Breaking News

সমস্ত রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস

ঈমান বিল গায়িবের চতুর্থ বিষয় হচ্ছে সমস্ত রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস। এ ফরযটি মানুষ কিভাবে পালন করবে? হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত মুহাম্মাদ (স.) পর্যন্ত কত নবী রাসূল দুনিয়ায় এসেছেন তা আমরা জানিনা, তাদের নামও জানা নেই, তাদের আসমানী কিতাবও আমাদের হাতে নেই যার মাধ্যমে আমরা তাদের পরিচয় পেতে পারি, তাদের উপর ঈমান কিভাবে আনব? বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে জটিল মনে হলেও তার একটি সুন্দর সমাধান রয়েছে।

একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টি পরিস্কার হতে পারে। সাধারণত মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতি হচ্ছে এই যে, যত মন তত ব্যাথা, আর যতমুখ তত কথা। তাই বাস্তরেব দেখা যায় যে, এক যায়গায় যদি পাঁচজন লোক থাকে তার মধ্য হতে একজন যদি কিছু বলতে শুরু করে তবে তার কথা শেষ হওয়ার আগেই অন্য আর একজন কথা বলতে শুরু করে তবে তার কথা শেষ হওয়ার আগেই অন্য আর একজন কথা বলতে শুরু করে, কেননা তার মনেও ব্যাথা আছে এবং মুখেও কথা আছে কিন্তু নবী রাসূলগণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের বিষয়টি হচ্ছে এরূপ, যে “লাখো মন এক ব্যাথা, লাখো মুখ এক কথা”। কাজেই হযরত আদম (আ.) হতে হযরত মুহাম্মাদ (স.) পর্যন্ত যত নবী রাসূল এসেছেন তাদের মনের ব্যাথাও একটি এবং মুখের কথাও একটি, তা হচ্ছে, “তোমরা আল্লাহর গোলামী কর, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন প্রকৃত ইবাদতের যোগ্য ইলাহ্ নেই।

[সূরা আরাফ ঃ ৫৯-৬৫, ৭৩-৮৫]। 

কাজেই আমরা যদি হযরত মুহাম্মাদ (স.) কে মানি এবং তাঁর আনিত আসমানী কিতাব মেনে চলি তাহলে তামাম নবী রাসূলগণকে মানা হবে এবং তাদের আসমানী কিতাবগুলিও মানা হয়ে যাবে। যেহেতু তাঁদের লাখো মনের এক ব্যাথা আর লাখো মুখের এক কথা, 

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا

তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত কর এবং তার সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করো না। 

[সূরা নিসা, আয়াত ঃ ৩৬]


আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলেন-

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُوا اللَّهُ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

“এবং অবশ্যই আমি প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের কাছে একজন রাসূল পাঠিয়েছি (এই আদেশ নিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর গোলামী কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।” (তাগুতের পরিচয় আলো আঁধার-১ দ্রষ্টব্য)

উল্লেখিত আয়াতের মর্মে একথা স্পষ্ট হল যে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে আল্লাহ যে নবী রাসূল  পাঠিয়েছেন তাদের সংখ্যা অগণিত কিন্তু তাদের দাওয়াত একটিই, তা হচ্ছে “আল্লাহর ইবাদত কর, শিরক বর্জন কর।” আর শিরক বর্জন করা এবং তাগুতকে বর্জন করা একই। মোট কথা একজন নবী বা রাসূল এবং তার কিতাবকে মানলেই সকল রাসূলকে মানা হবে, তাদেরকে দেখা বা তাদের কিতাব পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই ।

এখন প্রশ্ন উঠে যে, শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) কি গায়িব? সাহাবায়ে কিরামগণ তো তাঁকে দেখেছেন, তিনি কি গায়িবের অন্তর্ভূক্ত হবেন? হ্যাঁ তিনিও গায়িবের অন্তর্ভূক্ত, কেননা সাহাবায়ে কিরামগণ এক ব্যক্তিকে দেখেছেন, যার নাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ। কিন্তু রাসূল তারা দেখেন 

