অনুভূতিহীন । পর্ব - ২৩
প্রায় একমাস পেরিয়ে গেছে।
সামনে সপ্তাহে বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে খুব ধুম ধামের সাথে। বিয়ের বাজার করতে মার্কেটে এসেছে আজ। সবার সাথে অরশও রয়েছে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চলেছে বিয়ের বাজার প্রায় শেষ। কিছু টিশার্ট কেনা বাকি আছে, পাশের একটা দোকানে টিশার্ট দেখতে ব্যস্থ অরশ। যে ছেলেটি টিশার্ট দেখাচ্ছে সে অরশের বয়সি হবে। টিশার্ট দেখানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয় অরশের সাথে। ছেলেটি বার বার অরশের দিকে তাকাচ্ছে অরশও তাকাচ্ছে ছেলেটির দিকে। এক পর্যায়ে অরশ বলেঃ
'''' আপনাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
ছেলেটিঃ স্যার আপনাকেও খুব চেনা চেনা লাগছে, কিছু মনে না করলে আপনার নাম জানতে পারি?
অরশঃ আমি শেখ অরশ, আপনার নাম?
অরশের নাম শুনে ছেলেটি জেনো কোথায় হারিয়ে গেলো।
হাস্যউজ্জ্বল চেহারা খানি মলিন হয়ে যায় মুহুর্তে মুখে ভেষে ওঠে ফ্যাকাসে আভা।
অরশঃ কি হল? আপনার নাম বলেন।
ছেলেটি চুপ করে আছে, একটু একটু করে পিছুচ্ছে। পিছনে থেকে অন্য একটি ছেলে বলে ওঠে রহিম ভাই আপনি কোথায় যাচ্ছেন? সামনে কাপড় দেখান।
রহিম শব্দটা অরশের কানে আসতেই বুকের মাঝে নাড়া দিয়ে ওঠে। উত্তেজিত হয়ে অরশ জিজ্ঞাসা করেঃ তুমি আমার হাই-স্কুলের বন্ধু আঃ রহিম তাইনা?
ছেলেটি এখনো চুপ আর কাজুমাজু হয়ে মাথা নিচু করে আছে।
অরশঃ তোকে দেখেই চেনা চেনা লাগছিলো এখন বুঝলাম তুই আর কেউনা। তুই আমার বন্ধু রহিম। তুই আমার থেকে লুকাচ্ছিস কেন ভাই?
রহিমঃ স্যার আপনি বলেছিলেন আমি এতিম, আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে আপনি ভুল করেছেন। আমি যেনো আপনার সামনে কখনোই না আসি। এখন আমি কিভাবে আপনার সাথে কথা বলি?
অরশঃ ভাই রহিম তুই আমাকে ক্ষমা করে আর কষ্ট দিস না আমায়। গত ১৬ বছর ধরে আমি তোকে খুজে চলেছি প্লিজ ভাই তুই আমার বুকে আয়। (ছলছল নয়নে)
রহিম অরশের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই সে চোখে কোন অহংকার নেই আছে শুধু রহিমের জন্য সীমাহীন ভালোবাসা।
অরশঃ ভাই তুই আমাকে যত ইচ্ছা আঘাত কর তবুও ক্ষমা কর। সেদিন তুই ঠিক বলেছিলিস লাবন্য আমাকে ভালোবাসেনা, কিন্তু আমি তোকে ভুল বুঝে দুরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। লাবন্য যখন আমায় ছেড়ে চলে গেল তখন বুঝেছি তুই ছিলি আমার সত্যিকারের বন্ধু। সেদিনের পর থেকে কত খুজেছি তোকে। নিজেকে কতবার অনুসুচনার আগুনে পুড়িয়েছি তবুও তোকে পাইনি। তুই এতিম না তুই আমার আপন ভাই। আই ভাই বুকে আই আমার বুকের জালা মিটিয়ে দে ভাই।
অরশের কথা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা রহিম সকল রাগ অভিমান ভুলে অরশের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে রহিম। দুজন দুজনেকে জড়িয়ে প্রান ভরে কিছুক্ষণ কেদে নিলো দুই বন্ধু। কিছুক্ষন কান্না করে শান্ত হয় দু বন্ধু।
অরশঃ তুই এখানে কাজ করিস?
রহিমঃ হ্যাঁ ভাই পড়া লেখা করতে পারিনি, ভাগ্যে যা ছিলো তাই করছি ।
তুই টিশার্ট কিনতে এসেছিস তাইনা?
