পরশ পাথরের ছোঁয়া । পর্ব -০২ এবং শেষ
যে কথা আমাকে হারানোর ভয়ে কাঁদতো আজ সে কথায় হোটেলে নোংরামী করতে আসছে। আমি আর কিছু সহ্য করতে পারছি না। দৌড়ে গিয়ে সে রুমের দরজাতে ধাক্কা মারলাম। দরজা খুলতেই যা দেখলাম তা দেখে খানিকটা বিস্মিত হলাম। কথার পাশে বসা লোকটাকে সহ্য করতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে লোকটার গালে চড় বসিয়ে দিলাম। তোর কি করে সাহস হয়, আমার বউকে নিয়ে হোটেলে নোষ্টামী করতে নিয়ে আসার।
কি করে সাহস হয় অন্যের বোনকে নিয়ে হোটেল রুমে সময় কাটাবার।
-কি বলছ এসব কথা?
- হ্যাঁ! আমি সব ঠিক বলছি। তুমি মৌ নামের মেয়েটার সাথে কেমন করছ জানো না?
এখন মৌ এর ননদ নাফিসাকে নষ্ট করতে নিয়ে এসেছ। বলো তুমি যা করছ এটা ঠিক?
তুমি যেমন তোমার স্ত্রীর সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারো না।
তেমনি অন্য কেউ তার স্ত্রী বা বোনের সাথে অন্য কাউকে কীভাবে সহ্য করবে?
- হ্যাঁ হ্যাঁ! আমি যা করছি সব ঠিক। আমার বুকে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।
সে আগুন আমি মাহিমের বুকে জ্বালাতে চাই।
- কথা ক্ষানিকটা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে কিসের আগুন তোমার?
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: "নিঃস্বার্থ ভালোবাসা"**
- শুনবে? শুন তাহলে। তুমি তো জানো আমাদের ফ্ল্যাটের দক্ষিণের রুমটা সবসময় তালা দেওয়া থাকে।
কেন থাকে জানো? কারণ রুমটাতে আমার কলিজার টুকরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
মা-আর আমার ছবির মাঝে যে মেয়েটাকে দেখতে পাও সেটা জান্নাত। সে আমার বোনই ছিল না।
আমার মায়ের যত্নটা তার কাছ থেকে পেতাম। যে বোনটা আমাকে খাইয়ে দিতো।
আমি তাকে না খাইয়ে দিলে যে বোনটা খেত না। আমার মায়ের মতো টেক কেয়ার করতো?
সে বোনটাকে হারাতে হয় মাহিম নামে ক্লীটের জন্য। আজ থেকে চারবছর আগের কথা।
জান্নাত তখন কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছে। কলেজের একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক হয়।
ছেলেটার নাম ছিল মাহিম। মাহিম জান্নাতকে বিয়ের কথা বলে জান্নাতের সাথে একান্তে সময় কাটায়।
একদিন মাহিম জান্নাতকে তার বার্থডের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় হোটেলে।
হোটেলে গিয়ে দেখে মাহিম এবং তার চার বন্ধু। মাহিমকে জান্নাত গিয়ে দেখে ড্রিকস করছে।
জান্নাত যখন এসব দেখে বের হয়ে আসতে চায়।
তখন মাহিম জান্নাত এর সামনে একটা ভিডিও ওপেন করে বলে দেখতো ভিডিওটা কেমন হয়েছে।
-জান্নাত ভিডিওটা দেখে আঁতকে ওঠে। মাহিম তুমি ভিডিওটা ডিলিট করে দাও।
তুমি না আমাকে ভালবাসো।
- হ্যাঁ, জানপাখি ডিলিট করে দিবো। তবে আমার বন্ধুদের সাথে তোমার একটু থাকতে হবে।
- জান্নাত ঠাস করে মাহিমের গালে চড় বসিয়ে দিলে।
মাহিম জান্নাতকে বলে ' এই শুন তুই যদি, আজ চলে যাস তাহলে তোর ভিডিওটা তোর
ভাইয়াকে সেন্ড করবো। সারা দেশবাসী দেখবে। সেদিন জান্নাতকে আর না করতে পারেনি।
চারজন নরপশু জান্নাতকে অমানবিক ভাবে ভোগ করে। জান্নাত বাসায় এসে তার মুখটা তার
ভাইয়াকে আর দেখায়নি।বাড়িতে এসে সুসাইড করে। পোস্টমটাম রির্পোটে ধরা
পড়ে জান্নাত দু'মাসের প্রেগন্যান্ট ছিল। মরার আগে জান্নাত তার ডাইয়িটায় সব লিখে রেখে গেছে।
আমি এখনো রাতে ঘুমাতে পারি না। এখনো আমার বোনের চাঁদ মাখা মুখটা ভেসে ওঠে।
