Breaking News

গল্পঃ অত্যাচার । পর্ব-০১


আহ…..ইশশ…..উফফ…..আহহ আল্লার দোহাই
লাগে ভাবী আমাকে আর মেরো না?তোমার হাতের
চাবুকের আঘাত গুলো আমি আর সজ্য করতে
পারছি না।সকাল বেলাতেও ভাইয়া আমাকে খুব
মেরেছে।আর এখন তুমি মারছো।আমি তো কোনো
পাথর নই যে আমাকে আঘাত করলে যন্ত্রনা পাবো
না।আমিও তো একজন মানুষ আমারো তো যন্ত্রনা
হয়।প্লিজ আর মেরো না আমাকে? তুমি তো আমার মায়ের মতো?একটু দয়া করো? এভাবে আমাকে
আর আঘাত করো না?
___ বড় ভাবীর পা জড়িয়ে ধরে অনাবরত চোখের
অশ্রু ফেলে কথা গুলো বলল শাহরিয়ার।
কিন্তু কি নিষ্ঠুর তার ভাবী একটু দয়া করছে না।
লাথি দিয়ে শাহরিয়ার কে ধুরে ঠেলে দিলো।
কোনো উপায় না পেয়ে শাহরিয়ার তার ছোট
ভাবীর পা ঝাপটি মেরে জড়িয়ে ধরে বলল………..
শাহরিয়ারঃ ও ছোট ভাবী তোমার দুটো পায় পড়ি
বড় ভাবী কে একটু বলো না। যে আমাকে আর
মারধোর না করতে। আমি যে এগুলো আর সজ্য
করতে পারছি না?
.
___ শাহরিয়ারের বলা কথা গুলো শুনে শাহরিয়ারের
ছোট ভাবী মুচকি একটা হাসি দিয়ে….সজোরে
একটা লাথি মারে।তারপর লাঠি দিয়ে তাকে
ইচ্ছে মতো আঘাত করতে থাকে……..
___ শাহরিয়ার যন্ত্রনায় বাবা বলে চিৎকার দিয়ে
উঠে।একটা মুরগী কে জবাই করা হলে যেভাবে
যন্ত্রনায় গড়াগড়ি – লাফালাফি করে ঠিক তেমনি
শাহরিয়ার ও যন্ত্রনায় ফ্লোরে গড়াগড়ি-লাফালাফি
করছে।কতটা না অসহায় শাহরিয়ার। কিছুই
করতে পারছে না সে? এক সময় শাহরিয়ার তার
নিজের জ্ঞান হারিয়ে বসে। তারপরেও আঘাতের
পর আঘাত করে যাচ্ছে,শাহরিয়ারের জ্ঞানহীন
দেহে/এমনকি বাসার কাজের লোক রফিক কাকা
যাকে শাহরিয়ার কখনো এ বাসার কাজের লোক
ভাবতো না।সবসময় তাকে এ বাড়ির একজন সদস্য
হিসেবে মনে করতো? আর সেই রফিক কাকাও
শাহরিয়ারের জ্ঞানহীন দেহে আঘাত করছে।
শাহরিয়ার কে মারধর করার ইচ্ছে মিটে গেলে
তাকে তার রুমে টেনে হিচরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে কেনো এই অত্যাচার সজ্য করতে হচ্ছে
শাহরিয়ার কে? মৃত্যুর আগে শাহরিয়ারের বাবা
সব সম্পত্তি শাহরিয়ারের নামে লিখে দিয়ে যায়।
তিন সন্তানের ভিতরে শাহরিয়ার কেই বেশি
বিশ্বাস করতো তার বাবা।কারন শাহরিয়ার
সরল সোজা,সবসময় সৎ পথে চলে এবংসব সময়
সৎ কাজ করে।তাই মৃত্যুর আগে শাহরিয়ারের বাবা শাহরিয়ার কে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে
বলেছিলো………..…এই বাড়িটা বাধে সব সম্পত্তি
গরিবদের দান করে দিতে।আর সেদিন শাহরিয়ার
ও তার বাবা কে কথা দেয় সে তার কথা রাখবে।
কিন্তু একসময় শাহরিয়ারের দুই ভাই ও দুই ভাবী
তাকে নানা ভাবে অত্যাচার করতে শুরু করে
শুধু মাত্র সম্পত্তি গুলোর জন্য।এমন কি বাহিরের
সমস্ত লোকের সামনে শাহরিয়ার কে পাগল বানিয়ে
দিয়ে তারা এখন বড় বড় কম্পানি গুলো চালাচ্ছে।
কিন্তু সম্পত্তি গুলো শাহরিয়ারের নামে থাকায় তারা
সম্পূর্ন ভাবে নিজের নামে করে নিতে পারছে না।
তাই শাহরিয়ার কে নানা ভাবে অত্যাচার করে
তার থেকে সম্পত্তি গুলো কেরে নিতে চাইছে?
