Breaking News

সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী । পর্ব - ০৪


'প্যারিস। ফ্রান্স দেশের রাজধানী ? পিওনটি জবাব দিল । কিন্তু তার চলে

যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেল না।

'প্যারিস। নামটা খুব শোনা শোনা। সিনেমা এসেছিল। হ্যাঁ। শর্মিলা ঠাকুর ছিল। দেশটা কোথায় ?

'ওই যে বললাম, ফ্রান্সে। যার চিঠি —

'তাকে আমিই দিয়ে দেব। আমার মেয়ে

'মেয়ে ? এই বললেন আপনার মেয়ে নেই ।

“শিষ্যদের কাছে যেমন সব গুরুই বাবা আমিও ওদের কাছে মা। ঠিক জায়গায় পৌঁছে নিয়েছেন ভাই। মোক্ষদা ডাকটা পাওয়ামাত্র বৃদ্ধা এসে দাঁড়াল। সুরবালা বলল, 'এঁকে যত্ন করে নিচে পৌঁছে দিয়ে এস। দেখো উচ্চিংডেগুলো যেন মুখ সামলে থাকে।

মিত্তিরনা উঠতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সুরবালা তার স্বাস্থ্যবর্তী হাত তুলে নিষেধ করল। 'তুমি চললে কোথায় ? তোমার দোকানে তো ভরদুপুরে মাছিও ঢুকবে না বসো।'

'না চলি। অন্য কাজ আছে। মিত্তিরদা উঠে দাঁড়ালেন ।

'আমি জানি এপাড়ায় তোমাৰ কথাই একসময় শেষ কথা ছিল। এখনও মান্যি করে সবাই। তবে সেটা আমার দরজার বাইরে। এসেছ নিজের ইচ্ছেয় যাবে আমি অনুমতি দিলে সুরবালা মোক্ষদাকে ইশারা করতে সে পিওনটিকে নিয়ে এগিয়ে গেল।

মিত্তিরনার মুখে রক্ত জমেছিল। বললেন, 'হাঁটুর বয়সী ছোকরার সামনে এভাবে অপমান না করলেই হত।"

'অপমান ? ওমা! সে কখন করলাম।' হাসল সুরবালা, ‘বসতে বলছি বসো। সারাজীবন যে অপমান নিয়ে বসে আছে তার কাছে আর কি আশা কর !' অগত্যা মিত্তিরদা বসলেন। খামটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল সুরবালা। রেখে দিয়ে বলল, "কি খাবে বল ? সরবত ? মিষ্টি ?

'ওসব বারণ। ব্লাড সুগার আছে।"

'এপাড়ার কোন মেয়েছেলের ঘরে কখনও গিয়েছ বলে তো শুনিনি। তা বউ মারা যাওয়ার পর বিয়ে করোনি কেন ? সুগার হোক আর লবণ হোক, স্বাস্থ্য তো খারাপ নয়।'

'ঝামেলা আর ভাল লাগল না।

"বুড়ো বয়সে কে দেখবে ?

'তোমাকে কে দেখবে ?

'পয়সা। সল্ট লেকে বাড়ি করেছি। সামনের মাসে উঠে যাব।' 'ব্যবসাপাতি ?'

'এখন তো খুব পুরোন লোক না এলে বসি না । যা আসে মেয়েদের ভাড়া থেকে। ব্যাঙ্কে তো পচছে, তাই দিয়ে চলে যাবে। সুরবালা শরীর এলিয়ে নিতেই চোখ সরিয়ে নিলেন মিত্তিবদা। নিয়ে বললেন, 'যৌবন তো বাঁধের এপারেই আছে। এখনই বৈরাগ্য।'

'যেদিন তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে সেদিন থেকেই আমি বৈরাগী । খদ্দের এলে

ভাবতাম আমি হলাম জল, মাছ সাঁতার কাটছে। নদীর জল কখনও আমি হয় ? তা তোমার তো সবই রেসের মাঠে আর শরিকে গেছে। দেখবে কে ? ছেলে দুটো তো সভ্য হয়ে পাড়া ছেড়েছে।

