Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১৩



অনু কিছু বলতে যাবে এমন সময় ঈশা আবারও বলতে লাগলো
— থামো অনু। আর কিছু বলিও না তুমি। আমি জানি তোমাকে ওভাবে বলাটা আমার উচিৎ হয়নি।
তবে আমি বাধ্য হয়েছি তোমায় বলতে। আর আংকেল আমি এখানে আসলে আপনাদের সমস্য হয় তাই তো?
ঈশা কথাটা বলে একটু থেমে গেলো। ঈশা শেষ বারের মতো ভেবে নিচ্ছে এখন ও যা বলবে তা কি করতে পারবে? বুকের ভিতরটা মুচরে উঠে ঈশার। তবে বুকে পাথর চেপে হলেও অয়নের ভালোর জন্য তাকে এ কাজ করতে হবে। ঈশার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ঈশা চোখের জল মুছে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে
— আর আসবো না আমি। যত কষ্টই হোক না কেনো আমার ছায়া অয়নের উপর আর পরবে না। আশা করি এবার আপনারা খুশি।
.
ঈশা কথা শেষ করতেই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অনু বাঁকা হেঁসে নিজের মনের আনন্দ জানান দেয়।
অয়নের বাবা নিশ্চুপ হয়ে আছে।
কি বলা উচিত বা কি করা উচিত তা উনি জানেন না। অনু মনে মনে বলছে
— যাক ভালোই হলো। অপদটা নিজে থেকেই চলে গেছে। আমি আরো কত‌ না চিন্তা করেছি।
ভেবেছি আরও কত কিছু না করতে হয় এই ঈশাকে অয়নের কাছে থেকে সরাতে।
কিন্তু না পরিস্থিতির চাপে ঈশা নিজেই চলে গেছে। ভাগ্য আমার সাথে আছে।
আল্লাহ এভাবেই আমার পাশে থেকো!
কথা গুলো ভাবতেই অনুর মনটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো।
এই বার পূরণ হবে তার নির্দিষ্ট লক্ষ, উদ্দেশ্য।
ঈশা বাসায় ফিরে আসতেই ঈশার বাবা মা তাকে জেরা করা শুরু করলো।
— সকাল থেকে কোথায় ছিলি তুই?
ঈশার বাবার প্রশ্নের জবাবে নিরব ঈশা। ঈশার মা একটু হুংকার দিয়ে বলল
— এখন চুপ করে আছিস কেনো? উত্তর দে!
ঈশা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিচু স্বরে বলল
— অয়নকে দেখতে গিয়েছিলাম।
.
কথাটা শেষ করতে পারলো না ঈশা। তার আগেই ঈশার বাবা তাকে সজোরে
— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসসস। এই কথাটা বলতে লজ্জা লাগে না তোর? তোর জন্য সোসাইটিতে মাথা হেড হয়ে যাচ্ছে আমার। লোকে আঙ্গুল তুলছে আমাদের দিকে। এই দিন দেখার জন্য আমরা তোকে জন্ম দিয়েছি?
এলোমেলো চুলে এক হাত গালে চেপে মাথাটা নিচু করে আছে ঈশা। কিছু বলার ভাষা নেই তার মুখে। তার বাবা যা বলছে তা সত্যি। ঈশার মা আবারও হুংকার ছাড়লেন। উনি বললেন
— স্বাধীনতা। ফ্রিডম। এতোটাই স্বাধীনতা দিয়েছি যে, মেয়ে এখন তার সুযোগ নিয়ে আমাদের মান সম্মান ডোবাচ্ছে।
ঈশা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। এমনিতেই মনের অবস্থা খুব খারাপ তার উপর এসব কথা। কার সহ্য হয়? ঈশা তার মা এর চোখ বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ঈশা বলল
— কি করেছি আমি? কি জন্য তোমরা আমার জন্য লজ্জা পাচ্ছো?
ঈশার কথা শুনে তার মা এর ভিশন রাগ হলো। উনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভারি কন্ঠে বললেন
— কি করিসনি তুই? যে ছেলের পরিবার তোকে এতো অপমান করলো। তারপর ও কেনো সেই ছেলের সাথে দেখা করতে গেছিস? বার বার অপমানিত হতে যাস কেনো?
.
— ভালোবাসি মা। তারে ভালোবাসি বলে বার বার যাই।
ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না তাই যাই। আর কি যেনো বললেন স্বাধীনতা!
