সত্যিকারের ভালোবাসা । পর্ব - ০৮
তখন থেকে রুমে পায়চারি করছে আরমান রহমান।তার ভাবনায় একটাই কথা ঘুরছে রেজোয়ান হোসেন।এই রেজোয়ান ১৮বছর আগের সেই রেজোয়ান নয়তো।কিন্তু সেই রেজোয়ান তো মারা গিয়েছে।আমারই কোথাও ভুল হচ্ছে।আর আরিশদের সাথে সেই রেজোয়ানের বিজনেস।না না আমি একটু বেশি ভাবছি।
তাহসিনঃআংকেল আসবো
(আরমান তাহসিনের কথা শুনে চমকে উঠলো)
আরমানঃআরে তাহসিন বাবা যে আয় ভিতরে আয়।আমার পাশে বস।
তাহসিনঃএকটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।
আরমানঃকি জিজ্ঞেস করবি বল।
তাহসিনঃরেজোয়ান হোসেন কে আংকেল?
আরমানঃক-কে রেজোয়ান,তা কি করে জানবো।তাহিয়া তো বললো ওদের বিজনেস পার্টনার।
তাহসিনঃমিথ্যা বলো না আমাকে আমি তোমার চোখে ভয় দেখেছি।আমাকে বলো না প্লিজ।
আরমানঃতাহসিন ঘুমাতে যা।আমার ঘুম পাচ্ছে।
তাহসিনঃতুমি সবাইকে বুঝাতে পারলেও আমাকে পারবে না।
আমি তোমাকে ভয় পেতে দেখেছি রেজোয়ানের নাম শোনার সাথে সাথে।
আরমানঃকি জানতে চাস তুই?
তাহসিনঃকি এমন হয়েছে যার জন্য রেজোয়ানের নাম শোনার সাথে সাথে তুমি ভয় পেয়ে গেলা?
দরজা খুলে তূর্য ভিতরে আসতে আসতে বললো--
তূর্যঃকিরে তাহসিন তুই এখানে কি করছিস,চল নিচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।তোর জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।
তাহসিনঃতূর্য ভাইয়া আমি আসছি তুমি যাও।
তূর্যঃনা বাবা না তাহিয়া তো বললো তোর নাকি মন খারাপ তোকে যেনো সাথে নিয়ে নিচে নামি।
আরমানঃতাহসিন যা বাবা তুই আমরা এই বিষয়ে পরে কথা বলবো।
তূর্যঃসিরিয়াস কিছু নাকি?
আরমানঃনা তেমন কিছু না।তোমরা যাও আমি ঘুমাবো।আর তূর্য তোমার মাকে পাঠিয়ে দিও।
তূর্যঃ ঠিক আছে।আমরা তাহলে যাই।চল তাহসিন।
তাহসিনঃ হুম চলো।
তনিমাঃতাহসিনকে আনতে গিয়ে কি তূর্যও কি গায়েব হয়ে গেলো।
তূর্যঃগায়েব হবো কেনো,বল এখন তোদের দুই বোনের বকবক শুরু কর।
ভাইয়া।তাহিয়া ও তনিমা একসাথে বলে উঠলো।তারপর তারা অনেকক্ষণ যাবত গল্প করতে থাকলো।
তনিমাঃএই তাহিয়া যা না সবার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।
তাহিয়াঃ ঠিক আছে।(তাহিয়া উঠে রান্নাঘরে চলে গেলো।তাহিয়ার পিছনে আরিশও উঠে গেলো।তা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।)
আরিশঃকফি বানানো শেষ।দাও আমি নিয়ে যাই।
তাহিয়াঃ হুম চলো।
(তারা কিছু স্ন্যাকস আর কফি নিয়ে গেলো।তাদের দেখে এখনো সবাই হাসছে।তাহিয়া তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে)
আরিশঃআমি বুঝি না বিয়ে করা বউ আমার যা ইচ্ছে তাই করব সে যে যাই বলুক না কেনো।তুমি লজ্জা পেয়ো না বউ।
(তাহিয়া যেনো লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।আর এইদিকে সবার কথা শুনে তাহসিন তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহিয়াকে খুশি দেখে সেও হেসে দিলো।যাক তার না হলো কিন্তু তাহিয়া খুশি তো আছে।)
অনেক রাত পর্যন্ত সবাই গল্প শেষ করে ঘুমাতে গেলো।
আড্ডা শেষ করে তাহসিন ছাদে চলে আসে।সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবে তাহিয়া এখন অন্যকারো আর সেখানে তাহিয়া অনেক সুখে আছে তাই আমার ওকে ভুলে যাওয়া দরকার।ও সুখে থাকুক স্বামী সংসার নিয়ে ভালো থাকুক এটাই চাই।
"কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ কাধের উপর পেতেই তাহসিন পিছনে ফিরে তাকায়।"
তাহসিনঃআরে তনিমা তুই এখনো ঘুমাস নি।
তনিমাঃনা।আর তুই এই ছাদে কি করস ঘুমাবি না।
তাহসিনঃঘুম আসছিলো না তাই এখানে একটু হাওয়া খেতে এলাম।
তুই যা রাসেল ভাইয়া অপেক্ষা করছে তোর জন্য।
তনিমাঃবলে এসেছি আমি তোর কাছে।আর এটাও বলছি আমাকে দরকার হলে ছাদে চলে আসে। এবার বল তুই এখানে কার শোক করার জন্য আসছোস।
তাহসিনঃকার শোক করব?আমি তো এমনিতেই এখানে আসছি।এখন মনে হচ্ছে এসে খুব বড় ভুল করে ফেললাম।
তনিমাঃএই কেনো কেনো?
