম্মান দিয়ে ভালো করে কথা বলো তার সাথে।” ইমান তাচ্ছিল্য করে বলল,
– “আই এম এক্সট্রিমলি সরি বাবা,ওই মেয়ের বেলেল্লাপনা প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সময় নেই আমার হাতে।”
– “তাহলে কি তুমি সত্যি বিয়ে করতে চলেছ ওই চালচুলোহীন মেয়ে টা কে…?” ইমান বলল,
– “মিম চালচুলোহীন নয় বাবা! ওর একটা পরিবার প্লাস পিতৃ পরিচয় আছে…। আর ও কোনো অবৈধ সম্পর্কের ফসল না,তোমার ভাগ্নীর অবস্থানে নেই সে…। তবে হ্যাঁ তুমি হয়তো ভাবতে পারো যে আমার ছেলে কেন ওই মেয়েটির হয়ে কথা বলছে? বলছি কারণ,চালচুলো কার নেই সে ব্যাখ্যায় না যাই,উভয়ের জন্যই কল্যাণকর ঠিক আছে? শুধু এতোটুকু বলতে চাই,
তোমার বোন সারাজীবন বেলেল্লাপনা করেছে,মেয়ে টাও ঠিক তাই হয়েছে।তবে আমি বিয়ে করতে রাজি,কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।” ইমানের কথা শুনে আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে রিকিয়া বললো,
– “কি শর্ত তোমার? আমাকে কি করতে হব…?” রিকিয়ার উৎকণ্ঠা দেখে ইমান বলল,
– “বেশি কিছু না,শুধু একটা দিন কারো সাহায্য ছাড়াই ঠান্ডা মাথায় আমার দু’ই ছেলে কে হ্যান্ডেল করে দেখাতে হবে।
ওদের গায়ে হাত তোলা যাবে না,বকাবকি করা যাবে না,কোনো প্রকার কষ্ট দেওয়া যাবে না,কারণ আমি মানতে পারবো না,মানে ‘না’ ঠিক আছে?” রিকিয়া সব শুনে বললো,
.
– “আমাকে পরিচারিকার কাজ করতে হবে? ছিঃ…! বাট কোনো ব্যাপার না,ইট’স ওকে।বাচ্চা সামলাতে হবে তো? কার্টুন ছেড়ে বসিয়ে দিবো কিংবা ভিডিও গেইম দিয়ে বসিয়ে দিবো শান্ত থাকবে কোনো সমস্যা হবে না তাতে…।” ইমান রিকিয়ার কনফিডেন্স দেখে হাসতে হাসতে বললো,
– “বাবাহ…! বাচ্চা পালা এতো সহজ? আগে কেউ কখনো কেন বলেনি আমাকে…?” রিকিয়া বললো,
– “ধরে নাও,আমি চ্যালেঞ্জ টা জিতে গেছি,তবে তাহলে পরশুদিন আমাদের বিয়ে টা ঘরোয়া ভাবে হবে।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “ধরে নিলাম,,,
কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ টা তুমি হেরে গেলে,ওই আসরেই মিমের সাথে আমার বিয়ে টা হবে এবং তারপর তুমি আবার কাওকে বলতে যেও না যে আমি তোমাকে কোনো সুযোগ দেইনি রিকিয়া…। ভেরি সরি,তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।” রিকিয়া ইফতি সাহেব কে বলল,
– “প্রস্তুতি শুরু করে দাও মামু,কারণ অবশেষে তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ হবে।” রিকিয়া যেতেই ইফতি সাহেব ছেলে কে বললেন,
– “বাবা, তুই এমন ভাবে খেলা খেলছিস কেন মেয়েটির সাথে…!” ইমান বলল,
– “বাড়িতে কোনো ‘বাইজি’ আমার ‘বউ’ কিংবা আমার সন্তানের ‘মা’ হয়ে আসবে না বাবা…। সে আশা মনের ভুলে ও রেখো না ঠিক আছে? এর আগে আমি একবার মানুষ চিনতে ভুল করেছি,তাই বলে বারবার করতে চাই না ঠিক আছে?।
.
– ” কিন্তু…?”
