যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০৫
নোয়াকে এগিয়ে আসতে দেখে মাহিরের হৃদক্রিয়া বেড়ে যায়।
নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ যেন নিজেই শুনতে পাচ্ছে,সাথে সাথে ডান হাত দিয়ে বুকের বাপাশ চেপে ধরে রইলো।
কি শুরু করেছেন আপনি?(নোয়া)
ক ক কি করেছি আমি?( মাহির)
আমি এখানে আসার পর থেকে দেখছি আপনি আমাকে ফলো করেই যাচ্ছেন।
ভার্সিটিতে ফলো করেন,বাসার নিচে পায়চারি করেন আবার কালকে মেলাতেও ছিলেন আপনি।
শুধু এগুলোতেই ক্ষান্ত হন নি আবার অন্যকাউকে দিয়ে উপহার ও পাঠিয়েছেন।
কি ভেবেছেন কি আপনি? এসব উপহার দিয়ে মন গলিয়ে ফেলবেন?
দেখলাম তো আপনার পিছনে অনেক মেয়েরাই ঘুরে তাদের মধ্যে কাউকে বেছে নেন।
খবরদার আমার আশেপাশে যেন আপনাকে না দেখি আমি, আমি এখানে বড়লোকের কোন বখাটে ছেলের সাথে সম্পর্ক করে বেড়াতে আসিনি, পড়াশোনা করতে এসেছি এখানে।
এবার তো শুধু বলে যাচ্ছি এরপরে দেখলে এই যে এই দুই গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসিয়ে দিয়ে যাব।
কথাগুলো বলেই নোয়া অবনীর হাত ধরে টেনে নিয়ে ডিপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে চলে।
বন্ধু এতগুলো কথা বলা কিন্তু বেকার। ভালোই তো লাগছিলো, তুই শুধু শুধু এমন করলি।
চুপ থাক তো। চল তাড়াতাড়ি ক্লাসে যেতে হবে।
তুই কখন এগুলো নোয়া ভাবিকে দিলি?(আরিশ)
আরে আমি দেই নি, দাঁড়া দেখি কি আছে এতে।
মাহির প্যাকেটটা মাটি থেকে উঠিয়ে তুলে হাতে নেয়।
ব্যাগ থেকে একে একে সব বের করে ফেলে।
শাড়ি, চুড়ি আরও জিনিসগুলো দেখে মাহির অবাক হয়ে যায়,
সে তো এসব দেয় নি তাহলে নোয়াকে এসব দিলো কে?
তুই না দিলে কে দেবে এসব?(আরিশ)
আমিও বুঝতে পারছি না। নাকি সে নিজেই আমার সাথে এরকম করতে এসব করলো?
হতেও পারে, মেয়ে মানুষের মন ভাই বোঝা খুব মুশকিল।(মাহদি)
আমারও এখন সেটাই মনে হচ্ছে,মেয়েটা হয়তো তোকে তাকে নিয়ে আরও ভাবাতে চাচ্ছে। (জুবায়ের)
সে যাই করুক না কেন আমার তাকে চাইই চাই।(মাহির)
তোর বোন তো ওদের সাথে তোর বোনকে বল সাহায্য করতে।(পিয়াস)
নাহ, আমিই দেখছি বিষয়টা। (মাহির)
কারো গলায় ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকায় অবনী।
আরে মেহের যে......
কে ও? (নোয়া)
মাহিরের বোন,কালকে ওর সাথে পরিচয় হয়েছে। খুব ভালো মেয়ে,
আমাদের ডিপার্টমেন্টের।(অবনী)
এই মেয়ে আবার তার ভাইয়ের মত নয় তো?
সাথে আবার একটা ছেলেও দেখছি।(নোয়া)
হয়তো সেও আমাদের সাথেই পড়ে.....(অবনী)
কখন এসেছো?(মেহের)
এই তো মাত্রই আসলাম। তুমি কখন এসেছো? (অবনী)
আমিও....। এটাই নোয়া?
