Breaking News

সত্যিকারের ভালোবাসা । পর্ব - ০১



পর পর দুইটা থাপ্পড় খাবার পর আমি থমকে আছি তূর্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে।তূর্য ভাইয়ার চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।আমার হাত আমার গালে।বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।

মা আচল মুখে দিয়ে কান্না করছেন।সবাই আমার উপর রেগে আছে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।কিন্তু আমারই বা কি করার ছিলো।তখনই বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো তাহিয়াকে তারাতাড়ি তৈরি করে নিচে নিয়ে আসো।আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো বাবার কথা শুনে।

কিছুক্ষণ আগে,
আজ আমার বড় আপু তনিমার বিয়ে ছিলো।কিন্তু তনিমা আপু ভালোবাসে রাসেল ভাইয়াকে।
আপু বাসায় বলতে পারে নাই ভয়ে।
আজ সকালে আপুর কাছে যাচ্ছিলাম আমি তখন শুনতে পাই আপু রাসেল ভাইয়ার সাথে
কথা বলছে আর কান্না করছে।
আমি আপুর সব কথা শুনে বুঝতে পারি যে আপু রাসেল ভাইয়াকে ভালোবাসে।

আপু,আসবো?আপু চমকে পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে খুব আঁতকে উঠল।
আর বললো তুই এখানে,
আমিঃহ্যা আমি।তুমি কি রাসেল ভাইয়াকে ভালোবাসো আপু?
তনিমাঃহ্যা,কিন্তু এখন কি করবো আমি বল।
না আমি বাবা আর তূর্য ভাইয়ার বিরুদ্ধে যেতে পারবো।না রাসেলকে ভুলতে পারবো।
আমিঃতাহলে পালিয়ে যাও।আমি সাহায্য করব তোমাকে।
তনিমাঃ সত্যি বলছিস তুই,কিন্তু পরে কি হবে যখন সবাই জানবে বউ পালিয়ে গেছে।
মা বাবার অসম্মান হবে।
আমিঃতা নিয়ে তুমি ভেবো না।এদিকে আমি সব ঠিক সামলে নিবো।
আর এমনিতেও আমার ওই আরিশ না ফারিশকে একদমই পছন্দ না।
তুমি বরং রাসেল ভাইয়ার সাথে পালিয়ে যাও।
যেই ভাবনা সেই কাজ।
বিকাল হতেই মেহমানদের আসা শুরু হয়ে গেছে আর বাড়ির সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহমানদের নিয়ে।আমিও এই সুযোগে আপুকে বাসা থেকে পালাতে সাহায্য করি।
রাসেল ভাইয়াকে আগে থেকেই সব বলা আছে
সে বাড়ির একটু দূরে গাছের আড়ালে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

বর্তমান,
আমাকে বউ সাজিয়ে ওই আরিশ না ফারিশের সাথে নিয়ে বসালো।
কাজি আমাদের বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছেন না চাইতেও আমার তিনবার কবুল বলতে হলো।
তারপর সেও তিনবার কবুল বললো।দুইজনেই সাইন করলাম।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।বিদায়ের সময় মা বাবা তূর্য ভাইয়ার চোখে পানি কিন্তু
আমি তাদের সাথে কথা না বলেই গাড়িতে উঠে বসলাম।
আরিশ ভাইয়া।সবাইকে বলে তারপর গাড়িতে বসলো।

গাড়ি এসে থামলো আরিশ ভাইয়ার বাড়ির সামনে।
এই বাড়িতে আমি আগেও এসেছি তবে তূর্য ভাইয়ার সাথে।
যখনই আসতাম আরিশ ভাইয়া দূর দূর করে তার রুম বের করে দিতো।
তার রুমে নাকি কাওকে এলাও করে না।যতসব ঢং।
(আমি তাহিয়া।বাবা মায়ের ও বাড়ির ছোট মেয়ে।এবার মাধ্যমিক পাস করলাম।
বড় ভাইয়া তূর্য।সে বাবার সাথে বিজনেস দেখে।
বড় বোন তনিমা আপু,সে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে।
আর যার সাথে আমার বিয়ে হলো সে আরিশ খান তূর্য ভাইয়ার বন্ধু
আর তার সাথেই তনিমা আপুর বিয়ের কথা ছিলো।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ও অনেক বড় বিজনেসম্যান)।

বর্তমানে আমি আরিশ ভাইয়ার সাথে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি।
আমাকে বরণ করে নিলেন আরিশ ভাইয়ার মা(নীলিমা খান)।
তারপর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো।
রাত ১১টা বাজে আরিশ ভাইয়ার কিছু কাজিন আমাকে তার রুমে দিয়ে আসলো।
আমি খাটের মাঝখানে বসে আছি।রুমটাতে চোখ বুলিয়ে দেখলাম অনেক গুছানো।
দেয়ালে তার কয়েকটা ছবি টাংগানো।
বাইরে থেকে শব্দ আসছে টাকা দেয়ার জন্য তাহলে কি আরিশ ভাইয়া চলে এসেছে?

