অ্যাডভেঞ্চার। পর্ব- ১৪

হতবিহ্বল অবস্থা। পেছনে শত শত দানব ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। কয়েকটা তো ইতিমধ্যে চলে এসেছে।
এই মহা দূর্যোগের মধ্যেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে এঞ্জিন ঘেটেঘুটে দেখছে লুক।
অন্যরা গাড়ির ভেতরে দম বন্ধ করে বসে আছে। সাকিব রয়েছে ড্রাইভিং সীটে।
যাতে গাড়ি স্টার্ট নেওয়া মাত্রই চালাতে পারে। কিন্তু সে সুযোগ আর পেল না।
একটা দানব লুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
বনেটের উপরেই মুখ থুবড়ে পড়ল লুক। দানবটা ওকে পিছন দিয়ে চেপে ধরে।
ছোটার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে লুক। কিন্তু শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
তাছাড়া সে রয়েছে বেকায়দা অবস্থায়।
গাড়ির ভেতর থেকেই গুলি করল সাকিব।
গাড়ির ভেতর থেকেই গুলি করল সাকিব।
উইণ্ডশীল ফুটো হয়ে দানবটার মাথায় গিয়ে লাগলো গুলিটা। রাস্তার উপর পড়ে গেল সেটা।
ছাড়া পেয়ে সাকিবের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দেওয়ার ভঙ্গিতে মাথা দোলাল লুক।
পরপরই আরেকটা দানব ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ল। কিন্তু এবার ও প্রস্তুত ছিল।
গোড়ালির কাছে বুট জুতার মধ্যে রাখা ছুরিটা তুলে নিয়েই দানবটার কপালে গেথে দিল।
হাত পা ছুড়ে রীতিমতো নৃত্য জুড়ে দিল দানবটা। তারপরেই ঢলে পড়ল।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল সবাই। দানবরাও চলে এসেছে। ঘিরে ফেলেছে চারিদিক থেকে।
ওরা যে যার মত লড়ে যাচ্ছে। তবে এ অসম লড়াই কতক্ষণ টিকবে কে জানে!
.
হঠাৎ আর্চির আর্তচিৎকার শোনা গেল। সাকিব আর ল্যারি ঘুরে দেখলো চার-পাঁচটা দানব ওকে চেপে ধরেছে।
হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না ও। আর পারবেও না।
খুব শীঘ্রি মারা পড়বে। এভাবে হয়তো ওরা প্রত্যেকেই মারা পড়বে।
আর্চিকে সাহায্য করার ইচ্ছে থাকলেও সেটা ওরা কেউ-ই পারছে না।
নিজেদের রক্ষা করতেই হিমশিম খাচ্ছে ওরা। তারপরে আবার আর্চি রয়েছে ওদের
থেকে বেশ খানিকটা দূরে।
এই দানবদের টপকে আর্চির কাছে যাওয়া অসম্ভবই বটে৷ কিন্তু সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করল রাফিম।
দানবদের থেকে ছাড়া পেয়েছিল রাফিম৷ চাইলেই সে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সেটা করল না সে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্চিকে সাহায্য করতে এগোল।
অস্ত্র বলতে ওর দু’হাতে দু’টো ছুরি। ছুরি দু’টো নিয়েই দানবদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
প্রাণপণে দানবদের আঘাত করে বাঁচিয়ে নিল আর্চিকে। কিন্তু নিজে ধরা খেয়ে গেল।
দানবগুলো এবার ওকে চেপে ধরল। শত চেষ্টা করেও নিজেকে আর ছাড়াতে পারলো না রাফিম।
দূর্বল হাতে আর্চিও চেষ্টা করল। কিন্তু পারলো না।
এবার কোত্থেকে যেন এম্মার উদয় হলো।
তার হাতে লাইটারটা ছিল। ওই লাইটারটা নিয়েই সে দানবদের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
মানতেই হবে, মেয়েটার সাহস অনেক বেশি।
লাইটার দিয়ে একটা দানবের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল সে। সঙ্গে সঙ্গে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন।
অন্য দানবগুলোর শরীরেও লেগে গেল। রাফিমকে ছেড়ে
দিয়ে নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ল দানবগুলো।
.
হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো সাকিব। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে সে বলল,
“সবাই সরে যাও। গাড়িটা এখনই ব্ল্যাস্ট করবে।”
দৌড়ে গাড়ির থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো ওরা।
সাকিবও কিছুটা দূরে সরে গিয়ে ফ্যুয়েল ট্যাংকের দিকে পিস্তল তাক করল।
ট্রিগার টিপে দিবে, এই মুহুর্তে হঠাৎই গাড়ির কাছে দৌড়ে গেল লুক। শেষ মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিল সাকিব।
গাড়ির ভেতর থেকে ইমার্জেন্সি কিটটা নিয়ে আবার দৌড় দিল লুক।
কিন্তু কয়েকটা দানব ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার উপর পড়ে গেল লুক। দানবগুলো ওকে ছেকে ধরল।
আশপাশ থেকে আরও দানব এসে জুটতে লাগলো৷ সাকিব, ল্যারি আর সিয়ারা;
তিনজনেই সমানে গুলি করতে লাগলো।
অল্পক্ষণের মধ্যেই ল্যারি আর সিয়ারার গুলি শেষ হয়ে গেল।
সাকিব তখন একাই গুলি করতে লাগলো। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না।
একটা দানব মরছে তো আরও পাঁচটা এসে জুটছে।
হঠাৎ চেঁচিয়ে ওকে গুলি করতে থামতে বলে দানবদের কাছে এগিয়ে গেল এম্মা।
মেয়েটার সাহস দেখে রীতিমতো অবাক হলো ওরা।
সাকিব বাধা দিতে গিয়েও পারলো না। এম্মা ওর কথা শুনলো না।
সে এগিয়েই গেল। তারপর তার লাইটারের কেরামতি দেখালো।
একটা দানবের শরীরে আগুন দিতেই অন্যগুলোর মধ্যেও সেটা ছড়িয়ে গেল। ছাড়া পেয়ে উঠে দাঁড়াল লুক।
এম্মার হাতে ইমার্জেন্সি কিটটা দিয়ে দুই হাতে দু’টো ছুরি নিয়ে দানবদের মারতে মারতে সরে গেল।
ওরা কিছুটা সরতেই ফ্যুয়েল ট্যাংকটা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লো সাকিব।
সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী কয়েকটা ডিনামাইটের মত শব্দ করে ব্ল্যাস্ট করল ট্যাংকটা।
পুরো গাড়িটা শূণ্যে কয়েক মিটার উপরে উঠে গেল।
আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে।
গাড়িটা ব্ল্যাস্ট করার সময় ওরা সবাই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছিল।
ওদের মনে হলো, কেউ যেন ওদের উপর গরম ইস্ত্রি ঠেসে ধরেছে। কয়েক সেকেন্ড এরকম অবস্থা চলল।
তারপর কিছুটা ধাতস্থ হতেই উঠে পড়ল ওরা। সামনের একটা বিল্ডিং দেখে সেদিকে দৌড় লাগালো।
একটা দানবকে দৌড়ে আসতে দেখে গুলি চালালো সাকিব।
কিন্তু গুলি বেরোলো না। বেরোবেই বা কিভাবে! গুলি তো আর নেই৷
তারমানে তখন ওই একটা গুলিই ওদের ভরসা ছিল। যেটা ওরা কেউ জানতোও না।
তখন যদি এম্মা ওকে না থামাতো, কিংবা আগেই গুলিটা কোন কারণে ছোড়া হয়ে যেত,
তাহলে কি হতো সেটা ভেবেই আঁতকে উঠল সাকিব।
এদিকে ওর ভাবাভাবির মধ্যেই দানবটা ওর খুব কাছে চলে এল।
গুলি শূণ্য পিস্তলটা ওটার দিকে ছুড়ে মারলো সাকিব।
কপালে লেগে ধপাস করে পিচঢালা রাস্তায় পড়ে গেল দানবটা।
কিছুক্ষণ পর উঠে আবার সাকিবের পিছু নিল।
কিন্তু ততক্ষণে বেশ খানিকটা দূরে সরে গেছে সাকিব।
.
