যে সময় চুপ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ
কথায় আছে, ‘বোবার কোনো শত্রু নেই’। অবশ্য বর্তমান যুগে এই উপদেশ বাক্য তেমন একটা কার্যকর নয়। কেননা, হালের জমানায় শত্রুরা বোবাদেরও ছেড়ে কথা বলে না। তবে বিশেষ কিছু মুহূর্তে কথার বদলে নিশ্চুপ থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।
জীবনের চলার পথে কিছু কিছু সময় বা ক্ষেত্রে কথা বলা যেমন জরুরি ঠিক তেমনই পরিস্থিতি বুঝে চুপ থাকাও তেমন গুরুত্বপূর্ণ । জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন সরব থাকার চেয়ে নীরবতাই হয়ে ওঠে বেশি শক্তিশালী ও বুদ্ধিমানের পরিচয়। চীনা দার্শনিক লাওজি বলেছেন, ‘নীরবতা শক্তিরই আরেক রূপ।’ জেনে নিন জীবনের যেসব মুহূর্তে চুপ থাকাই শ্রেয়। এই সময় আপনিও যদি চুপ থাকতে পারেন তবে আপনার আপনিই সেরা। চলুন জেনে নেই কোন কোন সময় চুপ থাকতে হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ কোরো না; কান, চোখ, হৃদয়—তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৬)
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, ‘তোমরা শুধু ধারণাবশত কোনো কথা বোলো না, কোনো কাজ কোরো না। যদি করো তুমি এমন বিষয়ের অনুসরণ করলে যা সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই এবং যার বিশুদ্ধতা প্রমাণিত নয়।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি যেসব বিষয়ে তোমাদের ছেড়ে দিয়েছি সেসব বিষয়ে আমাকে ছেড়ে দাও (আমি যা বলিনি সে বিষয়ে প্রশ্ন কোরো না)।
০১। কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকলে।
০২। শোকার্ত মানুষের সামনে।
০৩। কেউ সমালোচনা করলে।
০৪। রেগে গেলে বা আবেগপ্রবণ হলে।
০৫। অফিসে চটকদার আলোচনা।
০৬। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলে।
০৭। মুর্খ লোকজনের সাথে তর্ক হলে।
০৮। কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলে।
০৯। কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে বিভ্রান্ত মনে করলে।
১০। কাজের সময়ে যতটা সম্ভব কম কথা বলুন।
১১। যে কেও যখন নিজের কথা জানান।
১২। তর্ক বাড়ছে এমন সময়।
১৩। আবেগে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না।
চুপ থাকার উপকারিতাঃ
চুপ থাকা মানে দুনিয়াবি কথা থেকে চুপ থাকা। জবান সবসময় জিকির-ফিকিরে রাখা। রাসুল (সা.) অনেক বেশি চুপ থাকতেন। মুখ দিয়ে বের হওয়া কথাটা হয় সওয়াব হবে না হয় গুনাহ হবে। ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার কাজে সচেতন পাহারাদার তার কাছে রয়েছে। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১৮)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে তার উচিত ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা।’ (সহিহ বুখারি)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে চুপ থেকেছে সে নাজাত পেয়েছে।’ (তিরমিজি)
* পূর্বের জামানার নেক লোক কম কথা বলতেন।* নারীর সৌন্দর্য লজ্জা আর বুদ্ধিমানের সৌন্দর্য হলো চুপ থাকা।
* চুপ থাকা নেক লোকদের দোয়া ও ভদ্রতার ভিত্তি।
* চুপ থাকার ছোট ফায়েদা হলো নিরাপদে থাকা, আর কথা বলা মানুষের ছোট লোকসান হলো লজ্জিত হওয়া।
* অসংযত জিহ্বা সকল ইবাদত বন্দেগি নষ্ট করে দেয়।
* চুপ থাকা উত্তম পরহেজগারি এর কারণে গুনাহ কম হয়।
* গীবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য চুপ থাকা।
* আগে পরিমাপ করো তারপর কথা বলো এবং জবানের কৃপণতা করাই ভালো।
* সব কথার জবাব হয় না আর অপছন্দনীয় কথার জবাব তো চুপ থাকা।
* এক কবি বলেন, ‘মুত্তাকি ও পরহেজগার মানুষ নিজের জবানের হেফাজত করার কারণে কথা বলা থেকে বেঁচে থাকে যদিও সে সঠিক কথা বলতে পারে।’
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com