Breaking News

“গল্পঃ অবনীর ভালোবাসা”

_তুই কিন্তু আর মোটেও সিগারেট ধরাবি না (অবনী)
–গাজ্ঞা টানবো গাজ্ঞা তোর কি?(আমি)
এই বলেই সিগারেট ধরালাম । অবনী রেগে লাল হয়ে গেছে । আমার কাধের ২০—২৫ টার কিল ঘুষি দিয়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে । আমি এমন ভাব করলাম যেন কোন অনুভূতিই নেই । ওহ্ আমার পরিচয় টা তোহ্ দেওয়াই হয় নি । আমি আবির হাসান। আর অবনী আমার প্রিয়বান্ধবী । যাকে ইংলিশে বেস্টফ্রেন্ড বলে । বান্ধবী বলতে ছোটবেলা থেকেই ও আর আমি একই স্কুল একই বিভাগ নিয়ে পড়েছি । এটা যখনকার ঘটনা তখন আমি আর অবনী রাজশাহী সিটি কলেজে ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ছিলাম। আমার আর অবনীর মধ্যে অসম্ভব মিল ছিল । পরিবারের শদস্যদের মধ্যে অবণী কে ধরা হতো । আমার মতে আমাকে অবনী ছাড়া কেউ ঠিক মতো বুঝতো না । যাই হোক তখন মতো বাসায় ফিরলাম । বাসায় ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কাধে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম । অবনীর দেওয়া ২০–২৫ টা মার ও যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেদিন ই বুঝতে পেরেছিলাম । গা পুড়ে জ্বর আসলো । খাট থেকে মোটেই উঠতে পারছিলাম না । পরের তিনদিন কলেজে যাই নি । অবনী ফোন দিলো,
–কিরে কলেজে আসিস না কেন?নিজের ভবিষ্যৎ ডুবাবি আমাকেও মারবি (অবনী)
–তোর ভবিষ্যত ডুববে মানে কি? আর আমার তোহ্ জ্বর । তুই যে মাইর দিসস তাতে আর কলেজে মনে হয় যাওয়া হবে না (আমি)
–কি বলিস?(অবনী)
–হ । সব তোর দোষ(আমি)
বলতে বলতেই ফোন টা কেটে গেল । কুত্তির মনে হয় টাকা শেষ । এদিকে আমারো টাকা নেই । চোখ বন্ধ করে আলতো করে ঘুমিয়েছিলাম । অবনীর ডাকে ঘুম ভাঙলো । দেখি মাথার ওপর জলপট্টি দেওয়া । আমি বললাম
–মাথার ওপর এটা কি দিসিস? সরা ঠান্ডা লাগতেছে (আমি)
–এই একদম সরাবি না । এটা থাকলে আজকের মধ্যেই তোর জ্বর কমে যাবে (অবনী)
দুই ঘন্টা পর অবনী আমাকে ঘুমাতে বলে চলে গেলো । ঘুম থেকে উঠে দেখি জ্বর আর নেই । ফোনটা হাতে নিলাম । ফোনটা হাতে নিয়ে একটু অবাক হলাম। ৫০ টা মিসকল । মিসকল গুলো ছিলো অবনীর । ওকে মিসকল দিতে গিয়ে দেখলাম গ্রামীন এর সুন্দরী মেয়েটা বলতেছে “দয়া করে রিচার্জ করুন” । আমি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে রিচার্জ করে নিলাম । অবনী কে ফোন দিলাম :
–হ্যালো(আমি)
–হ্যা হ্যালো আবির । তোর জ্বরের কি অবস্থা? জ্বর কমছে ? আর কাধে তোহ্ মুভ মলম মেরে দিয়ে আসছিলাম। ওটা তোহ্ কমে যাওয়ার কথা (অবনী) (হন্তদন্ত হয়ে)
–আরে!!!!আমারে তোহ্ বলতে দিবি নাকি? জ্বর কমছে এখন মোটামুটি ঠিক আছি । এতবার কল দিসিলি কেন?(আমি)
–তোর খবর নিতে কল দিসিলাম (অবনী)
–এত্তবার । আচ্ছা বাদ দে কাল কলেজে যাচ্ছি ওকে?(আমি)
–ঠিক আছে (অবনী)
–আচ্ছা এখন রাখি (আমি)
–ওকে। নিজের যত্ন নিস(অবনী)
কথা টা বলে রেখে দিলাম । অনেকক্ষন ফেসবুকিং করার পর ও ঘুম আসতেছিলো না । তখন বাজে রাত ১২ টা । কলিংবেলটা বেজে উঠলো। এত রাত্রে কে হতে পারে?
