Breaking News

ভাবুক ছেলে

এভাবে আর কতদিন লাবিব? আমি আর পারছিনা।
“কি করলাম আমি তারিন?
“কি করলা মানে? আমার কথার কোন গুরুত্বই নাই তোমার কাছে।
“কি বলো এসব। অবশ্যই অনেক গুরুত্ব আছে।
“তাহলে আমি গতকাল তোমাকে বলেছিলাম চুলগুলো কাটতে, কাটোনি কেন?
“আসলে কাজে অনেক বিজি ছিলাম তাই আর কাটা হয়নি।
“ভালো।
“সরি তারিন।
“চুপ করো। তুমি তাকাওতো একবার নিজের দিকে?? কেমন দেখা যায় তোমাকে? তোমার জন্য কোন বন্ধুদের সামনেও যেতে পারিনা লজ্জায়। সবাই দেখলেই বলে যে ঐ দেখ হাবলুটার জিএফ আসছে।
” ( লাবিব মাথা নিচু করে রাখে )
“তোমার সাথে আমি আর পারছিনা লাবিব। আমারও একটা সম্মান আছে। ভেবেছিলাম ভালোবাসার পর তুমি পরিবর্তন হবে কিন্তু তোমার মাঝে এক ফোটাও পরিবর্তন আসেনি।
“সরি।
“নাহ। আমি আর পারছিনা। তোমার সাথে সবকিছু এখানেই শেষ করলাম।
এই বলেই তারিন উঠে চলে যায়।
“আর লাবিব অশ্রু ভেজা চোখে তারিনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ভার্সিটিতেই। লাবিব গ্রাম থেকে এসে এখানে ভর্তি হয়েছিল। ও দেখতে একদম হাবলু টাইপের। চোখে পড়ে মোটা ফ্রেমের একটা চশমা। চোলগুলোও তেমন পরিপাটি করে রাখেনা। বাবা মা কেউ নেই। এলাকাবসি সবাই মিলে ওর পড়ার খরছ চালায়। ঢাকায় পরিচিত কেউ না থাকায় তাকে উঠতে হয় একজন দুসম্পর্কের মামার বাসায়। যার ফলশ্রুতিতে তাকে প্রতিনিয়ত তার মামির বিভিন্ন রকম কথা শুনতে হতো। কিন্তু আবির চুপ করে সবকিছু সহ্য করতো। ভাবতো একজন মা বাবা হীন সন্তানের এটাই প্রাপ্য।
আর তারিন ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় থাকে। অনেক ধনি পরিবারের মেয়ে সে। দেখতেও অনেক কিউট। আবিরের মতো সে হাবলু টাইপের না। অনেক আধুনিক মেয়ে সে। পড়ালেখায় তেমন ভালো না হলেও বন্ধুদের আড্ডায় সবার আগেই পাওয়া যায় ওকে। সারাদিন ওদের সাথে হৈ হুল্লোড় করে বেড়ানোই ওর কাজ।
লাবিব যতক্ষন ভার্সিটিতে থাকতো একা একাই কাটাতো। ক্লাশের সবাই যখন আড্ডা দিচ্ছে তখন দেখা যেত লাবিব একটা কোনে বই নিয়ে বসে আছে। একদম ই চুপচাপ থাকতো সে। আর তখন ক্লাশের সবাও ওকে নিয়ে মজা করতো। বলতো যে ঐ দেখ হাবলুটা আসছে। তবে এই কথাগুলো তারিনের খারাপ লাগতো। এমন কথা শুনে তারিনের মনে একটু মায়া জন্ম নেয় ওর জন্য। তারিন ভাবে ওকে ভালোবেসে তারপর সবকিছু পরিবর্তন করে দিবে। অন্য আট দশটা ছেলের মতো লাবিবও সবার সাথে কথা বলবে। আড্ডা দিবে।
তাই একদিন তারিন লাবিবকে প্রপোস করে। লাবিব তখন এমনভাবে হা করেছিল, দেখে মনে হয়েছিল অনায়াসেই ৩-৪টা কলা ওর মুখে পুড়ে দেওয়া যাবে। তাকে দেখে মনে হয়েছিল ও মনেহয় কোন ভিনগ্রহের প্রাণীর সামনে দাড়িয়ে আছে। সেদিন লাবিব তারিনকে কিছু না বলেই চলে আসে।
কিন্তু তারিন নাছোড়বান্দা। ও লাবিবের পিছনে লেগেই থাকে। ভার্সিটিতে যখন লাবিব একা বসে থাকে তখনই তারিন গিয়ে ওর পাশে বসে। ওর হাতটা ধরতে চায়। চশমাটাও খুলে দিতে চায়। কিন্তু লাবিব দেয়না। লাবিব বোকা মার্কা একটা লুক নিয়ে বলে যে- চশমা ছাড়া আমি কিছুই দেখিনা।
এমনভাবেই সবসময় তারিন লাবিবের পিছনে থাকতো। যার ফলে একদিন লাবিব ঠিকই রাজি হয়েছিল। তবে লাবিব তার পরিবারের কথা লুকিয়ে রেখেছিল তারিনের কাছে।
