শেষ বেলার তুমিটা । পর্ব -০১



তাড়াহুড়া করে বাড়ী আসছিলাম। কলেজ থেকে বের হতেই কারু সাথে প্রচন্ড এক ধাক্কা খেলাম।



আমার তেমন কিছই হয়নি কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।



আমার তো মেয়েটা কে পরে যেতে হার্টবিট এর গতি বেড়ে গেল। মনে হচ্ছে কেউ আমার হৃদয়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতেছে।



ভয়ে আমার পা কাঁপতে শুরু করেছে। যা এই বুঝি মেয়েটা আমাকে চিবিয়ে খেলো।



মনে একটু সাহস যুগিয়ে মনটাকে বললাম ভয় ভয় দেখালে মেয়েটা খবর করে দিবে। সাথে ছেলে জাতির সম্মানে আঘাত লাগবে। আমি তো তা আর হতে দিতে পারি না!



আর একটু সাহস যুগিয়ে আমি মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং বললাম এই যে মিস আমার হাতটা ধরে উঠুন।



মেয়েটা উঠতেই বললো:



- অপরিচাতা:ইউ? এত বড় সাহস আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলি?



- আমি: না মানে সরি। একটু তাড়া ছিল তো!



- অপরিচিতা: বাদর, হনুমান, লাল টিকটিকি, তেলাপোকা, লুচ্চু ছেলে কোথাকার দেখে চলতে পারিস না?



আমি: এই যে মিস! মুখ সামলে কথা বলুন। আমার মতো ভালো ছেলে আর দুইটা নেই। আপনি নিজেই তো আমার সামনে আসছেন!

.



অপরিচিতা: কীহ!



আমি: হ্যাঁ তাই তো! পেত্নীর মতো দেখতে একটা। মনে হচ্ছে উগান্ডা থেকে আসছেন। হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই গাঁয়ে পরতে ইচ্ছা করে না?



অপরিচিতা: কিহহ আমি পেত্নী! আর আমি ছেলে দেখলেই...



কথাটা বলতে বলতে দেখি মেয়েটা জুতা খুলছে। আমি ভাব সুবিধার না দেখে দিলাম এক দৌড়।



মেয়েটা আমাকে এভাবে দৌঁড় দিতে দেখে হাসতে হাসতে বলল।



অপরিচিতা: কিরে দৌড় দিলি কেন! আমি না তোর গাঁয়ে পরতে গেছিলাম? শালা লুচ্চা কোথাকার! পরের বার তোকে হাতের কাছে পেলে চিবিয়ে খাবো।



আমি দৌড়াতে দৌড়াতে মনে মনে বির বির করতেছি আর বলতেছি। আজ এক ফারা বেচেঁ গেলাম। আর একটু হলেই চিবিয়ে খেত।কি দজ্জাল মেয়েরে বাবা।



আপনাদের তো পরিচয়ই দেওয়া হলো না!



আমি হৃদয়। হনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। এই শহরের বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আশরাফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে।



আজকেই প্রথম কলেজে গিয়েছিলাম আর তখনই যা ঘটলো আপনারাতো সবই দেখলেন।



বাড়ি আসতে না আসতেই চাচাতো বোন নীলিমা বললো:



-নীলিমা: কিরে কলেজ থেকে এত দ্রুত এলি যে? মনের মত কাউকে পেলি না নাকি?



- হৃদয়: কুত্তা তুই ও না!



-নীলিমা: পাবি কেমনে? তোরে তো কেউ পাত্তা দিলে না?



-হৃদয়: তুই চুপ করবি?



এমন সময় আম্মু আসলো।



-আম্মু: এই তোরা সব সময়ই ঝগড়া করিস কেন? দু এক দন্ড শান্তিতে থাকতে পারিস না।



-হৃদয়: আম্মো দেখনা তোমার ঐ শালা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা সব সময় আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।

.



-আম্মু: হ্যাঁ জানিতো। তুইতো ধোঁয়া তুলসি পাতা।



-হৃদয়: আম্মু!