আমি এমন কিছু করিনি যাতে করে তোমাদের মান সম্মান শেষ হয়।
আমি ভালোবেসেছি। যদি কাউকে ভালোবাসা স্বাধীনতার সুযোগে নেয়া হয়।
তবে আমি বলবো এমন সুযোগ সবাই নেয়। আমি একা নই। সোসাইটিতে সবাই বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলে?
আচ্ছা বলে দিও তোমাদের সোসাইটিকে আজকের পর থেকে ঈশা আর কখনও অয়নের কাছে যাবে না।
ঈশার মন আর কখনও অয়নের শূন্যতা অনুভব করবে না।
বলে দিও তাদের আমি তাকে নিজে থেকে মুক্তি দিয়ে এসেছি।
* ঈশার কান্না ভেজা কন্ঠে বলা প্রতিটি কথা বাকরুদ্ধ করেছে সকলকে।
অবাক চোখে ঈশার বাবা মা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে।
ঈশা চোখের কোণে জমে থাকা নোনা জল হাত দিয়ে সরিয়ে নিজের রুমে দিকে
চলে আসে। ঈশার প্রবল আশা ছিলো এই সময়টাতে কেউ তার পাশে থাকুক আর না
থাকুক তার পরিবার সব সময়ের মতো তার পাশে অবশ্যই থাকবে কিন্তু না।
আজ সবাই বদলে গেছে। ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
খারাপ সময় সবাইকে একা লড়াই করতে হয়। এটা বাস্তব কথা।
— নার্স ইমিডিয়েটলি ডক্টরকে ইনফ্রম করুন। ফাস্ট অয়নের চোখ জোড়া কাঁপছে।
ওর মনে হয় জ্ঞান ফিরেছে। গো ফাস্ট প্লিজ
.
বিচলিত কন্ঠে নার্সকে নির্দেশ দিলো অনু। অনু অয়নের গাল স্পর্শ করে মলিন কন্ঠে বলতে লাগলো
— অয়ন চোখ খোলো প্লিজ। একটু তাকাও আমার দিকে। কথা বলো। প্লিজ অয়ন কোঅপারেট মি।
অনু অয়নের জন্য ব্যাকূল হয়ে উঠলো। অয়ন চোখ খুলতে গিয়েও পারছে না। কিছু মূহূর্ত যেতেই ডক্টর চলে আসলো। অনুকে কেবিনের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়া হলো। অনু বাহিরে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে অয়নের একটা ভালো খবরের জন্য। অনুর উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটায় টেনশনের ছাপ স্পষ্ট। ডক্টর অয়নকে কয়েকটা ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। অনু ডক্টরকে বিস্ময় কন্ঠে জ্বিগাসা করলো
— অয়নের কি হয়েছে? ও ঠিক আছে তো?
— হ্যাঁ ম্যাডাম। অয়ন স্যার ঠিক আছে। এবং খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে উঠবেন উনি। আমরা ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। কোনো সমস্যা যাতে না হয় তা মনিটরিং করার জন্য নার্স থাকবে এখানে।
— জ্বি ধন্যবাদ।
.
* ডক্টর চলে যায়। অনু অয়নের পাশে গিয়ে বসে। অনু ঘুমন্ত অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে
— ঈশাকে সরিয়ে দিয়েছি আমাদের মাঝ থেকে। এখন শুধু তোমার সুস্থতার অপেক্ষা।
একবার তুমি সুস্থ হয়ে যাও। আমাদের বিয়ে হয়ে যাক। আর কিছু চাওয়ার থাকবে না আমার।
তুমি দেখো অয়ন আমরা ভিশন সুখে থাকবো।
কথাটা শেষ হতেই অনু অয়নের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
ঘুমন্ত অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনু। চোখের নিচে কালো দাগ স্পষ্ট।
অনু অয়নের ভাবনায় মগ্ন। অনুর এই মগ্নতা অয়নকে নিজের করে পেতে চায়।
কিছু সময় বসে থাকার পর অনুর ফোনটা বেজে উঠলো।
অনু ভাবনায় এতোটাই মগ্ন যে কলটা বাজতে বাজতে অফ হয়ে গেলো।
আবারও অনুর ফোনটা বেজে উঠলো। অনু একটু কেঁপে উঠল।
ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দ্রুত কলটা পিক করলো অনু। ওপার থেকে ভারি কন্ঠে কেউ বলছে
.
— সারা দিন অয়ন অয়ন করে মেতে থাকলে আমাদের প্লানের কি হবে?
তুমি কি শুনতে পারছো আমার কথা?
