Breaking News

ভালোবেসে ভুল করিনি । পর্ব -০৩



তার মানে সবকিছুর পিছনে রোহিকা ভাবী?কিন্তু
রোহিকা ভাবী কেনই বা এমনটা করলো?কি তার
উদ্দেশ্য?কি চায় সে!রোহিকা ভাবীর এরুপ কর্মকান্ডে
আমি স্পষ্ট বুঝতে পাচ্ছি,রোহিকা ভাবী আমার আর
রাইয়ের ভালোবাসার সংসারটা ভেঙে ফেলার অপচেষ্টা
করছে কিন্তু এসব করে রোহিকা ভাবীর ঠিক কি লাভ
হবে?জানিনা রোহিকা ভাবী কেনও আমাদের সংসারটা
ভাঙতে চান তবে এর রহস্য,যে করেই হোক আমার
চোখে ঝাপসা থেকে পরিষ্কার করতেই হবে।ঠিক মনে
পড়ছে না শেষ কবে নিজের ফোনটাকে ছুয়ে ছিলাম।
ফ্লাটের সব জায়গায় ভালো করে খুঁজেও পেলাম না!কি
আশ্চর্য,আমার ফোনটা ফ্লাট থেকে কোথাই বা যাবে?
নিশ্চয়ই কেউ আমার ফোনটা সরিয়ে ফেলেছে।এটা
রোহিকা ভাবীর কাজ নয় তো?রাই হীন এই কদিন
আমার বুকটা কষ্টের নদীতে ভেসে যাচ্ছিলো।রাইও কি
আমি হীন এভাবেই কষ্ট পাচ্ছে?এখন যে করেই
হোক সর্ব প্রথম রাইয়ের সাথে যোগাযোগ করার কোনো
মাধ্যম খুঁজে বের করতে হবে আমাকে।উফ কি মুশকিল
রাইয়ের মা বাবা আত্মীয়-স্বজন কারও নাম্বারি তো
আমার কাছে নেই।রাইয়ের জন্য আমার মনটা
প্রতিনিয়ত উতলা হয়ে রয়েছে।রাইকে দু নয়ন জুড়ে
দেখতে ইচ্ছে করছে,তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে,
তার কপালে পবিত্র এক চুমু একে দিয়ে বলতে ইচ্ছে
করছে অসীম ভালোবাসি তোমায়।এখন যত দ্রুত সম্ভব
আমাকে রাইয়ের কাছে অর্থাৎ রাইয়ের বাবার বাড়িতে
যেতেই হবে।পরবর্তীতে এসে রোহিকা ভাবীর একটা
ব্যাবস্থা করে বাসা ছেড়ে দিবো।অতঃপর দ্রুত রেডি
হয়ে ফ্লাট থেকে বের হতে না হতেই রোহিকা ভাবী
সামনে এসে হাজির!
.
—এসব কি শাহরিয়ার?তোমার না আমাকে বাজার
করে দেওয়ার কথা ছিলো?বাজার গুলো কোথায়
আমার?লিষ্টে যা যা লিখে দিয়েছিলাম,সব কিছু সঠিক
ভাবে নিয়ে এসেছো তো?বাজার কোথায়?তোমার হাতে
বাজারের ব্যাগ বা থলে তো দেখতে পাচ্ছি না!তার মানে
তুমি এখনো বাজারে যাওনি?
.