হ্যাঁ এটাই আমার ফ্রেন্ড নোয়া, কালকে যার কথা বললাম।(অবনী)
কি হয়েছিলো গো তোমার?কালকে? অবনী তোমার জন্য ভীষণ চিন্তা করছিলো। (মেহের)
না,তেমন কিছু না একটু খারাপ লাগছিলো তাই চলে গিয়েছিলাম।(নোয়া)
ওহ আচ্ছা.....।
পরিচয় করি দেই, এটা আমার বন্ধু সাদমান।
ও আর আমি স্কুল লাইফ থেকে একসাথে আছি। (মেহের)
সাদমানের সাথে সবাই পরিচিত হয়ে নিলো,
যেহেতু একই সাথে পড়াশোনা করতে হবে। আর তাছাড়া ছেলেটা ভীষণ সুন্দর।
মাথাভর্তি ঘন চুল, শ্যামবর্ণের, গালে খোঁচাখোঁচা দাড়ি, লম্বা অনেকটা,কথার ধরণ ও সুন্দর।
এক কথায় সুন্দর, সুশীল, ভদ্র একটা ছেলে।
সবাই মিলে ক্লাসে চলে যায় গল্প করতে করতে।
ক্লাস শেষ করে সবাই বাসায় যাবে। তখন প্রায় তিনটা বাজতে চলেছে।
নোয়া, অবনী,মেহের,সাদমান সবাই একসাথেই বের হয়।
বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে সবাই যার যার রাস্তা ধরে এগোতে থাকে।
মানে চারজনের মধ্যে শুধু মেহের এর বাসা অন্যদিকে তাছাড়া নোয়া,
অবনী আর সাদমান একদিকেই।গেইট থেকে বের হয়ে মেহের তার বাসার দিকে চলে যায়।
বাকি তিনজন হাটতে থাকে এমন সময় একটা পিচ্চি ছেলে ১০/১২ বছর বয়স হবে হয়তো,
নোয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।
কিছু বলবে?(অবনী)
না....(ছেলেটি)
তাহলে এভাবে দাঁড়ালে কেন?
এই আপুর জন্য চিঠি আছে।একজন ভাইয়া দিয়েছে।(ছেলেটি)
দেখি, দাও।(নোয়া)
ছেলেটা চিঠি দিয়ে চলে গেল।তারা তিনজন ও আবার হাটা শুরু করলো।
নোয়া মনে মনে ভাবছে সকালে এতকিছু বলার পর ও কি মাহির আবার এরকম চিরকুট দিলো?
নাকি এটা আবার অন্য কারও কাজ! নোয়া কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না।
কি হচ্ছে তার সাথে এসব, কেউ কি মজা নিচ্ছে নাকি!
এসব ভাবতে ভাবতে সাদমানের গলা শুনে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে নোয়া।
হ্যাঁ? কিছু বললে তুমি?
শুনতে পাওনি? বললাম তোমরা সাবধানে যাও আমি আমার রাস্তায় চললাম।
হ্যাঁ তুমিও সাবধানে যেও, রাতে গ্রুপে আড্ডা হবে।(নোয়া)
আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ সাদমান।(অবনী)
সেটাও ঠিক, কিন্তু কি করবি বল এখন তো আর নিচে গিয়ে কিছু বলতে পারবি না তাই না?
তোর কাছে নম্বর আছে না?
হ্যাঁ কেন? কোনভাবে কি তুই মাহিরকে ফোন দিতে চাচ্ছিস?
শুধু চাচ্ছি না, আমি ফোন দেব।
তোর নম্বর পেলে আরও বিরক্ত করবে না? বারবার ফোন দিবে তো!
ফোনে ব্লকলিস্ট আছে কি করতে?দে নম্বরটা দে....
অবনী নিজের ফোন থেকে মাহিরের নম্বর দিলো নোয়াকে।
নোয়া এবার মাহিরকে ফোন দিচ্ছে আর নিচে তাকিয়ে দেখছে মাহির কি করছে।
ফোনের রিং হতে হতে কেটে গেল,হয়তো সাইলেন্ট আছে।
আরে ধরছে না কল,সাইলেন্ট করে রেখেছে হয়তো।(নোয়া)
আড্ডা দিচ্ছে আর ওপরে তাকাচ্ছে, ফোন কিভাবে দেখবে!
খচ্চর একটা।
আচ্ছা তোকে না একটা ছেলে তখন চিরকুট দিলো!
