বিরহ মিছিল । পর্ব - ১৮
অত্যল্প ব্যবধান মুগ্ধতার সঙ্গে আদিলের। মুগ্ধতা আদিলের মুখে উচ্চারিত শব্দ অনুধাবনের চেষ্টা চালালো। গভীর ভাবনায় মুগ্ধতার ভ্রূদ্বয়ের মধ্যভাগে ভাজ এসে জড়ো হয়েছে। ডাগরডোগর চোখ সরু তে রুপান্তর।
" ভিতরে আসো।"
কথাটুকু আদিল বলার সঙ্গে সঙ্গে চোখে তর্জমা করলো। মুগ্ধতা স্থিতিশীল পা গতিশীল করে ধপাধপ্ ভিতরে ঢুকলো।
ঘরের ভিতরে ঢুকেই কোণায় কোণায় চোখ বুলালো মুগ্ধতা। জেঠিমার অস্তিত্ব ত্রিসীমানায় পাওয়া গেল না। মুগ্ধতা চোখ সরু করে ভাবনায় নিবেশ ঘটালো।
আদিল দরজা লাগিয়ে মুগ্ধতার সম্মুখে এলো। মুগ্ধতার ইতিউতি উঁকি দেওয়াটা চোখের আড়াল হলো না। আদিল হেদে বলল,
" বাড়িতে এখন তুমি আমি। এছাড়া কেউ নেই।"
ভাবনায় ভাঁটা পড়ল মুহূর্তে। মুগ্ধতা পিটপিট করে পলক ঝাপটে বলল, " জেঠিমা কোথায়?"
আদিলের সরল স্বীকারোক্তি, "বেবি দেখতে হাসপাতালে গেছে।"
মুগ্ধতা জিজ্ঞেস করলো না কার বেবি বা কোন হাসপাতালে গেছে। মনমেজাজ এমনিতেই বিগড়ে। দুজনের মৌনতা কাটলো কিয়দংশ। মুগ্ধতা দোনোমোনো করে প্রসঙ্গ তুললো,
" বললে না তো তুমি। এখন! এখানে কিভাবে?"
আদিল নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে বলল,
" বলছি আমার সাথে এসো।"
মুগ্ধতা আদিলের পিছু এলো। আদিল ক্লান্ত ভাবে বিছানার এক প্রান্তে বসলো। মুগ্ধতা দাঁড়িয়ে ছিল। আদিল ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ক্লান্ত স্বরে আওড়াল,
"উফফ! বসো মুগ্ধ।"
মুগ্ধতা বিছানায় বসলো না। পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে এনে আদিলের সামনাসামনি বসলো। আদিল আওড়াল,
" আজকে তোমায় পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল না? "
এমন করে আদিল কথাটা আওড়াল যেন সে জানেই না। মন তার বড়োই দ্বিধাদ্বন্দের কূলে। বিকেলের ঘটনার ভাসানোর যে আদিল চেষ্টা করছে কথায় বোধগম্য। মুগ্ধতা মুখভার করে বলল,
" হ্যা এসেছিল।"
মুহূর্তে আদিলের রাগের পাল্লা তিরতির করে ভারি হতে আরম্ভ করলো। আদিলের মনের ভিতর অস্থিরতা প্রগাঢ়। মনে হলো পৃথিবীর সবচাইতে জঘ°ন্য খবর হচ্ছে এটা। অস্থিরতার মধ্যেও কাটকাট গলায় আদিল বলল ,
" সরি মুগ্ধ! তোমার সন্তানের মামা,আঙ্কেল আমি হতে পারবো না। যদি হতেই হয় কিছু, তবে তোমার সন্তানের বাবা হবো।"
লজ্জায় অধোবদন মুগ্ধতার। কপোলে লজ্জার ছোঁয়া। এই কথার পিঠে কি বলবে সে। বিড়বিড় কন্ঠে উচ্চারণ করল,
" আচ্ছা।"
যদিও আদিল ঘুনাক্ষরেও শুনতে পেল না।
তাসলিমা নামের এক খালা মুগ্ধতাদের বাড়িতে বিকেলের দিকে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে। উনার কাজ দুপুরের এঁটো থালাবাসন ধৌত করা, চা বানানো আমেনার ছোট ছোট ফরমায়েশ পালন।
আদিলের সঙ্গে দারুণ সখ্যতা তাসলিমার। আদিল আন্টি আন্টি করে মাথা খেয়ে ফেলার জোগাড়। তাসলিমা কে দিয়েই সকল খবর রাখে মুগ্ধতার। মুগ্ধতার খবরাখবর সবই ট্রান্সফার করেন আদিলের কাছে তিনি৷
বিকেলের ঘটনা তাসলিমাই আদিলকে ফোন করে জানিয়েছেন। এত সাংঘাতিক কাহিনি না বলে উপায় আছে!
মুগ্ধতা, আমেনা বাড়ির কেউ অবশ্য এসব কথা জানে না। জানলে কবেই বিতাড়িত হতেন আমেনার হাতে তাসলিমা !
সদর হাসপাতালের কাছাকাছি প্রগতির বাড়ি। অনেক দিন পর মুগ্ধতা তাদের বাড়ির দিকে এলো। খুব তাড়ায় ভিতরে সে আর উপরে উঠলো না। প্রগতিকে ফোন করে পাঁচ তলা থেকে নামার নির্দেশ দিলো।
প্রগতি হাসি মুখে কেঁচি গেটের সামনে এলো। হাতে তার রঙের ছোঁয়া মলের সাদা শপিং ব্যাগ। কোন ক্রমে কেঁচি গেটের তালা খুলে প্রগতি বাহিরে বের হলো। মুগ্ধতার দিকে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
" আমি তো ভেবেছিলাম তুই এটার কথা ভুলেই গেছিস। চৌদ্দ মাস আগলে রেখেছি তোর এই শপিং ব্যাগ। ফাইনালি তুই নিচ্ছিস এটা।"
" এটার কথা ভোলা যায় আদৌও?"
প্রশ্নবিদ্ধ নয়ন মুগ্ধতার। তর্কে নারাজ প্রগতি। এটা তাদের এরিয়া। একটু চেচামেচি করলে নির্ঘাত বাড়িতে খবর যাবে। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
" ভিতরে আয়।"
মুগ্ধতা অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলল,
" আরেকদিন। আজ আসি রে।"
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com