Breaking News

গল্পঃ ভিলেন । পর্ব-০৩



অস্বীকার করবো না তবে মেয়েটির রুগ্ন হাতে বেশ জোর আছে কিন্তু আমি তাকে আমি ছেড়ে ও দেবো না কারণ ও আমার ওপরে মানুষ খুন করার অভিযোগ এনেছে।” অবন্তী ইমানের হাবভাব দেখে ইমানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “তবুও তোমার এভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়নি মেয়ে টি কে আর যদি নিজে না করতে পারো তাহলে আমাকে বলো…আমার বাবার অনেক লোকলস্কর আছে…।” ইমান অবন্তীর কথায় হঠাৎ করে ক্ষেপে গিয়ে বললো,
– “চুপ করো তুমি আর আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যেও না।”
.
– “ঠিক আছে…।” তখন হঠাৎ ইমানের ছোটো বোন ইমা নক না করেই তার কেবিনে ঢুকে পরে বললো,
– “ভাইয়া আজ কি ফ্রী আছো তুমি…? আমাকে বানিজ্য মেলায় নিয়ে যাবে…?” অবন্তী ইমাকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
– “সামান্য ম্যানাজ শেখনি…? নক না করে কে কার ঘরে ঢোকে…?” ইমান অবন্তীকে চুপ করিয়ে বলল,
– “শাট আপ ‘অন্তি’ তুমি আর কখনো এভাবে কথা বলবে না আমার সাথে আর হ্যাঁ আমার কাছে আসার জন্য আমার বোনের দরজা নক করে অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই ঠিক আছে…?” ইমানের কাছে বকা খেয়ে অবন্তী কিছুটা দমে গিয়ে বললো,
– “না মানে বেবি তুমি কি সত্যি ওই বাণিজ্য মেলায় যাবে…?” ইমান হাসিমুখে বলল,
– “অবশ্যই,আমার একমাএ বোন আবদার করেছে বলে কথা।”
– “ঠিক আছে…কিন্তু ইমা?” ইমা হাসতে হাসতে বললো,
– “সরি ‘অন্তি’ আপু আমরা না তোমার মতো হঠাৎ বড়লোক হইনি এভাবে…।”
– “না মানে মেলায় ছোটোলোকেরা’ই যায়।”
– “তাহলে আমি ছোটোলোক অন্তি আপু তোমার কোনো সমস্যা আছে?” ইমানের মদদত আছে দেখে অবন্তী চুপ করে গেলো আর বলল,
– “তাহলে আমি ও যাচ্ছি তোমাদের সাথে।” ইমা বললো,
– “সে তোমার ইচ্ছা,না গেলেও সমস্যা নেই ইট’স ওকে…।” এদিকে মিমকে চুপচাপ নিজের কেবিনে বসে থাকতে দেখে আফজাল সাহেব এসে মিমকে বললেন,
– “শোনো মিম আজ বিকেলে তোমাকে বাণিজ্য মেলায় একটা লাইভ শো করতে হবে…।” মিম হাসিমুখে বলল,
– “ওকে স্যার! তবে আমার সাথে কে কে যাবে?”
– “কেন ক্যামেরা ম্যান সজীব আর রাজিয়া,স্বাধীন,বেলা এবং লাইটম্যান আক্কাস ও রঙন যাবে…।” মিম খুশি হয়ে আফজাল সাহেবকে বললো,
.
– “পারফেক্ট টিম স্যার,অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে…।” বিকেলে যথারীতি ইমান ইমাকে সাথে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় পৌঁছে গেলো আর মিম এদিকে ব্যস্ত হয়ে পরলো নিজের টিমের সাথে।
ইমা হঠাৎ ইমানকে খোঁচা মেরে মিমকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “ওটা ইয়াজিদ ভাইয়ার ক্রাশ গার্ল মিম আপু না? চলো না ভাইয়া আমরা গিয়ে কথা বলি তার সাথে…।” মিমকে দেখা মাএই ইমানের চোখ কপালে উঠলো,অবন্তী কিছু বলার আগেই ইমান বললো,
– “সরি টু সে বাট আমি কিছুতেই আগ বাড়িয়ে গিয়ে কথা বলবো না ওই অসভ্য মেয়েটির সাথে…।” ইমা হাসতে হাসতে বললো,
– “বলতে হবে না আমি নিজেই গিয়ে কথা বলছি মিম আপুর সাথে…।” অবন্তী ইমার পথ আটকে বলল,
– “প্লিজ যেও না তুমি,তুমি কি জানো ওই মেয়ে কি করেছে তোমার ভাইয়ের সাথে…?”
