Breaking News

রিক্সাওয়ালা যখন সাকসেসফুল বিজনেসম্যান । পর্ব -০১



বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল রিক্সাটা নিয়েই বসে আছি পাড়ার একটা মোড়ে,

রাস্তায় তেমন কেউনেই কথাটা বলতেই একটা ছেলে এলো,
ছেলেটি:-এই ছোটো লোক জাবি
ছোটলোক কথাটা শুনেই একটু খারাপ লাগলো,
আমি রিক্সাচালক আর গরিব বলেই কি ছোট লোক,আপনেরাই বলেন,মানবতা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে,
এক কেজি দুঃখ কে বাম পকেটে রেখে,
বললাম
hm যাবো কোথায় যাবেন ভাইয়া?
ছেলেটি:- তুই চল আমি বলছি।

আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে। তার পর আমি রিক্সা চালানো শুরু করলাম।
রিক্সা চালাতে চালাতে রাস্তা ফুরিয়ে আসতেছে
অথচ আমার পরিচয় টা আপনাদের দেওয়ার কথা মনেই নেই,
চলেন এখন যেহেতু মনে পড়েই গেছে তাই বলেই দি, আমি রাসেল ক্লাস 5 পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি।
গরিব মানুষ পেটের ভাত যোগাড় করতে পারিনা তাহলে লেখাপড়া কিভাবে করবো বলেন,
তাই আর পড়াশোনা করে ওঠা হয়নি। কারণ আমার বাবা মা মারা গেছে সেই ৮ বছর আগে তখন আমার বয়স ১১। সেই ১১ বছর বয়স থেকে রিক্সা চালাই এখন আমার বয়স ১৯। আমার একটা ছোট বোন ও আছে এখন সে নবম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে বোনের পড়ালেখার খরচ,আর নিজের খরচ। সংসার সবকিছুর জন্য আজ আমি রিক্সা চালক, বাবার সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই আছে শুধু এই বাড়িটা আর এইরিক্সা যেটা এখন আমার জীবন মরনের সাথী।অনেক তো ফটর ফটর করলাম এবার চলুন গল্পে ফেরা যাক।
এতসময় ধরে রিক্সা চালাচ্ছি
কিন্তু লোকটা কিছু বলছে না কোথায় যাবে। প্রায় 25 মিনিট পর একটা বড় বাড়ির সামনে এসে।
ছেলেটি:- এই ছোট লোক এখানে দাঁড়া ।
লোকটি যখন দাঁড়াতে বলল আমি সেখানেই দাঁড়ালাম তারপর লোকটি ভাড়ার টাকা দিয়ে চলে গেলো, আমিও আর সেইখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে আমার অন্য ভাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,কিছুপথ আসতেই একটা মেয়ে দাঁড় করালো বয়স আনুমানিক 14 15 হবে,
সে আমার কাছে এসে বলল।

মেয়েটি:- ভাইয়া আমাকে একটু স্কুলে দিয়ে আসেন।
ওকে বোন বসো। মেয়েটি বসারপর আমি স্কুলের দিকে রওনা দিলাম প্রায় 15 মিনিট পর স্কুলে আসলাম মেয়েটিকে নামিয়ে দিয়ে আবার অন্য ভাড়ার সন্ধানে গেলাম আস্তে আস্তে দুপুর হয়ে গেল,দুপুর 1 টা 35 মিনিট আমি বাড়িতে আসলাম এসে দেখি বোন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওহহ আপনাদের তো বলাই হয়নি আমার বোনের নাম বৃষ্টি,
বৃষ্টি:-ভাইয়া আমার পরশু এক্সাম তাই ১০০০ টাকা লাগবে না হলে স্যারেরা এক্সাম হলে ঢুকতে দেবেনা।
আমিতো রিতিমতো বৃষ্টির মুখে এক্সাম শব্দ টা শুনতেই অবাক,
এই বৃষ্টি এই এক্সাম টা আবার কি খায় না গায়ে মাখে?
বৃষ্টি:- আরে গাধা,
এক্সাম মানে হলো পরীক্ষা,আর এক হাজার টাকা না দিলে আমাকে পরীক্ষার হলে বসতে দিবে না।
সেটা বলবি তো আগে,
আমি তো মূর্খ একটা মানুষ এক্সাম মানে বুঝি নাকি?