লাবিব হ্যা বলার পরেই ওদের সম্পর্ক শুরু হয়। আর তারিনও তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী লাবিবকে পরিপাটি করার দিকে মন দেয়। সবসময় লাবিবকে শাষনের মাঝে রাখতো। এটা করবানা, ওটা করবানা, এটা পড়বানা, এটা খাবেনা ইত্যাদি। লাবিবও শুনতো। কিন্তু যখন লাবিবের চাল-চলনে পরিবর্তন আনতে বলে তখন লাবিব একটু পিছু নেমে যায়। কারন ওরতো সম্ভব না অন্য আট দশটা ছেলের মতো চলা। ওর দ্বারা সম্ভব না ক্লাশের সবচেয়ে স্টাইলিশ ছেলেটার সাথে তাল মিলিয়ে চলা। কারন লাবিব কঠিন বাস্তবতার স্বিকার।
তারিন লাবিবের সেই কথা জানতোনা তাই সবসময় ওকে এসব কথা বলতো। প্লিজ নিজের মাঝে একটু পরিবর্তন আনো। এতো বোকা টাইপের কেউ হয়?? তোমার কি বিবেক নেই?? ক্লাশে বাকি ছেলেদের দিকে তাকাও একবার? ওরা কিভাবে চলে আর তুমি কিভাবে চলো?
লাবিব তখন মাথা নিচু করে রাখে।
সেদিন তারিন লাবিবকে বলে যে শুন আজকে বিকেলে আমার এক বান্ধবীর বিয়েতে যাবো। একটু ভালো করে রেডি হয়ে আসো। কিন্তু আবির ঠিক আগের মতোই এসেছিল। কি করবে ও? দুইটা শার্ট আর একটা প্যান্ট ছাড়া যে ওর কিছুই নেই। প্রতিবার যেই শার্টটা পড়ে আসে এটাই আজকে পড়ে আসে। সাথে আছে একজন আদর্শ বোকা মানুষের সকল উপাদানগুলো। তারিন তখন অনেক রাগি চোখে লাবিবের দিকে তাকায়। পরে বাধ্য হয়েই ওকে নিয়ে যায়।
বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তারিন তার পুরনো বান্ধবীদের সাথে দেখা করে। লাবিবকেও পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু লাবিবকে দেখেই সবাই অন্য চোখে ওর দিকে তাকায়। এখানে যারা এসেছে সবাই উচ্চ পরিবারের। কিন্তু লাবিবকে দেখেই মনে হচ্ছে ও কতটা সাধারন। ওর পায়ে আছে ১০০টাকা দামের অতি সাধারন জুতা। ওদের চাহনির উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আবির একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
এদিকে তারিনের একটা ফ্রেন্ড বলে উঠে- তারিন তোর মতো একটা মেয়ে এমন একটা ক্ষ্যাতের সাথে প্রেম করবি এটা ভাবতেও পারিনি। এইটা কোন ছেলে হলো? ওর দিকে তাকাতো একবার। সাথে সাথে বাকিরাও ওর সাথে তাল মিলায়। আর তারিন লজ্জায় একবারে মাথা নিচু করে ফেলে। ও তার বন্ধুদের সামনে থেকে চলে আসে।
লাবিবও সব কথা শুনেছিল। তবে সে চুপ করে ছিল। কারন ও জানতো এমন কিছুই হবে। এটা আর নতুন কিছু না। এমন কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। হঠাৎই তারিন ওকে পিছন থেকে ডাক দেয়। তারপর ওকে নিয়ে ওরা বিয়ে বাড়ি থেকে চলে আসে। আসার সময় তারিন কান্না করছিল খুব। লাবিবও বুঝতে পেরেছিল সেটা কিন্তু ও কি করবে বুঝতেছিলনা। যাওয়ার সময় তারিন খুব রেগে গিয়ে বলেছিল- যদি কালকে সে তার চুলগুলো না কাটে আর শার্টটা পরিবর্তন করে না আসে তাহলে অন্যকিছু হয়ে যাবে।