-মাহিমের চারবন্ধু জান্নাতের মরার কিছুদিন পরেই একসাথে রোড একসিডেন্টে মরে যায়।
আর জান্নাত সুসাইড করার পর, সিদ্ধান্ত নেয় মাহিম জান্নাতের সাথে যা
যা করছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে তিলেতিলে তাকে সুসাইড পথ বেঁছে নিতে বাধ্য করতে।
তাই প্ল্যান অনুযায়ী তার স্ত্রী মৌ এর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করি। আর সেই সুযোগ নিয়ে মৌ
এর সাথে একান্ত সময় কাটায় হোটেলে। আর মৌ যখন রাজি না হয়, তখন ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল।
একটা সময় মাহিম যখন জানতে পারবে তার স্ত্রী পরকীয়ায় ব্যস্ত তখন সে বুঝতে পারবে
জান্নাতকে দেওয়া কষ্ট টা। আর এজন্যই মাহিমের বোন নাফিসাকে আমার প্রতি দুর্বল করি।
জান্নাতকে যেভাবে সুসাইড করতে বাধ্য করেছে।আমিও নাফিসাকে সেভাবেই সুসাইড করতে
বাধ্য করতে চেয়েছি। এজন্য নাফিসাকে ডেকে নিয়ে আসছি।
কিন্তু হোটেলে এসে তোমার এ রুপটা দেখতে পারবো কখনো ভাবতে পারিনি।
তোমাকে তো বিশ্বাস করতাম অন্ধভাবে। যে তুমি আমাকে হারানোর ভয়ে কাঁদতে
আর সেই তুমি এমন করলে?
-বাহ! রাজ এই চিনেছ এতো দিনে আমাকে? জানো রাজ আমাদের দেখার মাঝেও
অনেক সময় ভুল থাকে। সত্যি আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি শুধু তোমাকে
ভালোইবাসি না, তোমাকে নিয়ে জান্নাতেও থাকতে চায়। জানো যেদিন জানতে পারি,
তুমি অফিসের নাম করে সপ্তাহে একদিন, মৌ নামে মেয়েটার সাথে কাটাও। তখন খুব কষ্ট হয় আমার।
মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করি আমি। ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়িতে বড় হয়।
মা-বাবাকে দেখেনি কোনদিন। পায়নি মা-বাবার আদর। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে পাইয়েছিল।
তোমার বুকেই আমি সমস্ত সুখ খুঁজে পেতাম। প্রতি ওয়াক্ত নামায শেষে আল্লাহর
কাছে দু'হাত তুলে বললাম ' জান্নাতেও যেন তোমাকে স্বামী হিসেবে পায়।
' জানো যেদিন জানতে পারি তুমি মৌকে ব্ল্যাকমেল করে তার সাথে অবাধ মেলা-মেশা করো।
সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তুমি কি জানো না ব্যভিচারি পুরুষদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
আমি কিভাবে চাইব তুমি জাহান্নামী হও। জানো রাজ একটা মেয়ে সব কিছুর ভাগ দিতে পারলেও
তার স্বামীর ভাগটা অন্য কোন নারী কিন্তু জানতাম না তোমার বুকে এত কষ্ট।
তুমি আমাকে একটিবার জান্নাতের সাথে ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে কথা বলোনি।
রাজ যে যেমন কর্ম করবে তাঁর ফল সে অবশ্যই পাবে। জান্নাতের সাথে যা হয়েছে,
তা মোটেই ঠিক হয়নি। আর এই বিচার পরওয়ারদেগার অবশ্যই করবে। কুকুরে যদি
কামড়দের কুকুরের পায়ে মানুষের কামড় দেওয়া শুভংকর নয়।
জানো রাজ, আমি যার সাথে হোটেলে আসছি সে আমার মামাতো ভাই। আমি শুধু তোমার
ভুলটা ভাঙানোর জন্য অভিনয় করেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে যে
বড্ডবেশি ভালবাসি। তোমাকে যে আমি দুনিয়াতে নয় শুধু পরকালেও স্বামী হিসেবে চাই।
-কথার দিকে চেয়ে দেখি, কথার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
-কথার মামাতো ভাই সবকিছু খুলে বলল। আমি কথাকে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে
বললাম আমি আর কোন খারাপ কাজ করব না।
- আলহামদুলিল্লাহ্। নাফিসা একটু ভেতরে আসো তো বোন!
