Breaking News

গল্পঃ এক পশলা বৃষ্টি । ৪র্থ পর্ব । লিখাঃ-পলাশ


কারও হাতের স্পর্শে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় । ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকালাম অর্ধচোখে । দেখি খালা মাথা বিলিয়ে দিচ্ছে । আবার ঘুমালাম ।
খালা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । একটু ভালো লাগছে ।
আমি আবার কাত হয়ে ঘুমঝরানো চোখে খালার দিকে তাকালাম । খালা আমার দিকে তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো যে জ্বর এসেছে কি না । কিন্তু আমার তো জ্বর আসে নি ।
—শরীর খারাপ নাকি বাপ ।
.
আমি খালার দিকে তাকিয়ে আছি । আমি জানি খালা কেনো বলছে ।
—কি হলো কথা বলছিস না । শরীর খারাপ নাকি ।
—না খালা ।
—অবেলায় শুয়ে আছো যে ।
—খুব ঘুম পাচ্ছে আজ । কাল অনেক রাত পযন্ত জেগে ছিলাম তো তাই আজ ঘুমাচ্ছি ।
—তা প্রাইভেট ছুটি দিছো নাকি আজ ।
.
খালার চোখের দিকে তাকালাম আবার । ভাবতেছি মিথ্যে বলবো নাকি সত্যিটা বলে দিবো ।
—হুমমম খালা ছুটি দিয়েছি ।
.
ডাহা মিছা কথা কইলাম । মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিলাম ।
খালা কিছু বললো না । মাথাটা আরও ভালো করে বিলিয়ে দিচ্ছে । মাঝে মাঝে চোখের ভ্রুঁ টেনে দিচ্ছে । আমার আরও ঘুম পাচ্ছে । তাই খালাকে কিছু না বলে ঘুমিয়ে পরলাম ওপর পাশ হয়ে । একটু পর অনুভব করলাম খালা পাশে নেই । তাই আর কিছু না ভেবে ঘুমানো যায় তাহলে ।
একটু পর আবার মাথায় ঠান্ডা অনুভব করলাম । এপাশ হয়ে খালার দিকে তাকালাম । চোখ তুলতে পারছিনা । ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছি আরও সেজন্য । তবুও অর্ধচোখে তাকিয়ে দেখি তেল দিয়ে দিচ্ছে মাথায় । আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো ,
—এতো বড় হয়েছে তবুও নিজের কেমন লাগে সেটা বলতে পারিস না ।
.
কিছু বলতে পারছিনা ঘুমের কারণে । এতোটা ঘুম চোখে খেলা করছে ঠিক মতো তাকাতে পারছিনা ।
—ওহ্ একটা কথা ।
.
আমি কান পেতে শুনে যাচ্ছি চোখ বুঝে ।
—সায়েম অনেক বার ফোন দিয়েছিলো । তুই ধরিস নাই । পরে যখন অনেকবার ফোনে রিং হওয়াতে আমি ধরি । পরে আমি বলেছি তুই ঘুমিয়ে আছিস । তাই ফোন কেটে দেয় । তোকে ফোন দিতে বলেছে ঘুম থেকে উঠলে ।
.
আমার কান শুধু জাগ্রত আছে । কথা শুনতে পারছি । কিন্তু চোখের পাতা কিছুতে মেলতে পারছিনা ।
—আচ্ছা তুই ঘুম পার আমি আরও মাথাটা বিলিয়ে দিচ্ছি । পরে ঘুম থেকে উঠে ফোন করিস সায়েমকে ।
.
আমি কোনো মতে মাথা নারালাম ।
—ঠিক আছে তুই ঘুমা বাপ । আমি তেলের বতল রেখে এসে মাথা বিলিয়ে দিচ্ছি ।
.
খালা চলে গেলো অন্য রুমে । এদিকে প্রচন্ড ঘুমের কারণে শুধু শুনে যাচ্ছি । চোখ মেলে দেখতে পারছি না । অবশ্যই ঘুমের ঔষুধ একটা বেশি খাওয়াতে এরকম হচ্ছে ।
কিছুখন ভাবতে ভাবতে আবার মাথায় স্পর্শ পেলাম । তখন বুঝলাম খালা আমার পাশে বসে আছে ।
কখন যে ঘুমিয়ে পরি খালার কথা শুনতে শুনতে আমি বলতে পারবোনা ।
.