কিন্তু শাহরিয়ার যে তার বাবাকে কথা দিয়েছে।
সেই বাবা যেই বাবা, মা মারা যাওয়ার পরও তাকে
কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি আর এমনিও
শাহরিয়ার কখনো কোনো কথার খিলাপ করেনা।
যদি বা হয় নিজের বাবার দেওয়া কথা তাহলে
তো কোনো প্রশ্নই আসে না।নিজের জান দিতেও
প্রস্তুত তারপরেও বাবার দেওয়া কথা ক্ষেলাপ
করে কখনো শাহরিয়ার তার লোভী দুই ভাইয়ের
নামে সম্পত্তি লিখে দিবে না?
.
___ শাহরিয়ারের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে
দেখতে পায় নিজেকে নিজের রুমে।খুব কষ্ট হচ্ছে
তার? নিজের ভাইয়েরা এতো লোভী ভাবতে ও
ঘৃনা হচ্ছে শাহরিয়ারের? বিছানার এক কোনে বসে
কাঁদতে কাঁদতে শাহরিয়ার বলল………
শাহরিয়ারঃ হে আল্লাহ তুমি আমার ভাইদের একটু
হেদায়েত দান করো তারা জানি নিজের ভুল
বুঝতে পারে।আল্লাহ আমাকে তুমি এসব থেকে
মুক্ত করে দেও আমি আর ধর্য ধরে থাকতে
পারছি না।হঠাৎ করেই পিছন থেকে আমার
বড় ভাই এসে আমাকে লাথি মারে? আর আমি
উল্টিসুল্টি দিয়ে বিছানা থেকে ফ্লোরে পড়ে যাই।
এমনিতেই শরীরে প্রচুর যন্ত্রনা আর তার মধ্যে
ভাইয়া এসে পিছন থেকে লাথি মারলো মনে হচ্ছে
যন্ত্রনায় আমি মরেই যাবো। যন্ত্রনায় ফ্লোরে গড়াগড়ি করে কান্না করছি চিৎকার দিয়ে গড়াগড়ি করতে
করতেই ভাইয়ার পা জড়িয়ে ধরে বললাম……….
ভাইরে আর মারিস না আমারে খুব কষ্ট হয় আমার।
বড় ভাইঃ আচ্ছা তোকে আর মারবো না।
আগেও ভালোভাবে বলছি এখনো আবার বলছি
সম্পত্তি গুলো লিখে দে আমাদের নামে?
শাহরিয়ারঃ ভাইরে ধনসম্পত্তি আসল সুখ না।
আসল সুখ পাওয়া যায় সবসময় অন্যকে সাহায্য
করে ভালো ধরনের কাজ করে? সম্পত্তির মোহ
ছেড়ে দে একা এসেছিস একাই যেতে হবে তোকে?
আর বাবা কে আমি কথা দিয়েছে এই বাড়িটা
রেখে সব সম্পত্তি বিলিয়ো দিবো গরিবদের মাঝে।
এখনো সময় আছে ফিরে আয় ফিরে আয়
সত্যের পথে?
.
বড় ভাইঃ চুপ কর কুত্তার বাচ্চা? তুই তাহলে
ভালো কথা শুনবি না?
___ কথা গুলো বলার সাথে সাথে শাহরিয়ার কে
কোষে দুটো থাপ্পর মারে? থাপ্পর টা খেয়ে
শাহরিয়ার কিছু ধুর চলে যায় আর তার ঠোঁট
খানিকটা কেটে যায়। গালে হাত দিয়ে কান্না
করতে করতে তাকিয়ে আছে তার নিজের
আপন ভাইয়ের দিকে?
বড় ভাইঃ শুন আজকে আমার মনটা বেশ
ভালো তাই তোকে আর কিছু করলাম না?…..
___ কথাগুলো বলেই শাহরিয়ারের ভাইয়া সেখান থেকে চলে যায় আর শাহরিয়ার তখনো নিজের
ভাইদের হেদায়াতের জন্য প্রার্থনা করছিলো?
