Breaking News

রমযানুল মুবারকের আমল ও ফজিলত

রমযানুল মুবারকের আমল

পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি হাদীসে আছে, ‘রমযানুল মুবারকের শুরুতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ অন্বেষী! নিবৃত্ত হও, নিয়ন্ত্রিত হও।’ সেই হাদীসে একথাও আছে যে, ‘রমযানুল মুবারকের শুরুতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়’। এ থেকে বোঝা যায়, রমযানুল মুবারক ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মৌসুম। কাজেই এই সুযোগকে কাজে লাগানো চাই।

নিম্নে রমযানের কিছু মৌলিক আমলের কথা উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন।

রোযা রাখা ও তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করা

রমযানুল মুবারকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল, রোযা রাখা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে―

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ .

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। ―সূরা বাকারা (২) : ১৮৩

রমযানুল মুবারকে তাই সকল মুসলিমের রোযা রাখা ফরয। শরীয়ত স্বীকৃত ওযর ছাড়া কারো জন্য রোযা না রাখার সুযোগ নেই। আফসোসের বিষয় হল, রোযা রাখার ব্যাপারে কোনো কোনো পরিবারে শিথিলতা ও অবহেলা দেখা যায়। এই শিথিলতা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখতে হবে, রোযা অকাট্য ফরয বিধান, এব্যাপারে শিথিলতা করা হলে আখেরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

উক্ত আয়াতে রোযার মাকসাদ ও উদ্দেশ্যের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর তা হল, তাকওয়া অবলম্বন করা। রোযার মাধ্যমে তাকওয়ার অনুশীলন হয়, আল্লাহর ভয়ে স্বাভাবিক সময়ে যা হালাল ছিল, রোযা অবস্থায় সেই হালাল থেকেও বিরত থাকা হয়, এতে আল্লাহর ভয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ও অনুচিত কাজকর্ম থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখার অনুশীলন হয়। এই অনুশীলনের মাধ্যমে আল্লাহর ভয় মনে বদ্ধমূল করা এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুচিত কাজ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখার একটি যোগ্যতা নিজের মাঝে সৃষ্টি করা―রোযার মাকসাদ। এই মাকসাদ অর্জনে যথাযথ আদব বজায় রেখে সিয়াম পালন করা আবশ্যক। আল্লাহ সবাইকে ‘তাকওয়া’র মহা নিআমত দান করুন।

সেহরী খাওয়া

রমযানুল মুবারকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সেহরী খাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেহরী খাও, সেহরীতে বরকত রয়েছে। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫

অন্য হাদীসে আছে, আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবীদের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া (আমরা সেহরী খাই, তারা খায় না)। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৬

শেষ ওয়াক্তে সেহরী খাওয়া সুন্নত। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেহরী খাওয়া ও আযানের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত পরিমাণ। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৬

ইফতার করা

রমযানুল মুবারকে ইফতার করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা কর্তব্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত কল্যাণের মাঝে থাকবে―যতদিন তারা সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করবে। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৫৭

সহীহ মুসলিমে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করার কথা বর্ণিত হয়েছে। (দ্র. সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৯)

ইফতারের সময় দুআ করা

ইফতারের সময় দুআ করা চাই। হাদীস শরীফে এসেছে, ইফতারের সময় রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ―ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫৩

এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. ইফতারের সময় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন―

اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ، أَنْ تَغْفِرَ لِي.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার ঐ রহমতের ওছিলায় প্রার্থনা করছি, যা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছে। (আমি প্রার্থনা করছি,) আমাকে ক্ষমা করে দিন। ―সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫৩

ইফতারের দুআ

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, ইফতারের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ পড়েছিলেন―

ذَهَبَ الظَّمَأُ، وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ، وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ.

‘পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সতেজ হল আর সওমের সওয়াবও অবধারিত হয়েছে ইনশাআল্লাহ। ―সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৩৫৭

তারবীহ পড়া

রমযানের অন্যতম একটি আমল হল, তারাবীহ নামায। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের রাতে (নামাযে) দণ্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯

তাই গুনাহ মাফের আশায় সওয়াবের নিয়তে গুরুত্ব ও যত্নের সাথে তারাবীহ নামায পড়া চাই।

