আড়ালে সত্যটা । পর্ব -০৩
- এসব ভাবতে ভাবতে রাত দু'টা বেজে যায়। তবুও অধরার ঘুম আসছে না।
বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।
- হঠাৎ অধরা বুঝতে পারলো কে যেন তার বুকের উপর চড়ে বসছে। 
- বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে রাজ সেখানে নেই।
অধরা চেয়ে দেখে তার বুকে যে মানুষটা সেই রাজ।
- ভয়ে হাত পা কাঁপছে অধরার। 
- কি হলো খুব ভয় করছে? আচ্ছা আমাকে ঠকাতে তোর একটাবার বুক কাঁপলো না?
আজ তোরর শেষ দিন। কথাগুলো বলে গলায় ছুরি ধরল।
- অধরা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।
ক্ষানিক পর বললো কি হলো ছুরি ধরে আছো কেন? চালিয়ে দাও তুমি।
আমি আর বাঁচতে চাই না।
- রাজ ছুরিটা ফেলে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
রাজের কান্না দেখে অধরার বুকের ভেতরটা যেন তুলপাড় হয়ে যাচ্ছে।
অধরা রাজের চোখের পানি মুছে দিতে গেলেই রাজ অধরার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললো,"
তোমার মতো নষ্টা মেয়ে যেন আমাকে না ছুঁই।''
- রাজ বিলিভ করো আমি তোমার সাথে একটি কথাও মিথ্যা বলিনি। আমার সন্তানের বাবা তুমি। তোমার সাথেই স্বপ্নে আমার শারীরীক সম্পর্ক হয়েছে।
- রাজ অধরার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,' চুপকর।
তোর মুখটা আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না। আর কত ড্রামা করবি আমার সাথে?
.
- অধরা আর কিছু বললো না।
পরের দিন সকাল হতেই এক কান দু'কান হতে পুরু এলাকা অধরার গর্ভবতী হওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়লো। এলাকার সবাই ছিহ! ছিহ! করতে লাগলো।
- রাজের মা অধরাকে বললো চলে যেতে।
ঠিক সময়ে ডির্ভোস লেটার বাসায় পৌঁছে যাবে।
আর তোমার বাবাকে বলছি কলঙ্কিনী মেয়েকে যেন বাসায় নিয়ে যায়।
নয়তো কোন পতিতা পল্লীতে রেখে যায়।
- মা প্লিজ বাবাকে এসব কিছু বলবেন না। বাবা এসব শুনলে সহ্য করতে পারবে না।
- যখন করছিস তখন এসব ভাবতে পারলি না?
বল তোকে নিজের মেয়ের মতো দেখিনি? আর তুই কি না? কখনো তোকে রেখে খেয়েছি?
ছোট্ট বাচ্চার মতো তোকে মুখে তুলে তুলে খাইয়ে দিয়েছি।
আর সেই তুই কি না আমাদের মুখে চুনকালি মেখে দিলি।
- অধরা তার শাশুড়ির পা দুটি ঝাপটে ধরে বললো,"
মা আমাকে বিলিভ করেন। আমি কোন খারাপ কাজ করিনি। আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি।
আমাকে আপনাদের বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না। আপনার পায়ে পড়ি মা।
.
- রাজের মা অধরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
অধরা এবার রাজের পা ধরে বলতে লাগলো আমাকে বের করে দিয়ো না।
তোমার বউ না তোমার বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে বাঁচতে দাও আমাকে।
- রাজ অধরাকে লাথি দিয়ে পা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,'
তোর মতো নষ্টাকে আমি কিভাবে জায়গা দেয়? আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।
তুই যদি বাড়ি থেকে না যাস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।
- অধরা আর কিছু বললো না। সে জানে তার কথা পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করবে না। রাজও না।
তাই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বললো,'
রাজ একদিন আল্লাহ হয়তো সত্যিটা প্রকাশ করবে। সেদিন আমাকে খুঁজবে পাবে না।
আর মা -বাবা আমি ছোট বেলায় মাকে হারিয়ে মা পেয়েছিলাম।
বাবাকে রেখে আরেকটা বাবা পেয়েছিলাম।
আমি জানি আমি আপনাদের কতটা কষ্ট দিয়েছি।
পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন। কথাগুলো বলে বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
- রাস্তায় বের হতেই মোড়ের টঙের দোকানটাতে বসে থাকা কয়েকটা ছেলে বললো,"
একদিন আমাদের ডেকো। আমরা খুব ভালো পারি। অধরা কান্না আর থামছে না।
আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সিএনজি করে বাসায় ফিরল।
বাসায় প্রবেশ করতেই দেখলো বাড়ি ভর্তি অনেক মানুষ।
.
- বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠলো।
আর একটু কাছে যেতেই দেখলো তার বাবাকে ফ্লরে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
- অধরাকে দেখেই তার সৎ মা বললো, '
এই যে কলঙ্কিনী এসেছে! তোর জন্যই তোর বাবা মারা গেছে আত্মহত্যা করে।
কাল যখন জানতে পেয়েছে তার পেয়ে একটা নষ্টা।
সমাজের মানুষ যখন এটা সেটা বলছে সে আর নিতে পারেনি।
রাগে দুঃখে অভিমানে মারা গিয়েছে। তোর জন্য আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি।
- অধরা তার সৎ মায়ের কথায় ঠাস করে ফ্লরে বসে পড়ল।
মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। আল্লাহ তার সাথে কেন এমন খেলা খেলছে বুঝতে পারছে না।
- অধরা তার বাবাকে দেখতে গেলে তার সৎ বোন তিশা বললো, '
কলঙ্কিনী তুই আমার বাবাকে ছুঁবি না।
তোর জন্য আমার বাবা মারা গেছে। তুই বের হয়ে যা।
- তিশা একটু বাবার মুখটা দেখতে দে। দেখেই চলে যাবো।
- না তোর মতো মেয়ে আমার বাবাকে দেখতে পারবে না।
আপনারা কি দেখছেন বের করে দিচ্ছেন না কেন এই মেয়েকে?
এই মেয়ের জন্য বাবা মারা গেছে। আমার মাকে হতে হয়েছে বিধবা।
- অধরার খুব করে ইচ্ছে করছে তার বাবার পা দুটি ধরে চিৎকার করে কান্না করতে।
কেন তাকে রেখে চলে গেল।
- কি হলো যাচ্ছিস না কেন?
.
- অধরাকে টেনে হিচড়ে বাড়ির বাহিরে বের করে দেওয়া হলো।
বাড়ির ভেতরে কেউ ঢুকতে দিল না।
বিকেল বেলা যথাসময়ে অধরার বাবার দাফন সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
- অধরা তবুও বাড়ির দরজায় বসে আছে।
- তিশা অধরাকে দেখে বললো,' এই তুই যাচ্ছিস না কেন?
তুই আর এই বাড়িতে কোনদিন আসবি না। ''
-বোন আমার একটা অনুরোধ রাখবি?
- চুপ তোর নষ্টামুখে আমাকে বোন ডাকবি না। বল কিসের অনুরোধ?
- আমি আমার রুম থেকে মায়ের ছবিটা নিয়ে চলে যাবো আর কিছু নিবো না। ''
- আচ্ছা যা!
- অধরা বাড়ির ভেতরে গিয়ে তার রুম থেকে তার মায়ের ছবিটা নিয়ে যখন বের হবে ঠিক তখনি,
দেখতে পেল একটা ডাইরি খাটের এক কোণায়।
ডাইরির ভেতর থেকে একটা ছবি বের হয়ে আছে। অধরা কিছু না ভেবেই ডাইরিটা বের করলো।
ডাইরির প্রতিটি পাতায় পাতায় প্রেম কাহিনী লেখা।
ছবিটা যে পাতায় সে পাতায় স্পষ্ট দেখতে পেল তার বোনের বিয়ের ছবি,
তাও রাজের সাথে। আমেরিকায় পড়ালেখা চলাকালীন দু'জন দুজনকে বিয়ে করে!
অধরার হাত পা কাঁপছে! রাজ আর তিশা তাহলে স্বামী স্ত্রী!
চলবে...