'দোকানটা তো আছে। মিত্তিরদা হাসলেন, 'অনেকদিন পরে কথা বলে খুব ভাল লাগল ।'

'কেমন দেখছ আমাকে? কিশোরীর মত মুখ করল সুরবালা।

'একই রকম । তখন এক বলকা ফুটেছিলে, এখন ঘনসর নিয়ে বসে আছ । দুধ দুধই। চলি আজ।'

"মাথা খারাপ। এই দিনটার জন্যে হাঁ করে বসে আছি এতকাল আর যাই বললেই হল? সুরবালা চিঠিটা আবার তুলে নিয়ে বলল, 'লক্ষ্মী হয়ে বসো

অগত্যা মিত্তিরদাকে বসতে হল। আজ এতদিন পরে সুরবালাকে দেখতে তাঁর খারাপ লাগছিল না। চোখ বোলালেই বোঝা যায় বেশ আরামে আছে। ওসব বৈরাগী হওয়ার ব্যাপারটার সঙ্গে জীবনের কতটা মিল তা ঈশ্বরই জানেন । মিত্তিরা জিজ্ঞাসা করলেন, 'সুধারানীকে তুমি দত্তক নিয়েছ ?

'দত্তক ঠিক নয়। একমাস বয়স যখন তখন থেকে আমার কাছে। অতীত আর খুঁড়তে যাইনি । গান বাজনা এ বাড়িতেই শিখেছে। তখন মা বেঁচে ছিল, মা ওকে সব দিয়ে গেছে যা পেয়েছিল দিদিমার কাছ থেকে। আমার তো গলায় সুর নেই।' সুবালা জানাল।

‘তোমার যা আছে তা আবার অনেকেরই নেই। মিত্তিরদা হেসে বললেন । 'তেল দিও না । এই বয়সে তেল পেলে পিছল হব ভাবছ কেন ? যে কথা বলছিলাম, মেয়েটা ভাল । একটু বেশী ভাল। তবে মুশকিল, যারা ওর গান পছন্দ করে না তাদের সঙ্গে কিছুতেই শুতে চায় না। আর আজকাল লোকে চায় হিন্দী সিনেমার গান শুনতে। খ্যামটা, খেউড়, বিধুবাবুর গান, রবিবাবুর গান কে শুনবে ? তবু আসে। 

দুচারজন আছেন। মেয়ে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট । আমি তো বলি, যদ্দিন আছি চালিয়ে যা। যখন এপাড়া থেকে বিদায় হব তখন না খেয়ে মরবি এভাবে চালালে। মোক্ষদা, সুধাকে ডেকে দাও। সুরবালার চোখ বারান্দায় ছিল। বৃদ্ধাকে ওপাশে চলে যেতে দেখলেন মিত্তিরদা। তারপর জিজ্ঞাসা করল, 'সল্ট লেকের বাড়িতে কে থাকবে সঙ্গে ?

“ওমা! কে থাকবে ? কেউ না। খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সুরবালা, 'তোমার ওই চায়ের দোকান যদি বিক্রী করে দিতে পারো তাহলে তোমাকে সঙ্গী করতে পারি ।

মিত্তিরদাও হাসলেন, 'দুদিন বাদে তাড়িয়ে দিলে না খেয়ে মরব। পাগল । এইসময় একটি বছর বাইশের মেয়ে দরজায় এসে দাঁড়াল। মিত্তিরদার মনে হল এই মেয়ে এখানে না থেকে যদি জোড়াসাঁকোয় থাকত বেশী মানাতো । রবিবাবুর উপন্যাস দু-একটা পড়েছেন তিনি বেশী বয়সে। তার নায়িকার মত দেখতে। লক্ষ টাকা বাজী রাখা যায়, কেউ বলতে পারবে না এই মেয়ে সোনাগাছির। সুধারানী বলল, 'ডেকেছ মাসীমা

'এই হল আমার মেয়ে। তাকিয়ে দ্যাখো। কোন মিল পাও? সুরবালা হাসছিল ।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com