Breaking News

জীবনটা অনেক কষ্টের । পর্ব -০৩

বিয়ের দিন উপস্থিত না হতে পেরে,পরের দিন শশুর
বাড়ি থেকে আমার বর্তমান স্ত্রীর বড় বোন এসে ছিল
দেখতে আমায়।তবে তাকে দেখে আমার শরীরটা
সম্পূর্ণ শিউরে উঠে ছিল সেই মুহূর্তে।নিমিষেই যেন
একজন বোবা মানুষে পরিণত হয়ে গেছিলাম আমি।
সেই মুহূর্তে,মুখের ভাষাই হারিয়ে ফেলেছিলাম কারণ
এই সেই মেয়ে যার মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য আমায়
কুয়েতে ১৫টা বছর জেল খাটতে হয়েছিল………..
মাথার এক কোণে এখনো মনে আছে রুপা নামের এই
জঘন্য মেয়েটিকে, যার জন্যই আমার সুখময় জীবনটা
কষ্ট-ময়ে পরিণত হয়েছে।সেদিন কার দিন গুলো ক্ষণে
ক্ষণে আজও আমার বুকের ভেতরটাকে কষ্টের তীব্র
আগুনের দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃস্ব করে তুলতে
বাঁধ্য করে।এখনো ভুলিনি আমি তার মুখচ্ছবিটা,যার
জন্য আমার জীবনটা ধ্বংসের শীর্ষ স্থান লাভ করেছে।
নিমিষেই সব দিক দিয়েই আমার বুকের গহীন ঘরে
জমাট বাঁধা কষ্ট-যন্ত্রণা,বেদনা গুলো আরও তীব্র
গভীর হতে আরম্ভ হলো।বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে এখনো
রুপা নামক মেয়েটা আমার দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রয়েছে,হয়তো চেনা-চেনা লাগছে কিন্তু চিন্তে
ঠিক পাচ্ছে না।মনে নেই হয়তো এই আমায় যাকে ওই
দিন ফাঁসানো হয়ে ছিল মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে।কিন্তু
আজও ঠিক মনে আছে এই আমার,যার জন্যে তিলে
তিলে কষ্ট-যন্ত্রণার আর্তনাদে চেয়েছিলাম আমি সৃষ্টি
কর্তার কাছে নিজ মৃত্যুর ঠিকানা।অতঃপর রুপা বেশ
স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করলো আমার
সাথে,কিন্তু তার কোনো কথাতেই রেস্পন্স বলতে
কিছুই করলাম না আমি।এতে কিছুটা অপমানিত
বোধ করলো রুপা কিন্তু তাতে কোনোই ভ্রুক্ষেপ অন্তত
আমার নেই।পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম ভাইয়া আর
ভাবীর কাছে।ঘৃণায় এখনো শরীরটা শিরশির করে
উঠছে,চাইলে অনেক কিছুই বলতে পারতাম কিন্তু
পারিনি বলতে,কারণ সঠিক সময় আসেনি এখনো,
সেই সময় রাগের বসে রুপাকে অতীত স্বরণ করিয়ে
দেওয়ার ইচ্ছেটা ছিলো বোকামী।চুপচাপ নিরিবিলি
থাকটাই বর্তমান আমার জন্য শ্রেয়ো।পাপিষ্ঠরা শাস্তি
পাবেই আজ নয়তো কাল,তাই বলে এর জন্য ব্যকুল
হয়ে উঠার কোনো প্রয়োজন অন্তত আমার নেই।
ভাবাতে সম্পূর্ণ বিভর ছিলাম আমি,অতঃপর ভাইয়া
হস্তক্ষেপ করে বলল,
–কি ভাবছিস এমন করে?
না কিছু না।
–আমাকে ক্ষমা করে দিস?আমার জন্যই তোকে
এখানে,আমরা হীনা ঘর-জামাই হিসেবে থাকতে হবে?
না ভাইয়া এতে কোনো রাগ,অভিযোগ,অভিমান
আমার নেই?তোমরা এবার নিশ্চিন্তে যেতে পারো
নিজেরদের গন্তব্যে।আর করো না কোনো চিন্তা এই
আমায় নিয়ে।
.