লাবিব তখন বলতে চায় ওর কথাগুলো, কিন্তু সেটা না শুনেই দৌড়ে চলে যায় তারিন। লাবিব একদম চুপ হয়ে যায় তখন। খুব কষ্টও হচ্ছে ওর। ওর জন্য আজকে তারিনকে এতটা অপমানিত হতে হলো। লাবিব আস্তেআস্তে বাসার দিকে পা বাড়ায়। আসার সময় ভেবেছিল ওর মামার কাছ থেকে কিছু টাকা চেয়ে নিবে। যাতে করে নতুন একটা শার্ট কিনা আর চুলগুলো কাটা যায়। কিন্তু যখনি ও বাসায় আসলো তখনি দেখতে পেল বাসায় তার মামা মামির মাঝে প্রচন্ড ঝগরা হচ্ছে।
আর ঝগরার মূল কারনটাই হলো লাবিব। ঝগরার এক পর্যায়ে তার মামি বলে উঠে- কি পেয়েছ তুমি? কোথাকার কোন একটা ছেলেকে এনে বাসায় তুলেছ। সারা বছর ঘারে পড়ে আছে। একটু কাজ করলেইতো পারে। এটাতো আর কোন সরকারি হোটেল না।
তখন তারা মামা বলে আস্তে বলো লাবিব শুনবে। কথাটা শুনামাত্র তার মামির আওয়াজ যেন আরো বেড়ে গেল। স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিল লাবিবকে কথা গুলো শুনানোর জন্যই এভাবে বলছে। আবার বলে উঠলো- কারো যদি লজ্জা থাকতো তাহলে সে এভাবে অন্যের ঘারে বসে খেতনা। কতদিন একটা মানুষকে খাওয়ানো যায়। আর খাওয়ার সময়তো একটুও কম খায়না। এটা ভাবেনা যে এখানে দয়ার খানা খাচ্ছে যে।
লাবিব তার মামির এই সবগুলো কথাই শুনে। কিন্তু জবাব দেওয়ার মতো শক্তি তার নেই। তাই চোখের অশ্রু ফেলেই তার সেই কথার জবাব দিলো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে উঠে লাবিব। কেন আজকে সে এমন অবস্থার সম্মুখীন!! তারওতো অনেক সুন্দর একটা পরিবার ছিল। কতো সুখের ছিল তার পরিবারটা। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল লাবিব। অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিল তারা বাবা। কিন্তু আচমকাই একটা দূর্ঘটনায় তার বাবা মারা যায়। যার ফলে তার মা একদম ভেঙে পড়ে। স্বামী হারানোর ব্যাথা সইতে না পেরে ২মাসের মাথায় আবার তার মা ও চলে যায় না ফেরার দেশে। লাবিব হয়ে যায় এতিম। লাবিব তখন ছোট্ট ছিল তাই সেই সুযোগে তার চাচা তাদের সব সম্পত্তি নিয়ে যায়। লাবিব হয়ে যায় একদম নিঃস্ব। তারপর থেকেই এলাকাবসীরা ওর দায়িত্ব নেয়। যার ফলে ও আজ এতটুকু আসতে পেরেছে।
লাবিব সেদিন আর তার মামার কাছে টাকা চাইতে পারেনি। যার ফলে আর কিছু কিনাও হয়নি। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সে। পরদিন সকালে পকেটের দশ টাকা দিয়ে গিয়ে বাইরে নাস্তা করে নেয়। দুপুরটা না খেয়েই কাটিয়ে দেয়। সে যে না খেয়ে আছে এটা তার মামি ঠিকই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু একবারের জন্যও ওকে খেতে বলেনি। বিকেলে তারিন ফোন দেয় ওকে। কোথায় আসবে জিজ্ঞেস করতেই বলে যে বটমূলে আসতে। সবসময়ই এখানে দেখা করে তারা।
লাবিব অনেকটা ভয়ে ভয়েই বাসা থেকে বের হয়। সে জানেনা তারিন কি করবে তার সাথে। যখন সে দেখবে তার গায়ে সেই পুরনো শার্টটাই আছে, যখন দেখবে পায়ে সেই আগের জুতা ই আছে, যখন দেখবে মাথার চোলগুলো আগের মতোই এলোমেলো তখন যে কি করবে তার সাথে। এসব ভাবতে ভাবতেই লাবিব কখন যে বটমূলে চলে আসে বলতেই পারেনা।
তারিনের সামনে যেতেই তারিন চোখদুটো লাল করে ফেলে। ওর পুরো মুখটাই লাল হয়ে যায়। যেটা দেখে লাবিব বুঝতে পারে যে তারিন প্রচন্ড রেগে গেছে। আর তখনই তারিন প্রথমের সেই কথাগুলো বলে…
“এভাবে আর কতদিন লাবিব? আমি আর পারছিনা।
“কি করলাম আমি তারিন?
