পিকনিকে গিয়ে প্রেম


বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রুহি। ছোটবেলা থেকে সে খুবই স্বপ্নময় ছিল। চারপাশের সুন্দর সব জিনিস তাকে আকর্ষণ করত, আর তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো। পাখির গান, গাছপালা, তাজা বাতাস—সবকিছু তার ভালো লাগত। একদিন, হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু জাহিদ একদল বন্ধুদের নিয়ে পিকনিকে যাওয়ার কথা জানায়। রুহির মনে হয়েছিল, এ যেন একটা সুযোগ—প্রকৃতির মাঝে কিছু সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে মজা করা, আর কে জানে, হয়তো জীবনটাও বদলে যেতে পারে!

পিকনিকে যাওয়ার দিন আসল। খুব সকাল সকাল জাহিদ আর তার বন্ধুদের সঙ্গে রুহি ঠিক করেছিল সিএনজি রিজার্ভ করে বাড়ির কাছে একটি সুন্দর স্থান নির্বাচন করবে। গন্তব্য ছিল গুলশানের পাশের কোনো এক পিকনিক স্পট, যেখানে গাছপালা, পুকুর, আর বিশাল মাঠ ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য সবাই একসঙ্গে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে পড়েছিল।

গন্তব্যে পৌঁছানোর পর, তারা বিশাল এক মাঠে এসে বসে পড়লো। রুহি খুব খুশি হয়েছিল। তবে তার মনের মধ্যে একটু অন্যরকম অনুভূতি ছিল—এই অনুভূতি সে কোনোদিন আগে অনুভব করেনি। তার চোখে পড়ল তারই এক বন্ধু—আসিফ, যে আগেও তার খুব ভালো বন্ধু ছিল। কিন্তু আজ সে কিছুটা অন্যরকম লাগছিল। তার চোখের মধ্যে একটি বিশেষ উজ্জ্বলতা ছিল, মনে হচ্ছিল কিছু একটা সে মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। রুহি বুঝতে পারছিল না কেন তার চোখে তাকানোর সময় হঠাৎ তার হৃদয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। কি একটা পরিবর্তন হয়েছে তার সাথে, সে জানত না।

তবে পিকনিকের আনন্দে সবাই মেতে উঠল। সকলে খেলা-ধুলা, গান, নাচ, খাওয়া-দাওয়া শুরু করল। রুহি একটু দূরে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইল, এবং হালকা একটু হাঁটাহাঁটি করতে লাগল। কিছু সময় পর, তাকে দেখে আসিফ এগিয়ে এলো।

"রুহি, একা একা কোথায় যাচ্ছো?" আসিফের কণ্ঠে মধুর এক টান ছিল।

রুহি হেসে বলল, "কিছু না, শুধু একটু একা থাকতে ইচ্ছা করছে।"

"তবে তোমার এ একা থাকা তো ভালো লাগছে না। আমি তো ভাবলাম, তোমার সঙ্গে একটু কথা বলি।"

রুহি কিছুটা অবাক হয়ে গেল। আসিফের এই নতুন আচরণ তার কাছে অদ্ভুত লাগছিল। তারা হাঁটতে শুরু করল। কথা বলতে বলতে, আসিফ তাকে বলল, "রুহি, আমি অনেকদিন ধরে তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কারণে আগ বাড়িয়ে বলতে পারিনি।"

রুহি কিছুটা চুপ হয়ে গেল। "কি বলতে চেয়েছিলে?"

আসিফ কিছুটা বিব্রত হয়ে বলল, "রুহি, আমি তোমার প্রতি কিছু অনুভব করছি, যা শুধু বন্ধুত্বের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তুমি জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"

রুহির মনে এক ধাক্কা লাগে। এই অবস্থা সে কখনো কল্পনা করেনি। আসিফের প্রতি তার মিশ্র অনুভূতি ছিল, তবে কীভাবে সে এই অনুভূতিকে বুঝবে, সে জানত না। কিছু সময় চুপ থাকার পর, রুহি বলল, "আমি জানি না, আসিফ। আমি সত্যিই জানি না কি বলবো। তুমি আমার অনেক ভালো বন্ধু, কিন্তু এই ধরনের অনুভূতি নিয়ে আমি এখনো প্রস্তুত নই।"

আসিফ কিছুক্ষণ নীরব থাকলো। তারপর বলল, "আমি জানি, রুহি। তবে আমি এই অনুভূতিকে আর লুকাতে পারলাম না। আমি শুধু তোমাকে জানিয়ে দিতে চেয়েছি।"

রুহি কিছুটা অবাক হলেও, তার মনে এক ধরনের শান্তি অনুভূত হচ্ছিল। আসিফের জন্য সে বিশেষ কিছু অনুভব করতে পারছিল না, তবে বন্ধুত্বের মাঝে কোনো সমস্যা ছিল না।

পিকনিকের পরবর্তী সময়গুলো ছিল হাসি-আনন্দে ভরপুর। সবাই মিলে সেলফি তুলল, খেলাধুলা করল, গান গাইল। কিন্তু রুহির মন এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে ভরপুর ছিল। আসিফের কথা শুনে তার মনে কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল, তবে সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে সময় লাগবে।

দিন শেষে, সবাই ফিরে গেল তাদের হোস্টেলে। রুহি কিছুটা উদাসীন অবস্থায় শুয়ে পড়লো।

তারপরের কয়েকদিন সে নিজের মনে একটু খোঁজ নিতে লাগল—সে কি আসলেই আসিফের জন্য কিছু অনুভব করতে পারে? আসিফের সঙ্গেই কি সে ভবিষ্যৎ দেখতে চায়? নাকি সে শুধুই তার বন্ধু হিসেবেই তাকে চায়?

এরপর সপ্তাহখানেক পর রুহি আসিফের সঙ্গে আবার কথা বলল। "আসিফ, আমি তোমার অনুভূতি বুঝতে পারছি, কিন্তু আমি এখনও নিজের মনের কাছে সৎ হতে চাই। আমি নিশ্চিত নই, আমি তোমার জন্য কী অনুভব করি।"

আসিফ এক মুচকি হাসি দিয়ে বলল, "তোমার উত্তরটি বুঝতে পেরে আমি খুশি। আমি জানি, প্রেমে কখনো জোর করে কিছু হয় না। আমি শুধু চাই, তুমি আমার বন্ধু হিসেবে থাকো, আর যদি একদিন তোমার মনে আসে, তাহলে... আমরা ভাবতে পারবো।"

রুহি তার ভালো বন্ধু হিসেবে আসিফকে মনে রাখল, তবে তার অনুভূতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল—এটা নিছক বন্ধুতা, আর কিছু নয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রুহি তার সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে জীবনকে আগিয়ে নিয়ে চলল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url