— জ্বি আমি শুনতে পাচ্ছি। প্লান ঠিক মতো এগোচ্ছে। এখন শুধু অয়নের সাইনের অপেক্ষা।
— অয়নের সাইন মানে? অয়নকে কেনো প্রয়োজন হলো?
— তুমি হয়তো ভূলে গেছো অয়নের সব কিছু তার নিজের নামে আছে। আমি চাইলেই সব কিছু হবে না। আর ঈশা তো এখন তোমার। সুযোগ বুঝে নিজের করে নাও।
— ঈশাকে আমার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি প্রয়োজন তোমাকে।
— আমাকে মানে?
— ইয়া বেবি তোমাকে। আমি তোমাকে ভিশন পছন্দ করি। আর আমার..
বাকি কথা বলার সুযোগ দিলো না অনু্। প্রচন্ড রাগি কন্ঠে অনু জবাব দিলো
— এই ওখানেই থাম। আমাকে কি ভাবিস তুই? তোকে ছাড়া আমি অয়নকে নিজের করতে পারবো না? অয়নকে পেতে হলে আমাকে তোর কাছে বিলিয়ে‌ দিতে হবে? হাউ ফানি‌ ম্যান। আমার উপর শুধুমাত্র অয়নের অধিকার আছে। আর কারো না। তোর সাথে হাত মিলিয়েছি বলে ভাবিস না আমি তোকে ছাড়া অচল। আমি চাইলেই তো জীবনের ইতিটা এক মিনিটের মধ্যে টেনে দিতে পারি। ফার্দার আমাকে বাজে কথা বলার আগে হাজার বার ভেবে দেখিস।
.
— অনু আমি তো মজা
মুখের উপর অনু কলটা কেটে দিলো। ঘৃণা হচ্ছে ভিশন। কার সাথে হাত মিলালো সে? অনু ফোনটা বিছানার উপর রেখে বাঁকা হাসলো। মনে মনে ভাবছে অনু
— যদি আমার সাথে পলিটিক্স করতে চাও তবে নিজের মৃত্যুর কারন নিজে হবে।
* রাত প্রায় অনেক হলো ঈশার মুখে কোনো কথা নেই। নাই বা সে কিছু মুখে তুলছে। ঈশার মা ঈশাকে জোর করলেও তেমন সুবিধে করতে পারলো না। ঈশা শুধু ভাবছে অয়নকে কি করে ভূলে থাকা যায়? সত্যি বলতে তাকে কি করে ভালোবাসা যায় তার হাজারটা কারন থাকতে পারে। হুম এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে যদি বলি প্রিয়জনকে ভূলে যাওয়ার কথা। তবে সেটা সম্ভব না। এমন কোনো কারন নেই যা পারে প্রিয়জনকে ভূলিয়ে রাখতে‌। এটাকেই হয়তো ভালোবাসা বলে।
.
সকাল হয়ে গেছে অনুর ঘুম ভেঙ্গেছে মাত্র। অয়নের দিকে ভালো করে‌ লক্ষ করে দেখলো অনু।
না লোকটা এখনও ঘুমিয়ে আছে। অনু বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো কেবিনের বাহিরে থেকে
ঘুরে আসতে ইচ্ছে করছে তার। অনু কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
অনু চলে যাবার কিছু মূহূর্ত পর অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। দু হাতে স্লাইন ও ব্লাডের সিরিজ গাঁথা।
বুকের বাম পাশ থেকে পিঠ উবদি ব্যান্ডেজ করা।
অক্সিজেন বা কোনো প্রকারের লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন নেই তার।
তবে এখন খুব প্রয়োজন ঈশা নামক ভালোবাসার মানুষটিকে।
অয়ন চোখ মেলতেই দেখতে পেলো নার্সকে। কিছু সময়ের জন্য আবারও নিরব হয়ে যায় অয়ন।
হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে অয়ন, কি‌ হয়েছে তার?
এখানেই বা কেমন করে? ধিরে ধিরে অয়নের সব কিছু মনে পরতে লাগলো।
অয়নের মনে পরে গেলো সে গাড়িতে বসলো আর একটা‌ ধাক্কা।
আর কিছু মনে নেই অয়নের। অয়ন চোখ মেলে উঠে বসার একটু চেষ্টা করছে। তবে পারছে না।
ব্যর্থ হচ্ছে প্রতি বার। অয়নের এমন অবস্থা দেখে নার্স ছুটে আসে অয়নের কাছে। উনি অয়নকে বসতে সাহায্য করলেন। অয়ন অনেকটা কষ্ট করে বসতেই….
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com