আচ্ছা মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে না দিলেও তো পারতে।
মেয়েটা একটাবার তাকালো পর্যন্ত না।
খুব অভিমান হয়েছে আমাদের উপর (আফসানা রহমান -তাহিয়ার মা)।
তুমি চিন্তা করো না মা আরিশ ওকে আগলে রাখবে।কোনো কষ্ট পেতে দেবে না। খুব যত্নে রাখবে(তূর্য)।
তূর্য ঠিক বলছে আরিশের উপর আমার আস্থা আছে ও আমার মেয়েকে মাথায় করে রাখবে।
আর যা করা হয়েছে তাহিয়ার ভালোর জন্যই করা হয়েছে(আরমান রহমান)।
হুম তাই যেন হয়।মেয়েটা সুখে থাকলেই হলো(আফসানা রহমান)।

প্রায় ১০মিনিট পর ভিতরে আসলো আরিশ ভাইয়া।
আমার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের টি -শার্ট আর ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আমিও মুখ বাকিয়ে দিলাম কতবর অসভ্য এতো সুন্দরী বউ এখানে বসে আছে
শালা খাটাশ ভালো করে তাকলোই না।
কিছুক্ষণ পর আরিশ ভাইয়া বের হয়ে আসলো।
আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে,আর বলে উঠলো চোখ দিয়ে পরে গিলে খেতে পারবি এখন চেঞ্জ করে নে।এমনিতেও তোর কাছেও যাওয়া যাচ্ছে না।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কি বলতে চাইছে এই অসভ্যটা।
সে বললো তারাতাড়ি চেঞ্জ কর তোর গায়ে যা গন্ধ আমি তো রুমে কিভাবে দাঁড়িয়ে আছি আমিই জানি।
আমি তো শকড কি বললো এটা আমার গায়ে গন্ধ।
আমিও তেতে বলে উঠলাম এই যে মিস্টার অসভ্য আপনি কি বললেন
আমার গায়ে গন্ধ আপনার গায়ে গন্ধ বাজে লোক একটা।এই বলে গটগট করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

একটা মেরুন রঙের থ্রি পিস পরে বের হলাম।
তারপর তনিমা আপুর কাছে কল দিলাম।আপু আর রাসেল ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে।
তারা রাসেল ভাইয়ার বাড়িতে। প্রথমে সবাই রেগে গেলেও পরে নাকি সবাই মেনে নিয়েছে।
আমার আর আরিশ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলার পর আপু চুপ করে রইলো।তারপর বললো
আমার সুখের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো।
না না আপু কি বলছো তুমি তো মানা করেছিলে আমিই তো জোর করে তোমাকে পাঠালাম।
তারপর টুকটাক কথা বলে রেখে দিলাম।

তারপর বিছানার একপাশে শুয়ে পরলাম।
আরিশ ভাইয়া রুমে নেই তাই ভাবলাম তারাতাড়ি ঘুমাই যাই।
অনেক ক্লান্ত ছিলাম তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।
আমি ঘুমিয়ে যাবার পর আরিশ ভাইয়া রুমে আসলো আর দেখলো আমি বিছানায় ঘুমিয়ে গেছি।
সে আমার হাত ধরে একটানে শোয়া থেকে উঠালো।
তারপর বললো ভালোই তো আমার রুমে থাকবি আবার আমার খাটেও ঘুমাবি।
তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো(আমি)।

যেখানে ইচ্ছে যা আমার সামনে থেকে যা(আরিশ)।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কি যেন হলো ওনার কথা শুনে বুকে হালকা ব্যাথা অনুভব করলাম।
সে আবার বলে উঠলো, যাচ্ছিস না কেন আমি ঘুমাবো।
নাকি আমার সাথে বাসর করার ইচ্ছা আছে।
আমি হা করে তাকিয়ে থেকে উঠে দাড়ালাম সে পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
আমি বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি।
খুব কষ্ট হচ্ছে চোখ দিয়ে না চাইতেও একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।
রাতে রুমে এসে খাটের কাছে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি।
নিচেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।
হটাৎ আরিশ ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে খাটের অন্যদিকে শুয়িয়ে দিলো।

সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আরিশ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছি।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি অসভ্য লোকটা তো আমাকে উপরে আনবে না
তাহলে কি আমিই উপরে উঠে আসছি?
এখন আমাকে যদি দেখে আমি উপরে ঘুমাইছি অনেক বকবে সাথে বলবে
আমি তার সাথে বাসর করার জন্য উপরে ঘুমাইছি।কি লজ্জা পাবো তখন।
কিন্তু আমি তো নিচে ঘুমাইছি উপরে উঠলাম কখন কিছুই তো মনে পরছে না।
তখন চোখ গেলো আরিশ ভাইয়ার দিকে।কি নিস্পাপ লাগছে একদম বাচ্চাদের মত ঘুমায়।
মাথার চুলগুলো কপালে আসছে বারবার আমি চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
কে বলবে এই লোকটা আস্ত একটা বজ্জাত।
আমাকে নিচে ঘুমাতে দেয়া এর শাস্তি তুমি পাবা মিস্টার অসভ্য।এই বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
প্রায় একঘন্টা শাওয়ার নেয়ার পর বের হয়ে এলাম।

আরিশ ভাইয়া ঘুম থেকে উঠে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো হেই ইউ স্টুপিড গার্ল কি করছো তার কথা শুনে আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি সে চোখ রসগোল্লার মত বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তার থেকে চোখ সরিয়ে আবার সামনের আয়নার দিকে তাকিয়ে এক চিৎকার দিলাম সাথে সাথে সে উঠে আমার মুখ চেপে ধরলো......

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com