যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০৭

রাতে শুয়ে শুয়ে নোয়া আর অবনী গল্প করছে এমন সময় অবনীর ফোন বেজে ওঠে। অবনী ফোনটা রিসিভ করে।

-- হ্যালো অবনী! (মাহির)
-- হ্যাঁ মাহির ভাইয়া কিছু বলবেন?
-- একটু নোয়ার ফোন নম্বর পাওয়া যাবে?
-- নোয়ার ফোন নম্বর! ( অবনী নোয়ার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়, নোয়া ও বুঝতে পারে না কি করবে।
-- কি হলো, কথা বলছো না কেন? প্লিজ দাও না ওর নম্বর।
অবনী মাহিরের কথা শুনে বুঝতে পারে মাহির কান্না করছে। অবনী কল হোল্ড করে...
-- দোস্ত মাহির কান্না করছে....
-- কি বলিস কেন?

-- তোর সাথে কথা বলতে চাইছে হয়তো। আর তুই বা কেন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস? ছেলে খারাপ কিসে বল তো আমায়? তোর প্রেম টাই তো চাইছে আর তো কিছু চাইছে না।
-- ভালোবাসা জিনিসটা মানুষ তাড়াতাড়ি পেয়ে গেলে, তার মূল্য তাড়াতাড়ি কমিয়ে দেয়।
-- তুই ভাব একবার ছেলেটা তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কান্না করছে।
-- তোকে তো আমি বলেছি অবনী সেদিনের কথা। প্রথম দেখার পর ওকে তো আমার ও ভাল লেগেছিলো, কিন্তু সে যেহেতু আমাকে ওভাবে দেখেছিলো নিশ্চয়ই তার ও আমাকে ভালো লেগেছিলো! কিন্তু সেদিন ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি একটা মেয়েকে ক্যান্টিনে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। তোর কাছে কি মনে হয় এরপর ও তার সাথে আমার কথা বলা প্রয়োজন? সেদিন আমি ঠিক কতটা কান্না করেছি তুই জানিস?
-- সব জানি নোয়া, মানুষ মাত্রই তো ভুল করে তাই না? আগে যা করেছে করেছে তা অতীত ভেবে ভুলে যা। মানুষ বদলায়, মাহির ও বদলে গেছে।
-- আমার বিশ্বাস হয় না ওকে।
-- আচ্ছা তুই কথা বল এমনি,আমি তো তোকে এখনি ভালোবাসতে বলছি না।
-- কি কথা বলব বল তো আমায়?
-- এমনি যা বলা যায়, দেখ কি বলে।
-- হুম।
-- আচ্ছা ভাইয়া নম্বর লিখে নে ভাইয়া।(অবনী মাহিরকে নোয়ার নম্বর দিয়ে কলটা কেটে দেয়)

নোয়ার ফোনে রিং বেজে উঠলে নোয়া কল রিসিভ করে নেয়।
-- হ্যাঁলো....(মাহির)
-- জ্বী....
-- তোমার সাথে আমার কথা হয়েছে আগে?
-- কেন?
-- নম্বর আমার ফোনেই ছিল দেখছি।
-- আর কিছু বলবেন আপনি?
-- তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?
-- মানে?
-- আমি সন্ধ্যা পর তোমাকে বাসার সামনে একটা লোকের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখেছি।
-- তাতে আপনার কি?
-- আমারই তো সব।
-- মানে?

-- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-- খুব সহজ তাই না?
-- তোমার কাছে তাই মনে হলো?
-- যাকে ভালো লাগবে তাকেই কেন পেতে হবে? আর যাকে-তাকে এত কেনই বা ভালো লাগে? আপনি ভালোবাসেন আমি তো বাসি না। আপনি ভালোবাসেন আপনি ভালোবেসে যান অপরপক্ষের ভালোবাসা আপনার কেন লাগবে ?

-- ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যাকে ভালোবাসা যায় তার ভালোবাসা খুব করে প্রয়োজন হয়। তুমি জানো এর আগে অনেকগুলো মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল আমি তোমাকে সত্যিটা বলে দিচ্ছি। আমি ধোয়া তুলসী পাতা না, কিন্তু আমি কখনো ভালোবাসার কথা কাউকে বলিনি।
-- তাতে আমি কি করতে পারি? আমি চাইনা খারাপ চরিত্রের কেউ আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাক। আমার এমন সঙ্গী কখনো চাই না যার চরিত্র খারাপ, ক্ষণে ক্ষণে পছন্দ বদলায়।
-- প্লিজ তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও আমি নিজেকে তোমার মনের মত তৈরী করে নেব।
-- কাকে সুযোগ দেব আপনাকে?
-- দেখ মানুষতো দিতে ভুল করেই থাকে, তাই বলে কি সে সারাজীবন ভুল করে তাই বলে কি সে সারাজীবন ভুল করে?
অতীতে করা ভুলগুলো শোধরানোর জন্য তো একটা সঠিক মানুষ চাই, সেই সঠিক মানুষটা তুমি হয়ে যাও না প্লিজ।

-- আমি ওইসব মানুষের মধ্যে পড়িনা যারা বলে যারা বলে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে শুধরে নেবো ভালো করে নেবো ঠিক করে নেব।
আমার এত ধৈর্য নাই আমি একটা সঠিক মানুষ চাই যে নিজের ভালোটা বুঝবে অন্যের ভালোটাও।
একটা মানুষ ভুল কতবার করে একবার, দুবার, তিন বার? বারবার কিন্তু করে না।
আর আপনি নিজেই স্বীকার করছেন আপনি অনেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছেন। আমি কেন আমার জীবনটা খেলনা হিসেবে আপনার হাতে তুলে দেবো বলতে পারেন?

