আড়ালে সত্যটা । পর্ব - ০৮
সবে মাত্র স্কুল ছুটি হয়েছে।
ছোট্ট একটা মেয়ে তার মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে রাজের সামনে
এসে তার মাকে ডাক দিয়ে বলে,' মম দেখে যাও।
আঙ্কেলটা পড়ে গেছে চেয়ার থেকে।''
- অধরা রাফিয়ার কথা শুনে তার মেয়ের পাশে এসে দাঁড়াতেই বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে।
রাজকে সে এভাবে দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি।
হাতের ব্যাগটা কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায়।
- মম দেখ এটা আমার বাবাই '' কথাটা বলার আগেই অধরা রাফিয়ার মুখটা চেপে ধরে বললো,'
মামনি উনি তোমার আঙ্কেল হবে।অপরিচিত লোককে আঙ্কেল বলতে হয়।
এখন থেকে আঙ্কেল বলবে কেমন?
- রাফিয়া মাথা নাড়িয়ে বললো,'হু।''
- অধরা রাজের এ অবস্থা দেখে আৎকে উঠে! কি অবস্থা হয়েছে তার।
রাজ কোনরকম মাথাটা ঘুরিয়ে অধরার দিকে তাকাতেই চমকে যায়।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,' অধরা! তুমি!
- অধরা মাথা নিঁচু করে আছে রাজের দিকে একটিবার চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না।
সেই চেনা কন্ঠটা বুকের ভেতরটা ঝড় তুলে দিচ্ছে।
কিন্তু অতীতের সে কথাগুলো এখনো কানে বারি দিচ্ছে। তার তো কোন দোষ ছিল না।
কেন তাকে তাদের দু'জনের ভালোবাসার কাছে বলি দিয়েছে।
কেন তাকে কলঙ্কিনীর ট্যাগ লাগিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
রাজের অতীত ভেবে খুব ঘৃৃণা হচ্ছে অধরার।
বাট রাজকে সে এভাবে দেখবে কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।
রাস্তায় পড়ে যাওয়াই রাজের কপাল কেঁটে রক্ত ঝরছে।
খুব করে ইচ্ছে করছে রক্তগুলো মুছে দেওয়ার।
.
- এমন সময় রাফিয়া রাজের কপালের কাটা জায়গায় হাত দিয়ে বলল,'
মামনি দেখ আঙ্কেলটার কপাল কেটে গেছে। কপাল কেটে রক্ত ঝরছে।
মম তুমি মাথাটা বেঁধে দাও না। ইশ! আঙ্কেল আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?
- না মামনি আমার খুব ভালো লাগছে।
- মম কি করছ দেখছ না আঙ্কেলটা কষ্ট পাচ্ছে। তুমি কপালটা বেঁধে দাও।
- অধরা রুমাল দিয়ে কপালটা বেঁধে দিয়ে রাজকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো,'
আপনি কি একাই আর কেউ সাথে আসেনি?
- বোন আছে। পানি নিয়ে আসতে গেছে।
- ওহ্ আচ্ছা সাবধানে থাকবেন আসি।
- অধরা যখন রাফিয়াকে নিয়ে চলে যাবে এমনন সময় রাজ বললো,' অধরা প্লিজ দাঁড়াও একটু।''
- কে আপনি নাম ধরে ডাকছেন আমায়? এতো সাহস হয় কি করে আপনার?
- সরি! একটু দাঁড়ান আপনার সাথে কথা আছে।
- আচ্ছা তাড়াতাড়ি বলেন?
- হুম বলছি। তার আগে বলেন আমার বেবি কোথায়?
- আপনার বেবি মানে? অবৈধ সন্তানকে নষ্ট করে ফেলছি।
যার জন্য আমার জন্মদাতা পিতা আত্মহত্যা করেছে।
যে সন্তানের জন্য আমি কলঙ্কিনী উপাধি পেয়েছি। সে সন্তানকে আমি মেরে ফেলেছি।
.
- তাহলে এই সন্তানটা কে?
- এটা আমার সন্তান!
- আপনার সন্তান মানে?