আজই ভাইয়ারা চলে যাচ্ছে এখান থেকে,যাওয়ার
আগে ভাই আমার অশ্রু-সিক্ত নয়নে জড়িয়ে ধরেছিল
আমায়।হয়তো আর সার্বক্ষণিক পারবে না দেখতে
আমায় নিজের চোখের সীমানায়।অতঃপর ভাইয়া
আর ভাবী সবাই কে বিদায় জানিয়ে যাত্রা আরম্ভ
করলেন নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।ভাইয়া এবং ভাবী
যাওয়ার পরপরই বাড়ির ছাঁদের এক কোণে এসে
দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি।এত বছর পর সেই অভিশাপ্ত
ঘৃণীত নারীকে নিজের বর্তমান স্ত্রীর বড় বোন হিসেবে
দেখতে পেয়ে,আশ্চর্যের যেন কোনো সীমা নেই আমার
।সেটা আমি বাস্তব,অবাস্তব,কল্পনা,অকল্পনা,স্বপ্ন বা
দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।জানিনা কার কি এমন ক্ষতি
করে ছিলাম আমি যার ফল সরুপ আমাকে তিলে
তিলে কষ্টের অতল গভীর সাগরে তলিয়ে যেতে হচ্ছে।
বারবার প্রতিনিয়ত,জীবনের প্রতিটা মূহুর্তে আমিই
কেনো,কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতির সম্মুখীন
হয়ে থাকি?বুক কাটা ছাড়া হয়তো কেউ বুঝতে বা
উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে না,এ বুকে কিরুপ দহন।
পাশেই দু’টো টবে দু’টো গোলাপ ফুল গাছ লাগানো।
আমার আবার ফুল ছেঁড়ার বাজে স্বভাব রয়েছে।খপ
করে একটা ফুল ছিঁড়ে ছাঁদের অন্য পাশে গিয়ে
দাঁড়ালাম তার খানিকটা সময় পর একটা পিচ্চি ছাঁদে
এসে হাজির হয়।সম্ভবত আমার বর্তমান স্ত্রী রাইয়ের
কোনো কাজিনের ছেলে হবে।ছেলেটি এসেই ফুল গাছ
গুলো বেশ ঘুরে ঘুরে দেখছিল ঠিক সেই মুহূর্তে রাই
ছাঁদে আসে এবং গোলাপ গাছে একটি ফুলের শূন্যতা
দেখতে পেয়ে, রাই সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে ধমকের সুরে
পিচ্চি ছেলেটাকে বলল,
–তন্ময় তুই কি এখান থেকে ফুল ছিঁড়ে ছিস?
–কই না তো?আমি ফুল ছিঁড়িনি?
হঠাৎ ঠাশ করে পিচ্চি ছেলেটাকে একটা থাপ্পড়
লাগিয়ে দিয়ে রাই বলল,
–মিথ্যা বলা আমি একদমি পছন্দ করি না?এর
আগেও তুই এখান থেকে ফুল ছিঁড়ে ছিস?আর
আজও তার বেতিক্রম হলো না।তুই জানিস না আমি
অজথায় ফুল ছিঁড়ে এমন কাউকে দেখতে পারি না?
— সত্যি বলছি আমি এমনটা করিনি?
–আবার মিথ্যা বলছিস??
.
এতক্ষণ কান্না না করলেও এবার ঠিকি রাইয়ের তীব্র
ধমকে কান্না করে দিয়ে ছেলেটি ছাঁদ থেকে চলে
গেলো এবং যাওয়ার আগে আবারও বলে গিয়েছে,সে
ফুল ছিঁড়ে নি।একটা ফুল ছেঁড়ার জন্য রাই এতটা
রেগে যাবে সেটা আমার কল্পনার শত গুন বাহিরে
অবস্থান করেছিল।আহারে বেঁচারা পিচ্চি ছেলেটা শুধু
শুধু আমার জন্যই রাইয়ের ক্রোদের শ্বিকার হতে
হলো।পিচ্চি ছেলে,অন্তত মার খাওয়ার পরে আর
মিথ্যের আশ্রয় গ্রহন করবে না অতএব এবার রাইয়ের
সন্দেহের তীর এসে বেদ করলো আমার বুকে-খানি।
দ্রুত ফুলটা পকেটে গুজে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে
দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।যেখানে একটা পিচ্চি ছেলের
গায়ে হাত তুলতে যে মেয়ে দ্বিধা বোধ করে না সেখানে
আমি তো এক জ্ঞান-বুদ্ধি ওয়ালা।অতঃপর রাই
আমার পিছনে এসে দাঁড়ালো এবং ভ্রু-কুচকে আমায়
কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
–আপনি কি ফুলটা ছিঁড়ে ছেন?