-- প্লিজ নোয়া এমন করো না। তোমাকে দেখার পর থেকে আমার রাতে ঘুম ধরে না তোমাকে ছাড়া সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
আমি খুব করে তোমার শূন্যতা অনুভব করি।
তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা আমি তো খুব করে ভালোবাসি।
এরকম আমি কারো প্রতি কখনো অনুভব করিনি তাহলে তোমার প্রতি কেন বলতে পারো?
-- আমি আপনার ফাঁদে পা দিতে চাচ্ছি না প্লিজ আমাকে আর কখনো অনুসরণ করবেন না ফোনও দিবেন না। আমি চাইনা এ রকম একটা মানুষকে ভালবাসতে। আপনার ভালোবাসা আমার জন্য বিষাক্ত আমি কেন জেনেশুনে সেটা পান করব বলতে পারেন? কাউকে শুধরে দেওয়ার বা গুছিয়ে নেওয়ার মত ধৈর্য আমার নেই।

আমি একটা সঠিক মানুষকে চাই। যার অতীত আপনার মত কলুষিত হবে না আপনার মত অন্য শতশত মেয়েদের মন নিয়ে খেলবেনা।
-- আচ্ছা কি করলে বিশ্বাস করবে বলো তো আমি সত্যিই তোমাকে.........
-- কোনভাবেই বিশ্বাস করব না। আর মোটকথা আমি নিজেই চাই না আপনার ভালোবাসা। তাহলে বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে!
-- আমি তোমার পিছু কখনও ছাড়বো না নোয়া।
-- ধরে থাকেন, আপনার এটাই কাজ। একটা করে মেয়ে পটাবেন, নিয়ে ঘুরবেন,ক্যান্টিনে বসে নিজের হাতে তুলে খাওয়াবেন, রুমডেট করবেন তারপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে আরেকটার পিছু নিবেন। আপনাদের যেমন টাকার অভাব নেই, তেমন মেয়ের ও অভাব নেই। আমি ছাড়া অনেক সুন্দরী মেয়ে পাবেন, আমার থেকেও অনেক বেশি সুন্দরী তাদের একটাকে বেছে নেন। শুধু আমাকে আপনার এই ভালোবাসা নামক নোংরামি থেকে রেহাই দেন।

-- ভালোবাসার স্বীকারোক্তি মিললে মানুষ দাম দেয় না তাই না?
-- আপনি কখনও পাবেন না দাম।আমি নিজে আপনাকে দেখেছি ক্যান্টিনে অন্য মেয়েকে খাইয়ে দিতে, চরিত্র আপনার ভীষণ বাজে। সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখার পরও আরেকটা মেয়েকে খাইয়ে দিতে কিভাবে পারেন। আর সে যদি আগে থেকেই আপনার জীবনে থাকে তাহলে আমাকে কেন টার্গেট করেছেন,নোংরামো করতে?
-- কবে দেখেছো?
-- আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না।
-- না বলো আমাকে? আমি আমার অতীত স্বীকার করছি। কারও জন্য আমার কখনো ভালোবাসা সৃষ্টি হয় নি।
যাদের সাথে সম্পর্ক ছিল তাদের সাথে শুধু সময় কাটানো ছিল। হ্যাঁ আমি খুব অন্যায় করেছি তাই বলে কি আমি ভালো হতে পারব না? আমি তোমাকে কীভাবে বোঝাই বলতো আমি সত্যি ভালো হতে চাই আমি তোমার ভালোবাসা চাই।আমি তোমার ভালোবাসা না পেলে আমি একদম ধংস হয়ে যাব নোয়া। আমি তোমার পায়ে পরি একটু ভালোবাসা দাও তুমি যদি চাও আমার বাবাকে দিয়ে আমি তোমার বাসায় পাঠাবো। আমি তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে দেখতে চাই সারা জীবন তোমার সাথে থাকতে চাই।
-- বিয়ে! আপনাকে? কখনো না।

-- তুমি এটা বলো সেদিন তুমি যাকে খাইয়ে দিতে দেখেছিলে সেটা কে ছিল? মুখ দেখেছিলে?
-- আপনার সাথে যে কোন মুখ থাকতে পারে, এটা এমন কিছু না।
-- ওটা আমার বোন ছিল মেহের।
-- এখন তো বলবেনই। সে যেই থাকুক, আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না। আমি ফোন রাখছি।
নোয়া ফোন রাখতেই এই প্রথম কান্নায় ভেঙে পড়ে মাহির। অতীত জীবনের করা অন্যায়ের শাস্তি এভাবে পাবে এটা সে মোটেও ভাবেনি। পুরুষ মানুষকে কান্না করতে হয় না, তবুও আজকে যেন চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে মাহিরের।

চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url