রোহিকা ভাবীর কোনো কথার কোনো উত্তরি আমি
দিচ্ছি না।এক কথায় তাকে আমি পাত্তাই দিচ্ছি না।
রোহিকা ভাবীর সাথে এই মুহূর্তে কথা বলার কোনও
মন-মানসিকতা অন্তত আমার নেই।রোহিকা ভাবীকে
এখন দেখলেই কেনো জানি আমার ঘৃনা ঘৃনা লাগে।
চুপচাপ নিস্তব্ধ হয়ে রোহিকা ভাবীর পাশ কাটিয়ে দ্রুত
বেগে চলে গেলাম।রোহিকা ভাবী হয়তো হঠাৎ আমার
কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করেনি।অনেক বার
পিছন থেকে আমাকে ডেকেও ছিলো কিন্তু তারপরেও
কোনো লাভ হয়নি।রাস্তার এ পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
রাইদের শহরে যাওয়ার বাস রাস্তার ওপাস থেকে ছাড়ে
।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তা পার করে ওপাশে যাওয়ার
চেষ্টা করছি।তেমন একটা যানবাহনের চলাচল দেখতে
পাচ্ছি না।বুক ভরা কষ্ট আর নানা ধরনের টেনশন যেন
আমার মাথায় ঘুর্নায়মান ঘুর্নি-ঝড়ের সুত্র-পাত ঘটাচ্ছে।
না জানি আমাকে না পেয়ে রাই এখন কি করুণ
দশাতেই না রয়েছে।হঠাৎ করেই নীল রঙের একটা
গাড়ি এসে আমাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে রাস্তার মাঝে
ফেলে দিয়ে চলে যায়।মানুষ আজ কত নিষ্ঠুর একবার
ঘুরেও দেখলো না,যে কার রক্ত জড়িয়ে এভাবে দেখেও
না দেখার অভিনয় করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।
ভাগ্যািস তেমন একটা ক্ষতি হয়নি আমার!শুধু মাথাটাই
বেশ খানিকটা ফেটে গিয়ে রক্ত-পাত হচ্ছে।এর জন্য
দুদিন হাসপাতালে থাকতে হয় আমাকে।খবর পেয়ে
একবার রোহিকা ভাবী এসেছিল আমাকে দেখতে।
অনেক বার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যার্থ
হয়েছেন,শেষ-মেশ মুখ কালো করেই তাকে তার বাসায়
ফিরতে হয়।
.
আজ আবার রাইয়ের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু
করলাম।এখন যখন রাইয়ের বাবা সব কিছু মেনেই
নিয়েছেন তাহলে শশুর বাড়ি বলাই উত্তম।রাইদের
বাড়িতে আসতে আসতে রাত হয়ে যায়।গেট সাজানো
বাড়ি আস-পাশটা পেন্ডেল দিয়ে সাজানো।সারা
বাড়িতে লাল-নীল নানা রকমের বাতি জিল-মিল
করছে।অনেক মানুষের আনাগোনা,দেখে তো মনে হচ্ছে
বিয়ে বাড়ি?আমি আবার ভুল ঠিকানায় চলে আসলাম
না তো?নাহ ঠিকানা তো ঠিকি আছে।এটাই রাইদের বাড়ি।
কিন্তু রাইদের বাড়িতে ঠিক কার বিয়ে সেটাই
আমাকে খুব করে ভাবাচ্ছে।আমার জানা মতে রাইয়ের
কোনো ভাই বা বোন নেই।বাবার একমাত্র সন্তান হচ্ছে
রাই।তবে রাইদের বাড়িতে আবার ঠিক কার বিয়ে হচ্ছে
?না চাইতেও মাথার ভিতরে নানা ধরনের দুশ্চিন্তার
উদ্ভব হতে শুরু করলো।কেনও জানি ভয়ে আমার
শরীরটা ছমছম করছে,বাড়ির গেট অতিক্রম করে
ভেতরে প্রবেশ করতেই কিছু কিছু লোকের দৃষ্টি আমার
উপর এসে পড়ে।কি অদ্ভুত চাহনি তাদের!চোখ মুখ
দেখে তো মনে হচ্ছে তারা রেগে আছেন।বাড়ির ভেতরে
যতই এগোচ্ছি আমার উপর আসে পাশে অবস্থানরত
মানুষের চোখের দৃষ্টি ততই বাড়ছে।বুঝে উঠতে পারছি
না।সবাই কেনও তাদের অদ্ভুত চোখের চাহনি আমার
উপর নিক্ষেপ করছে?আরেকটু সামনে এগোতেই
আমার সম্পূর্ন পৃথিবীটা যেন কালো আধারে ঢেঁকে
আসতে আরম্ভ করে।চোখের সামনে লাল শাড়ি পরণে
বধু সেজে বসে রয়েছে রাই।যা আমার কল্পনারও
বাহিরে ছিল।তাহলে কি নীল রঙের কাগজে যা লেখা
ছিল তা সব সত্যি ছিলো?কিন্তু তা কি করে হয়,নীল
রঙের কাগজের লেখা গুলো তো রোহিকা ভাবীর ছিল?