- আপনার কাছ থেকে যখন চলে আসি কলঙ্কের বোঝা নিয়ে।
ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করবো কিন্তু পারিনি। পথে বখাটের হাতে পড়ি।
তাদের হাত থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালাতে গিয়ে গাড়ি একসিডেন্ট করে প্রায় একসপ্তাহ হসপিটালে থাকি।
আর যাদের গাড়িতে একসিডেন্ট করি তারা সবটা জেনে নিজেই মেয়ের পরিচয়ে বড় করি।
তখন নিজেই অবৈধ সন্তানকে নষ্ট করে দেয়।
তার কয়েকমাস তারা আমাকে বিয়ে দেয়।
আর এই বেবি হয়। আপনি ভুল করেও আমাদের জীবনে আসার চেষ্টা করবেন না।
- অধরার কথাগুলো রাজের বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। অধরার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বললো,'
এ কি করছেন? সে সন্তান অবৈধ না।
ওটা আমাদেরই সন্তান সেদিন রাতে আপনি যা স্বপ্নে দেখেছেন সেটা স্বপ্ন ছিল না।
আমি আর তিশা পরামর্শ করে এটা করেছি।
তিশার কথাতেই কাউকে না জানিয়ে দেশে আসি আমি। সে কথা শুধু আমি আর তিশা জানতো।
তিশার প্ল্যান মতোই আমি সেদিন রাতে তোমার রুমে প্রবেশ করি জানালার গ্রিল ভেঙে।
তারপর তোমার সাথে রাত্রিযাপন।
.
রাত শেষ না হওয়ার আগেই তোমাকে চেতানাশক স্রে করে অজ্ঞান করে এসে পড়ি।
আর সেই জন্যই তুমি মা হও। ওটা অবৈধ সন্তান ছিল না।
আমাকে ক্ষমা করে দাও অধরা। আমি তোমার সাথে খুব অন্যায় করেছি।
জানি আমি যে অপরাধ করেছি এ অপরাধের কোন ক্ষমা নেই।
তবুও বলছি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।
- অধরা মুচকি হেসে বললো আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।
ভালো থাকবেন দোআ রইল।
অধরার খুবব করে ইচ্ছে করছে রাজের পাশে থেকে যাবার।
কিন্তু চাইলেও যে সবকিছু সম্ভব না।
- অধরা চলে যাচ্ছে। রাজ বলতেও পাচ্ছে না অধরা তুমি চলে যেয়ো না।
তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই। কিন্তু রাজ বলতে পারছে না।
কোন সাহসে বলবে সে। কোন অধিকারে বলবে।
সে যে তার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। রাজ কাঁদছে।
চোখের জল মুছার ক্ষমতাটাও নেই তার। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
- রাজের পাশেই খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নয়নতারা।
রাজ নয়নতারার দিকে ঘাড় ঘুরাতেই। নয়নতারা বললো,' ভাইয়া কান্না করছো কেন?
- নাহ্ চোখে কি যেন পড়েছে দেখ তো।
- ভাইয়া মিথ্যা বলবে না আমি সব শুনেছি। তুমি সব সত্যি কথা বললে না কেন?
- বোন আমার অধরাটা নতুন সংসার নিয়ে সুখে আছে। কিভাবে তার সংসারটা নষ্ট করি?
-
- ভাইয়া চলো বাসায়। নয়নতারা রাজকে হুইল চেয়ারে করে তার বাসায় নিয়ে যাচ্ছে।
- এদিকে গাড়িতে বসে অধরা কাঁদছে। কুলে বসে থাকা রাফিয়া বললো,'
মম তুমি কাঁদছো কেন?'আচ্ছা মম আমাদের বিছানার পাশে এই আঙ্কেলটার ছবিই না?
তুমি বলেছিলা ওটা তোর বাবাই। তোর বাবাই বিদেশ গিয়েছে। সেখান থেকে আসবে।
- অধরা রাফিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে লাগলো।
-- মম আমার বাবাই তাহলে আর কোনদিন আসবে না বিদেশ থেকে?
- অধরা রাফিয়ার কথাশুনে তার কপালে চুমু দিয়ে বললো, ' মামনি তোমার বাবাই আসবে। ''
- সত্যি মামনি? কবে আসবে?
- অধরা ড্রাইভারকে বললো গাড়ি ঘুরাতে।
- ড্রাইভার গাড়ি ঘুরাতেই বললো,' মিঃ আহাদ, ওই যে হুইল চেয়ারে করে লোকটাকে একটা মেয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে ফলো করেন। ''
- আচ্ছা ম্যাডাম।
- এদিকে রাজকে নিয়ে নয়নতারা গলীর মুখে টিনের ছাউনি দেওয়া একটা বাড়িতে ঢুকল।
- অধরা ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় নিতে বললো।
বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে রাফিয়াকে ঘুম পাড়িয়ি দিয়ে রাজের ছবিটা বুকে নিয়ে হাও মাউ করে কাঁদতে লাগল।
- এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল!অধরা কলিং বেলটা খুলেই চমকে গেল! মিঃ নিয়ান এখানে?
.
চলবে...