তারাবীর ব্যাপারে একটি কথা না বললেই নয়। অনেকে তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে অযাচিত বাহাছ উসকে দেন। এই বাহাছ বিতর্কে না জড়িয়ে আমলে মনোযোগী হওয়া কর্তব্য। এ সম্পর্কে উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব হাফিযাহুল্লাহ আলকাউসার জুলাই-আগস্ট ২০১২ সংখ্যায় বড় দরদ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধের শিরোনাম ‘বরাহে করম! রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিবাদ ছাড়ুন, নিজ নিজ ত্রুটি সংশোধন করুন’। তারাবীর রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে কেউ যদি অন্য কারো দ্বারা পেরেশানীর শিকার হন, তাহলে তার প্রতি এই প্রবন্ধ পড়ার অনুরোধ থাকল। এখানে সেই প্রবন্ধ থেকে শুধু একটি কথা উদ্ধৃত করা হল―

..এসব মানুষ যদি সঠিক ইলম অর্জন করত, তাহলে বুঝত যে, বিশ রাকাত তারাবীহ খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের ঐকমত্য (ইজমা) ও খায়রুল কুরূন থেকে অদ্যাবধি উম্মতের অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা এবং সর্বসম্মত পথ (সাবীলুল মুমিনীন)-এর মতো অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এর বিপরীতে তারাবীর নামাযকে আট রাকাতে সীমাবদ্ধ করার পক্ষে কোনো দলীল নেই। যদি জোর করে বিনা দলীলে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহকে একই নামায দাবি করা হয়, তবুও তা আট রাকাতে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। কেননা তাহাজ্জুদের নামায আট রাকাতে সীমাবদ্ধ নয়। কওলী হাদীস অনুযায়ী দুই দুই রাকাত করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যায়। আর ফে‘লী হাদীস দ্বারাও আট রাকাতের বেশি প্রমাণিত। স্বয়ং আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে (যার বর্ণনাকৃত―বছরজুড়ে সালাতুল লাইলের আট রাকাত ও বিতিরের ৩ রাকাত মোট এগারো রাকাতের হাদীস দ্বারা এসব বন্ধু তারাবীর দলীল পেশ করে থাকেন) সহীহ সনদে দশ রাকাতের কথা প্রমাণিত। আর অন্য সাহাবী থেকে এর চেয়ে বেশিও প্রমাণিত।

এজন্য যারা তাহাজ্জুদের হাদীস দ্বারা তারাবীর রাকাত-সংখ্যা প্রমাণের অপচেষ্টা করেন তাদের কোনো অধিকারই নেই বিশ রাকাত তারাবীহ আদায়কারীদের ওপর আপত্তি করার। তাদের নিকট সাধারণ নফল নামাযেও জামাত জায়েয। আর তাহাজ্জুদে জামাত হল মুবাহ। সুতরাং তাদের কথা অনুযায়ী যদি ধরা হয়, বিশ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নয়, তাহলে তো এ-ই হবে যে, তা নফল। আর তাদের নিকট নফল নামায জামাতে আদায় করা জায়েয। এজন্য যারা বিশ রাকাত পড়ছে তারা তো তাদের নীতি অনুযায়ীও কোনো নাজায়েয কাজ করছে না। তাহলে কেন খামোখা বিশ রাকাত আদায়কারীদের বিভ্রান্ত করবেন? তাদের বিরুদ্ধে লিফলেট প্রচার করবেন? কটূক্তি করবেন এবং তাদের প্রতি বিদআত ও সুন্নাহ বিরোধিতার অপবাদ দেবেন?!’ ―মাসিক আলকাউসার, শাবান-রমযান ১৪৩৩ হি./জুলাই-আগস্ট ২০১২ ঈ.

তারাবীর রাকাত সংখ্যার বিষয়ে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত। হারামাইনে করোনাকে উপলক্ষ করে তারাবীহ বিশ রাকাতের জায়গায় দশ রাকাত করা হয়েছিল। যদিও তার কোনো প্রয়োজন ছিল কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু করোনা বিদায় হয়েছে সেই কবেই, তার পরও এখনো তারাবীহ বিশ রাকাত পড়ার মুবারক প্রচলনটি এখনো চালু করা হয়নি। এটি আপত্তিকর। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এদিকে দৃষ্টি দেওয়া কর্তব্য।