অরশঃ আরে না বিয়ের বাজার করতে আসলাম।
রহিমঃ কার বিয়ে?
অরশঃ কার আবার আমার বিয়ে।
রহিমঃ তোর বিয়ে!!!! তোর বিয়ে মানে এতো দিন বিয়ে না করে আছিস। আগে করিস নি কেন?
অরশঃ বাদ দে সে কথা অনেক,, এখন বিয়ে করছি এটাই মুল কথা।
রহিমঃ লাবন্যকে এখনো ভুলতে পারিস নি তাইনা?
অরশঃ খুব খুদা পাইছে চল কিছু খেয়ে নেই।
অরশ রহিমকে নিয়ে পাশে একটা রেষ্টুরেন্টে যায়।
রেষ্টুরেন্টে
খাবার খেতে খেতে অরশ বলেঃ তা কেমন আছিস বল?
রহিমঃ ভালো আছি, তবে মন ভালো নেইরে বন্ধু?
অরশঃ মনের আবার কি হল, ছ্যাকা খাইছোস নি?
রহিমঃ নারে ভাই, আমি যেমন এতিম তেমন এতিমদের জন্য মন কাদে।
অরশঃ বুঝলাম না,?
রহিমঃ তুই তো জানিস, আমি কদমতলী এতিম খানায় বড় হয়েছি।
এতিমখানার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোনা নাই।
খুব অভাবের মাঝে আছে এতিমরা ৩বেলা পেট পুরে খাবার খেতে পারছে না
তা নিয়ে মনটা ভালো নাই
অরশঃ কেন কি হয়েছে?
রহিমঃ আমি যখন এতিম খানায় ছিলাম তখন ঐ এতিমখানার
একটি মেয়ে আমাকে ভাই বলে ডেকেছিলো। কিছুদিন পর মেয়েটাকে এক দম্পতি দত্তক নিয়ে যায়।
আমিও চলে আসি এতিম খানা ছেড়ে পরে আর ঐ বোনের সাথে দেখা হয়নি।
তুই যখন আমাকে তাড়িয়ে দিলি তখন আবার আমি ফিরে গেলাম এতিমখানায়।
ওই খানে কয়েকদিন থাকার পর, দিন মজুরি কাজ পাই।
দিনে কাজ করতাম রাতে এতিমখানায় থাকতাম। পরে এই শপিংমলে চাকরিটা পায়।
এখান থেকে যা স্যালারি পেতাম তার সবটা এতিম খানায় দিতাম।
সেখান থেকে এতিমদের সাথে আমি খাবার খেতাম। জীবনটাকে এতিমদের সাথে ভাগ করে নিলাম
পেরিয়ে যায় ১০ বছর। তার পরে আসে সেই দিন ফিরে আসে আমাকে ভাই
বলা সেই বোনটি ততদিনে বোনটি অনেক বড় হয়ে যায়। খুলে যায় সকল এতিমের ভাগ্য
ওই বোনটি এতিম খানায় ২০ লাখ টাকা দান করে।
১৬ লাখ টাকা দিয়ে একটা ভবন তৈরি করা হয়।
বাকি টাকা ফান্ডে রেখে এতিম দের খাবার খরচ চালানো হয়।
তার এক বছর পর ওইবোন আবার ফিরে আসে আমাদের মাঝে, সে বলে যে বিদেশ চলে যাবে।
বিদেশে যাবার পর প্রতি মাসে মোটা অংকের একটা টাকা এতিমদের মাঝে দান করার
প্রতিছুতি দেয় এবং সত্যি সত্যি সে প্রতি মাসে বিদেশ থেকে এতিমদের সাহায্যার্থে
কম পক্ষে ৫০ হাজার করে দান দিত। বছরে এক বার করে এসে এতিম
দের সাথে দেখা করে যেতো। গত ৫,৬ বছর বেশ ভালোভাবে এতিম খানা পরিচালিত হচ্ছিলো।
কিন্তু হঠাৎ গত মাসে সে এসে বলে তার পক্ষে আর কিছুই করা সম্ভব না।
সে এতিমদের একটুও সাহায্য করতে পারবেনা। লুটিয়ে যায় এতিমদের সকল স্বপ্ন।
অরশঃ কে সেই মহৎ নারী? এবং হঠাৎ করে সাহায্য করবেনা কেন????
রহিমঃ তিথি বলেছে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে নিজেই কিভাবে চলবে বুঝতি পারতিছেনা সেখানে এতিম দের কিভাবে সাহায্য করবে।
অরশঃ কি নাম বললি তিথি? তিথির ছেলের নাম কি?
