কুমারী । পর্ব - ০২
মহেশ এগিয়ে এসে বিছানায় সামনে দাড়ালো,
হঠাৎ মহেশ নিজেকে অপরাধী বলে গালি দিচ্ছে কারণ মহেশ যে নিজের হাতে মেয়েটার ভাগ্য কুরবান করেছে, কেনো ওর মাথায় ঢুকলো না যে মহেশ এই ধরনী তে আর বেশি নেই....
এসব আনমনে ভাবছে মহেশ হঠাৎ মল্লিকার কোথায় ঘোর ভাঙলো!
আপনি খুব খারাপ মানুষ, কেন আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন!?
আমি মা এর কাছে যাবো যেতে দিন আমায়?
.
চন্দ্রমল্লিকার এমন প্রশ্নে কি জবাব দিবে খুঁজে পাচ্ছে না মহেশ, মুচকি হেসে মহেশ উত্তর দিলো বিয়ে তো সব মেয়ে কে করতে হয় চন্দ্রাবতী, দেখো তোমার শাশুড়ী মনে আমার মা সেও বিয়ে করে আমাদের বাড়ি তে চলে এসেছে,তোমার মা ও বিয়ে করেছে তাইতো তোমায় ও বিয়ে করতে হলো.....
চন্দ্রমল্লিকা মুক ফুলিয়ে বললো ঘাট হয়েছে আমার আমি বিয়ে করবো না আমি মায়ের কাছে যাবো,,,, মহেশ: আচ্ছা সে নাহয় কাল তোমায় তোমার মা এর কাছে নিয়ে যাবো তবে আমার একটা শর্ত আছে...
মল্লিকা: সর্ত? কী সর্ত?
মহেশ: আজ তোমায় আমার কাছে থাকতে হবে যে।
মল্লিকা : না আমি থাকবো না আপনি খারাপ মানুষ,আপনি কেন আমায় বিয়ে করেছেন ?
হঠাৎ মহেশ বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলো, বুকে হাত চেপে বললো মল্লিকা মা কে ডাকো?
এমন সময় মল্লিকা বুঝতে না পেরে ছুটে দরজার কাছে গেলেও দরজা খুলতে পারছে না, এদিকে ক্রমশঃ মহেশ এর অবস্থার অবনতি হচ্ছে মহেশ মা বলে একটা চিৎকার দিলো...
সবাই দরজার কাছে এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে, মল্লিকা বুদ্ধি করে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে দরজা টা খুলে দিলো। অতঃপর সবাই ঘরে প্রবেশ করলো,
মল্লিকা গাপটি মেরে ঘরের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে। কী হয়েছে বাবা
কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমায় বল বাবা (ঐশ্বর্য্য)
.
পার্বতী নিখিল কে ডাকতে গেলো কারণ ডাক্তারি বিদ্যা এক মাত্র নিখিল এর ই জানা,,,,
নিখিল কেনো মহেশ আর ঐশ্বর্যর ওপর ভীষণ রাগ কিন্তু প্রকাশ করছে না।
নিখিল কই তুই দেখ না মহেশ কেমন করছে, (পার্বতী)
মহেশ শুনে ঘর থেকে ছুটে আসছে , যেনো এমন কিছু ঘটবে নিখিল এর আগে থেকে ই জানা।
দৌড়ে এসে নিখিল মহেশের ঘরে ঢুকলো, মহেশের পাশে বসে মহেশের পালস
পরীক্ষা করলো। মহেশ চিৎকার দিয়ে বললো এখনই মেজদাভাই কে শহরে নিতে হবে,
ঘোড়ার গাড়ি বের করতে বলো আর বাবা কোথায়? আসতে বলো আমার সাথে, বলে নিখিল মহেশ
কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো... ঐশ্বর্য্য বেশ শক্ত পক্ত গাড়ির পেছনের পেছন কিছু দূর হেঁটে
দাড়িয়ে পড়লো, সাবধানে যাস মনে মনে বললো ঐশ্বর্য্য। পার্বতী এসে ঐশ্বর্য্য কে ধরে
অন্দরমহলে এনে বসালো,এমন কিছু ঘটবে সেটা যেনো সবার আগে থেকে ই জানা।
পালক মল্লিকার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে, ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে, হতভাগী তো জানে ই না ওর কি সর্বনাশ হতে যাচ্ছে !!
পালক: মল্লিকা বোন আমার?
মল্লিকা পালকের দিকে তাকালো, কিজানি পালকের দিকে তাকাতে ই কেনো যেনো তাকে ই একমাত্র মল্লিকার আপন মনে হলো...
পালক: মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে না?
মল্লিকা: অশ্রুসিক্ত নয়নে মাথা নেড়ে হ্যা বললো।
পালক: আমি সম্পর্কে তোর বউ দিদি হই বুঝলি?
