মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ ভ্রমণ গাইড ও বিস্তারিত

মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উত্তরে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা; দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্য (ভারত); পূর্বে কাছাড় (ভারত) এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা। মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোকসমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি।

মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

নবাববাড়ি, বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওড়, বাইক্কা বিল, হাম হাম, কমলগঞ্জ, খোজার মসজিদ, গাছপীর আব্রু মিয়ার মাজার, ইউনুছ পাগলার মাজার, হাইল হাওর, রুস্তুমপুর তমাল তলা, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি।

হাকালুকি হাওর

হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার ৫ টি উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। ২৩৮ টি বিল এবং নদী মিলে তৈরী হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার একরের এ হাওড়। বর্ষাকালে একে হাওর না বলে সমূদ্র বলা যায় অনায়াসে। জীববৈচিত্রে ভরপুর এ হাওড়ে নানান প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্ষায় থৈ থৈ পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু কান্দাগুলোতে আশ্রয় নেয় পরিযায়ী পাখিরা রোদ পোহায়, জিরিয়ে নেয়। সমূদ্রের মতো বিশাল ঢেউ, চারদিকে পানি আর পানি । 

হাকালুকি যাবার সবচে ভালো উপায় হলো রাত ৯.৫০ এ সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেস ওঠে যাওয়া। নামতে হবে মাইজগাও ষ্টেশনে। এটি সিলেটের ঠিক আগের ষ্টেশনটি। বাইজগাও নামার পর গাছপালা ঘেরা একটা রাস্তা ধরে প্রায় ১ কি:মি: হাটলেই পৌঁছে যাবেন ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার। সামনের শৌকাঘাটে চলে আসুন। এখান থেকে নৌকা দরদাম করে উঠে “জুন সারাদিনের জন্য। বড় গ্রুপ হলে (১০/১৫ জন) বড় ছইওয়ালা ট্রলার নিব। দিনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে ৩-৪ হাজার টাকা (অবশ্যই দামাদামি করবেন)। কিছু খাবার এবং পানি কিনে নিন কারণ হাওড়ে তেমন দোকানপাট নেই। এবার নৌকায় উঠে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে হাওড়ে ঘুরে বেড়ান। কুশিয়ারা পাড়ি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে।


টাঙ্গুয়ার হাওড় ভ্রমণ

টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রতি ট্রাভেলারদের ইদানিং আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে এ ভ্রমণ অনেক বিড়ম্বন বলে রাখা ভালে টাঙ্গুয়া গেলে ১০-১৫ জনের গ্রুপে গেলে খরচ কমে আসে। টাঙ্গুয়া যেতে হলে সবার আগে খুব সকালে সুনামগঞ্জ নেমে বৈঠাখালি ঘাট যেতে হবে। বৈঠাখালি যাবার জন্য টেম্পু বা ব্যটারীচালিত অটো পাবেন। অটোতে উঠে যান ৫ জন করে ৷ জনপ্রতি নেবে ১০ টাকা করে। বৈঠাখালি ঘাটে নেমে ৩ টাকা দিয়ে নদীর ওপার যাবেন। ওপার পেলে অনেক মোটরসাইকেল পাবেন। জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে আড়া দিয়ে তাহিরপুর চলে যান। 

একটা কথা গ্রুপ বড় হলে আগে থেকে কাউকে ফোন করে লেগুনা নিয়ে আসতে বলুন। ১২ জন বসতে পারবেন। ভাড়া নেবে ১২০০ টাকা (কমবেশি হতে পারে। অবশ্যই নরদাম করে নেবেন)। রাস্তা খুব ভালো। ৩৫ কিঃমিঃ দুরের তাহিরপুর যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘন্টা। তাহিরপুর নেমে নাস্তা করে নিন এবং খাবার মতো শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে নিন। এরপর একটা নৌকা ভাড়া নিন সারাদিনের জন্য। ভাড়া পড়বে ৩-৬ হাজার টাকা (সাইজ অনুযায়ী)। এরপর সারাদিন হাওড়ে ঘুরুন, গোছল করুন, বাগনি বর্ডার এবং বারিক্কা টিলা যান এবং ফিরে আসুন।



হাম্মাম বা হাম হাম জলপ্রপাত

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বনাঞ্চলের সীমান্তবর্তী গহীন অরন্যে সন্ধান পাওয়া গেছে নতুন রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম এক জলপ্রপাত। স্থানীয়রা একে হাম্মাম বলে। পাহাড়ী অধিবাসীরা বলেন, পানি পতনের স্থানে একসময় পরীরা গোসল করত। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৮কিঃমিঃ পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুমামা বনবিট এলাকায় এ ঝরণার অবস্থান। এ দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে উপজেলা সদর থেকে স্থানীয় মিনিবাস, জীপ, মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিয়ে কমলগঞ্জের কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫কিঃ পাকা রাস্তা বাকী ১৩ কিঃ মিঃ মাটির রাস্তার পায়ে হেঁটে চাম্পারায় চা বাগানের ভেতর দিয়ে কলাবন বস্তি হয়ে মোকামটিলায় গেলে দেখা পাওয়া যায় ১৬০ ফুট উচ্চতা ও ৮০ ফুট প্রস্তের হাম্মাম ঝরণা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url