“কি করলা মানে? আমার কথার কোন গুরুত্বই নাই তোমার কাছে।
“কি বলো এসব। অবশ্যই অনেক গুরুত্ব আছে।
“তাহলে আমি গতকাল তোমাকে বলেছিলাম চুলগুলো কাটতে, কাটোনি কেন?
“আসলে কাজে অনেক বিজি ছিলাম তাই আর কাটা হয়নি।
“ভালো।
“সরি তারিন।
“চুপ করো। তুমি তাকাওতো একবার নিজের দিকে?? কেমন দেখা যায় তোমাকে? তোমার জন্য কোন বন্ধুদের সামনেও যেতে পারিনা লজ্জায়। সবাই দেখলেই বলে যে ঐ দেখ হাবলুটার জিএফ আসছে।
” ( লাবিব মাথা নিচু করে রাখে )
“তোমার সাথে আমি আর পারছিনা লাবিব। আমারও একটা সম্মান আছে। ভেবেছিলাম ভালোবাসার পর তুমি পরিবর্তন হবে কিন্তু তোমার মাঝে এক ফোটাও পরিবর্তন আসেনি।
“সরি।
“নাহ। আমি আর পারছিনা। তোমার সাথে সবকিছু এখানেই শেষ করলাম।
এই বলেই তারিন উঠে চলে যায়।
“আর লাবিব অশ্রু ভেজা চোখে তারিনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
এই মুহুর্তে লাবিবের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। গাল বেয়ে বেয়ে চোখের পানি পড়ছে। লাবিব জানে তারিন তার সম্পর্কে কিছুই জানেনা। তাই এমন করেছে। কিন্তু সে কি করবে। তারতো কিছুই করার নেই। লাবিবের নিঃশ্বাসটা অনেক ভারি হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে ওর নিঃশ্বাস এখনই বন্ধ হয়ে যাবে। লাবিব আস্তে আস্তে উঠে দাড়ায়। এই মুহুর্তে ওর বাবা মাকে খুব বেশি মনে পড়ছে। তাই লাবিব সোজা চলে যায় নদির পাড়ে।
সেখানে গিয়ে বসে চোখ থেকে চশমাটা খুলে নেয় সে। তারপর মাথাটা নিচু করেই হু হু করে কেদে উঠে। ভাবতে থাকে, যদি তার বাবা মা থাকতো তবে কোনদিন তাকে এমন অবস্থায় আসতে হতো না। কারো দয়ার পাত্রও হয়ে থাকতে হতো না। এতটা অসহায়ও থাকতে হতো না। এসব কথা মনে হতেই লাবিব আবার ফুপিয়ে উঠে। একটুপর চোখের পানিটা মুছে লাবিব আকাশের দিকে তাকায়। আর চিৎকার করে বলতে থাকে…
আল্লাহ কেন তুমি এমন করলে আমার সাথে। কি দোষ করেছিলাম আমি। কেন এতো কষ্ট দাও আমাকে। কেন আমার মা বাবাকে কেড়ে নিলে আমার কাছ থেকে। কেন তাদের আদর, ভালোবাসা আমাকে পেতে দিলেনা।
কথাগুলো বলে সে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কিছুক্ষন পর লাবিব খেয়াল করে যে অনেক রাত হয়ে গেছে। সাথে প্রচন্ড ক্ষুদা অনুভব করে সে। লাবিব আবার ক্ষুদা একদম সহ্য করতে পারেনা। তাই বাসার দিকে এগিয়ে চলে। ও জানেনা বাসায় গেলে কি হবে ওর সাথে। লাবিব সিদ্ধান্ত নেয় যতকিছুই বলুক কান পেতে সেগুলো শুনবে আর খেয়ে নিবে।
বাসায় ওর মামি বসে বসে টিভি দেখছিল। কিন্তু লাবিব এসে কলিংবেল বাজাতেই উনি প্রচন্ড বিরক্ত হোন। প্রথমে ভেবেছিলেন উনার স্বামী এসেছে। কিন্তু দরজা খুলে যখন দেখেন লাবিব দাড়িয়ে আছে তখন উনার রক্ত গরম হয়ে যায়। প্রচন্ড রেগে কথা বলে ওর সাথে।
থাকস কই?? এতো রাতে কেউ বাসায় আসে?? এটা কি নিজের বাসা পাইছোস?? থাকোস অন্যের বাসায় লজ্জা করেনা?? আবার এতো রাত করে বাসায় ফেরোস।
লাবিব চুপ করেই কথাগুলো শুনতে থাকে। ওর কিছুই বলার নেই। রুমে এসে লাবিব কিছুক্ষন শুয়ে থাকে। তারপর সে তার ক্ষুদার জ্বালায় তার মামির সামনে যায়। উনার সামনে গিয়ে দাড়াতেই উনি রাগি চোখে লাবিবের দিকে তাকায়। লাবিব একটু ভয় পেলেও বাধ্য হয়ে বলে যে..