মল্লিকা:মাথা নাড়ল
পালক:আয় আমার সাথে আজ আমি ঘুম পাড়িয়ে দেই, বলে পালক মল্লিকা কে পালকের ঘরে নিয়ে গেলো...
মল্লিকা ও বাধ্য মেয়ের মতো পালকের সাথে চলে গেলো।
জমিদার বাড়ির মেজো ছেলে মহেশের ফুসফুসে অনেক গুলো ছিদ্র আছে...এমন কি হৃদরোগ ও আছে, অনেক দিন ধরে ই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে মহেশ কাউকে কিছু জানায় নি এই ঘটনা জেনে ই মহেশের প্রথম বউ পালিয়েছিল।
মহেশের পরিবার ঘটনা টা জানতে পারে যেদিন মহেশ অজ্ঞান হয়ে মেঝে তে পড়ে যায় বিলেত ফেরত নাম ডাক ওয়ালা ডাক্তার ই ধরতে পেরেছিলেন এই রোগ।
সারারাত ঐশ্বর্য্য ঘুমায় নি ঠাকুর ঘরে বসে ছিলেন, কোন মা'ই বা পারে ছেলের এমন অবস্থায় ঘুমাতে? সকাল হয়েছে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙছে অন্দর মহলের সবার, মল্লিকা ও উঠেছে,,, পালক হেসেলের কাজ সামলাচ্ছে সাথে অনেক কাজের লোক সাহায্য করছে।
বেলা তো অনেক হয়েছে সূর্যের আলোর কিরণ বেড়েছে, কিন্তু ঐশ্বর্যর মনে যে কোন এক আকস্মিক ভয় দানা বাঁধছে। পার্বতী ঠাকুর ঘরে প্রবেশ....
পার্বতী: বৌদি অনেক তো ঠাকুর কে ডাকলে এবার ওঠো?
ঐশ্বর্য্য: হা রে পার্বতী আজ আকাশ টা এতো থমথমে কেনো রে ? আমার কলিজা টা এমন কাদঁছে কেনো রে?
পার্বতী: ও তোমার মনের ভয় বৌদি।
সকালে উঠে শিউলির কাজ তার ঘরের বড়ো জানালা টা মেলে দেওয়া, যেমন ভাবনা তেমন কাজ শিউলি জানালাটা মেলে দিতে ই শিউলির চোখ বাড়ির বড়ো গেট এর দিকে যায়.... এতো সকালে ঘোড়ার গাড়িতে কে আসলো?
এমন ঘোড়া তো জমিদার বাড়ির ঘোড়াশালে থাকে, তবে কি মেজদা আর ছোড়দা আসলো?
ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঐশ্বর্য্য কে বললো, মা ছোড়দা এসেছে মেজদা কে নিয়ে মনে হচ্ছে....
ঐশ্বর্য্য শিউলির কথা শুনে আতকে উঠলো!! এতো সকালে কেনো? তবে কি আমার আশঙ্কা ই ঠিক! না না, এ হতে পারে না।
বলে ই ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড় দিলো ঐশ্বর্য্য, এক এক ঘর পার করে দৌড়াচ্ছে ঐশ্বর্য্য ঘর পেরিয়ে শিরি যেনো পথ শেষ হচ্ছে না শেষ এ অন্দর মহলের বাইরে বেরিয়ে আসলো ঐশ্বর্য্য...
ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামলো ভল্লোব রায় আর নিখিল ।
ঐশ্বর্য্য: নিখিল, মহেশ কোথায়!? বলতে বলতে এগিয়ে আসছে ঐশ্বর্য্য... কী হলো বল? মহেশ কোথায়?
নিখিল নিশ্চুপ।
ভল্লোব যেনো ঠিক করে হাটতে ও পারছে না কেমন যেনো চুপসে গেছে....
ঐশ্বর্য্য যেনো কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না।
নিখিল ঘোড়ার গাড়ির মধ্যে সাদা কাপড়ের মোড়কে ঢাকা মহেশের মুখ টা বের করে ওর মা কে দেখালো।
ঐশ্বর্য্য এগিয়ে গেলো মহেশের কাছে, মহেশ বাবা আমার! চোখ খোল? মা ডাকছে তো চোখ খোল?
ততক্ষনে পুরো অন্দরমহলের মানুষের কানে খবর পৌঁছে গেছে, মহেশ আর নেই!
পালক মহেশের লাশ দেখে কোন ভয়ে যেনো উল্টো দৌড়াচ্ছে অন্দরমহল এর দিকে, মল্লিকার কাছে!
পালক: তুই পালিয়ে যা মুকপুড়ি !
চন্দ্রমল্লিকা যেনো বিস্ময় এর চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে....
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com