পরশ পাথরের ছোঁয়া । পর্ব -০১
২৩ বছর বয়সী মৌ যখন ম্যাসেন্জারে ঢুকেই একটা ভিডিও ওপেন করল। ভিডিওটিতে দেখতে পেল একটা ছেলে আর মেয়ে রথক্রিয়ার ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরই মৌ এর চোখ আঁকটে গেল। কারণ ভিডিওতে থাকা মেয়েটি যে সে, আর ছেলেটি রাজ বুঝতে বাকি নেই! অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওটা দেখে তার মাথাটা ঘুরতে লাগল। আজ তার গায়ে হলুদ ছিল। কাল তার বিয়ে। বিয়েটা হচ্ছে তার ভালবাসার মানুষ মাহিমের সাথে। মাহিম এসব দেখলে সহ্য করতে পারবে না।
- কি হলো? কথা বলছেন না যে। ভিডিওটা আপনার হবু বরকে সেন্ড করবো নাকি?(আমি)
- হাহাহা এতোদিন বুঝতে পারলে? আমি তো জোর করে কিছু করিনি।
তুমি নিজে ইচ্ছায় দিয়েছ! ভিডিওটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
ফেসবুকে শেয়ার হলেও তুমি রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়ে যাবে।
আর আমি চাই কাল সকালে রাস্তাঘাটের মানুষ সবাই তোমার রুপের প্রশংসা করুক। কি বলো?
- রাজ প্লিজ স্টপ। আমাদের চার বছরের সম্পর্ক পরিশেষে বিয়েতে রুপ নিচ্ছে।
তোমার পায়ে পড়ি তুমি কিছু করো না। আমি মাহিমকে বড্ডবেশি ভালবাসি।
তাকে হারাতে পারব না। প্লিজ তুমি ভিডিওটা ডিলিট করে দাও।
আশ্চর্য পায়ে পড়তে বলেছি কী তোমায়?
যখন আমার সাথে ফ্যাজিকাল রিলেশন করেছ তখন তোমার ভালবাসা কোথায় ছিল?
তখন কেন মনে হয়নি তুমি মাহিমকে ঠকাচ্ছো। তোমার মতো মেয়ের এমনি হওয়া উচিত ম
-রাজ তখন মাহিমের সাথে ব্রেকাপ ছিল। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, মাহিমকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
আর মাহিম আমাকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসে।
-হাহা ওসব বাদ দাও। প্রেম ভালবাসায় রাগ-অভিমান একটা অংশ।
তাই বলে সামান্য রাগ-অভিমানের জন্য আমার মতো জাস্টফেন্ড এর কাছে সব দিয়ে দিবে?
যাই হোক কাল সকালে আমার সাথে হোটেলে সময় দিতে হবে । হোটেল বুক করা আছে।
দু'ঘন্টা হলেই চলবে।
- রাজ প্লিজ এটা সম্ভব না। আমি এসব করতে পারব না।
আরে তোমাকে কি আমি জোর করেছি? জোর করিনি তোমায়। মন চাইলে এসো।
না চাইলে তোমার হবু বর দেখবে তোমার ভিডিওটা।
-মৌ চোখের পানি মুছে মুছে বলল আমি আসবো। ঠিকানা দাও।
- আমি হোটেলের ঠিকানা দিয়ে।
ল্যাপটপটা অফ করে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম কথা নামায শেষ করে রুমে আসছে।
- অফিস থেকে এসেই ল্যাপটপে তুমি যে কি করো বুঝি না। খাবে আসো।(কথা)
-না তুমি খাও, আমি খেয়ে এসেছি।
- কথা কিছু না বলে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর কথা প্লেটে করে খাবার নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরল। হা করো তো।
- আমি হা না করে থাকতে পারলাম না। নিজে খেলাম কথাকেও খাইয়ে দিলাম।
খাওয়া শেষ করে কথার শাড়ির আঁচল দিয়ে হাতটা মুছে নিলাম।
- রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি কথা এসব জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।
কারণ কথা আমাকে বড্ড বেশি ভালবাসে। তা আমি বুঝতে পারি।
ওই কি হলো ওই দিকে ফিরে কি ভাবছো?
কই কিছু না তো।
-আমাকে বুকে নিবা না?
হুম আসো আমার পাগলীটা। কথাকে বুকে নিতেই বুঝতে পারলাম কথা কাঁদছে।
এই পাগলী কাঁদছ কেন?
তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?
জানো প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে বলি যে,
তোমার বুকেই যেন আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করি।
জানো আল্লাহর কাছে কত বলি আল্লাহ যেন আমাদের একটা সন্তান দেয়।
সবাই বাবুকে আদর করে আর আমাদের বাবু নেই।
জানো পাশের বাসার অবনী ভাবির যে বেবীটা আছে না।
সে বেবীকে আজ কুলে নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবির মা আমার কুল থেকে বেবী কেড়ে নিয়ে বলছে ' অলক্ষণে মেয়ে তাদের নাতী কুলে নিলে অমঙ্গল হবে।'
-কথা এসব বলে আমাকে আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
আমি কথাকে বললাম'আরে পাগলী ধৈর্য্য ধরো আল্লাহ মহান।
আমাদেরও একটা ফুটফুটে রাজকন্যা হবে।'
-কথা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বলল 'তাই যেন হয়।'
- পরের দিন সকালে ব্ল্যাক কালারের শার্টটা পড়ে বের হলাম হোটেলের উদ্দেশ্য।
হোটেলে গিয়ে দেখি, নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে বসে আছে মৌ।
শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে। মৌকে নিয়ে হোটেল রুমে চলে গেলাম।
রুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিতেই মৌ ভয়ে জড়োসরো হয়ে গেল।
তার চেহারাই স্পর্ষ্ট ভয় দেখতে পাচ্ছি।
অথচ এই মৌ আজ থেকে ছয় মাস আগে আমার সাথে হোটেলে নিজ ইচ্ছায় তার সতিত্ব দিয়েছে।
আজ সে মৌ এর ভয়াত চাহনীটা দারুণ লাগছে।
মৌ এর কাছে গিয়ে মৌকে একান্ত আপন করে নিলাম। আমাকে সরানোর কোন শক্তি মৌ এর নেই। মৌ অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছে। দিতেই যে হবে। কারণ এটা তার পাপের ফল।
কিছুক্ষণ পর মৌ এর উপর শুয়ে থেকে শার্টটা গায়ে জড়িয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে আসলাম।
-মৌ হোটেল থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বের হয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ে।
বাসায় আসলেই মৌ এর মা জিজ্ঞেস করে কোথায় ছিল এতক্ষণ সে?