ফোনটা ব্রাইব্রেটের আর রিং এর শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ।
ফোন হাতে নিয়ে দেখি সায়েমের ফোন । ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম চোখে বললাম ,
—হ্যালো ।
—এখনও ঘুমাচ্ছিস । তোর কি হয়েছে ? আজ প্রাইভেট পড়াতে যাস নাই ! তোর কিছু হয়েছে নাকি ? তোর তো শরীর খারাপ না তো ?
.
ফোন রিসিভ করে এক গাধা প্রশ্নের উত্তরে সমুক্ষে পরলাম । জানি যে ও আমাকে কতটা ভালোবাসে । সেই জন্য এরকম কেয়ারিং করে ভাইয়ের মতো ।
—কি রে ঘুমিয়ে গেলি নাকি ।
—না ।
—তাহলে কিছু বলেছি নাকি । দেখ কত বাজে ?
.
আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ৬:০৮ মিনিট ।
—৬:০৮ বাজে ।
—এখন কেউ ঘুমায় নাকি ।
—আরে পাগল কিছু হয়নি । আমি পুরোপুরি ঠিক আছি । আজ না ঘুমের ঔষুধ একটা বেশি খেয়েছি ।
—কিহ্ ! তুই আজকেউ ঘুমের ঔষুধ খেয়েছিস ।
.
কথাটা বলে জ্বিব্হা কামুর দিলাম । সায়েমকে ঔষুধের কথা বলবো না । কিন্তু কথার ঘোড়ে বলে দিলাম ।
—কি রে চুপ মেরে বসলি যে । কেনো খেয়েছিস ?
—আরে তুই তো জানিস ….
—চুপ কর । তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে সেদিন যে রেস্টুরেন্ট এ আসছিলাম সেখানে আয় ।
—কেনো ?
—যেটা বললাম সেটা কর ।
—ঠিক আছে । রেগে কথা বলছিস কেনো ।
—তুই কথা না বাড়িয়ে চলে আয় তাড়াতাড়ি ।
—ঠিক আছে আমি আসছি ।
—আধঘন্টা সময় দিলাম । এখন বাজে ৬:২০ মিনিট ।
—আধঘন্টার মধ্যে ।
—হ্যা , আধঘন্টার মধ্যে ।
—ঠিক আ….
.
তুত…তুত….তুত..
যাক বাবা ফোনটা কেটে দিলো ।
আমি উঠে ফ্রেশ হতে লাগলাম ।
কিছুখন বাধে ঘড়ির দিকে তাকালাম । ২০ মিনিট এখানে হয়ে গেলো । কপালে যে কি আছে কে জানে ।
তড়িঘড়ি করে তাড়াতাড়ি বের হলাম হাত ঘড়িটা নিয়ে ।
.
রাস্তায় দাড়িয়ে আছি রিক্সার জন্য । কিন্তু কপালে দুঃখ আছে বলে গাড়ির দেখা পাচ্ছি না । ঘড়ির দিকে বারে বারে দেখছি বিরুক্তি হয়ে । কিন্তু কিছু করার নেই । মনে হচ্ছে কি করি নিজে বলতে পারছিনা । এদিকে সায়েমের ফোন বারে বারে বেজে চলছে । ধরার সাহস পাচ্ছি না । ধরলে খবর হবে নিশ্চিত ।
এক প্রকার বিরুক্তি হয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিলাম ।
প্রায় ৯ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছি । গাড়ির কোনো নাম গন্ধ নাই রাস্তায় । মেজাজটা গরম হয়ে আছে । কোনো কিছুর উপর প্রকাশ করতে পারছিনা ।
অবশেষে একটা গাড়ির দেখা পাচ্ছি । যাবে কি যাবেনা তাই কনফিউজড আছি ।
রিক্সা কাছে আসাতে হাত তুললাম । আমার কাছে এসে থামিয়ে দিলো । একটু নিশ্চিত হলাম । কিন্তু একটু বিব্রতভাব করছি রেস্টুরেন্ট এ যাবে কি না তা নিয়ে । রিক্সাওয়ালা চাচাকে বললাম ,
—আঙ্কেল রেস্টুরেন্ট এ যাবেন ?
—জ্বী । কিন্তু দশ টাকা বেশি দিতে হবে । ৫০ টাকা দিতে হবে ।
—ঠিক আছে ।
—উঠুন ।
.