তাহাজ্জুদ পড়া

রমযানে সাধারণত সেহরীর জন্য ওঠা হয়, তাই একটু আগে উঠে দুই-চার রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া তুলনামূলক সহজ। আর যদি এ সুযোগে সব সময়ের জন্য তাহাজ্জুদের অভ্যাস হয়ে যায়, তাহলে তো খুবই ভালো। পরিবারের লোকদেরও তাহাজ্জুদে ওঠার জন্য অনুপ্রেরণা দান করা চাই। কারণ তাহাজ্জুদের ফযীলত অনেক। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘ফরয নামাযের পরে সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ)। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩

বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা

সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে এসেছে, রমযান মাসে কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ হয়েছে। তাই এ মাসে কুরআনের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া কর্তব্য। হাদীসে এসেছে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম রমযানের প্রতি রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২

শবে কদর অন্বেষণ করা

শবে কদর এক মহা ফযীলতপূর্ণ রাত। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ―সূরা কদর (৯৭) : ১-৩

হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাযে দণ্ডায়মান থাকবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬০; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪

সুতরাং শবে কদরের ফযীলত লাভে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। এ রাতে সাধ্য মোতাবেক নফল ইবাদত করবে, তিলাওয়াত, যিকির, দুআ, ইস্তেগফার, দরূদ প্রভৃতিতে মগ্ন থাকবে। ইবাদতের মাঝে বিশ্রাম নিলেও দিল আল্লাহমুখী রাখবে, সম্ভব হলে মনে মনে যিকির করবে। তবে হাঁ, যদি বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন থাকে, তাহলে বিশ্রামও করা যেতে পারে, কিন্তু গাফলতের ঘুম বা কেবল আরামের ঘুম ঘুমাবে না। আর খেয়াল করে এশা ও ফজর নামায অবশ্যই জামাতের সাথে পড়বে। কারণ, এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সাথে পড়ল, সে যেন সারারাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ল। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৬

কিন্তু শবে কদর কবে, তা নির্দিষ্ট নেই। শুধু এতটুকু জানানো হয়েছে যে, শবে কদর রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যেকোনো একদিন। তাই শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর প্রতিদিনই ইবাদত করা কর্তব্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ কর। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৭, ২০২০

সহীহ বুখারীর অপর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর এভাবে ইতিকাফ শেষ করার পর যখন রমযানের একুশতম রাত এল তখন তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। কারণ আমাকে শবে কদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে তা শেষ দশকের অমুক রাতে)। এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ... সুতরাং তোমরা শেষ দশকে শবে কদর খোঁজ কর। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৭

তাই কেবল সাতাশ রমযানের রাতকে শবে কদর মনে করে শেষ দশকের অন্য রাত্রিগুলোতে শবে কদর অন্বেষণ না করা ঠিক নয়। বরং শেষ দশকের প্রতি রাতেই শবে কদর তালাশ করবে।

আয়েশা রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে কদরে পড়ার জন্য একটি দুআ শিখিয়েছেন। শেষ দশকের রাতে এই দুআ বেশি বেশি পড়া উচিত―

اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে ভালবাসেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। ―জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫১৩

শেষ দশকে ইতিকাফ করা

শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করা রমযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬)

তাছাড়া শবে কদর লাভের উত্তম উপায় হল ইতিকাফ। ইতিকাফরত অবস্থায় থাকলে শবে কদর লাভের সুযোগ বেশি।

যথাসাধ্য দান করা

রমযান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল, সাধ্য মোতাবেক দান করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে অনেক দান করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। রমযানে তাঁর দানের হাত আরো প্রসারিত হত। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযা হচ্ছে ঢাল। যখন তোমাদের কেউ রোযা থাকে, সে যেন গর্হিত কথা না বলে এবং মূর্খের ন্যায় কাজ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১

অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ বর্জন করল না, তার (রোযা রেখে) পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৩

এ হাদীসদ্বয় থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রোযা কেবল পানাহার ত্যাগের নাম নয়। বরং রোযার মর্যাদা রক্ষার জন্য আরো কিছু করণীয় আছে। রোযার মর্যাদা রক্ষার্থে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অপছন্দনীয় সকল কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। নতুবা এই রোযা আল্লাহর কাছে মাকবুল রোযা হিসেবে গৃহীত হবে না এবং রোযার কাক্সিক্ষত সুফলও পাওয়া যাবে না। তাই রোযার মর্যাদা রক্ষার্থে সব ধরনের গর্হিত কাজ ও কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে শাবান ও রমযানুল মুবারকের খায়ের ও বরকত দান করুন―আমীন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com