রহিমঃ তিথির ছেলে অভ্র অভ্র।
অরশঃ ওহ মাই গড তিথি এতিম!!!!! প্লিজ রহিম তুই তিথির ব্যাপারে সব কিছু খুলে বল? (উত্তেজিত হয়ে)
রহিম বলতে থাকেঃ তিথি এতিম।
নিসসন্তান থাকা মি. এন্ড মিসেস আসাদ তিথিকে দত্তক নেই ৭ বছর বয়সে।
নিজেদের কোন সন্তান না থাকায় তিথিকে আপন মেয়ের মত লালন পালন শুরু করেন।
বছর না ঘুরতেই মিসেস আসাদের গর্ভে সন্তান আসে। তিথির উপর শুরু হয় অত্যাচার।
পালক মেয়ে হলেও আসাদ সাহেব তিথিকে সব সময় নিজের মেয়ের মত ভালোবাসতেন।
কিন্তু আসাদ সাহেবের স্ত্রী তিথিকে চোখে দেখতে পারতেন না আপন মেয়ে সাথীকে
পেয়ে তিথিকে বানিয়ে ফেলে কাজের মেয়ে। তিথিকে দিয়ে ঘরের সকল কাজ করাতেন।
তিথি সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিয়েছিলো কারন সে এতিম থেকে একটা পরিবারের
সদস্য হতে পেরেছে এটা তার জন্য অনেক এবং সব চাইতে বড় কথা হল
আসাদ সাহেবের মত দায়িত্ববান একজন পিতা পেয়েছে তিথি।
আসাদ সাহেব কোন কিছুতে কম রাখেনি তিথির। তিথির মা (পালিত মা) যতই অত্যাচার
করতো সব কিছু সয়ে নিত তিথি। অনার্স ফাইনাল বর্ষের পরিক্ষা শেষ হলে তিথির ভাগ্য খুলে যায়।
বিরাট এক পরিবারে তিথির বিয়ে হয়। সে পরিবারের শশুর শাশুড়ী ভাবি ননদ ভাইয়া
পেয়ে তিথির সকল অভাব পুর্ন হয়। টাকা পয়সা আদর ভালোবাসা কোন কিছুতে তিথির
অভাব ছিলোনা। একদিন তিথি তার বাবাকে বলেছিলো অনেক ভাগ্য করে তিথি এই
পরিবারের বউ হতে পেরেছে। এই পরিবার ছেড়ে কোথাও যেতে চায়না।
বাবাকে বলে দেয় তুমি নিশ্চিন্ত থাকো তোমার মেয়ে ভালো আছে।
এতো কিছুর মাঝেও তিথি ছিলো অপূর্ণ কারন বাসর রাত থেকে স্বামীর অবহেলা শুরু হয়।
তিথির স্বামী প্রথম রাতেই তিথিকে ফ্লরে শুতে দিয়েছিলো। সকালে কোমরে পা দিয়ে পাড়া দেয়।
তিথি ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে কিন্তু তার স্বামীর একটুও মায়া হলনা।
তিথির সাথে তার স্বামী কোন কথা বলতনা। একদিন তিথি তার স্বামীকে ১২৬ টা কল দিয়েছিলো।
সেদিন তার স্বামী তাড়াহুড়ো করে বাসায় আসে এবং তিথিকে স্ত্রীর অধিকার দেয়। সে রাত ছিলো
তিথির মধু রাত। সে রাতের কথা কখনোই তিথি ভুলতে পারবেনা। এই একটি মাত্র
রাত ছিলো তিথির জীবনে আনন্দ মুখর সময়। কিন্তু সকালে তিথি তার বরের মোবাইল
সাইলেন্ট করাতে তার বর প্রচন্ড রেগে বাসা থেকে অফিসে যায়।
তিথি তার ননদ রিমার নাম্বার দিয়ে বরকে কল দিলে। বর তাকে প্রচুর অপমান করে বলে যে,
তোমার মত মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েরা হয় ছলনাময়ী।
সামান্য একটা ফোন কেনার সামর্থ্য থাকেনা।
তিথি অনেক কষ্ট পায় কারন একটা এতিমকে যদি কেউ টাকার কথা বলে অপমান করে তবে
খুব কষ্ট লাগে। তিথি তার স্বামীকে বলেছিলো আমাকে আপনি বিয়ে করে এনেছেন,
তা হলে অধিকার দিবেন না কেন? জবাবে তার বর বলেছিলোঃ
আজ থেকে এইবাড়ির সব কিছু তোমার।
যা চাইবে তাই পাবে এমন কি বিছানার সুখ লাগলে সেটাও চাইবে। প্রচুর ঘৃনা হয় তিথির।
কিন্তু মনের অজান্তে তার স্বামীকে ভালোবেসে ফেলে তিথি।
একদিন তিথির জন্মদিন ছিলো ওইদিন সে ছাদে ফুল দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজিয়েছিলো।