আমি রিক্সায় উঠলাম । রিক্সাওয়ালা তার গতিতে চালাচ্ছে । আমি শুধু টেনশনে আছি ।
ঘড়ির দিকে তাকালাম । প্রায় অর্ধেক রাস্তায় এসেছি । বুড়া মানুষ জোর করে বলতে পারছি না একটু জোরে চালান ।
—আঙ্কেল এই রাস্তা দিয়ে কেনো ?
—স্যার এই রাস্তা দিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে পারবো ।
—তো কয় মিনিট লাগবে এই রাস্তা দিয়ে যেতে ?
—তাই ৭ থেকে ৮ মিনিট তো লাগবে ।
—আঙ্কেল ওই রাস্তা দিয়ে যেতে তো ৭ থেকে ৮ লাগবে ।
—স্যার ওই রাস্তার মোড়ে ভাংঙ্গা চালাতে খুব কষ্ট হয় ।
—তা অটোরিক্সা বানান না কেনো ।
—স্যার ওতো টাকা নাই । এই ঢাকার শহরে থাকতে কত টাকা লাগে । তার পরে আমার ঔষুধ কেনার টাকা ও ছেলের পড়ার খরচ মিলে অনেক টাকা লাগে । তাই কষ্ট করে পা দিয়ে চালাই ।
—ও । তা আপনার ছেলে কোন ক্লাসে পড়ে ?
—এই তো ক্লাস সামনে এইচ, এস, সি পরিক্ষা দিবে । ছেলেডার মাথা খুব ভালো তাই বেশি প্রাইভেট লাগে না । দোয়া করবেন স্যার । বড় হয়ে ভালো একটা চাকরি করে । আমার আর রিক্সা চালাতে ভালো লাগে না । শরীরটা আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে ।
—জ্বী আঙ্কেল । দোয়া তো করবো অবশ্যই । আর দেখবেন আপনার ছেলে ভালো একটা চাকরি করবে । আপনাকে আর কষ্ট করে রিক্সা চালাতে হবে না ।
—আল্লাহ জেনো তাই করে ।
.
আমি আঙ্কেলের কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো । কত কষ্ট করে রোজগার করে সংসার ও ছেলের খরচ চালিয়ে নিচ্ছে । তবুও জেনো ছেলেটা মানুষের মতো মানুষ হয় ।
আর একবার ঘড়ির দিকে তাকালাম । প্রায় ৬ মিনিট হয়ে গেলো । কিন্তু এখনও পৌঁছেতে পারলাম না । আমি আবার আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করলাম ,
—আঙ্কেল ৭ মিনিট যেতে লাগবে তো ৭ মিনিট হয়েছে ।
—স্যার আর ৩ মিনিট লাগবে । এই যে মোড়টা দেখছেন তার একটু পর রেস্টুরেন্ট ।
—ও ঠিক আছে ।
.
আমি আর কিছু না বলে চুপ মেরে রাস্তার দেখছি । এই বার দিয়ে তিনবার আসলাম । কিন্তু তবুও চিনলাম না । আজ চিনলাম । অন্য দিন হয়তো সায়েমের গাড়িতে । আর একদিন এক বন্ধুর বাইকে তাই ভালো করে খেয়াল করি নি ।
.
আঙ্কেলের কথায় ঘোড় কাটলো ,
—স্যার ।
—জ্বী আঙ্কেল ।
—এখন আমরা এসে গেছি ।
—ও হ্যা ।
.
আমি রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিলাম ।
—স্যার ১০০ টাকা খুচরা নাই । যা ছিলো তা দিয়ে ঔষুধ কিনেছি আর ছেলেকে বাজার করে দিয়েছি । আসার সময় আপনাকে পেলাম ।
—আপনাকে ফেরত দিতে হবে না । এই টাকাটা দিয়ে অ্যাপেল কিনি নিয়ে বাসায় গিয়ে খাবেন কেমন ।
—স্যার ভাড়া তো ৫০ টাকা…
—আমি ইচ্ছে করে দিয়েছি ।
—তাই বলে ১০০ টাকা !
—আঙ্কেল ১০০ টাকা রাখেন । আর আমার জন্য দোয়া করবেন ।
—আল্লাহ জেনো তোমার মঙ্গল করুক বাবা । আমি বুড়িকে বলবো সে খুশি হয়ে তোমার জন্য দোয়া করবে বাবা ।
.
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাগুলি বললো ।
—ঠিক আছে আঙ্কেল । আপনি এখন সোঁজা বাসায় যাবেন অ্যাপেল কিনে নিয়ে । এখন আর কাজ করতে হবে না ।
—ঠিক আছে বাবা । আল্লাহ তোমাকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুক ।
.
