অনুভবে ভালোবাসি
কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম,, এমন সময় ছোটো বোন এসে বললো আপু আজকে তোকে দেখতে আসবে, ওর কথা শুনে হেডফোন রেখে দৌড়ে আম্মুর কাছে গেলাম।
আম্মু আম্মুউউউ
কি রে চিল্লাস কেনো(আম্মু)
সত্যি কি আমাকে দেখতে আসবে
হুম, তোর বাবা বলেছে ছেলে ভালো, তোকে নাকি আগেও দেখেছে, আজকে ওর বাবা মা এসে তোকে দেখে কাবিন করে রাখবে।
আম্মুর কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো, আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না।
এক দৌড়ে রুমে গেলাম, ফোনটা যে কই রাখলাম খুজে পাচ্ছি না। আমার এই এক সমস্যা সঠিক সময় সঠিক জিনিস চোখেঁ পরে না। এখনি ফোনটা রাখলাম আর সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না। তারপর মনে পরলো আম্মুর কাছ যাওয়ার সময় ছোফার ওপর রাখছি।
ফোনটা নিয়ে সিয়াম কে কল করলাম।
হ্যালো সিয়াম
হুমম বলো
.
সিয়াম প্লিজ কিছু একটা করো,প্লিজ
ক কি হয়েছে নাদিয়া, তুমি এমন করছো কেনো
সিয়াম আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করছে,আমি জানি আজকেই কাবিন করাবে, তুমি প্লিজ কিছু একটা করো ।
আচ্ছা দেখছি আমি কি করা যায়
না, দেখলে হবে না, কিছু একটা করতেই হবে সিয়াম, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
ভরসা রাখো আমার ওপর। বলে ফোনটা কেটে দিলো। জানি ও অনেক কষ্ট পেয়েছে। এর আগে যতোবার দেখতে এসেছে ও কান্না পর্যন্ত করেছে।আর এবার তো বিয়ে।
আমি নাদিয়া, বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে বড়ো। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার । ভাই মেঝো আর ছোটো বোন।
আমি আবার আম্মুর কাছে গেলাম, ও মা এ যে দেখছি রান্নার কলরব শুরু হয়ে গেছে। পাশের বাড়ির চাচি,খালা সবাই এসেছে।
আম্মুকে এক সাইডে ডেকে নিয়ে আসলাম।
আম্মু তোমরা আমাকে না জানিয়ে এইভাবে বিয়ে ঠিক করে ফেললে,
একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না জানানোর।
.
দেখ মা, বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না। তারা যা করে সন্তানের ভালোর জন্যই করে।আর আমরা এমন কাউকে আনবো না যে তুই অপছন্দ করবি। আমরা তোর বাবা মা তাই আমরা বুঝি আমাদের সন্তানের পছন্দ।
মারের কথায় কি জবাব দেবো ভাষা নেই। রাগে দুঃখে রুমে গিয়ে আবার কল দিলাম সিয়াম কে।
কিন্তু বন্ধ। চারবার দিলাম বন্ধ।
সিয়াম ফোন বন্ধ করে কেনো রাখছে।কল দিয়েই যাচ্ছি ফোন বন্ধ। ওর এক বন্ধুর নম্বর ছিলো আমার কাছে তাকে কল দিলাম,,
হ্যালো রাহাদ ভাইয়া
হ্যাঁ নাদিয়া,আপু বলো
ভাইয়া , সিয়াম কই,একটু খোজ নিয়ে বলতে পারবেন।আমি ফোন দিয়ে বন্ধ পাচ্ছি
আচ্ছা আপু আমি খোজ নিয়ে বলতেছি।
অনেক্ষন হয়ে গেলো রাহাদ ভাইয়াও কল দিচ্ছে না। ,
আমি আর পাচ্ছি না। সিয়াম কে কল দিয়েই যাচ্ছি রাহাদ ভাইয়া কে কল দিচ্ছি শুধু বন্ধ।
রাত দশটার সময় কাজি এসে বিয়ে পরিয়ে গেলো।
সেই তখন যে রুমে ঢুকছি আর বের হই নি।ছেলে নাকি আমাকে আগেই দেখেছে
তাই আজকে আর দেখতে আসে নি।আমিও যাই নি,কারন আমার পছন্দ অপছন্দের দাম দিলে
কেউ আমাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করতো না। এখন ছলেকে অপছন্দ হলেও একেই বিয়েটা করতে হবে।
এর মধ্যে ছেলের মা,খলা দুইবার এসেছিলো,
এসে আমার সাথে কথা বলে গেছে।
আর পাশের বাড়ির একটা মেয়ে এসে একটা শাড়ি আর হালকা সাজিয়ে দিয়ে গেছে।
.
এখন রাত এগারোটা, শুনলাম ছেলের সাথে ছেলের এক দুলাভাই থাকবে আর সবাই যাবে।
এসব খবর আমাকে দেয়।আমার ছোটো ভাই আর বোন।
বাসর ঘরে বসে বসে ভাবছি,আমার নিজেরি ঘর।আজকে সেটাই বাসর ঘর।
এই বাসর রাত নিয়ে কতো প্লান ছিলো সিয়াম আর আমার কিন্তু একদিনেই সব যেনো ভেঙেচুরে শেষ হয়ে গেলো,,
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছি,
এমন সময় দরজা খুলে কেউ একজন রুমে ঢুকেই বললো, ওয়াশ রুমটা কোনদিকে জান।
পরিচিতো কন্ঠস্বর কানে আসতেই চমকে উঠলাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম সিয়াম।
এই তুমি এখানে কেনো, কিভাবে আসলে,আর আজকে সারাদিন ফোন বন্ধ ছিলো কেনো হুমম
এই,আমি আমার বাসর ঘরে থাকবো না তো কি অন্যকেউ থাকবে নাকি
মানেএএ
.
মানে, কিছুদিন আগে ব্যাংকে চাকরি হয়েছে,
তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আব্বু আম্মু সহ সবাইকে পাঠিয়েছিলাম।
ইংগেজ হওয়ার পর যখন শুনলাম তুমি রুম থেকে আর বের হও নি তাই একবারে
কাজিকেই তুলে আনলাম বিয়ের জন্য। সারপ্রাইজ টা কেমন বলোও,
তবেরেএএএ, সারাদিন কতো কষ্টে ছিলাম জানো তুমি।
আমিও জান।
এখন কান ধরে উঠবোস করে একশোবার।
কিহ, একটু কমিয়ে দাও না জান
কিহ না আচ্ছা নিরানব্বই বার করো।
আমাদের বাসর ঘরের সব প্লান ভেঙে একশবার কান ধরে উঠবোস করতে হলো।আর তারপর,,
তারপর আর কি,জমিয়ে বাসর করবো।বলেই লজ্জায় বুকে মুখ লুকালো পাগলিটা।
.
সমাপ্ত
No comments