দড়জা খুলতেই দেখি অবনী । হাতে বিশাল বার্থডে কেক । আমিতো ভুলেই গেছিলাম আজকে আমার বার্থডে । অবনী রাত ১২ টার সময় সারপ্রাইজ দিলো । পরে জানতে পারলাম এর পেছনে আমার মা ও আছে। উনার সম্মতিতেই অবনী সারপ্রাইজ দিয়ে গেল । কেক কাটা শেষে
–তোর জন্য একটা গিফ্ট আছে (অবনী)
–কি গিফ্ট?(আমি)
ও আমাকে একটা গিফ্ট প্যাক আর একটা হ্যাপি বার্থডে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো
–পরে খুলবি । এখন আমি যাই(অবনী)
আমি ওকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসলাম। বেশি দুরে বাড়ি নয় । ৫ মিনিটের রাস্তা ।বাসায় এসে গিফ্ট খোলার কথা মনেই ছিল না । পরদিন কলেজে গেলাম । সব বন্ধুদের আবদার ওদেরকে ট্রিট দিতে হবে। কিন্তু আমি আসার পর থেকে অবন্তীর মন খারাপ ।
–কিরে তোর মন খারাপ কেন? (আমি)
–কই না তোহ্ (অবন্তী)
–সবাই তোহ্ ট্রিট নিবে । চল রেস্টুরেন্ট এ(আমি)
–নাহ্ তোরা যাহ্ । আমার ভাল্লাগতেছে না(অবনী)
–না তোর যেতে হবে(আমি)
অবনীকে একপ্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলাম রেস্টুরেন্ট এ । অর্ডার দিলাম । আমার টেবিলের পাশের টেবিলে একটি সুন্দর করে মেয়ে বসে ছিল । লক্ষ্য করছিলাম মেয়েটা আমার দিকে খুব ঘন ঘন আড়চোখে তাকাচ্ছিল । অবনী পাশে বসে ছিল। ওর কাধে ধাক্কা দিয়ে বললাম
–দেখতো অবনী মেয়েটা কেমন? (আমি)
–কোন মেয়েটা?(অবনী)
–ওই যে বাম পাশের টেবিলে বসে আছে যে ২ টা মেয়ে তার ডানপাশের টা (আমি)
অবনী আমার দিকে কিছুক্ষন একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো । মনে হলো ও অবাক হয়েছে । তারপর মৃদুস্বরে উত্তর দিলো
–হুম ভাল(অবনী)
–আমার সাথে মানাবে?(আমি)
অবনী আবারো অবাক হলো । তারপর উত্তর দিলো
–হুম (অবনী)
–তাহলে প্রপোজ টা সেরে ফেলি কি বলিস?(আমি)
অবনী কোন উত্তর দিলো না । অন্য দিকে বসে থাকা আমার ফ্রেন্ডগুলো কথোপকথন গুলো শুনেছিল । ওরা বললো :
–আবির তুই যদি ওই মেয়েটার সাথে প্রেম করতে পারিস আজকের বিল টা আমার
আমি কিছুটা হতভম্ব খেলাম । বিলটা দেওয়া কোন ব্যাপার না কিন্তু মেয়েটাকে প্রপোজ করতে হবে । আমি ওকে বলে উঠে মেয়েদুটোর টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ালাম
–আমি কি একটু বসতে পারি?(আমি)
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো
–আপনার নাম কি?(আমি)
–লাবনী(মেয়েটা বললো)
–কিসে পড়েন? (আমি)
–ইন্টার ১ম বর্ষে (লাবনী)
তারপর হাটু গেড়ে হাত বাড়ি য়ে প্রপোজ করেই বসলাম :
“Will You Be The Sugar Of MY life”
ওপাশ থেকে উত্তর আসলো “Of Course”
এরপর থেকে শুরু হয়েছিল আমার সাথে লাবনীর প্রেম । কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না এই প্রেম আমার অবনী থেকে আলাদা করে দিলো কেন?সেদিন এর পর থেকে অবনী কোনদিন আমার সাথে দেখা করে নি । ওর নাম্বার টা বন্ধ ছিলো । ওর বাসায় গিয়েছিলাম ও একটিবার এর জন্যও আমার সাথে দেখা করে নি । এমনকি যখন Hsc ইক্সাম দিলাম তখন আমার পিছনের সিটে অবনীর সিট ছিল ।কিন্তু ও বোর্ডে যোগাযোগ করে আমার পেছন থেকে ওর সিট সরিয়ে নয় । এতকিছুর পর আমি ভেবেই নিয়েছিলাম ও হয়তো আর আমার সাথে থাকতে চায় না । Hsc Exam দিয়ে চলে আসলাম ঢাকায় । ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে জেনেটিক্স বিভাগে চান্স পেয়েছিলাম যেদিন, সেদিন সবাই খুশি হলেও আমি খুশি ছিলাম না কারণ অবনী ছিল না । এরপর আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ৩য় বর্ষে পড়ি,লাবনী একদিন ফোন দিয়ে বললো