কি হচ্ছে এসব।মাথা কেনও ঘুরাচ্ছে আমার!রাই
আমাকে দেখতে পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তার বাবাকে
আঙ্গুল দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বললো……..
— বাবা ওই বেইমানটাকে আমার চোখের সামনে থেকে
চলে যেতে বলো?আমি ওর পাপি মুখ অবধি দেখতে
চাইনা?
.
রাইয়ের বলা কথা গুলো,যেন আমার বুকটা ভেদ করে
অন্তরে গিয়ে তীব্র আঘাত করলো।কি বলছে এসব
রাই?রাইয়ের কাছে গিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে কান্না
ভেজা কন্ঠে বললাম, এসব কি বলছো রাই?আর তুমি
বধুর সাজে কেনো?কি হচ্ছে এসব?আমার কথার
উত্তরে রাই এই প্রথম বারের মতো আমার গালে দুটো
কোষে থাপ্পর বসিয়ে দেয়।রাইয়ের থাপ্পর যেন আমাকে
সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দেয়।অতঃপর রাই কিছুটা ভেজা কন্ঠে
আমাকে বলল………
—-খুব অবাক হচ্ছিস আমাকে বধু রুপে দেখে’তাই না?
হ্যা আজ আমার বিয়ে!তোর জন্য কি করিনি আমি?
নিজের পরিবার ছেড়ে তোর মতো দু”পয়সা ওয়ালা
একটা অনাথ ছেলের হাত ধরেছিলাম।যখন শুনলাম,
তোর বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই তারপরেও তোকে আমি মেনে নিয়েছিলাম।
আরেহ,তোকে এই হৃদয়ে গেথে
.
রেখেছিলাম?যেখান থেকে দুনিয়ার কেউ বের করতে
পারতো নাহ।কিন্তু তুই নিজের ভুলের কারণেই আমার
হৃদয় থেকে বেড়িয়ে গেলি?তুই আমার সাথে বেইমানি
করেছিস শাহরিয়ার?আমাকে ভালোবাসার নামে ধোকা
দিয়েছিস?আমার ভাবতেও খুব অবাক লাগছে আমার
রুচি এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিলো,যে তোর মতো এক
চরিত্রহীন মানুষকে নিজের সারা জীবনের সুখ-দুঃখের
সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলাম।
রাই এসব কি বলছো তুমি?আমি কেনই বা তোমাকে
ধোকা দিবো?তুমি তো ভালো করেই জানো তোমাকে না
দেখা মাত্র আমি থাকতে পারিনা?তুমি আমার পাশে না
থাকলে,যে আমি হাটতেও পারি না?তুমি ছাড়া যে
আমার জীবনটা অঁচল।তারপরেও কেনও এসব কথা
বলছো?আমাকে এভাবে সবার সামনে অপমান করছো
কি আমার অপরাধ!কেনই বা তুমি আজ এমন করছো
আমার সাথে?
—-জঘন্য পাপ করার পরেও কেনও নিজেকে বারবার
স্বাধু হিসেবে প্রমান করতে চাচ্ছিস?আর কত মিথ্যা
বলবি তুই?তোর কি লজ্জা বলতে কিছুই নেই? হুরর
আমি কেনই বা তোর সাথে অযথায় কথায় জড়াচ্ছি?
তোর করা পাপ গুলো দেখিয়ে দিলেই তো,যেখানে তুই
এমনিতেই নিজে থেকেই চুপসে যাবি?
রাই কথা গুলো বলার পরপরই একটা ফোন আমার
কাছে এগিয়ে দিয়ে বলল,
.
