বাইশের বন্যা । ডাকাতের রাত । পর্ব - ০৮ । লিখা- তাসরিফ খান
তিনি একা না, চাচিও আছেন। আমার কথা শুনে চাচি এগিয়ে আসলেন। তারা কেউ স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না । তাদের হাত-পা কাঁপছে । আমি বললাম, চাচা কী হইছে?
ও বেডা, চাইর দিন থাকি কিচ্ছু খাইয়ার না। আমরা কিলা বাঁচতাম । তোমার চাচিরে লইয়া কই যাইতাম?
চাচা কিছু খাবার আছে, এইগুলা দিয়া যাইতাছি; এইগুলা কয়েকদিন খাইতে পারবেন । চিন্তা কইরেন না, এই পানি নাইমা যাইবো তাড়াতাড়ি। চাচা বললেন, আল্লায় তোমার বালা করউক্কা।
আমার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে কিন্তু এখানে থামার উপায় নেই ৷ আমি বুঝতে পারছি আশেপাশের অন্য গ্রামের মানুষদের হয়তো একই অবস্থা । নৌকায় উঠে মাঝির কাছে জানতে চাইলাম, এই গ্রামের নাম কী?
মাঝি বললো, এটা আনন্দপুর ।
আমরা সামনের দিকে ছুটে চললাম। আশেপাশের গ্রামগুলোতে দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছি। যাদের অবস্থা বেশি করুণ মনে হয়েছে তাদের ত্রাণের সাথে পরিবারভিত্তিক গড়ে তিন-চার হাজার টাকা করে দিয়ে যাচ্ছি, যেন পানি নেমে গেলে তারা কিছু একটা করতে পারে। কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সামনে কাশিপুর। আমার ইচ্ছে আরো কয়েকটা গ্রাম কভার করবো। কিন্তু আমাদের মাঝি চাইছে ফিরে যেতে।
আমরা মাঝির ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সামনের দিকে এগুলাম। কাশিপুরে আমাদের ত্রাণ বিতরণ চলছে। সূর্য ডুবে গেছে। আশেপাশে আর কোনো বাড়িঘর দেখতে পাচ্ছি না। এখনো পনেরো-বিশ বস্তা ত্রাণ আমাদের ট্রলারে অবশিষ্ট আছে। আমরা দিরাই রাস্তার মোড়ের দিকে রওনা হলাম। সবাই খুব ক্লান্ত । সারাদিন কারো পেটে তেমন দানা-পানি পড়েনি। ট্রলার সামনে এগুচ্ছে। সবাই বেশ চুপচাপ। যে যার মতো করে ঝিমুচ্ছিলাম। আকাশটা বেশ পরিষ্কার।
অন্ধকার যত বাড়ছে আকাশের তারাগুলো ততই স্পষ্ট হচ্ছে। ত্রাণের বস্তায় হেলান দিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, আর কতদিন চলবে এই বন্যা? কত মানুষকেই বা আমরা হেল্প করতে পারবো? এসব ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে যাই, জানি না ।
প্রিয়ত’র ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। উঠে বসলাম। প্ৰিয়ত বললো, ভাই আমাদের পেছনে তো ডাকাত তাড়া করছে!
চলবে...