বৃষ্টি:-
ঐ জন্যই কতবার বলেছি আমার কাছে প্রতিদিন পড়তে বসবি কিন্তু কে শোনে কার কথা।
আচ্ছা বাবা হয়েছে, কালকে যখন রিক্সা নিয়ে বের হবো তখন দিয়ে যাবো।
বৃষ্টি:-এখন যা গোসল করে আয় ভাত খাবি।
অনেক খুদা লেগেছে তোর জানি আমি,
আচ্ছা যা তুই ভাত বেড়ে রেডি কর আমি গোসল করে এখনি আসতেছি। আর গামছা টা দে,
তারপর বোন একটা গামছা এনেদিলো আমি চলে গেলাম কলের পারে ঝটপট গোসলটা সেরে নিলাম,
কলপাড়টা আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে,
তাই গোসল করে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম তখনই হিয়ার সাথে দেখা হিয়া হচ্ছে আমার বন্ধু ছোটবেলা থেকেই এখন অবশ্য তাকে আমি বন্ধু বলি না কারণ একদিন আমি ওকে নাম ধরে তুই করে ডেকেছিলাম ওর বাড়িতে গিয়ে,আর তুই করে ডাকার কারণে হিয়ার মা আমাকে অনেক কিছু শোনায়,
হিয়ার মা :-তোর মত মূর্খ অশিক্ষিত একটা ছেলে হয়ে, আমার শিক্ষিত মেয়েকে কিনা তুই করে বলিস, হারামজাদা আপনি করে বলবি।
সেদিন থেকে আমি আর বন্ধু ভাবি না আমি ওকে আপনি করেই বলি হঠাৎ হিয়া আমাকে বলল।
হিয়া:-ওই রাসেল কোথায় যাস?

বাড়িতে,
কথাটা বলেই সেখানে আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ঝটপট বাড়িতে চলে এলাম,আসলেই হিয়া আমাকে বন্ধু ভাবে কিন্তু ওর মায়ের কথায় আমি ওকে বন্ধু ভাবলেও প্রকাশ করিনা যাই হোক বাড়িতে আসার পর শরীরটা গামছা দিয়ে ভালো করে মুছে নিলাম তারপর রেডি হয়ে খেতে এলাম। বোন খেতে দে তাড়াতাড়ি? অনেক খুদা পেয়েছে।
বৃষ্টি:- ভাত তো বাড়ায় আছে বস আমি আসছি
তুই এখনো খাসনি কেনো? কত বাড় বলেছি আমার আসতে দেরি হয়,তুই আগে খেয়েনিবি ।
বৃষ্টি:- তোকে ছাড়া কখনও আমি খেয়েছি?
অভিমান ভড়া কণ্ঠে বললাম,
আচ্ছা হয়েছে তাড়াতাড়ি বস আমি আজ নিজ হাতে তোকে খাইয়ে দেবো।
তারপর আমি বোনকে আর বোন আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো দুজনেরই চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছে আমি মনে মনে ভাবছি। সবার বোনরা কতো ভালো ভালো খাবার খায়,
আমি এক হতভাগা ভাই যে কিনা নিজের বোনকে একটু ভালো খাবার ও দিতে পারিনা,
চোখের কোণে জল যেনো সরছেই না,
ঐদিকে বৃষ্টি ভাবছে ।
বৃষ্টি :-আজকে যদি আমার বাবা মা এই পৃথিবীতে থাকতো তাহলে আমার ভাই ও অন্য সবার মতো অনেক পড়াশোনা করতে পারত,এত কষ্ট করতে হতো না। হে আল্লাহ এমন কেন করলে আমাদের সাথে। (কান্না করতে করতে)

এই পাগলি বোন আমার কান্না করছিস কেন?
বৃষ্টি:-না ভাইয়া এমনি,
ওকিছুনা আসলে চোখে পোকা পোরেছে তাই চোখে পানি।
বোন আমি সব বুঝি,
আমি সবার মত চাকরি করি না তাই তোকে ভালো ভালো খেতে ও পরতে দিতে পারিনা কি করব বল আমি তো আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি, কান্না করিস না বোন আমি এবার থেকে আরো 2 ঘন্টা বেশি রিক্সা চালাবো।তবুও তোর চোখের জল আমি সহ্য করতে পারবো না,
বৃষ্টি:-একদম বেশি কথা বলবি না,আমি কি তোকে কখনো বলেছি,
যে আমি কষ্টে আছি কখনো বলেছি বল?
তা বলিস নি কিন্তু.......
বৃষ্টি:-কোন কিন্তু নয় যা তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে নে।
আচ্ছা ঠিক আছে তারপর হাত মুখ ধুয়ে নিলাম তারপর একটু বসার পরে আবার রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একজন বলল।
লোকটি:- দাদা ****এই জায়গায় যাবে?
আমি রিক্সা টা তার কাছে থামিয়ে বললাম,hm যাবো বসো ।