–দেখো আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । ছেলে আমেরিকা থাকে । আমার পক্ষে এ রিলেশন কন্টিনিউ করা পসিবল না ।তুমি আর আমার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করবা না (লাবনী)
আমি ওকে বলে ফোনটা রেখে দিয়েছিলাম । কষ্ট পেয়েছিলাম তবে ওতটা না যতটা অবনী ছেড়ে চলে যাওয়ায় হয়েছে । এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানি থেকে পি এইচ ডি করে আসলাম । ভাল একটা জব পেয়েছিলাম । যতদিন বাসায় ফিরলাম ততদিনে আমার বাবা মা আমার জন্য পাত্রী খুজতে শুরু করেছে । সেদিন ছিলো শুক্রবার ।দুপুরবেলা নামাজ পড়ে এসে অফিসের একটা কাজ করার জন্য টেবিলের ওপর ল্যাপটপটা ওপেন করলাম । ল্যাপটপের মডেম খুজতে টেবিলের ড্রয়ার টা খুললাম । অবনীর সেই সারপ্রাইজ বার্থডে গিফ্ট টা চোখে পড়লো । গিফ্ট প্যাক টা খুললাম । সেখানে একটা ঘড়ি রাখা ছিলো । কিন্তু বুঝতেই পারি নি গিফ্ট কার্ডটা তে খুলে আমার চোখে অঝোর ধারায় পানি আসবে । কার্ডের মধ্যে লিখা ছিলো :
“আবির আজ আমি তোকে আমার মনের কথা টা বলতে চলেছি । তুই হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছিস । হ্যা আমি তোকে ভালবাসি । খুব ভালবাসি । সারাজীবন আমার পাশে থাকিস । তোকে ছাড়া আমি অসহায় অনুভব করি । তুই কি জানিস বার বার তোকে বলতে গিয়ে বলতে না পারাটা বলার আকুতি টা কে বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেক খানি। আজ আমি তোকে বলে দিলাম। যদি আমাকে কখনো একবিন্দু ভালবেসে থাকিস তাহলে কাল আমার দেওয়া ঘড়িটা পড়ে আসিস”
আমি এটা পড়ার পর কিছুক্ষনের জন্য পুরো নিস্তব্ধ হয়ে যাই । আমি একবারের জন্যও বুঝতে পারি নি অবনী আমাকে কতটা ভালবাসে । আমি আম্মুকে সব খুলে বললাম আর বললাম বিয়ে যদি করতে হয় তাহলে অবনীকে করবো আর কাওকে না । আমার মা আমাকে একটা অ্যাড্রেস দিয়ে বললো,
–এখানে অবনী থাকে । তুই যা গিয়ে আমার বৌমাকে নিয়ে আয় (মা)
আমি কিছু বললাম না । অ্যাড্রেস টা নিয়ে বের হলাম । রাজশাহীর শেষ প্রান্তের অ্যাড্রেস ছিল ওটা । অবনীর বাসায় গেলাম । ওর মা–বাবা বেড়িয়ে এলো
–বাবা আবির? কেমন আছো? (আংকেল)
–জি আংকেল ভালো । আপনারা কেমন আছেন? অবনী কেমন আছে? অবনী কোথায়?(আমি)
–অবনী কেমন যেন হয়ে গেছে । ও তোহ্ বাসায় নেই । ও পাশের বোটার্নিকাল গার্ডেনে ঘুরতে গেছে (আন্টি)
আমি বোটার্নিকাল গার্ডেন এ চলে গেলাম ।
অবনী একটা বেঞ্চে বসে আছে পাশে গিয়ে বসলাম ।
–তুই এখানে কিভাবে?(অবনী)
–তোর ভালবাসার টানে (আমি)
অবনী কিছুটা অবাক হলো । কোন উত্তর দিলো না
–ভালবাসিস না আমায়?(আমি)
–জানিনা । তবে তুই কাছে না থাকলে অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করি (অবনী)
–বিয়ে করবি আমায়?(আমি)
অবনী কোন উত্তর দিলো না । শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করলো । আমি বাধা দিলাম না কারণ আমি জানি ও কাদবে। অনেকক্ষন কাদবে । অনেক কষ্টের পর ভালবাসা কে ফিরে পেয়েছে যে । কষ্টগুলো উড়িয়ে দিতে হবে না ?

—————————
(গল্পটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন সবাই।

গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com