তিথি ভেবেছিলো আজ স্বামীকে আই লাভ ইউ বলবে এবং অনেক আনন্দ করবে কিন্তু
তার স্বামী তাকে প্রচুর মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। তিথির কোন কথা সে শুনেনি।
তিথি ছাদে গিয়ে সুইসাইড করতে গিয়েও বাবার কথা মনে করে সুইসাইড করতে পারেনি।
ফুল দিয়ে সাজানো ছাদের সব কিছু এলো মেলো করে চিৎকার করে কান্না করতে করতে
ঘুমিয়ে যায় ছাদের মেঝেতে। সারা রাত বাইরে থেকে মুখ ফুলে গিয়েছিলো তিথির।
তিথি ভেবেছিলো এখান থেকে চলে যাবে কিন্তু কোথায় যাবে সে তো এতিম অসহায় তাই
নিজেকে কাজের মেয়ে মনে করে থেকে যায়। সকালে উঠে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করে।
খাবার সময় তিথির শাশুড়ি বলে বৌমা তোমার মুখে কিসের দাগ?
তিথি মিথ্যা করে বলেছিলো এলার্জির দাগ কিন্তু এই মিথ্যা বলার জন্য তার স্বামী
তাকে অনেক অপমান করে। এই ভাবে কিছু দিন অতিবাহিত হয়।
একদিন তার স্বামী তাকে অনেক টাকার মার্কেট করে দিয়েছিলো, সারা দিন
ঘুরেছিলো ওই দিন তিথি অনেক হ্যাপি হয়। কারন জীবনে প্রথম বার এই
ভাবে বাইরে ঘুরার সুযোগ পেয়েছে। রাতে তার স্বামী বলে তুমি আজ হ্যাপি তাইনা?
তিথি হ্যাঁ জবাব দিলে তার স্বামী তাকে বলেঃ এইরকম দামি দামি পোশাক মোবাইল
পেলে সে কেউ হ্যপি হবে, তুমি কি ভেবেছো আমি তোমায় ভালোবেসে দিয়েছি? না
না তুমি ড্রাইভারের জন্য আমাকে কথা শুনিয়েছিলে তাই টাকা দিয়ে তোমার খুশি
কিনলাম। এমন অনেক অপমান করে তিথিকে। তিথি অনেকবার বাবার বাড়ি
বেড়াতে যাবার কথা বললেও তার স্বামী যেতোনা। একদিন একটা পার্টিতে তিথি
গিয়েছিলো তার বরের সাথে সেই দিন শত শত মানুষের মাঝে তিথিকে অনেক
অপমান করা হয়েছিলো বলা হয়েছিলো কাক যতই সাজুক তাকে মহুর বলা যায়না।
এতো অপমান সহ্য করার পরেও সে কোন প্রতিবাদ করেনি কারন স্বামীর প্রতি
ছিলো পূর্ণ শ্রদ্ধা সম্মান। তিথিকে বার বার মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে গরিব টাকা নেই
ইত্যাদি বলে অপমানিত করা হত কিন্তু তিথি সব সহ্য করত কারন সে ছিলো
অসহায় কেউ জানতোনা তিথি ছিলো এতিম।
এই বাড়ি থেকে চলে গেলে সে কোথায় থাকবে?
তিথি তার স্বামীকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বললেও তার স্বামী ১০টার আগে বাসায় ফিরতোনা।
একটা এতিম মেয়ের জীবনে আর কত দুক্ষু থাকতে পারে? এতো কিছুর পরেও
সেই অসহায় এতিম তিথি পড়ে ছিলো স্বামীর পায়ের নিচে। তিথির কয়দিন ধরে শরীর খারাপ ছিলো।
তবুও তার স্বামী তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়নি।
কিছু বললেই তার স্বামী বলত যে ইন্টারেস্ট নেই৷ এভাবেই কিছুদিন পর তিথি জানতে পারে
সে মা হতে চলেছে। স্বামীর দেওয়া একদিনের ভালোবাসার ফসল তিথির গর্ভে
বেড়ে উঠেছে অনেক খুশি হয় তিথি। কাউকে কিছু না বলে তার স্বামীকে কল দিয়ে বলে আমি
মা হতে চলেছি এবং আপনি বাবা হতে চলেছেন ।
আজকে একটু আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন।
সেইদিন ও তার স্বামী অনেক রাত করে বাসায় ফিরে।
[[ বিঃদ্রঃ আপনারা ভাবছেন তিথি অরশকে বাবা হবার কথা বলেনি তাইনা?