ওহ হ্যাঁ, সেটা তো দেখাই হয় নি দাঁড়া নিয়ে আসছি।
নোয়া চিরকুট নিয়ে আসতে রুমে যায় ফোন রেখে।
নোয়া চিরকুটটা খুঁজে বের করে নিয়ে বেলকনিতে যায়।
চিরকুটটা খুলবে এমন সময় ফোন বেজে ওঠে।
কে ফোন দিয়েছে মাহির?
না রে বাড়ি থেকে।
আচ্ছা কথা বল আগে।
নোয়া ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রুমের মধ্যে চলে যায়।
কথা বলছেই এমন সময় খেয়াল করে মাহির ও কল দিচ্ছে।
আর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় নোয়া।
ফোন রেখে দিতেই আবার কল আসে নোয়ার ফোনে।
এবার ফোনটা রিসিভ করে নেয় সে।
দেখছেন যে ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে তবুও বারবার কল দেওয়ার কি আছে? (নোয়া)
আরে, কে আপনি?প্রথমে কল দিলেন আপনি আর এখন আমার ওপর চোটপাট করছেন?
নোয়া ফোন হোল্ড করে অবনীকে বলে দোস্ত এই ছেলেকে পরিচয় দেব না,দেখি কি করে!
অবনীও তাই করতে বলে।
শুনুন ফোন যখন দিয়েছিলাম তখন আপনার নম্বর ব্যস্ত ছিল না।
আপনি যখন আমাকে কল দিয়েছেন তখন ব্যস্ত ছিল।
আপনাকে তো বুঝতে হবে,পরে কল দিতে পারতেন।
বেশি কথা না বলে কেন ফোন দিয়েছেন বলেন?(মাহির)
এমনি ফোন দিয়েছিলাম।
ফাজলামি করেন আমার সাথে?
আপনি আমার বিয়াই নাকি যে আপনার সাথে আমি ফাজলামো করব!
শুনেন আপু মেয়ে মানুষের প্রতি আমার আর কোন আগ্রহ নেই
আর ফোন দিবেন না আমিও দেব না। রাখছি......
বলেই মাহির ফোন কেটে দেয়।
ফোন কেটে দিলো?(অবনী)
হ্যাঁ!
বাবাহ! আচ্ছা চিরকুটটা খুলে দেখ তো।
হুম খুলছি।
নোয়া ফোন রেখে চিরকুট খুলে পড়া শুরু করে দেয়।
প্রিয় কাজল চোখের মেয়ে,
কেমন আছো তুমি? আচ্ছা তুমি আর মেঘলা আকাশ দেখতে ছাদে আসছো না কেন?
প্রথম ভালো আমার তোমার প্রতি সেখান থেকেই।
কাজল চোখের মেয়ে তুমি কি জানো
তোমার ওই কাজলে লেপ্টে থাকা চোখ সেদিন আমার বুকে কালবৈশাখী ঝড় তুলে দিয়েছিল!
মনে হচ্ছিলো এই দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আমার সারাজীবন পার করে দেই।
সেদিন আমি তোমার মুখের হাসি দেখে বুকের ব্যথা বাড়িয়ে নিয়েছি,
সেই হাসি দেখতে না পারলে বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা শুরু করে দেয়।
তোমার সেই তৃপ্তি নিয়ে একের পর এক মেলায় দাঁড়িয়ে ফুসকা খাওয়া আমার মনে দোলা দিয়েছে,তুমি যখন খাচ্ছিলে আর চোখ বন্ধ করে নিচ্ছিলে আমি এক পলকে তোমাকে দেখে যাচ্ছিলাম।
রাতে যখন তোমার বন্ধুটির হাত ধরে বাচ্চাদের মত হাটছিলে
তখন আমি শূন্যতা অনুভব করছিলাম ভীষণভাবে।
আচ্ছা তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা যে আমাকে জ্বালি/য়ে পুড়ি/য়ে দিচ্ছে এটা কি তুমি দেখো না?
আমার মনটা যে তোমার ভালোবাসা পেতে ছটফট করছে ভীষণ।
" চোখের সামনে তুমি বসে থাকো, তোমাকে মনের মধ্যে লুকিয়ে ফেলব
যখনই চাইবো তোমাকে দেখব,আয়না বানিয়ে নেব"
"ভালোবাসা তোমার ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক।"
ইচ্ছেগুলো, তোমার ইচ্ছেগুলো জ্যান্ত হয়ে বুকের ভেতর তুমুল নাচুক..
চলবে...