বিরহ মিছিল । পর্ব - ১৯
হানকাটা ব্রিজের রোডের পাশে বিস্তীর্ণ স্থানে পানিতে টলমল করছে। সবুজ গাছগাছালি তে আজকেও পরিপূর্ণ জায়গাটি। দুপুর তিন টা এখন। রোদের প্রখরতা একটু বেশিই।
আজও হানকাটা ব্রিজে মুগ্ধতা এসেছে, জোড়ায় নয় একা। ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে সামনে যাচ্ছে সে। বেশ উপভোগ করছে মুগ্ধতা সময়টা। বহু চেনা পরিচিত পানিতে ভাসমান রেস্টুরেন্টে সামনে আসা মাত্র পা থেমে গেল আপন গতিতে। কত স্মৃতি এই রেস্টুরেন্টে৷
মুগ্ধতা রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তরে ঢুকে গেল। সারি সারি টেবিল চেয়ারের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত মানুষ কে খুঁজে পেয়ে মুগ্ধতার অধর প্রসারিত হলো। মুগ্ধতা এগিয়ে গিয়ে নিদিষ্ট জায়গায় থেমে হাতের পার্স, শপিং ব্যাগ টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসলো । দুজনে মুখোমুখি এখন। মুগ্ধতা হেসে মুখোমুখি বসা আদিল কে প্রশ্ন করলো,
"অপেক্ষা করতে ভালো লাগে?"
মূলত খোঁচার চেষ্টা। আদিল সুচালো দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখল মুগ্ধতার দিকে। পরক্ষণে দৃষ্টি অন্যরকম। টিস্যু দিয়ে ঘর্মাক্ত ললাট সাফ করলো অতঃপর মনোমুগ্ধকর গলায় বলল,
" অপেক্ষা শব্দ টা বড় ধৈর্যের শব্দ মুগ্ধ। যে কেউ এটা পারে না। কারো জন্য কোথাও অপেক্ষা করতে আগে বিরক্ত চলে আসতো। তবে এখন ব্যতিক্রম৷ টানটান উত্তেজনা কাজ করে কখন প্রিয়র আনাগোনা ঘটবে।"
"তোমার মধ্যে আমি কবি ভাব স্পষ্ট দেখতে পারছি আদিল।"
মুগ্ধতা অকপটে বলে ফেললো। আদিল হাসোজ্জল মুখে বলল,
" শুধু এটুকু?"
"ইদানীং অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি।"
স্বর ভিন্ন। আদিলকে বিব্রত করার আপ্রাণ চেষ্টা।
আদিল প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
" কি খাবে?"
" বাড়ি থেকে খেয়ে বেরিয়েছি। এখন আর কিছু খাচ্ছি না।"
মুগ্ধতা বলার সাথে সাথে টেবিলের শপিং ব্যাগ আদিলের দিকে এগিয়ে আওড়াল,
"এটা তোমার জন্য।"
আদিল শপিং ব্যাগ হাতে নিল। টেবিলে রেখে শপিং ব্যাগের মুখ দিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো ভিতরে কি। তবে শপিং ব্যাগের মুখে পিন মারা। আদিল দেখতে ব্যর্থ হয়ে উৎকন্ঠায় বলল,
" কি এটা? "
মুগ্ধতা বলল,
"শার্ট।"
আদিল চটজলদি সাবধানে ব্যাগের পিন খুললো। মুগ্ধতার দৃষ্টি আদিলের দিকে স্থির। আদিল শপিং ব্যাগ থেকে কাঙ্ক্ষিত বস্তু বের করল। এক রঙের গাঢ় গোলাপি রঙের শার্ট একটি। সাধারণত আদিল হালকা সব রঙের শার্ট পরে। এতো ডিপ নয়। আদিল কে তবুও অসন্তোষ দেখালো না। চওড়া উজ্জ্বল মুখমন্ডল আদিলের। ওষ্ঠে হাসির রেখা বিদ্যমান। মুগ্ধতার সামনেই উচ্ছাসে ওষ্ঠ ছোঁয়াল কয়েকবার শার্টে। খুব যে দামি শার্ট তা নয় মাত্র তেরশ টাকায় কেনা। এই টাকা আদিলের কাছে অতি তুচ্ছ। তবে মুগ্ধতার কাছে অনেক। টিফিনের রিক্সা ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে শার্ট টি কিনেছিল।
শপিং ব্যাগে একটা রিসিট পেল আদিল। আদিল রিসিটে চোখ বুলিয়ে বলল,
" কবে কিনেছিলে এটা?"
"চৌদ্দ মাস আগে।"
আদিল হতবিহ্বল। মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিলো প্রায়। তাদের রিলেশনের মাত্র তিনমাস চলছে। চৌদ্দ মাস প্রায় দেড় বছর। আদিলের সিক্ত হৃদয়কূল। সজল নয়নে আওড়াল আদিল,
" আমার জীবনে সেরা উপহার এটা মুগ্ধ।"
বন্ধের দিনে বাজার বরাবরই গিজগিজ রয়। শুক্রবার তো মানুষের ভিড়ে বাজারে প্রবেশ করা দায় হয়ে পড়ে। কালি মন্দিরের সরু রাস্তায় ঠেলাঠেলি করে আমেনা, মুগ্ধতা ঢুকলো।ঠিক করে পা ও ফেলা যাচ্ছে না। মনে মনে ভীষণ রাগলো মুগ্ধতা। এই ছুটির দিনে কেন বাজার আসতে হবে।
বাজারের পিচঢালা রাস্তাটাও যানযট পূর্ণ। মুগ্ধতা নিজের রাগ সামলে আমেনার হাত ধরে ফুটপাতে উঠলো। ফুটপাতের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে মানুষজনদের যেতে দিচ্ছে আবার সে হাঁটছে। ফুটপাতে জোড়ায় হাঁটা মুসকিল। জোড়ায় হাঁটলে তেজি বাক্য মাঝেমধ্যে শুনতে হয়৷ কেউ বলে, "এটা ফুটপাত।" কেউ বা বলে, "আগেপিছে হাঁটুন।"
রাস্তার ডান বাঁকে যেতেই পরিচিত বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হলো আমেনার। বহুদিনের পরিচিত দুজন। দীর্ঘ কাল যোগাযোগ নেই দুজনের। আমেনার বান্ধবীর নাম সারা। কলেজ লাইফে গলায়গলায় ভাব ছিল দুজনের৷ আমেনা আকস্মিক রাস্তায় থেমে সারা হাত ধরে বসলেন। সারার ভীত মুখবিবর। রেগে বলার চেষ্টা করলেন,
" কে আপনি? বলা নাই কওয়া নাই হাত ধরেছেন।"
আমেনা বিনিময়ে হাসলেন। সারা দেখলেন না সেই হাসি। আমেনার মুখে নিকাব থাকায়। মুগ্ধতা চটপটে নয়নে মাকে দেখছেন। দু'বার টানার চেষ্টা করেও মাকে বাগে আনতে পারেনি। ভয়ে বুক দুরুদুরু করছে। পাব্লিক রাস্তা। মায়ের জন্য না গণধোলাই কপালে জোটে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com