বাবার ভালোবাসা



একদিন দুষ্টুমি করতে যাইয়া কারেন্টের লিক তারে কড়া শক্ড খাইলাম। তার আঙ্গুল ফুটে ভেতরে ঢুকার উপক্রম।

বড়ো আপু আমারে ছাড়াইতে আইসা নিজেও আইটকা গেলো কিনা, হুস ছিলো না আমার।
তখন আব্বা জীবিত ছিলেন, ২০০৪ এর ঘটনা।
আব্বা মেইন সুইচ অফ করে দিলেন! আমি কোন মতে উইঠা বইছি, আর আম্মু আইসা আমারে দাড়ুম - দুড়ুম কিল লাগাইলো কয়ডা!
আমি তো আরেক শক্ড খাইলাম। আম্মুর মনে বুঝি কোনই দয়া মায়া নাই আমার জন্য!
আব্বা তারে থামাইলেন!
এর প্রায় তিন মাস পর বড়ো আপুর বিয়ে হইলো।
আর আপুর বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় আব্বা দুনিয়া ছেড়ে বহু দুরে চলে যান! সে আগেই অসুস্থ ছিলেন!
পরিবারের এক মাত্র উপার্জনকারি ব্যাক্তি ! অবিভাবক, এবং আমাদের কেরাম,লুডু,দাবা, ব্যাডমিন্টন,কৃকেট খেলার সাথি ! সন্ধার পরের মাস্টার চাঁদনী রাতের গল্পকার! সব, সব হারালো এক জনের অভাবে !
হঠাৎ করে যেন আমাদের দুনিয়াটাই পাল্টে গেলো।
আমি তখন মোমেন শাহী হিফজ পড়ি।
আব্বা আজ আপনি নেই।

আমি কিন্তু আপনার স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা এখনো রেখেছি অব্যাহত।
হিফজ্ শেষ করে এখন আমি মাওলানা পড়াও সমাপ্ত করেছি। (আলহামদুলিল্লাহ) . সামনে মুফতি পাশ করে আপনার স্বপ্ন সম্পূর্ণ করবো ইন-শা আল্লাহ।
আপনি চলে যাবার পর আম্মু আমাকে মারে নাই। ভাইয়া এতো ভালো হইছে যে, সবাই তারে এক নামে চেনে। সে আমাদের জন্য নিজের কেরিয়ার বরবাদ করছে।
বড় আপা,দুলাভাই কেমন যেনো একটা ছায়া হয়ে ছিলো দুর থেকে।
আস্তে আস্তে ছোট আপুও সঙ্গ দিয়েছে এই সফরে।
কষ্ট কারে কয় তা আমি আম্মু আর ভাইয়ার কাছে শিখছি। কষ্টের পরিচয় জানার জন্য আমার দেশ ভ্রমনে বেরোতে হবে না।
আত্মীয় সজন সবাই পাল্টে গেছিলো৷
বাবার বহু আদরের ছোট ভাই যেভাবে জমিজমা বাগিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।
আর আম্মার ভাই বাবার পেনশনের টাকা উদ্ধার না করতে পেরে সম্পর্ক বিছিন্ন করাই উত্তম মনে করেছিলেন।

পুরো পৃথিবী যে কষ্ট দিছে! তার চেয়ে বরং আম্মুর মাইর গুলো শতো সহস্র গুন হালকা!
খুশির সংবাদ,
আমাদের গ্রামের বাড়িতে ইলেকট্রিসিটি আসবে...!
কিন্তু আমার বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ খেলা হয়তো হবে না...!
এখন আমি অনেক বড়ো..! তবে সেই অসাবধানতা আমার মাঝে এখোনো রয়েছে। মেইন সুইচ অফ করতে মনে থাকে না! এখন বিপদে পড়লে কে আসবে মেইন সুইচ অফ্ করতে?
"আব্বা" আপনাকে অনেক মিস করি।
জীবন থেকে নেয়া সত্য ঘটনা!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url