—-নিজের চোখেই দেখ! ”তোর করা পাপ গুলো?
অতঃপর তুই নিজেই শিকার কর!তোর সাথে এর চেয়ে
আর কোন জঘন্য ব্যাবহারটা আমার ঠিক করা উচিত?
ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু ছবির দিকে তাকাতেই আমার
চোখ গুলো রুপ কথার গল্পে বিদ্যমান থাকা কোনও
এক দানবের চোখের মতো বড় বড় হয়ে যায়।সত্যিই
অবাক না হয়ে আর পারলাম নাহ!ছবিতে স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে রোহিকা ভাবীর সাথে আমি অন্তরঙ্গ অবস্থায়
পড়ে রয়েছি।নিজের চোখকে যেন আমি নিজেই বিশ্বাস
বলতে কিছুই করতে পারছি না?কিন্তু এটা কি করে
সম্ভব আমি তো রোহিকা ভাবীর সাথে এমন কিছু
করিইনি?তারমানে ওইদিন যখন আমি ঘুমের ঔষুধ
খেয়ে ঘুমে মগ্ন ছিলাম তখন রোহিকা ভাবী আমার
ফ্লাটে এসে নিজের সাথে আমার আপত্তিকর ছবি তুলে
নিজেই রাইকে পাঠিয়েছে?রোহিকা ভাবীর উপর প্রচন্ড
রাগ হচ্ছে আমার।তার নাম শুনলেই ঘৃনায় আমার
শরীরটা নিমিষেই শির শির করে উঠছে।রোহিকা ভাবীর
তো আমি কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে কেনও সে
আমার সাথে এমনটা করলো?
—কি হলো এখন চুপ কেনো?হাওয়া বেড়িয়ে গিয়েছে?
—বিশ্বাস করো রাই আমাদের ভালোবাসার কসম করে
বলছি এসব মিথ্যে?আমি বলছি আসলে সত্যিটা কি,
রোহিকা ভাবী……
—-Stop! শাহরিয়ার?আমি আর কোনও কথা অন্তত
তোর মুখ নামক এই পাপি ডিবাইস দিয়ে শুনতে চাইনা,
আমি তোকে সেদিন বলেছিলাম না?আর কোনো ভুল
না করতে?তাহলে আমাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে
ফেলবি?এখন আর কিচ্ছু করার নেই।ভালো সেটাই হবে
তুই আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে যাহ,এখান থেকে
আর যাওয়ার আগে আমার সাইন করা এই ডিভোর্স
পেপার গুলো নিয়ে যাহ?এখন শুধু তোরই সাইন করা বাকি রয়েছে।
দ্বিধা বোধ না করে সাইনটা করে দিস?
—রাই…….
.
—বাবা তুমি যদি তোমার মেয়ের মুখে একটু হাসি
অন্তত দেখতে চাও?তাহলে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে
থাকা এই বেইমান ধোকা বাজ মানুষটিকে গাঢ় ধাক্কা
দিয়ে তাড়িয়ে দেও?
অতঃপর রাইয়ের কথা মতো তার বাবা আমাকে গাঢ়
ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।একটি বারের মতোও কেউ
শুনতে চায়নি আমার কথা!যখন আমাকে টেনে-হিঁচরে
বাড়ির গেটের সামনে এনে গাঢ় ধাক্কা দিয়ে বের করে
দেওয়া হয় তখন বাড়ির গেটের সামনে ফুল দিয়ে
সাজানো একটা গাড়ি উপস্থিত হয়।এবং সেই গাড়ি
থেকে বরের সাজে নিজের সুখ দুঃখের ছোট বেলার
সঙ্গি রাকিব কে দেখে সত্যিই,আজ একের পর এক
ঘটনা আমাকে অবাক না করে আর পারছে নাহ?
রাকিব তো খুব ভালো করেই জানতো আমি রাইকে
ভালোবাসি।তাহলে ও কি করেই বা পারলো আজ
বরের রুপে এখানে হাজির হতে……………
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com