– “হয়তো ভুলবোঝাবুঝি অন্তি আপু প্লিজ এবার আমাকে যেতে দাও।
– ” ঠিক আছে কিন্তু তুমিই দেখতেই পাচ্ছ সে কত ব্যস্ত…। বিভিন্ন লোকের লাইভ ইন্টারভিউ নিচ্ছে।” ইমান খেয়াল করে দেখলো মিমকে মন্দ লাগছে না। লাল পাইরের সাথে সাদা শাড়ি সাথে ঘটি হাতার ব্লাউজ,চুল গুলো হালকা কার্ল করা কপালে লাল টিপ এবং কালো চোখে কাজল আর দু’হাত ভর্তি চুড়ি পরে মেয়েটিকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে…। মিম মাইক্রোফোন এগিয়ে দিয়ে একটা মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপু প্রায় দেড় বছর পর এই মহামারীর মধ্যে ও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে এসে আপনার কেমন লাগছে?” মেয়েটি খুব উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে চিৎকার করে বললো,
– “ওয়েল আপু এতো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে ও বন্ধুদের সাথে বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে আসতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।
.
লাইক মনে হচ্ছে যেন খাঁচায় বন্দী থাকা পাখি হঠাৎ স্বাধীনতা যে কি? সেটা অনুভব করেছে…।” মিম তারপর মাইক্রোফোন নিয়ে ছুটে এসে একটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “এই যে লাল পাঞ্জাবি পরা ভাইয়া পরিবার-পরিজনদের সাথে নিয়ে মেলায় আসতে পেরে এখন আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে?” ছেলেটি হাসতে হাসতে বলল,
– “সত্যি বলতে ইট’স আমাজিং, আমি বোধহয় পারবোনা মুখের ভাষায় ঠিক আমার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে।
তবে দিন শেষ নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক ভালো আছি আর কি চাই…? আশাকরছি সবাই যেন ভালো থাকে…।” অতঃপর মিম পাঁচ মিনিটের ব্রেক নিয়ে বেখায়ালে হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে লাগলো,
তবে সামনের মানুষ টা সাথে সাথেই সামলে নিলো তাকে…। মিম যখন ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখলো ইমান,ওমনি চিৎকার করে বললো,
– “অসভ্য লোক! এই আপনি এটা ইচ্ছে করেছেন আমার সাথে…?” ইমান আচমকা মিমকে ছেড়ে দিলো আর ও কোমড়ে খুব ব্যাথা পেলো তা দেখে ইমান হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
– “মিসস এবার ঠিক আছে…?” মিম রেগে গিয়ে ঝাড়ি মেরে সজীব কে বললো,
– “বজ্জাৎ ছেলে এখুনি লাইভ বন্ধ কর আমাকে লাইভে দেখা গেলে তোর খবর আছে।” স্বাধীন এগিয়ে এসে মিমকে তুলে বলল,
.
– “ডোন্ট ওয়ারি,রাজিয়া বাকি নিউজ টা তোমার হয়ে কবার করছে…।” মিম ইমানকে মুখ ঝামটি মেরে কিছু বলতে যেয়ে ও চুপ করে গেলো,ঝামেলা না করে চলে যেতে লাগলো স্বাধীনের সাথে আর তখুনি ওর ফোন বেজে উঠলো,ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে আফজাল সাহেব বলে উঠলো,
– “স্বাধীন বাবা শুনেছি ইমান খান সাহেব বাণিজ্য মেলায় আছে আর তুমি এই সুযোগে সীমিত পরিসরে তার একটা ইন্টারভিউ নিয়ে নাও…। মিমকে নিতে বলিনি কারণ বাচ্চাটা আবারও ওই ভদ্রলোকের সাথে ঝামেলা পাকাবে…।” মিম হঠাৎ থেমে গিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
– “আচ্ছা আচ্ছা স্যার এতো ভাবতে হবে না আপনাকে…।” মিমের গলা শুনে আফজাল সাহেবের মাথায় হাত মুখ ফসকে বলেই ফেললেন,
– “হে আল্লাহ! কার কাছে ফোন করতে গিয়ে ফোন দিলাম কার কাছে…?” মিম মুহূর্তেই পিছনে ফিরে হাসিমুখে ইমানের কাছে এগোতে লাগলো আর তখন অন্যান্য চ্যানেলের নিউজ রিপোর্টারেরা ইমানকে ঘিরে ধরেছে।
ইমান কাওকে ইন্টারভিউ দেবে না বলে নিজের গাড়ির কাছে এগিয়ে এলো,মিম হঠাৎ পেছন থেকে মধুর কণ্ঠে ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– “স্যারররর,কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে…।” ইমান স্বাভাবিক ভাবেই পিছনে ফিরে তাকালো,মিম এটা-সেটা জিজ্ঞেস করে ইমানের একটা ইন্টারভিউ নিয়ে এলো ওখান থেকে…। ইমানের বেশ অদ্ভুত লাগলো,সে রীতিমতো দ্বন্দ্বে পরে গেলো মিমের বিহেভিয়ার দেখে…।
তবে আচমকাই সে মিমের কাছে এগিয়ে আসতে গিয়ে কাঁদার মধ্যে হোঁচট খেয়ে পরে গেলো…। মিম হাসি সামলে বললো,
– “ইসস! খুব কষ্ট হচ্ছে জনাব আমার আপনার এই কাঁদা মাখা মুখ দেখে…।” ইমান প্রচন্ড রেগে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো মিম টিসু দিয়ে ইমানের মুখ টা চটজলদি পরিষ্কার করে দিলো সাথে সাথে ইমানের চাহনি দেখে অবন্তী কে ইমা বলল,
– “কি অবস্থা হবু ভাবি তোমার হবু স্বামীর…? দেখো সে কত রোমান্টিক ভাবে সে পরনারীর দিকে তাকিয়ে আছে?” সাজিদ হাসতে হাসতে বললো,
– “তোমার কপাল পুড়লো বলে হবু ভাবি সময় থাকতে সামলে নাও নিজের স্বামীকে…।” এদিকে অফিসে আফজাল সাহেব অনেক খুশি কারণ আজ মিমের জন্য তাদের নিউজ চ্যানেলের টি.আর.পি তরতর করে বেড়ে গেছে।
অফিসে সে সবাইকে খুশি হয়ে পছন্দের ট্রিট দিয়েছে আর ওদিকে মিমকে নিয়ে অবন্তী ইমানের সাথে একচোট ঝগড়া হয়ে গেছে আর তবুও কেউ থমার নাম নিচ্ছে না।
.
