আমাকেই ছুঁড়ে দিলাম টুকরো টুকরো করে

শহরের ব্যস্ত চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে

আমাকেই ছুঁড়ে দিলাম টুকরো টুকরো করে।
বুকের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বললাম,
কারো দরকার পড়লে কুড়িয়ে নিতে পারেন আমাকে,
যার যেটুকু লাগবে,
একদম ফ্রি;
আমি আজই এই শহর থেকে চলে যাবো।
একজন ট্রাফিক পুলিশ দৌড়ে এসে বললেন,
-রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব অবৈধ কাজ চলবে না,
রাস্তায় নিজেকে ছুঁড়ে মারার লাইসেন্স দেখান,
আমি এক লাইনের একটি কবিতা লিখে দিয়ে দিলাম সাথে সাথে,
ট্রাফিক পুলিশ কবিতা নিয়েই চলে গেলেন সন্তুষ্ট হয়ে।
- একটি নতুন সাইকেলের জন্য আমার শৈশবের অনেকগুলো ঘুমহীন রাত নিলেন একজন কেরানী বাবা তার সন্তানের জন্য।
-আমার স্কুলের খালি টিফিন বাক্সটি নিলেন একজন মা, তার চোখের জল জমানোর জন্য।
-কিশোর বেলায় পোস্ট না করা আমার তেরো পাতার চিঠিটি নিলো লাল ফ্রক পড়া একজন কিশোরী,
এদিক ওদিক তাকিয়ে সে সোজা ফ্রকের ভিতর বুক বরাবর চালান করে দিলো সেই চিঠিটি।
-আমার প্রিয় হলুদ শার্টটি নিলো সদ্য কলেজে ওঠা এক কিশোর,
কাউকে কেয়ার না করে সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে‌ই ইন করে শার্টটি পরলো।
-একজন বেকার যুবক তার বুক পকেটে খুব যত্ন করে রাখলো আমার জীবনের সব অ‌ন্ধ অপমান।
-আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু শাহেদ এর একটি ছবি কুড়িয়ে চোখের সামনে ধরে রাখলো ঠিক শাহেদের মতোই দেখতে একজন।
-আমার অনেকগুলো অনুচ্চারিত
অভিমান তপ্ত পিচের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে একজন নারী তার ভ্যানিটি ব্যাগে রাখলো।
-একজন ছদ্মবেশী কবি তার দু’মুঠো ভর্তি করে আমার সারাজীবনের হাহাকারগুলো নিজেরই পুরো শরীরে মাখতে লাগলো।
সূর্য ডোবার পর আমারই টুকরো যেটুকু বাকি ছিল;
তা কুড়িয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম শহর ছেড়ে চলে যাবার জন্য,
আর আমার পিছনে পিছনে পিঁপড়ের মতো লাইন ধরে নিঃশব্দে হাঁটছে
—আমাকে কুড়িয়ে নেওয়া সেই সব মানুষেরা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url