তা হলে শুনুন ১৭ তম পর্বে এক দুপুরে তিথি অরশকে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি
বাসায় আসতে বলে তখন অরশ বলে যখন সময় হবে তখন আসবে।
তিথি আবার বলে আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন কারন...,
ওইখানে এইভাবে ডট ডট দিয়ে লিখেছিলাম কথা গুলি পরে শুনিয়েন।
এখন বলি ওই সময়েই তিথি মা হবার কথা অরশকে বলেছিলো কিন্তু কথা গুলি পরে জানাতে
চাওয়ার কারন হল তখন যদি সত্যটা আপনারা জানতেন তা তিথির পালিয়ে যাবার কারন টা স্বাভাবিক
ভাবে নিতেন। তাছাড়া ওইখানে আরো কিছু ঘটনা ঘটেছিল সামনে সবটা জানতে পারবেন ]]
রাতে তিথি তার স্বামীকে বলেঃ আপনাকে আমি দুপুরে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি
বাসায় আসতে বললাম কিন্তু আপনি রাত করে ফিরলেন কেন?
তার স্বামী জবাবে বলেঃ আমার কোন ইন্টারেস্ট ইন্টারেস্ট নেই।
তিথি আবারো বলেঃ আজকেও বলবেন যে আপনার ইন্টারেস্ট নেই?
তার স্বামী বলেঃ না কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার।
সেদিন তিথি একটুও কষ্ট পায়নি কারন যে মানুষ বাবা হবার কথা শুনেও বলে যে আমার
ইন্টারেস্ট নেই, সে মানুষের সাথে থাকা কোন ভাবেই সম্ভব না। এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
দুরে কোথাও চলে যাবে। সে রাতে তিথি স্বামীর কাছে বিছানার সুখ ভিক্ষা চেয়েছিলো কিন্তু
কোন কিছু পায়নি। তিথি জানে জীবনে সে আর স্বামীর ভালোবাসা পাবেনা শেষ
বারের মত ভালোবাসা টুকু চেয়েছিলো যা নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে পারে।
কিন্তু সেটুকুও তাকে দেওয়া হয়নি। পরদিন পরিবারের সবার কাছ থেকে শেষ বারের মত
ভালোবাসা নিয়েছিলো তিথি। সবাইকে নিয়ে অনেক আনন্দ করেছিলো। তার পরের রাতে
একটা চিঠি লিখে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তিথি। চিঠিতে লিখে এসেছিলো
তিথি একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। সে টাকা পেয়েছে তাই চলে গেছে।
কিন্তু না তিথি এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলোনা তিথি ছিলো কবে সে বরের ভালোবাসা পাবে
সেই সুযোগের অপেক্ষায়। তিথি চাইলে চিঠিতে সত্যটা লিখতে পারতো যে বাবা
হবার কথা শুনেও উনি বলে যে উনার কোন ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু লিখেনি কারন তার স্বামীকে
সবাই অপরাধী সাব্যস্ত করবে। তাছাড়া যে মানুষ বাবা হবার কথাতেও অনুভূতি
সৃষ্টি হয়না তার সাথে থেকে কি করবে। এবাড়ির সবাই তাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে তারা
অনেক কষ্ট পাবে তাই মিথ্যা চিঠি লিখে নিজেই অপরাধী হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসে এতিম খানায়।
এইটুকু শুনে অরশ জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
খাবার টেবিল ভেংগে চুরমার করে দিলো।
রহিমঃ অরশ তোর কি হয়েছে।
অরশঃ চিৎকার দিয়ে বলে আমি মানুষ না আমি অমানুষ।
রহিমঃ কি সব ফালতু বকছিস তুই?
অরশঃ তিথির হাসবেন্ড কে ছিলো জানিস?
রহিমঃ জানিনা কে ছিলো তিথি তার নাম বলেনি যদি কখনো সামনে পায় খুন করে ফেলব তাকে।
অরশঃ আমাকে খুন করে ফেল ভাই,। আমি সেই অমানুষ যে তিথির মত এতিম অসহায় নিস্পাপ মেয়েটির জীবন নরকে পরিনত করে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com