- কথা তুমি নাফিসাকে কীভাবে চিন?
- তুমি যা যা করতে সব ফলো করেছি।
-নাফিসা আসলে কথা নাফিসাকে বলল' বোন আমার বরকে ক্ষমা করে দিয়ো।
আর হ্যাঁ মনে রেখ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ আর মহিলা কখনো বেষ্টফেন্ড হতে পারে না।
আজ তোমরা যা করতে এসেছিলে এটা ঠিক না।
তোমার ভালবাসার মানুষ এটা জানলে খুব কষ্ট পাবে। আশা করি বুঝতে পেয়েছ।
-নাফিসা কিছু না বলে চলে গেল।
-বাসায় এসে কথা আমাকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে তওবা পড়ালো।
যেন কোনদিন এসব না করি। মৌ এর সব ভিডিও ডিলিট করিয়ে,
আমাকে আসর নামায পড়তে পাঠিয়ে দিল। নামায পড়ে এসে দেখি, মৌ বাসায়।
- আমি রুমে ঢুকতেই কথা আমাকে ইশারা দিয়ে মৌ এর কাছে ক্ষমা চাইতে বলল। আমি মৌ এর কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলাম।
- কথা মৌকে বলল' বোন তুমি কিছু মনে না করলে কিছু কথা বলতাম।'
-হ্যাঁ বলো।
- আমি রাজের কাছ থেকে সবটা জেনেছি।
রাজের সাথে তোমার প্রণয়, মাহিমের সাথে ব্রেকাপের সময়। তুমি হয়ত ভুলে গেছো,
প্রেম -ভালবাসায় রাগ -অভিমান অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আর এই রাগ অভিমানের জন্য বেষ্টফেন্ডের সাথে একান্ত সময় কাটানো অন্যায়।
কেননা একসময় এই জন্যই তোমার সুসাইড করতে হতে পারে। এছাড়া বিয়ের আগে,
নিজের বয়ফে্ডের সাথে একান্ত সময় কাটানো ঠিক না।
কারণ মানুষের মন সবসময় এক থাকে না। তুমি যেতে পারো। আজ থেকে তুমি নিরাপদ।
-এদিকে বছর দু'য়েক পর আমাদের ঘর আলোকিত করে ফুটফুটে একটা রাজকন্যা হয়েছে।
রাজকন্যাটার নাম হলো রাইসা। কথা নামক পরশপাথরের
ছোঁয়ায় জীবনটা সোনালী রঙে রাঙাতে পেয়েছি। এখন দু'জনই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি।
কথার মাধ্যমে শিখতে পেয়েছি, ক্ষমার মাঝেই প্রকৃত শান্তি পাওয়া যায়।
শুক্রবার, জুমার নামায পড়ে বাসায় এসে দেখি কথা কুরআন পড়ছে।
রাইসা ঘুমিয়ে আছে। রাইসার মাথার কাছে ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাঁজছে।
ফোনটা হাতে নিতেই, ওপাশ থেকে পরিচিত কন্ঠে মৌ বলল' রাজ ভাইয়া যদি সময় হয়,
মাহিমকে একটু দেখতো আইসেন। মাহিম খুব অসুস্থ। মাহিমের ক্যান্সার হয়েছে।
লাস্টটেজে আছে। মরার আগে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে চায়।
ফোনটা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম ' নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোওম বিচারকারী।'
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com