“মামি খাওয়ার মতো কিছু আছে? খুব ক্ষুদা লেগে আছে।
“এই পাইছস কি তুই? তোর খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে তোর বাবা এখানে কোন হোটেল দিয়ে রাখছে। বিনা পয়সায়তো ১বছর পার করলি। আর কতদিন খাবি অন্যের ঘাড়ে??
“মামি আমি একটা চাকরি পাই। তারপর আপনাদের সব টাকা শোধ করে দেব। প্লীজ এখন আমাকে কিছু খেতে দিন। খুব ক্ষুদা লেগে আছে।
“আমার ঠেকা পড়েনাই তোকে খাওয়ানোর। আচ্ছা তোর কি কোন বিবেক নাই?? মানুষেরতো একটু লজ্জাও থাকে, তোর কি সেটাও নেই?
“লাবিব মাথা নিচু করে রাখে।
একটুপর ওর মামি উঠে গিয়ে ওকে কতগুলো শুকনা মুড়ি এনে দেয়। আর বলে, এই নে দয়ার খানা। তোর কাছে হাতজোড় করি বলি দুর হো তুই। এতো আপদ ভালো লাগেনা আর। উফফফ আল্লাহ বাচাও…
ততক্ষণে লাবিবের চোখ থেকে অশ্রু পড়া শুরু করেছে। খাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে গেছে ওর। লাবিব না খেয়েই রুমে চলে আসে। আর প্রচন্ড কান্না করে। তবে সেটার কোন শব্দ নেই।
লাবিব সিদ্ধান্ত নেয় যে- আর থাকবেনা সে এখানে। সে জানেও না সে কোথায় যাবে। তবে এটা নিয়ে সে ভাবেও না।
লাবিব খাতা-কলম নিয়ে বসে যায়। উদ্দেশ্য তার মা বাবাকে একটা চিঠি লেখা। প্রতিবারই যখন লাবিব বেশি কষ্ট পায় তখন সে এই কাজ করে।
লাবিব চিঠি লিখা শুরু করে…
আম্মু, আব্বু?
কেমন আছো তোমরা? নিশ্চয়ই অনেক ভালো আছো তাইনা?? জানো আমিও অনেক ভালো আছি। প্রতিদিন সকালে মামি নামক পাষন্ড মানুষটা আমাকে অনেক আদর করে কতগুলা বকা দেয়। প্রতিবার খাওয়ার সময় কত সুন্দর করে আমাকে বিভিন্ন কথা বলে।
আচ্ছা তোমরা কি সেটা শুননা?? দেখোনা?? নাকি দেখেও না দেখার ভান করো??
কষ্ট হয়না তোমাদের সেই ছোট্ট লাবিবটার জন্য?
জানো আজকে প্রায় ১দিন না খেয়ে আছি। তোমরাতো জানো আমি ক্ষুদা একদম ই সহ্য করতে পারিনা। কিন্তু দেখ আমি ঠিকই এখন পারছি। আমিনা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছি। এখন আর কাদিনা, কাউকে জড়িয়েও ধরিনা। শুধু চুপচাপ থাকি আর ভাবি, হয়তো তোমরা থাকলে আমার সাথে কখনও এমন হতো না।
কোথায় হারিয়ে গেলে তোমরা?
