চুলকানি বা স্ক্যাবিস (Scabies) বা চর্ম রোগে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
চুলকানি সারা বাংলাদেশে বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলের মধ্যে ছড়ি পড়েছে। অনেক চিকিৎসা নেওয়ার পরও ভালো হচ্ছে না, তবে সচেতনতা এ রোগের বিস্তারকে রুখতে পারে। বিভিন্ন কারনে চুলকানি হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম সংক্রামক চর্মরোগ হচ্ছে স্ক্যাবিস। যা এক ধরনের পোকা। নিম্নে স্ক্যাবিস সম্পর্কে ও তার প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
স্ক্যাবিস (Scabies) একটি অত্যন্ত সংক্রামক চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei নামক ক্ষুদ্র মাইটের আক্রমণে হয়। এই মাইট ত্বকের নিচে সুড়ঙ্গ তৈরি করে ডিম পাড়ে, ফলে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয়। রাতে চুলকানি বেশি অনুভূত হয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে হাতের আঙুলের ফাঁকে, কব্জি, কনুই, বগল, কোমর, নিতম্ব ও যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি দেখা যায়।
লক্ষণসমূহ:
- তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে।
- ত্বকের উপর লাল ফুসকুড়ি বা গুটি।
- আঙুলের ফাঁকে, কব্জি, কোমর, নিতম্ব ও যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা:
স্ক্যাবিসের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রয়েছে, তবে এটি গ্রহণের আগে অবশ্যই যোগ্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রতিটি রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভিন্ন হওয়ায়, চিকিৎসক উপযুক্ত ওষুধ নির্ধারণ করবেন।
প্রতিরোধ ও করণীয়:
- ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়ানো।
- রোগীর ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো।
- পরিবারের সকল সদস্যকে একই সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
স্ক্যাবিস এর হোমিও ঔষধ:
স্ক্যাবিস (Scabies) এর জন্য কিছু প্রচলিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রয়েছে, তবে মনে রাখা জরুরি—সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে হলে রোগীর লক্ষণ, শরীরের প্রকৃতি, মানসিক অবস্থা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। নিচে কিছু সাধারণভাবে ব্যবহৃত হোমিও ঔষধ দেওয়া হলো:
স্ক্যাবিসের জন্য ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ:
Sulphur: এটি স্ক্যাবিসের সবচেয়ে পরিচিত ওষুধ। রাতের বেলায় তীব্র চুলকানি, ত্বকে গরম ভাব, ও গন্ধযুক্ত ঘাম থাকলে কার্যকর। দীর্ঘস্থায়ী বা পুরনো স্ক্যাবিসের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
Psorinum: রোগ বারবার ফিরে আসে এমন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় চুলকানি বাড়ে। শরীর অপরিষ্কার দেখায়, তেলতেলে ও দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়।
Graphites: ত্বকে গুটি হয়ে গেলে ও তাতে চুলকানির সাথে আঠালো তরল বের হলে ব্যবহৃত হয়। মুখ, চোখের চারপাশ বা যৌনাঙ্গে র্যাশ থাকলে উপযোগী।
Hepar Sulph: সংক্রমণ বা ঘা হয়ে গেলে, তীব্র ব্যথা ও পুঁজ তৈরি হলে ভালো কাজ করে।
Merc Sol (Mercurius solubilis): ঘামে গন্ধ, রাতে বেশি ঘাম ও চুলকানি থাকলে এটি কার্যকর। ত্বকে পুঁজযুক্ত ঘা থাকলে সাহায্য করে।
Hepar Sulphuris Calcareum: ফোঁড়া বা পুঁজযুক্ত চর্মরোগে কার্যকর। ব্যথাযুক্ত চুলকানি থাকে এবং স্পর্শে সংবেদনশীলতা বাড়ে।
Arsenicum Album: ক্ষতস্থানে জ্বালা ভাব, পোড়া পোড়া অনুভূতি, এবং রাতের দিকে বেশি খারাপ হলে এই ওষুধ উপকারী।
Mezereum: ফোসকা ও পুঁজযুক্ত র্যাশ হয় এবং তা থেকে আঠালো তরল বের হয়। মাথায় স্ক্যাল্পে বা শরীরে ফুসকুড়ি থাকলে কার্যকর হতে পারে।
বি.দ্র: কিছু
- পটেন্সি (শক্তি): সাধারণত 6C, 30C অথবা 200C ব্যবহৃত হয়।
- মাত্রা: দিনে ১-২ বার (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
- রোগের তীব্রতা ও ব্যক্তির গঠন অনুযায়ী মাত্রা ও ওষুধ পরিবর্তন করা উচিত।
সাধারণত 6C, 30C বা 200C পটেন্সি ব্যবহার করা হয়, তবে এটি একান্তভাবে হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত।
(নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো, কারণ ভুল ওষুধ রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে।)
কিছু পরামর্শ:
হোমিও চিকিৎসা ব্যক্তিভিত্তিক, তাই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
একই ওষুধ সবার ক্ষেত্রে কার্যকর না-ও হতে পারে।