কথাটা বলে চলে গেলো রিক্সা নিয়ে ।
লোকটাকে দেখে মায়া মায়া লাগছিলো প্রথম থেকে । কত কষ্ট করে গাড়ি চালিয়ে রোজগার করছে । কয়েকটা টাকা বেশি দেওয়াতে কত না খুশি হয়েছে আঙ্কেলটা । যে সুখ হাজার টাকা দিয়ে কেনা যায় না ।
হঠাৎ করে সায়েমের কথা মনে পরে গিয়ে ফোন বের করে দেখি ৫৬ টা কল । ওহ্ মাই গড ।
তাড়াতাড়ি করে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে গেলাম ।
একটু উঁকি মেরে দেখলাম কয়েক যায়গায় । কিন্তু সায়েমকে দেখতে পেলাম না । ভাবলাম রাগ করে চলে যায় নাই তো । দূর যাবে কেনো ।
কিছু না ভেবে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম । অনেক বড় রেস্টুরেন্ট । এখানে বেশির ভাগ ভদ্র ফ্যামিলিরা খেতে আসে । যাক সে কথা ।
রেস্টুরেন্টের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি । কিন্তু কোথায় দেখতে পারছিনা ।
একটু দাড়িয়ে ফোনটা বের করলাম । সাথে সাথে সায়েমের ম্যাসেজ ।
Aktu Samne ase dan dike gure Coffee house a ai…
ম্যাসেজটা দেখে মনে হলো আমাকে দেখতে পরেছে ।
আমি কফিহাউজ এর দিকে যেতে লাগলাম ।
.
একটু পর কফিহাউজ এর রুমে গিয়ে দেখি সায়মা আর সায়েম একটা টেবিলে বসে আছে । দেখে বোঝা যাচ্ছে বিরুক্তি ছাপ নিয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে ।
আমি টেবিলের কাছে চলে গেলাম ।
আমাকে দেখে সায়েম আগুনের মতো চোখ নিয়ে বলতে শুরু করলো । কখন থেকে বসে আছি জানিস , ফোন তো সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছিস , তুই জীবনে কোনোদিন আগে আসতে পারবিনা , তুই না একটা বলদ , বলবি ঠিক কিন্তু কাজের না ব্লা,ব্লা করলো ।
আমি দাড়িয়ে শুনে গেলাম । কিছু করার নেই ।
—এখনও দাড়িয়ে আছিস বস ।
—তুই যেভাবে ব্লা, ব্লা করলি তো বসার সময় পেলাম কোথায় ।
.
সায়েম কথাটা শুনে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে । যদি রেস্টুরেন্ট না হয়ে বাসায় হতো নির্ঘাত কি যে করতো বলা যাচ্ছে না ।
—কি রে কিছু খেয়েছিস ।
.
পাশে থেকে সায়মা বলে উঠলো ,
—আপনাকে ছাড়া কি খাওয়া যায় বলেন ।
—পাম ।
—কিছু বললেন ।
—না মানে কিছু না ।
.
আমি সায়েমকে বললাম ,
—কি খাবি অর্ডার দিয়ে আসি ।
—তোর জেতে হবে না । নিয়ে আসতেছে ।
—ও ঠিক আছে ।
—মনে হচ্ছে তুই অপেক্ষা করছিলি ।
—আরে তুই আর আমি একি হলো ।
—এক হলো না । তিন জন মানুষ এরকম ওয়েট করেছি ।
.
সায়েমের কথা শুনে একটু অবাক হলাম । তিন জন । এখানে তো দুজন তাহলে আর একজন কে । নিশ্চয় গার্লফেন্ড নিয়ে আসছে ।
—আর একজন কে রে ।
—আছে ।
—কে । তোর গার্লফেন্ড তাই না ।
—না ।
—তাহলে ।
.
সায়মা বলে উঠলো ,
—না ভাইয়া ।
—তাহলে কে ।
—অর্থি ।
.
নামটা শুনে মুখটা ফেঁকাসে হয়ে গেলো । মেয়েটা কি পিছু ছাড়বে না নাকি । যেখানে যাই সেখানে আমার পিছু পিছু যাবে । পিঁছু পিঁছু সমস্যাতা নাই কিন্তু ও অপমান করবে । মেজাজটা গরম করে দিলো ।
—কি রে মুখটা এরকম ফেঁকাসে হয়ে গেলো মানে ।
—কিছু না দোস্ত ।
—তোদের মাঝে কিছু হয়েছে ।
—আরে কি হবে । কিছু হয়নি ।
.