নাই। রাসূল ছিলেন গায়িব। কেননা মুহাম্মাদ (স.) এর চল্লিশ বছর বয়স পার হয়ে যাওয়ার পর কোন এক শেষ রাতে হেরা গুহায় যখন জিবরাইল আমীন মুহাম্মাদ (স.)-কে পবিত্র কুরআন মাজিদের সূরা ‘ইকরা' এর পাঁচটি আয়াত পড়িয়ে দিলেন তখনই তিনি রাসূলের সম্মানে ভূষিত হলেন কিন্তু তার চেহারায়, বক্ষে কোথাও তো “রাসূলুল্লাহ” লেখা দেখতে পাওয়া গেলনা। 

কাজেই রাসূল কি দেখা গেল? নিশ্চয়ই নয়। ওহী নাযিল হওয়ার আগের দিন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহকে দেখা গিয়েছিল, ওহী নাযিল হওয়ার পরের দিনও সেই মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহকেই দেখা যাচ্ছে। রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করা, এটা ছিল তাদের গায়িবে বিশ্বাস। 

আর এ গায়িবে যারা বিশ্বাস করেছেন তারা হচ্ছেন সাহাবী আর যারা বিশ্বাস করেন নাই তারা রয়ে গেছেন পূর্ববত কাফির মুশরিক। কাজেই রাসূল গায়িব। জিবরাইল আমীন আল্লাহর নিকট থেকে ওহী নিয়ে এসে মুহাম্মাদ (স.) কে শিখিয়ে দিচ্ছেন। এগুলি দেখা যায় না। এগুলি গায়িব, আর এ গায়িবে যারা বিশ্বাস করেছেন তারা মুমিন। কাজেই রাসূলের প্রতি ঈমান আনা গায়িবে বিশ্বাসের অন্তর্ভূক্ত। রাসুল হিসেবে আভিনব কোন মানুষকে তারা দেখেনি আর দেখাও শর্ত নয়, মানাই হচ্ছ শর্ত। 

একটি ঘটনার অংশ বিশেষ থেকে বিষয়টি আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে। ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধি অনুষ্ঠিত হয়, এর লেখক ছিলেন হযরত আলী (রা.)। মক্কাবাসীদের পক্ষ থেকে সন্ধিটি স্বাক্ষর করবনে, আবু জাহেলের পুত্র “সোহাইল ইবনে আমর” আর মুসলমানদের পক্ষে হযরত মুহাম্মাদ (স.)। সন্ধিনামাটি লেখার পর স্বাক্ষর করার জন্য যখন

“সোহাইল ইবনে আমরের কাছে দেয়া হল, সোহাইল সেটি পাঠ করে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলো। এর প্রথম কারণ হযরত আলী (রা.) সন্ধিনামাটির শুরুতে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" লিখেছেন ।

দ্বিতীয়তঃ "This is an agreement between Muhammad the messenger of Allah and the Quraysh " এটি একটি চুক্তিনামা যা

মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ এবং কুরাইশদের মধ্যে। (Muhammad the prophet page : 158 ) সোহাইল বলল, আমরাও আল্লাহর নামে গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম শুরু করি তবে আমরা বে-ইসমে আল্লাহুম্মা (Bism-i- Allahumma) ব্যবহার করি যার অর্থ আল্লাহর নামে শুরু করছি। 

কাজেই তোমাদের “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” পাল্টাতে হবে  আর দ্বিতীয় আপত্তি হচ্ছে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল) একথা আমরা মানি না। আমরা তাকে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ হিসাবে জানি। কাজেই তোমাদের রাসূলুল্লাহ শব্দটি বাদ (Expange) দিতে হবে।

সোহাইলের বক্তব্য "It we were to admit, he remonstrated that you are the messenger of God, why all this bloodshed"? সে প্রতুত্তর করলো, “যদি আমরা তোমাকে (হে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ) আল্লাহর রাসূল হিসেবে মানি তবে এত রক্তপাত কিসের জন্য”? কাজেই দেখা গেল যে বিষয়টুকু গাইবে বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, ওরা সেটুকুই অস্বীকার করলো অর্থাৎ ওরা রাসূলুল্লাহ শব্দটি অস্বিকার করেছে।

কাজেই সাহাবায়ে কিরাম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে দেখে নাই, তারা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাকে দেখেছেন এবং এই মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ যে আল্লাহর রাসূল তা তারা না দেখে অর্থাৎ গায়িবে বিশ্বাস করেছেন। কাজেই রাসূল (স.) এর প্রতি বিশ্বাসও ঈমান বিল গায়িবের অন্তর্ভুক্ত

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com