গল্পঃ শ্বাশুরি আম্মা | লেখক অভি
হয়েছে।
-জ্বী মা বলুন।
-শোন মা বিয়ের পরে প্রথম রাত আর সকালে একটু
লেইট হয় উঠতে। অভি কে ডেকে তুলে দাও
বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে আর সে
ঘুমাচেছ।
-আচছা ডেকে বাইরে পাঠিয়ে দিচিছ।
-অভি, অভি এই অভি উঠো মা ডাকছে।
-আরে এতো সকাল সকাল মা কেনো ডাকবে।
-বাইরে অনেক কাজ আছে সেইজন্য ডাকছে, এখন
যাও অন্যদিন বেশি করে ঘুমিয়ো।
-অভি ঘুম থেকে উঠে চলে গেলো। আজকে
আমি প্রথম আসলাম এই বাড়িতে। কাউকেই তেমন
করে চিনা নেই তবুও ভালো লাগছে আমার শ্বাশুরি
আম্মার কথা শুনে। তিনি সব সময় এসে আমার খবর নিয়ে
যাচেছ। কখন কি করছি, কখন কি করতে হবে
সেগুলো তিনি আমাকে বলে যাচেছ।
-বউমা ঘরে আছ।
-হ্যাঁ মা আছি, ভেতরে আসুন।
-এই নাও মা সকালের খাবার,খেয়ে নাও।
-অভি খাবে না মা।
-ও কখন খাবে কি করে বলি,তুমি এখন খেয়ে নাও।
-না মা অভিকে ডাকুন ও না খেলে আমিও খাবো না।
-আচছা দাড়াও ওকে ডেকে দিচিছ।
-মা অভিকে ডেকে নিয়ে আসল। অভি আর আমি
একসাথে বসে খাবার খেলাম। এখন যদি অভি না
খেতো তাহলে হয়ত সারাদিনে একবার সময় হতো না
ওর।
-আস্তে আস্তে বাড়ি ভর্তি হয়ে গেলো
মেহমানে । সব রকমের চেষ্টা করে মেহমানদের
অাপ্যায়ন করা হলো। আজকে বিয়ের তৃতীয় দিন।
তবে আমি এই পরিবারে এসে যেটা পেয়েছি, এটা
আমার জীবনের জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া।
-নিলিমা শোনো?
-কি বলবে বলো।
-আমার মা তো সারাজীবন বেঁচে থাকবে না, তবে
তুমি তো রান্না করতে পারো না যদি আমার মায়ের
কাছে থেকে শিখে নিতে।
-এসব কি বলছো অভি তোমার মা হলে আমার ও তো
মা। আমি রান্না পারি না তবে শিখার চেষ্টা করতে
পারি ।
-আচছা আমি অফিসে চলে গেলাম।
-মা একটা কথা বলবো। (নিলিমা)
-হ্যাঁ মা বলো ।
-আমি তো কোনদিন রান্নাঘরে যায় নি, কিভাবে রান্না
করে বলতেও পারবো না, যদি আপনি আমাকে
শিখাতেন।
-কি যে বলোনা তুমি । তুমি কেনো রান্না করবে, আমি
আছি কেনো।
-না মা আমি এতো কিছু শুনতে চাই না আপনি আমাকে
রান্না করা শিখাবেন এটাই ফাইনাল।
-আরে মা রাগ করছো কেনো আসো কাছে
আসো। শোন রান্না করাটা অনেক ঝামেলা আর
কষ্টের তুমি
এটা পারবে না।
-মা আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো। এই কাজটা
যতই কষ্টের হোক আমি শেখবো।
-আচছা আচছা আমি শেখাবো এখন রুমে যাও।
-সত্যি তো শেখাবেন মা।
-হুম সত্যি শেখাবো।
-আরে কি করছ ছাড়ো ছাড়ো ছাড়ো বলছি। এভাবে
কেউ জড়িয়ে ধরে নাকি ।
-কেনো মা আপনি তো এখন থেকে আমার নিজের
মা। নিজের মায়ের সাথেই তো সব কিছু।
-পাগলি একটা মেয়ে তুমি। এখন যাও।
আমার শাশুরি আম্মা আমাকে রান্নাটা শিখিয়ে দিলেন।
প্রথমে একটু ঝামেলা হলেও পরে সেটা ঠিক হয়ে
গেছে। আমি এখন সব রান্না করতে পারি ।
—-
২ বছর পরে,
-আমি এখন অন্ত:সত্তা। আর এখনি বুঝতে পারলাম যে
আসলে আমি এখন ভাগ্যবতী। আমার শ্বাশুরি আম্মা
আমার জীবনের বড় একটা পাওয়া। যখন থেকে তিনি
জানতে পেরেছে আমার পেটে বাচচা আছে তখন
থেকে আমাকে কোন কাজ করতে দেই নি।
একগ্লাস পানি পর্যন্ত তিনি আমাকে এগিয়ে দিয়েছেন।
আমার বাচচা প্রসবের আগেই তাঁর নাম কি রাখবে সেটা
ঠিক করে রেখেছে । বাচচার খেলার জন্য খেলনা
কিনে রেখেছে । আমার খুশির চেয়ে ওরাই বেশি
খুশি।
-আজকে আমার ছেলে সত্নান জন্ম নিয়েছে । এই
খবর আমার শ্বশুুর শ্বাশুরি শোনার পরে থেকে
তাঁদের কাজ কর্ম দেখে আমি অবাক। মেডিকেল
থেকে বাড়িতে আসার পরে তারা আমাকে ভিটামিন যুক্ত
খাবার জোর করে খাওয়াচেছ। পেট ভরা থাকলেও
কথা শুনছে না। যেভাবেই হোক আমাকে সেটা
খাওয়াচেছ।
কারন তারা নাতীর কোন কিছুর জেনো অভাব না
থাকে। আমাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াচেছ জেনো
তাঁদের
নাতি সকল রকমের পুষ্টির অভাব পুরন হয়। আমি এমন
একটি পরিবারকে পেয়ে অনেক অনেক সুখি। এমন
শ্বশুর শ্বাশুরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সবার কপালে
জোটে না এমন একটা পরিবার। কিন্তু আমার কপালে
জুটেছে। আমি চাই জেনো সব মেয়েরাই এমন
একটা পরিবারপাই।
——-সমাপ্ত–