- মৌ সোজাসাপ্টা উওর দেয় সে বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিল।
তার মা চলে যায়। মৌ শাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে যায়।
সকালের কথা মনে করে সে প্রচন্ড কান্না করে। শাওয়ারের পানির সাথে সাথে চোখের পানিও ঝরছে।
এ কান্না যে কাউকে দেখানো যাবে না।
-সন্ধ্যাবেলা মৌ তার নষ্টা শরীরটাকে লাল বেনারশীতে জড়িয়ে,
বিয়ের আসরে বউ সেজে বসেছে।
মৌয়ের বারবার মনে হচ্ছে সে কি দিবে তার স্বামী মাহিমকে বাসর রাতে।
মন চাচ্ছে সুসাইড করতে।
- এদিকে রাত্রিবেলা বাসায় এসে দেখি এশার
নামায পড়ে কথা মোনাজাতে কাঁদছে।
আমি রুমে গিয়ে শার্টটা খুলে ফ্যান ছেড়ে বসলাম। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে।
সাথে আমার মাথায় নানারকম কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।
- হঠাৎ কথা এসে বলল কি হয়েছে? কি ভাবছ এতো গভীর মনোযোগ দিয়ে।
- আমি কিছু না বলে, পকেট থেকে একটা বকুলের মালা বের করে কথার খোঁপায় পড়িয়ে দিলাম।
- কথা কিছু না বলে আমায় জড়িয়ে ধরে বলল'
কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না তো? যদি যাও আমাকে তোমার হাতে খুন করে যেয়ো।
- কথার কপালের ঠিক মাঝখানে, আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে বললাম '
কোথাও যাবো না তোমায় ছেড়ে। ' এইবার একটু হাসো মোর প্রিয়তমা।
-কথা না হেসে আবারো কান্না করে দিল।
-দিনগুলো ভালোই কাটতেছিল। মৌকে সপ্তাহে একদিন হোটেলে ডেকে নিয়ে আসি।
এদিকে মৌ এর ননদ নাফিসা মেয়েটার সাথে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়েছে।
সম্পর্কটা ফেসবুকে বন্ধুত্ব থেকে শুরু হলেও কিছুদিন পার হতে আর
বুঝতে বাকি থাকে না মেয়েটা আমার প্রতি অনেকটা দুর্বল।
অথচ দু'বছর ধরে রাফি নামে এক ছেলের সাথে বিয়ে টিক হয়ে আছে।
বিদেশ থেকে ফিরলেই বিয়ে। নাফিসার সাথে রাফির প্রেমের সম্পর্ক স্কুল জীবন থেকেই।
বিয়ে টিক হওয়া সত্ত্বেও নাফিসা রুম ডেট করতে রাজি হয়ে যায়।
কয়েকদিন হোটেলেও গিয়েছি। নাফিসাকে তাই সুযোগ বুঝে হোটেলে আসতে বলে সেও সায় দেয়।
আমি যথারীতী সকাল দশটায় অফিসের নাম করে যখন বের হয় তখন দেখি কথা '
কুরআন তেলাওয়াত করছে। ' আমি বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে গিয়ে দুপুরের
সময় অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেয়।
- নাফিসাকে নিয়ে যখন হোটেল রুমে ঢুকবো তখন হোটেলের নিচের তলায়
রেপসিপশনে দেখি কথার মতো কাউকে বুকের ভেতরটা মুহূর্তে নাড়া দিয়ে ওঠে।
নাফিসাকে রুমে বসতে বলে আমি নিচে চলে যায়।
নিচে গিয়ে দেখি কথার সাথে আরেকটা ছেলে। কথা ছেলেটার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
একটুপর ছেলেটা ম্যানেজারের সাথে কথা বলে পকেট থেকে দু'হাজার টাকা বের করে
দিয়ে একটা চাবি নিয়ে কথাকে নিয়ে হোটেল রুমে ঢুকে পড়ল ।
এদিকে আমার কাছে মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজাতে ছুরি ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
যে কথা বোরকা ছাড়া বাহিরে বের হতো না আজ সে কথাই অন্য একটা ছেলের সাথে।
না এ হতে পারে না। যে কথা আমাকে হারানোর ভয়ে কাঁদতো আজ সে কথায় হোটেলে
নোংরামী করতে আসছে। আমি আর কিছু সহ্য করতে পারছি না।
দৌড়ে গিয়ে সে রুমের দরজাতে ধাক্কা মারলাম। দরজা খুলতেই যা দেখলাম তা দেখে '''''
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com