___ নতুন এক ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে শাহরিয়ারের
দুই ভাই ও দুই ভাবী? তারা অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক
করে তাদের চেনাজানা কারো সঙ্গে শাহরিয়ারকে
বিয়ে নামক পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ করে দিবে।
যাতে সে মিথ্যে ভালোবাসা দিয়ে ধন-সম্পত্তি গুলো
হাতিয়ে নিয়ে দিতে পারে?
.
___ অনেক জোড়া জোড়ির পর শাহরিয়ার কে
জোর করে অবশেষে বিয়ে করতে বাধ্য করে তারা?
___ বাসর ঘরের ভিতরে গিয়ে শান্তা নিজের বিয়ে
করা শামী শাহরিয়ার কে দেখতে না পেয়ে চমকে
যায়।রুমের চারিদিকে ভালো করে তাকিয়ে সে
দেখতো পেলো শাহরিয়ার বিছানার পিছনে
গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে ভয়ে কাপছে এবং মাঝে মধ্যে
কাঁদো কাঁদো শব্দ করছে?তাকে দেখতে পেয়েই
সঙ্গে সঙ্গে পা জড়িয়ে ধরে বলল……..
শাহরিয়ারঃ প্লিজ আমাকে মারবেন না?দয়া করুন।
আমার শরীরে এমনিতেই খুব ব্যাথা?আমি দরকার।
হলে সারা জীবন আপনার পায়ের নিচে পড়ে থাকবো
তবুও প্লিজ আমাকে মারবেন না।
___ কথাগুলো বলার পর পরি শাহরিয়ার তার
পান্জামী টা খুলে শান্তাকে দেখিয়ে বলল…….
শাহরিয়ারঃ এই দেখুন আমার শরীরে এখনো অনেক
আঘাতের চিন্হ রয়েছে।তার মধ্যে আমাকে আর
মারবেন না প্লিজ?
..
___ শাহরিয়ারের এমন অবস্থা দেখে শান্তার মনটা
নিমিষেই গলে যায়।সৃষ্টি হয়ে যায় অদ্ভুধ এক মায়ার।
শান্তাঃ কেউ কি নিজের স্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরে
এমন করে কাঁদে? উঠো বলছি?
শাহরিয়ারঃ আগে বলেন আপনি আমাকে মারবেন
না?……
শান্তাঃ আমি তোমাকে কেনো মারবো? তুমি
তো আমার শামী?
___ তারপর শান্তা জোড় করে শাহরিয়ার কে
বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে তার শরীরে ঔষদ
লাগিয়ে দেয়। আর শাহরিয়ার বারবার যন্ত্রনায়
আতকে উঠছে।শান্তার ঔষধ লাগানো শেষ হলে
শাহরিয়ার তাকে বলল……..
শাহরিয়ারঃ আপনি না খুব ভালো?জানেন আমার
বাসার সবাই আমাকে আঘাত করে যন্ত্রনা দেয়।
অত্যাচার করে? এমনকি আমাদের বাসার কাজের
লোকটা যাকে আমি সবসময় নিজের কাকা
মনে করতাম সে নিজেও আমাকে খুব মারধর করে?
আপনিও কখনো আবার আমাকে অত্যাচার করবেন
না তো?
.
___শাহরিয়ারের কথা গুলো শুনে খুব মায়া লাগলো
শান্তার।শান্তা নিজের অজান্তেই শাহরিয়ারকে
বিছানায় সুইয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে। শাহরিয়ার নিজেকে শান্তার কাছ থেকে
ছাড়াতে চাইলে শান্তা বলে উঠলো………..
শান্তাঃ চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো?
___শাহরিয়ার আর কিছুই বলতে পারলো না।
সে না চাইতেও শান্তার জোড়াজোড়ি তে ওমনি
ঘুমিয়ে যেতে বাধ্য হলো?
___ শাহরিয়ার ঘুমিয়ে গেছে প্রায় অনেক্ষন হয়ে
গেছে কিন্তু শান্তার চোখে এখনো ঘুম আসছে না?
___ শান্তা মনে মনে ভাবছে……..
তাকে তো অন্য একটা কাজে নিয়োজিত করা
হয়েছে।তাহলে সে কেনো প্রথম রাতেই শাহরিয়ারের
মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। সে কি সত্যি সত্যিই তার
কাজটা ঠিক মতো করতে পারবে? কি পারবে না।
যদি কাজটা সে দ্রুত করতে না পারে তাহলে তো
টাকার অভাবে হাসপাতালে থাকা তার ভাইটা মারা
যাবে?……
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com