কথাটা শেষ হতে অর্থি এসে বললো ,
—ভাইয়া এই নি ।
—বিগার ।
—হুমম এটা খাব আমি ।
—তো পিকজা খাবি না ।
—না । তুই তাড়াতাড়ি ধর আমি আর একটা আনছি ।
—আর একটা কে খাবে ।
—আমি ।
.
আমি বলে চলে গেলো । মুখে হালকা মিষ্টি হাসি দিয়ে । মাথা নিচু করে বসে আছি ।
পাশে থেকে সায়মা বলে উঠলো ,
—আপনি মাথা নিচু করে আছেন কেনো ।
—এমনি….. আর সায়েম আমাকে আজকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।
—মানে । তাড়াতাড়ি কেনো ? এই মাত্র তো আসলি ।
—খালার কিছু ঔষুধ কিনে নিয়ে যেতে হবে ।
—সমস্যা নেই । সামনের ফার্মেসী দোকান থেকে নিলে হবে ।
—এই ফার্মেসী দোকানে পাওয়া যায় না । অন্য কোম্পানি দেয় । সেটা খেয়ে কাজ হয় না ঠিকমত ।
—ঠিক আছে পিকজা অর্ডার দিয়েছি সেটা খেয়ে যা ।
—না খেলে হয় না ।
.
সায়মা পাশ থেকে বলে উঠলো ,
—আপনার জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে । আপনি বলে খুব ভালোবাসেন খেতে তাই ।
—আমার খেতে ভালো লাগছেনা আজ ।
.
আমার দিকে চোখটা বড় বড় করে তাকালো সায়েম । আমি মাথা নিঁচু করে চুপ মেরে বসে রইলাম ।
হয়তো এখানে জোর করে থাকতে হচ্ছে । মন বসছে না । তবুও সায়েমের জন্য বসে আছি ।
একটু পর পিকজা নিয়ে আসলো ।
আমরা তিনজন পিকজা খাচ্ছি আর অর্থি একাই বিগার খাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে আর চোখে তাকাচ্ছে সায়মা আর অর্থি ।। আজ বুঝতে পারলাম না । সায়মা নিরব কেনো । যে আমাকে পছন্দ করতো সে আমার সাথে কথা বলছেনা বুঝতে পারলাম না । চঞ্চল একটা মেয়ে আজ নিরব । নাকি অর্থি কিছু বলেছে । মনে হচ্ছে তো তাই । কাল স্যরি বলতে দেখেছে । না বলে কিছুতে শান্ত হয়ে থাকতে পারবেনা ।
খাওয়া শেষ করে বসে আছি কফির জন্য । কিন্তু কফি আমার খেতে ইচ্ছে করছে না । মানে অর্থির সামনে থাকতে একদম ভালো লাগছেনা । তাই সায়েমকে বললাম ,
—সায়েম ৯:২৫ বাজে আমি এখন উঠি । নাহলে ফার্মেসী দোকান ১০:৩০ এ বন্ধ করবে ।
.
পাশ থেকে অর্থি বলে উঠলো ,
—আপনি যাবেন মানে ।
.
আমি সে কথা কানে না দিয়ে বললাম ,
—কি হলো সায়েম কিছু বলছি আমি ।
—আচ্ছা ঠিক আছে যা ।
—আপনি যে এসে বললেন অনেক কথা হবে আজ কিন্তু ।
—কিন্তু মেডিসিনের কথা খেয়াল ছিলো না তাই ।
—তাই এভাবে চলে যাবেন ।
—শোনো অন্য একদিন জমে বসে আড্ডা দিবো । আজ মেডিসিন না নিয়ে গেলে অসুস্থ হয়ে পরবে ।
—হুমমম ।
—সায়মা মন খারাপ করো কেনো অন্য একদিন কথা হবে ।
—ঠিক আছে সায়েম । তুই সায়মাকে নিয়ে কাল আমাদের বাসায় নিয়ে আয় কেমন ।
—সত্যি বলছেন ।
—না মিথ্যা কথা ।
—কেমন কথা এটা ।
.