অবন্তী যাচ্ছেতাই বলে গালাগালি দিচ্ছে ওকে…। ইমান বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললো,
– “তোমার মতো মেয়ের সাথে আমার প্রেম করাই ভুল ছিল…আমার চিরজীবনের মতো শিক্ষা হয়ে গেছে…।” এরপর অবন্তী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইমানকে তুইতোকারি করতে শুরু করলো বাবা-মা তুলে গালি দিতে লাগলো তাকে আর তা শুনে ইমান রাগে দরদর করে ঘামতে ঘামতে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সিগারেট টানতে টানতে দেখল মিম বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।পরনে তার সেই বাণিজ্য মেলায় পরা শাড়ি টা,তার চুল গুলো যেন অবাধ্য হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পর,
মিমের অদ্ভুত অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো,ওর মনে হলো যেন সেই মানুষ টাই হয়তোবা ওর আশেপাশে কোথাও আছে।
সে হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখলো ইমান ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে…। ও দু-এক পা পেছনে সরে গেলো সাথে সাথে পরক্ষণেই মিম হঠাৎ দ্রুত পা ফেলে হাঁটতে শুরু করলো…। ইমান মিমের পাশে পাশে ধীর গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে জিজ্ঞেস করলে,
– “মিসস! আপনার কি ভয় করছে আমাকে দেখে..?” মিম কোনো কথা বললো না ইমান হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে ওর হাত টেনে ধরলো সাথে সাথে…।” মিম ভয়ে ভয়ে ইমানের চোখের দিকে তাকালো,অতঃপর মনেমনে বললো,
– “নাঃ! আজ অন্তত স্বাভাবিক দেখতে বলে হচ্ছে লোক টা কে…।” ইমান এগিয়ে এসে মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার? ভূত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে..?” মিম মেকি হাসি দিয়ে ইমানকে বললো,
.
– “না না কিছুনা…। এখন আসি আমার বাস এসে গেছে।” ইমান কেন যেন কিছু বলতে চেয়ে ও বলল,না মিম বাসে গিয়ে উঠে পরলো সাথে সাথে…। ইমানের বিগড়ে যাওয়া মেজাজ মিমের সাথে দেখা হওয়ার পর ঠিক হয়ে গেলো আর সে মনেমনে ছোট্টো করে একটা থ্যাংকস জানালো তাকে…।” মিম বাসায় ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে চুপচাপ শুয়ে পরলো,তবে মাঝরাতে তার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে কিন্তু সে ভয়তে চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা বারবার মনে হচ্ছে কে যেন তার পাশেই শুয়ে আছে।সে একটু ডান পাশ ফিরে শুতে চেয়ে ছিল কিন্তু পরক্ষণেই কারো গরম নিশ্বাস এসে পরলো তার কাঁধে…।
মিমের শরীর বরফের ন্যায় ধীরে ধীরে জমে যেতে যেতে শুরু করলো,যখন সেই অজানা-অচেনা লোকটা তার একটি আঙুল স্লাইড করতে লাগলো ওর ঠোঁটে…। তার মিনিট দশেক পর হঠাৎ মিমের ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো,মিম ঝটপট চোখ মেলে চেয়ে দেখলো আশরাফ সাহেব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।মিম আশেপাশে কাওকে না দেখতে পেয়ে ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর সে বেলকনিতে দেখতে পেলো কেউ তার দোলনায় বসে আছে।ও কিছু বলার আগেই মাসুমা বেলকনির দরজা লাগাতে এগিয়ে গেলেন মিম বললো,
– “মা যেও না ওখান টা তে…।” মেয়ের কথা শুনে দু’জনেই বেশ চমকালো তখন মিম দেখলো সে অবয়ব টা কে উঠে দাঁড়াতে ও বেশ ভয় পেয়ে গেলো আর হঠাৎ করেই দেখতে পেলো সেই ভয়ংকর নীলচে চোখ দু’টো কে…।
.
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com