লোকটি:- বসবো তো,
আমি কিন্তূ 40 টাকা দিবো।
আসলে দাদা আপনে যেখানে যাবেন সেখান কার ভাড়া তো 50 টাকা।
লোকটি:- আমি 40 টাকা দিবো যেতে হলে বলেন? না হলে ছাড়েন।
না বাবা বসে থাকার চেয়ে এই 40টাকার ভাড়া মারলে তাউ পকেটে আসবে,মনেমনে
আচ্ছা আমি আপনাকে 40 টাকায় নিয়ে যাবো উঠে বসুন। লোকটি বসার পরে আবার রিক্সা চালানো শুরু করলাম প্রায় বিশ মিনিট পর লোকটার বলা ঠিকানায় এসে পৌছালাম,
লোকটি রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চলে গেল।
আমিও সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে অন্য জায়গায় এসে নতুন প্যাসেঞ্জারের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে আছি ।
হঠাৎ কোথা থেকে যেন হিয়া এলো,
এসে বললো
হিয়া:- এই তাড়াতাড়ি বাড়িতে চল।
দেখছিস না সন্ধ্যে হয়ে এলো,

আচ্ছা চলুন।
তারপর হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে এলাম । আসার সাথে সাথে হিয়া রিক্সা থেকে নেমে আমার পকেটে
কিছু টাকা মানে ভাড়া গুঁজে দিয়ে চলে গেলো,
আমি মানা করা সত্বেও জোর করেই দিয়ে গেলো,
আমার বাড়ি আর হিয়ার বাড়ি পাশাপাশি আগেই বলেছিলাম, তাই আমিও বাড়ি চলে এলাম ।
বৃষ্টি:-ভাইয়া আজকে সকালেই আসলি,
হিয়া কোথায় যেনো গিয়েছিল ওকে নিয়ে আসলাম, তাই আমি ও বাড়িতে চলে আসলাম,
আসলে আমি তো এমন সময় বাড়ি আসিনা তাই বৃষ্টি উপরের কথা বলল,
বৃষ্টি:-ভালো করেছিস এখন যা গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয় নাস্তা খাবি ।
অভি:- নাস্তা কই পাইলি?অনেকটা অবাক হয়ে,
বৃষ্টি:- হিয়া আপু দিয়ে গেছে।
আচ্ছা বলেই
হাত মুখ ধুয়ে এসে নাস্তা খেয়ে টিভি দেখছি,
এমন সময় কোথা থেকে জানি হিয়া আসলো। এসেই টিভি টা বন্ধ করে দিল,
এই এই আপনি টিভি টা বন্ধ করলেন কেনো?
হিয়া:-তোর মত মূর্খ কে নিয়ে আর পারিনা,
তোকে মানুষ করতে হবে যা তাড়াতাড়ি বই পড়। বৃষ্টি বোন আমার আদর্শলিপি বই টা নিয়ে আসো তো তোমার ভাইয়াকে একটু মানুষ করি।
বৃষ্টি:- আদর্শলিপি ( অবাক হয়ে)
হিয়া:- হ্যাঁ আদর্শলিপি তোমার মূর্খ ভাইকে আবার প্রথম থেকে সব শেখাতে হবে।
কিন্তু আমি তো একটু পড়াশোনা জানি ।
হিয়া:- কতোজনিস তাতো আমার জানাই আছে ।
এইযে ম্যাডাম আমি মূর্খনা,
আমি ক্লাস 5 পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি hm

হিয়া:- বাববাহ ক্লাস 5 পযর্ন্ত পড়েই মনে হচ্ছে বিদ্যাসাগর হয়ে গেছে,আচ্ছা তাহলে (অ আ ই ঈ )পর দেখি?
অ আ ই ঈ ..
দেখলেন আমি পড়তে পারি।
বৃষ্টি:-ভাইয়া তুই( অ আ) পড়তে জানিস
hm
কেনো জানবোনা
বৃষ্টি:-আচ্ছা ভাইয়া তুই (ক খ গ ঘ) পড়তে পারিস?
পারিতো কিন্তু উচ্চারণ গুলো করতে পারিনা।
কেমন কেমন জানি, কারা যে এইসব তৈরি করেছিলো,
হিয়া:- উচ্চারণ করতে পারেনা আবার বলছে পড়তে পারে, বই পড়
ধমক দিয়ে,
কি মেয়েরে বাবা কথায় কথায় ধমক দেয়,
আমি বুঝি ভয় পাইনা ছোট্ট একটা নিরিহ ছেলে আমি,
তারপর ওরা দুজনে আমাকে অনেকক্ষণ পড়ালো, আমি অনেক কিছু শিখলাম,এখন রাত 9:00,
হিয়া বাড়ি চলে গেল আমি আর বোন খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম । পরের দিন সকালে, বৃষ্টির আগেই আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয় রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম,
আজকে আর বেশি দাঁড়াতে হোলনা,
পিছন থেকে কে যেনো ডাকছে,আমি পিছনে তাকাতেই তো অবাক কারণ এতো হিয়ার বাবা,,,,,

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com