আমি কেনো ফুল ছিঁড়তে যাবো আশ্চর্য?
–একটু এদিক ফিরুন তো?
জি বলো?
.
–আপনার পকেটে ওটা কি দেখা যাচ্ছে?
আচ্ছা তারমানে আপনি আমায় সন্দেহর চোখে
দেখছেন?আমার জ্ঞান বুদ্ধি কি এতটাই লোপ পেয়েছে
যে আমি শুধু শুধু অজথায় গাছ থেকে ফুল ছিঁড়বো?
–তাও ঠিক আর আপনি তো আর ছোট নন,যে
অজথায়ই ফুল ছিঁড়ে,গাছের সুন্দার্য নষ্ট করবেন?
যাইহোক বেশিক্ষণ ছাঁদে দাঁড়িয়ে থাকবেন না? নিচে চলে আসুন।
কেনো?
–অসুবিধা আছে।বেশিক্ষণ ছাঁদে দাঁড়িয়ে থাকা
লোককে পছন্দ করতে আমি অভ্যস্ত নই?
কথা বলার পরপরই রাই চলে গেলো।বুঝলাম না
আমি ছাঁদে দাঁড়িয়ে থাকলে তার কি এমন অসুবিধা।
অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা স্পষ্ট বুঝতে
সক্ষম হলাম।পাশের ছাঁদেই অনেক গুলো মেয়ে
একসাথে দাঁড়িয়ে ছিলো তার জন্যই হয়তো রাই
আমায় এমনটা বলল?
.
পরিশেষে অনেক গুলো দিন কেটে গেলো।আমার
আর রাইয়ের সম্পর্কটা আস্তে আস্তে গভীর হতে
আরম্ভ করলো।মাঝে মাঝে রাইয়ের বড় বোন যখন
বাড়িতে আসতো,তখন আমি তার থেকে সব সময়
দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতাম কারন বিষাক্ত সাপ
আবার যখন তখন দংশন করতে পারে।রুপা যখনি
শশুর বাড়ি থেকে নিজ বাবার বাড়ি আসতো,তখনি
আমাকে দেখলেই কিছু একটা ভাবাতে বিভর হয়ে
পড়তো।হয়তো কিছু মনে করার চেষ্টা করতো কিন্তু
কিছুতেই মনে করতে পারতো না।সকাল বেলা একটা
চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম তখন সাদিয়া কে
রাস্তার পাশে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ কিছুটা
অবাক হলাম।অতঃপর মন বারন করা সত্যেও আবার
সাদিয়ার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বেহায়াদের মতো জিজ্ঞেস
করলাম,কেমন আছো?উত্তরে কিছুই বললো না।
অতএব আমি আবার বললাম,বর্তমান স্বামীর কুকির্তি
গুলো মানতে অসুবিধা হচ্ছে তাই তো?হঠাৎ আমার
এমন কথা শুনে সাদিয়া বেশ একটা অবাকে পরিণত
হয়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালে আমি
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,তুমিও যেমন ৪ বছরের
সন্তানকে রেখে অবৈধ কাজে লিপ্তে হয়ে ছিলে ঠিক
তেমনি তোমার বর্তমান স্বামীও তুমি এবং তোমার
বর্তমান ছেলে,মেয়ে কে রেখে অন্য এক নারীর সাথে
পরকিয়া নামক পাপিষ্ঠে লিপ্ত?আমার কথা গুলো
শুনে সাদিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়।কপাল থেকে জড়ে পড়া
ঘাম গুলো দ্রুত মুছে উত্তরে ভয়ার্থ গলায় বলল,
–তু,তুমি কি ক করে জানলে?
.
সেটাই তো রহস্য?আমার ভালোবাসার যোগ্য যেমন
তুমি ছিলে না,তেমনি তোমার বিশ্বাসের যোগ্যও ”ও
ছিলো না ব্যাপারটা কতই না হাস্যকর তাই না
সাদিয়া?.
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com