-আম্মু: হইছে! এবার খেতে আয়।



তারপর দুপুরের লাঞ্চ করলাম। বাহিরে প্রচন্ড তাই শুয়ে ছিলাম। একটু পর চোখ খুলতেই দেখি ওই মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মেয়েটা আমার গলা চেপে ধরলো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রায় এই বুঝি মারা যাবো।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দিলাম এক ধাক্কা।



এমন সময় আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখি নীলিমা ফ্লোরে পড়ে আছে।



নীলিমা: উহ মা কোমরটা আজ বুঝে গেল। এই হনুমান টা আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।



নীলিমার চেঁচামেচিতে বাড়ির সবাই আমার রুমে এসে হাজির। সবাই নিলীমাকে এ অবস্থায় দেখে অবাক।



নীলিমা আমার মা কে উদ্দেশ্য করে বলল দেখনা বড় আম্মু আমি তোমার কাছে একটা অংক বুঝে নিতে এসে ডাকতেই সে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।



আমি এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম যে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। মেয়েটা আমার মনে এতটা ভয় তৈরি করেছে যে আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারতেছি না। স্বপ্নেও এসে জ্বালাতন শুরু করেছে।



বাড়ির সবাই তো আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।



আমি কোনো কথা না বললেই বাহিরে চলে আসলাম।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আসলাম।



সেখানে যেতেই রিয়াজ (বন্ধু) বলে উঠলো:



-রিয়াজ: কি খবর মামা। কলেজের প্রথম দিন কেমন কাটলো?



-হৃদয়: আর সে কথা বলিস না।



সিরাজ (বন্ধু) বললো:



-সিরাজ: কেন কি হয়েছে?



-হৃদয়: কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় একটা মেয়ের .....



আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রিয়াজ বললো:



-রিয়াজ: ওহ্ বুঝছি।



-হৃদয়:কি বুঝলি?

.



- সিরাজ: প্রোপজ করছিলি। রিজেক্ট করছে মনে হয়।



-হৃদয়: কি আমায় রিজেক্ট করবে এমন মেয়ে এই শহরে আছে?



- সিরাজ: তাইলে মেয়েটা মনে হয় অন্য শহরের।(সিরাজ হাসতে হাসতে কথা টা বললো)



রিয়াজ: আরে না। ওর তো সাহসী নেই কাউকে প্রপোজ করার । রিজেক্ট করবে কেমনে?



দুই জনই বলতে বলতে হাসতে লাগলো। আমি একটু রাগী ভাব নিয়ে বললাম!



- হৃদয়: তোরা উল্টা পাল্টা বলা বন্ধ করবি?



- সিরাজ: ও তো ঠিকই বলেছে। । দেখ সিরাজেরও গার্লফ্রেন্ড আছে ,আমারও গার্লফ্রেন্ড আছে।তোর তো গার্লফ্রেন্ড থাকা দুরের কথা একটা মেয়েও পাত্তা দিল না এখনো। দিবেই বা কেমনে। ভীতুর ডিম একটা।



- হৃদয়: এমন কোনো মেয়ে আছে যে আমায় রিজেক্ট করবে? আমি শুধু প্রেম করতে চাইনা তাই আরকি।(একটু হিরো হিরো ভাব নিয়ে বললাম)



- সিরাজ: ওহ্ রিয়ালি!



- হৃদয়: হুম।

.



- রিয়াজ:তাহলে ওই মেয়েকে প্রপোজ কর যা। দেখি কেমন রাজি হয়।



আমি রিয়াজের কথায় সামনে তাকিয়ে দেখি কিছু দূরে একটা মেয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।



আমিতো পড়ে গেলাম মানকা চিপায়। এখন প্রকাশ না করলেও মান-সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।



আমি রিয়াজ কে বললাম এক মিনিটের ব্যাপার। Wait and see.



ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম মেয়েটার দিকে।



রিয়াজ বলে উঠলো কিরে জুতো দিয়ে প্রপোজ করবি নাকি! এইযে নে গোলাপ।



শালারা আমাকে মারার ফুল প্লানিং করে আসছে। আজ যে আমার ভাগ্যে কি আছে!



গোলাপটা নিয়ে আমি আবার যেতে শুর করলাম। মেয়েটির কাছে গিয়ে সমস্ত সাহস এক করে আমি মেয়েটার পিছনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বললাম:

.



- হৃদয়:

তুমি কি হবে আমার স্বপ্নে দেখা সেই মেয়ে,

হবে মোর পড়ন্ত বিকালে থাকা পথ চেয়ে।

হবে কি মোর সেই কল্পনাতে আঁকা ছবিটা,

তোমার ছোঁয়ায় পাবে যে আঁকার পূর্ণতা।

তুমি কি কি কি কি কি ........



আমার বলা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটা ঘুড়ে তাকালো। আমি যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

এটাতো কলেজের সেই মেয়ে..............

.



চলবে...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url