তাহসিনঃকারন এতো রাতে একটা পেত্নি আমার কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছে।
তনিমাঃকি আমি পেত্নি
তাহসিনঃতাতে কোনো সন্দেহ নাই যে তুই পেত্নী।এখন তো আমার ভয় করছে তোকে কখন যে আমার ঘার মাটকে দেস কে যানে।
তনিমাঃআচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি।তুই চলে আসিস।
তাহসিনঃতনিমা।
তনিমাঃ হুম বল কিছু বলবি
তাহসিনঃতাহিয়া মাত্র মাধ্যমিক পাশ করছে ওর বয়স তো ১৬-১৭ হবে।তাহলে এতো তারাতাড়ি বিয়ে টা ঠিক হলো।
তনিমাঃআমার জন্যই হয়েছে সবটা।বাবা নিজের সম্মান বাচাতে তাহিয়ার বিয়ে দিয়ে দিলো।
তাহসিনঃঅহ।আচ্ছা যা না হয় তোর জামাই এখন এখানে চলে আসবে।
তনিমাঃআচ্ছা ঠিক আছে যাই আমি।
(এই বলে তনিমা চলে যেতে লাগল)
তাহসিন আগের ন্যায় চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশে যেনো তার প্রেয়সীর মুখখানা সে দেখতে পায়।চাঁদের থেকেও তুমি সুন্দর প্রেয়সী।
আরিশ ল্যাপটপে কাজ করছে আর তাহিয়া খাটে বসে তাকে দেখছে।আর ভাবছে কেমন নিরামিষ হলে সামনে এমন সুন্দরী বউ থাকতে কেউ কাজে মন দিতে পারে।একটু আদর করতে ইচ্ছে করে না আমাকে।আর আমি কি মুখ ফুটে বলতে পারি আমাকে আদর করো।
তাহিয়াঃএই যে কি করছো ঘুমাবে না।
আরিশঃআমি পরে ঘুমাবো কাজ আছে,তুমি ঘুমিয়ে পরো।আর তুমি যা করার কথা ভাবছো তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।
তাহিয়াঃআমি আবার কি করার কথা ভাবছি।আমি তো ঘুমানোর কথা বলছি।
(আমি বুঝি না আরিশ মনের কথা কেমনে বুঝে ফেলে)
আরিশঃতোমার ফেসের এক্সপ্রেসন দেখলে আমি কেনো সবাই বলে দিতে পারবে তুমি কি ভাবছো।
তাহিয়াঃঅহ।আচ্ছা সব বুঝলাম।আমি মাথা থেকে ওইগুলো ঝেড়ে ফেলে দিবো কেনো।আমাদের বিয়ে হইসে।
আরিশঃতুমি অনেক ছোট।মাত্র মাধ্যমিক পাশ করছো।আরেকটু বড় হও তারপর অনেক আদর করব।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
তাহিয়াঃএখন আর ঘুম আসবে না।ফজরের আযান দিবে পর নামাজ পড়ে আমি একটু ছাদে যাবো।
আরিশঃ আচ্ছে ঠিক আছে। আমি একটু কাজ করি কিউট বউ আমার।
তাহিয়াঃওকে।
ফজরের নামাজ পড়ে তাহিয়া ছাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।ছাদে এসে দেখে দরজা খোলা।
তাহিয়া ভাবলো ভিতরে কি কেউ আছে।ভিতরে ডুকে দেখে ছাদের এক কোনায় তাহসিন দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com