– “কি কিন্তু…? আসলে তুমি যে একতরফা বিচার টা করলে,সেটা আমার সহ্য হচ্ছে না,আমি একদম মিথ্যে বলছিনা তোমাকে…। যাগগে শুয়ে পরো বাবা,আমি ও চলে যাচ্ছি অনেক রাত হয়ে গেছে।” তখন ইতি এসে স্বামীর পাশে বসলেন,বললেন,
– “আমি কখনোই আগ বাড়িয়ে এসে কথা বলিনি তোমাদের বাবা ছেলের মাঝে…! কিন্তু,নিজের সিদ্ধান্ত টা এভাবে ছেলের ওপরে চাপিয়ে দিলে? কি ভেবে…? তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না? ইমান রিকিয়া কে পছন্দ করছে না তবুও? বারবার কেন এক প্রসঙ্গ টেনে আনছ এ বাড়িতে…?” ইফতি সাহেব নিজের স্ত্রী এর হাত আঁকড়ে ধরে বললেন,
– “রিকিয়া ব্যার্থ হলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ইমান কে ওই মেয়েটির সাথে বিয়ে দেবো সাথী (ইতি) কথা দিচ্ছি তোমাকে…।” ইমান ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে ছেলেদের ঘরে এসে দেখে মিম একা একা আনমনে বারান্দায় বসে আছে।ও হঠাৎ এক মগ কফি মিমের দিকে এগিয়ে দিলো,মিম চমকে গিয়ে বলল,
– “কখন এলেন? বুঝতে পারিনি যে…?” ইমান বললো,
– “জানি আপনি বাবার কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছেন,আমি তার হয়ে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে।” মিম মেকি হাসি দিয়ে বলল,
.
– “ব্যাপার না! উনি আমার বাবার মতোই,বকতেই পারেন আমাকে।” ইমান বলল,
– “খেয়েছেন?” মিম মাথা নেড়ে বললো,
– “হুমম…! চলুন আপনাকে খেতে দিতে হবে।” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
– “আমি এসেই খেয়ে নিয়েছি,তবে জানেন কি আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?” মিম চমকে গিয়ে বলল,
– “কি?” ইমান হাসতে হাসতে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “আলুর চিপস আর ভাঁজা কাঠ বাদাম…! আপনার যে খেতে খুব ভালো লাগে।” মিম মৃদু হাসলো,বললো,
– “আমার এতো টাও খেয়াল রাখতে বিলিনি আপনা কে…!” ইমান ফিসফিস করে বলল,
– “হুশশ…! শুধু মাএ আপনার জন্য এনেছি,এগুলো দেখাবেন না জাবিন এবং আজিন কে…।” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “কেন?” ইমান ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “অল্প এনেছি শুধু আপনার জন্যে…।” মিম হঠাৎ ইমান কে জড়িয়ে ধরলো,পরক্ষণেই বলল,
– “সরি,আবেগি হয়ে গিয়েছিলাম পাঁচ মিনিটের জন্যে…।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “আবেগ থাকা ভালো ‘সুন্দরী’ তবে খানা গুলো খেয়েনিন আগে।” মিম চুপচাপ আলুর চিপস গুলো খেয়ে নিলো,ইমান বাদামের ছোলা গুলো ছিলে দিতে লাগলো তাকে।” আড়াল থেকে তাকিয়ে তা দেখে রিকিয়া বলল,
– “যে করেই হোক! আমায় পেতেই হবে এই মানুষ টা কে…।” সকালে ইমান খবরের কাগজ পড়ছিল,তখন জাবিন এসে দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,
.
– “ড্যাড…! তুমি একা ঘরে মজার মজার খাবার এনে খাওয়াও আম্মুকে?” মিম লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে সাথে সাথেই প্রস্থান করলো,ইমানের চেহারায় কেমন যেন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব চলে এসেছে।জাবিন আর বাবাকে লজ্জা দিলো না,রিকিয়া সিঁড়ি বেয়ে নামতেই ইমান মনেমনে বললো,
– “রেডি হন ভাবি,আপনার কপালে আজ বহুত দুঃখ আছে।” জাবিন আজিন কে কানে কানে বললো,
– “আজ এমন মজা দেখাবো না,আমার ড্যাড কে বিয়ে করার সাধ ঘুচে যাবে।” আজিন আস্তে আস্তে বলল,
– “আমার আম্মু মণি কে কষ্ট দিয়েছে না ভাইয়া? আজ আমরা ছাড়বো না ওকে।” ভাইপোদের এক একজনের চেহারা দেখে ইমা প্রমী কে বলল,
– “বোঝাই যাচ্ছে রেজাল্ট কি হবে?” প্রমী হাসতে হাসতে বললো,
– “ভাই জাস্ট মজা নে,,,আমাদের কোনো ভূমিকা নেই এতে।” তখন ইমান এগিয়ে এসে মিম কে বললো,
– “চলুন রাস্তা থেকে হেঁটে আসি,রিকিয়া ওদের দু’জন কে সামলে নেবে।” জাবি মিম কে বলল,
– “গো এন্ড এনজয় আম্মু…। বাড়িতে কত লোকজন আছে।” আজিন বলল,
– “আমার জন্য চকলেট এনো কিন্তু আমি আজ হাঁটতে যাচ্ছি না তোমাদের সাথে।” মিম ভ্রু কুঁচকে ফেললো,তার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাচ্চাদের কথা ভেবে,ইমান এসে মিমের হাত ধরে বললো,
– “চলুন,এতো দুশ্চিন্তা করে কি হবে? বাচ্চারা যথেষ্ট ম্যাচুওর এমন কোনো কাজ করবে না যাতে ওদের কোনো ক্ষতি হবে।”
.
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com