গল্পঃ ভালোবাসার খুনসুটি


জল : যা তুই খুবই পঁচা!
তেল: কেন কি করলাম আবার?

জল: তুই একদম মিশুক না।
তেল: কে বলেছে তোকে? তরকারিতে তোর সাথে কত সুন্দর করে মিশে ঝোল হয়ে যাই দেখিস না মুখপুড়ি!

জল: কিন্তু এমনি তো তুই আমার সাথে মিশতেই চাস না। 

তেল: এমনি এমনি কেউ কারো সাথে মিশে না। তার জন্য বুকের খাঁচায় প্রেম থাকতে হয়। 

মিলনের অভাব থাকতে হয়। পাওয়ার তীব্রতা থাকতে হয়। মিলেমিশে একাকার হতে হয়। একাকার হতে জানতে হয়। নয়তো কেবল দূরত্ব থেকে যাবে তোর আমার মাঝে যতই কাছে আসিস না কেন। 

তরকারি নামক ভালবাসা আছে বলেই তো মিলেমিশে ঝোল হয়ে যাই দু’জনে।জল: তরকারিতে মিশে আমি না থাকি জল। না থাকিস তুই তেল।

তেল: আরে বোকা মেয়ে এটার নামই সংসার। সংসারে কি কখনো একার হয়। আমি তুই এক হয়ে যদি নতুন কোনো নামের জন্ম না হয় তাহলে তো সেটা সংসার না। সংসারের চেহারায় প্রহসন।

জল: কিন্তু তুই তো তবু ভাসিস ঝোলের উপরে। আমি ডুবে থাকি অতলে।
তেল: একেই বলে কর্তৃত্ব। তুই না থাকলে আমি কিসের উপরে ভাসতাম বল! তুই আমার খুটি। 

আমি উপরে ভেসে আবরণের মতো তোকে আগলে রাখি। তুই অতলের জগতে আগলে রাখিস তরকারিকে। উপর থেকে আমাকে যতোই ভাসতে দেখা যাক। তুই ছাড়া আমি কোথায় বল?

জল: তুই সত্যিই আমায় ভালবাসিস?
তেল: ভালো যদি নাই বা বাসি সখি। তবে কেন তুই টগবগ করে ফুটলে আমি অমন তোকে সারা পাতিল খুঁজে মরি? তুই আস্তে আস্তে যখন শান্ত হয়ে যাস; তোকে বুকের ওমে আগলে রেখে তোকে জড়িয়ে থাকি চুপটি করে। এটাই ভালবাসা। প্রিয়তমার অস্থিরতায় যদি প্রেমিক অস্থির না হয় সেটাকে কি ভালবাসা বলে?

জল: কিন্তু তাও তুই পঁচা। তুই তো কোলেস্টেরল। তোর জন্য কত অঘটন ঘটে জানিস। অথচ দেখ আমাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তবুও কেন যে তোকে এতো ভালবাসি নিজেও জানি না। 

হয়তো তুই পঁচা বলেই। তুই ভালো হলে হয়তো তোকে আমার ভালবাসতেই ইচ্ছে করতো না।
তেল: হাহাহা! এটাই হলো সৃষ্টির আনন্দ সখি। এই জ্বালাটুকু না থাকলে কি মিলনের সুখ আছে। 

উনুনের তাপে জ্বলি বলেই তো আমরা মিলনে মধুর হই। সংসারে এই জ্বালাটা হলো বিশ্বাস। আর পাতিল। আমাদের ছোট্ট একখানা ঘর। আমি পঁচা বলেই জ্বলিস। জ্বলিস বলেই ভালবাসিস। আর তুই ভালবাসিস বলেই আমি এতো বেয়ারা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url