—তুমি বুঝবে না ।
কথাটা বলে অর্থির দিকে তাকালাম । চোখটা বের হয়ে আসবে এরকম ভাবে তাকিয়ে আছে । রাগে সাপের মতো ফুঁস ফুঁস করছে । তার কারণ হলো সায়মার সাথে কথা বলছি এতে তার জ্বলছে । এই একটা তার বেশি প্রব্লেম । কারও সাথে কথা বলা তার প্রব্লেম ।
—আচ্ছা বুঝিয়ে বলেন না ।
—আরে কি বুঝাবো… সায়েম আমি তাহলে যাই ।
.
অর্থির দিকে তাকালাম । মুখে হাসিটা মুহুর্তে শেষ হয়ে গেলো । আর এদিকে সায়মা মিষ্টি মিষ্টি হাসছে । বুঝতে পারলাম না সায়মার হাসিটা ।
.
অর্থি পাশ থেকে বলে উঠলো ,
—ভাইয়া আমি বাসায় যাবো ।
—কেনো তুই বাসায় যাবি কেনো । তুই বলে….
—কোথাও যেতে হবে না আমার । আমি বাসায় যাবো ব্যাস বাসায় যাবো ।
.
এতো রাগ কিসের মেয়েটার । মনে হচ্ছে একটা লাগিয়ে দেই । কিন্তু সে সাহস তো আমার নেই আর এটা সম্ভব না ।
—সায়মা আবার নেক্সট টাইম এ কথা হবে কেমন ।
—ঠিক আছে বাই ।
.
আমি চলে এলাম সেখান থেকে । আসার সময় লক্ষ করলাম অর্থির দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর চোখে । রেগে যায় সায়মার সাথে কথা বলাতে । কিছু করতে পারছেনা সায়েমের সামনে । রাগলে আমার কি । আমার তাতে কিছু যায় আসে না ।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ম্যাইন রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছি । গাড়ি নেই এই ৯ টার পর । এখন প্রায় ৯ টা বাজতে না বাজতে গাড়ি পাওয়া যায় না ।
রাতে কিছু রিক্সা পাওয়া যায় । কিন্তু আজ নেই ।
তাই হাঁটতেছি রাস্তা দিয়ে ।
কিছুখন হাঁটার পর একটা অটোরিক্সা দেখা পেলাম ।
.
হাত তুলাতে থামিয়ে দেয় অটোরিক্সাওয়ালা ।
—কোথায় যাবেন ভাইয়া ?
—মোল্লা ফার্মেসী দোকান ।
—ভাইয়া উঠেন ।
.
আমি উঠে পরলাম অটোরিক্সায় ।
গাড়ি চলছে দ্রুত গতিতে । রাস্তায় কোনো জ্যাম নাই । ফ্রি রাস্তা ।
২৫ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম । ভাড়াটা দিয়ে দিলাম । চলে গেলো লোকটি ।
আমি খালার জন্য ঔষুধ কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকি । আর ভাবতে থাকি আজ তো কিছু করে ফেলবেনা মেয়েটা । যে রাগি রে বাবা তাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই । এর আগে একবার ছুরি দিয়ে হাত কেটে ফেলেছিলো । শুধু একটার কথার কারণে । মেয়েটা আমার মাঝে কি পেয়েছে । যার নেই কোনো অস্তিত্ব । নেই কোনো ঠিকানা । নেই কোনো পরিচয় ।
সে আমার জীবন সম্পর্কে কিছু জানে না । জানলে আমাকে কেনো আমার মতো ছেলেকে ভালোবাসা তো দূরের কথা । আমাদের পাশ দিয়ে হাটবে না ।
আমি যে একটা সুন্দর জীবন নষ্ট করতে চাই না । যে পারবেনা সবার মাঝে গর্ব করে বলতে আমাকে নিয়ে । সবাই অতীতকে চানতে চাইবে তখন । হয়তো আমার প্রতি ভালোলাগা কখন জীবনসঙ্গীনী হওয়া যায় না ।
তার একটা সুন্দর হ্যাম স্যাম ছেলে দরকার । যে ছেলে তাকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে । আমার মতো পরিচয়হীন ছেলে কখন তার জীবনসঙ্গীনী হতে পারে না ।
আমি আমার মতো কাউকে বিয়ে করে সারাজীবন তার সাথে কাটিয়ে দিতে চাই । চাই না কোনো রাজরানী । চাই শুধু একটা জীবনসঙ্গিনী । যে আমাকে নয় আমার অতীতকে জেনে পাশে থেকে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায় ।
ভাবতে বাসায় চলে এলাম ।

<><>চলবে<><>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com