শ্বেতী Vitiligo বা ত্বকের সাদা দাগ কেন হয় এবং প্রতিকার কি?
শ্বেতী (Vitiligo) একটি চর্মরোগ যেখানে ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে মেলানিন নামক রঞ্জকের উৎপাদন কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেই অংশগুলো সাদা হয়ে যায়। এটি সংক্রামক নয় এবং কারো সংস্পর্শে আসলে ছড়ায় না। শ্বেতী শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে, বিশেষ করে মুখ, হাত, পা, ঠোঁট, চোখের চারপাশ, যৌনাঙ্গ, নাভি, এবং বগলে বেশি দেখা যায়।
SKIN DISCOLORATION
white spots Alum. am-c. ant-t. Ars. ars-s-f. Aur. Berb. Calc. calc-f. calc-sil. carb-an. coca graph. ign. Merc. Mica Nat-c. nat-m. nit-ac. ozone Phos. sel. Sep. Sil. Sulph. zinc.
merc. sep.
শ্বেতী এবং কুষ্ঠ রোগের মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Vitiligo and Leprosy )
1. ত্বকের ক্ষত এবং অনুভূতি
শ্বেতী: আক্রান্ত স্থানে অনুভূতি স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো ব্যথা বা চুলকানি হয় না।
কুষ্ঠ: আক্রান্ত স্থানে অনুভূতি কমে যায় বা পুরোপুরি চলে যায়।
2. রোগের প্রকৃতি
শ্বেতী: এটি একটি অটোইমিউন সমস্যা, সংক্রামক নয়।
কুষ্ঠ: এটি ব্যাকটেরিয়া (Mycobacterium leprae) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ।
3. চামড়ার পরিবর্তন
শ্বেতী: শুধুমাত্র ত্বকের রং পরিবর্তন হয়, কিন্তু ত্বক মসৃণ থাকে।
কুষ্ঠ: ত্বক মোটা ও শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং সেখানে ফোলা ও ঘা হতে পারে।
4. ছড়িয়ে পড়ার ধরন
শ্বেতী: এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়াতে পারে, তবে এটি ধীরে ধীরে ঘটে।
কুষ্ঠ: এটি সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে ছড়াতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে।
5. চিকিৎসা ও নিরাময়
শ্বেতী: এটি সংক্রামক নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
কুষ্ঠ: সঠিক চিকিৎসা না করলে স্নায়ু ও ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
শ্বেতী রোগের বাংলা নাম ও অন্যান্য নাম
শ্বেতী রোগের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Vitiligo)
1. সেগমেন্টাল শ্বেতী (Segmental Vitiligo)
এটি শরীরের একপাশে বা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে।
সাধারণত ছোট বয়সে শুরু হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
2. নন সেগমেন্টাল শ্বেতী (Non-Segmental Vitiligo)
শরীরের দুই পাশে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
হাত, পা, মুখ, ঠোঁট, চোখের চারপাশ, নাভি, যৌনাঙ্গ ইত্যাদিতে বেশি দেখা যায়।
3. সার্বজনীন শ্বেতী (Universal Vitiligo)
শরীরের বেশিরভাগ অংশে বা পুরো শরীরে সাদা দাগ ছড়িয়ে পড়ে।
এটি অত্যন্ত বিরল, তবে সবচেয়ে গুরুতর ধরন।
4. ফোকাল শ্বেতী (Focal Vitiligo)
শরীরের একটি নির্দিষ্ট ছোট অংশে সীমিত থাকে।
এটি দীর্ঘ সময় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
5. অ্যাক্রোফেসিয়াল শ্বেতী (Acrofacial Vitiligo)
হাতে, পায়ে, মুখে ও ঠোঁটে সাদা দাগ দেখা যায়।
ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
শ্বেতী রোগের লক্ষণ (Signs of Vitiligo )
1. ত্বকে সাদা বা ফ্যাকাশে দাগ দেখা যায়।
2. দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং একাধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
3. ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে চুল সাদা হয়ে যেতে পারে।
4. সাধারণত কোনো ব্যথা বা চুলকানি থাকে না, তবে কিছু ক্ষেত্রে জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
5. সরাসরি সূর্যের আলোতে গেলে ত্বক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
শ্বেতী রোগের উপসর্গ
1. প্রাথমিক পর্যায়ে:
ছোট গোলাকার বা অনিয়মিত সাদা দাগ দেখা যায়।
দাগের আশেপাশের ত্বক স্বাভাবিক রঙের থাকে।
2. উন্নত পর্যায়ে:
ধীরে ধীরে দাগ বড় হতে থাকে।
শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
চুল ও ভ্রু ধূসর বা সাদা হয়ে যেতে পারে।
3. চূড়ান্ত পর্যায়ে:
শরীরের অনেক অংশ সাদা হয়ে যায়।
সূর্যের আলোতে গেলে লালচে বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।
শ্বেতী রোগের কারন
1. অটোইমিউন সমস্যা:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে আক্রমণ করে।
2. জেনেটিক কারণ:
পরিবারে কারো শ্বেতী থাকলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
3. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শ্বেতী রোগের প্রবণতা বাড়াতে পারে।
4. হরমোনের পরিবর্তন:
থাইরয়েড সমস্যা থাকলে শ্বেতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
6. রাসায়নিক সংস্পর্শ:
দীর্ঘ সময় ধরে রাসায়নিক পণ্য, ডিটারজেন্ট বা রঞ্জক পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের রঞ্জক কোষ নষ্ট হতে পারে।
শ্বেতী রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
1. Arsenicum Album (Ars):
শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া সাদা দাগের জন্য কার্যকর।
রোগীর মধ্যে উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা থাকলে ভালো কাজ করে।
2. Arsenicum Sulphuratum Flavum (Ars Sulph Flav):
মুখ, হাত, পা এবং যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়া সাদা দাগের জন্য ভালো।
রোগী শুষ্ক ত্বক এবং চুলকানির সমস্যায় ভুগলে কার্যকর।
3. Natrum Muriaticum (Nat Mur):
সূর্যের সংস্পর্শে আসার পর শ্বেতী দাগ আরও দৃশ্যমান হলে।
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ভালো।
4. Mica:
শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট সাদা দাগের জন্য কার্যকর।
শুষ্ক ও ফাটা ত্বক থাকলে ভালো কাজ করে।
5. Phosphorus (Phos):
পাতলা ত্বকের রোগীদের জন্য ভালো।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া শ্বেতী দাগের ক্ষেত্রে কার্যকর।
6. Sepia:
মহিলাদের হরমোনজনিত কারণে হওয়া শ্বেতীর জন্য ভালো।
গর্ভাবস্থার পর বা মেনোপজের সময় শ্বেতী হলে কার্যকর।
7. Silicea (Sil):
দীর্ঘস্থায়ী শ্বেতীর চিকিৎসায় কার্যকর।
শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি থাকলে ভালো কাজ করে।
8. Sulphur:
ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও সাদা দাগ থাকলে কার্যকর।
সংক্রমণের কারণে হওয়া শ্বেতীর চিকিৎসায় ভালো।
9. Thuja:
ভাইরাল সংক্রমণ বা টিকা নেওয়ার পরে হওয়া শ্বেতীর জন্য কার্যকর।
গর্ভাবস্থায় বা জন্মের পর শিশুদের শ্বেতীর জন্য ।