অনেক ভালোবাসি তোমাদেরকে, সত্যি অনেক ভালোবাসি।
ইতি
তোমাদের আদরের সন্তান।
চিঠিটা নিয়েই কান্না করতে করতে লাবিব ছাদে চলে যায়। তারপর কিছুক্ষন আকাশের দিকে চেয়ে তাকে। তারপর বলে উঠে- ভালো থেক আব্বু আম্মু। এই বলেই লাবিব চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়।
তারপর চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে চলে আসে।
এসেই লাবিব সবকিছু গুছিয়ে নেয়। খাতা কলমটা এখনও ব্যাগে নেওয়া হয়নি। ওটার দিকে চোখ পড়তেই তারিনের কথা মনে পড়ে যায়। কতো ভালোবাসতো তাকে। বাচার স্বপ্নও দেখেছিল তারিনকে নিয়ে। কিন্তু সেও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু লাবিব চায় তারিন সত্যটা জানুক। তাই সে তারিনের জন্যও একটা চিঠি লেখা শুরু করে।
তারিন?
হয়তো ভালো আছো। ভালো তো থাকবেই। তোমার জীবন থেকে একটা বাধা দুর হয়েছে যে। আসলে আমি জানতাম না তুমি কি দেখে আমাকে ভালোবেসে ছিলে। তাইতো তোমার কথায় রাজি হচ্ছিলাম না। কিন্তু যখন তুমি বার বার এসে আমাকে বলতে লাগলে তখন কেন যেন আমার মনে হলো তুমি সত্যিই ভালোবাসো আমাকে। তাই হ্য বলে দিয়েছিলাম।
কিন্তু আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারি আমার চলাফেরা তোমার চাহিদা মতো হচ্ছেনা। তোমার মনের মতো আমি হতে পারছিনা। পারবো কিভাবে? তুমি চাইতে আমি অন্য সবার মতো থাকি। সবাই যতটা স্মার্ট হয়ে থাকে আমিও সেটা করি। কিন্তু একটা কি জানো আমার দ্বারা সেটা সম্ভব ছিলনা।
কারন…
সেই ছোটবেলাতেই আমি আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। তারপর এলাকার মানুষদের সাহায্যে এতটুকু আসতে পেরেছি। এখানে থাকতাম একটা মামার বাসায়। যার বিনিময়ে আমাকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হতো। জানো শার্ট কিনার মতো আমার সেই অবস্থা ছিলনা। না হয়তো আমি অবশ্যই কিনতাম। কে না চায় তার প্রিয় মানুষের মনের মতো হতে, বলো?
আমি চলে যাচ্ছি দুরে। অনেক দুরে। জানিনা কোথায় যাবো। কিন্তু কথা দিচ্ছি আর তোমার সামনে আসবোনা।
ভালো থেক।
ইতি
লাবিব।
এটা নিয়েই লাবিব বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আসার সময় ওর মামিকে বলে আসে যে- যদি কিছু করে থাকে তাহলে ক্ষমা করে দিতে। লাবিব বের হয়ে যাওয়ার পর তার মামির মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠেছিল।
লাবিব চিঠিটা নিয়ে সোজা তারিনদের বাসায় চলে আসে। দারোয়ানকে চিঠিটা তারিনকে দিয়ে দেওয়ার জন্য বলে। তারপরেই লাবিব সামনের দিকে পা বাড়ায়া। লাবিব জানেনা সে কোথায় যাচ্ছে।
লেখকও সেখানে থমকে দাড়ায়। দুচোখ দিয়ে শুধু দেখতে থাকে, লাবিব এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখে, গন্তব্যহীন পথে তার সাথী হিসেবে আছে হাজারো অব্যক্ত কথা আর বুক চিড়ে দেওয়ার মতো কষ্ট। একটাসময় লাবিব মিলিয়ে যায় রাতের অন্ধাকরে। আর দেখা যায়নি তাকে। চশমা পড়া বোকা ছেলেটা ফিরেনি আর।
দারোয়ান তারিনকে ঠিকই চিঠিটা দিয়েছিল। তারিন চিঠিটা পড়ামাত্রই চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে কান্না করতে করতে বাসা থেকে বের হয়েছিল লাবিবকে খুজতে। কিন্তু ততক্ষনে তারিন বড্ড দেরি করে ফেলেছে। খুজে পায়নি কোথায় চশমা পরা বোকা ছেলেটাকে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com