বিল্ডিংয়ের সদর দরজাটা কাচের তৈরি। তবে বুঝাই যায় এটা যে সে কাচ নয়।
নিশ্চিত বুলেটপ্রুফ কাচ। নাহলে সদর দরজায় এটা দেওয়া হতো না।
দরজাটা খুলতেও ওদের বেশি কসরত করতে হলো না। একটু ধাক্কাধাক্কি করতেই খুলে গেল সেটা৷
বোধহয় কাচ বলেই সম্ভব হলো। সবার আগে ভেতরে ঢুকে পড়ল সিয়ারা আর রাফিম।
কিছু পরেই লুককে ধরে নিয়ে ঢুকলো ল্যারি। তার পরপরই এম্মা।
সাকিবও প্রায় এসে গেছে। কিন্তু পেছনে পড়েছে ক্যারি আর আর্চি।
পায়ে আঘাত পেয়েছে আর্চি। হাঁটতেই পারছে না।
ওকে ধরে প্রাণপণে দৌড়ানোর চেষ্টা করছে ক্যারি।
কিন্তু সে গতি নিতান্তই ধীর। দানবগুলো ওদের প্রায় ধরে ফেলেছে।
সেটা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল সাকিব৷ ক্যারি আর আর্চিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেল।
এমন সময় চিৎকার করে উঠলো এম্মা। “সাকিইইইইব!”
পেছন দিকে ফিরে তাকাল সাকিব। দেখলো এম্মা দৌড়ে আসছে।
পেছন দিকে ফিরে তাকাল সাকিব। দেখলো এম্মা দৌড়ে আসছে।
প্রাণপণে হাত নেড়ে ওকে আসতে নিষেধ করল সাকিব। কিন্তু শুনলো না এম্মা।
কাছে এসে লাইটারটা ওর হাতে দিল।
এম্মার হাত থেকে লাইটারটা নিয়ে ক্যারি আর আর্চির দিকে এগিয়ে গেল সাকিব।
দানবগুলো ওদের প্রায় ধরে ফেলেছে।
এখন ইচ্ছে করলেই আর্চিকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে আসতে পারে ক্যারি।
কিন্তু সেটা সে করছে না। আর্চিকে কাধে করে নিয়েই দৌড়াচ্ছে।
এম্মার কাজটা করল সাকিব। লাইটার দিয়ে একটা দানবের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিল।
মুহুর্তের মধ্যে সেটা ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে অন্যরা এসে আর্চি আর ক্যারিকে নিয়ে গেল।
সাকিবও ওদের পিছু পিছু ছুটলো। ভেতরে ঢুকেই কাচের দরজাটা বন্ধ করে দিল ওরা।
আর সঙ্গে সঙ্গে গোটা দশেক দানব এসে ঝাপিয়ে পড়ল দরজাটার উপরে।
দানবগুলো ধাক্কায় দরজাটা প্রায় খুলে গেল। সেই ফাঁকে দু’টো দানব ভেতরে ঢুকে পড়ল।
ভেতরে একটা লোহার পাইপ পেয়েছিল রাফিম। সেটা তুলে নিয়ে দানব দুটোর খুলি ফাটালো।
এক ফাঁকে দরজার উপর হামলে পড়া দানবদের শরীরে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল সাকিব।
ছটফট করতে করতে সরে গেল দানবগুলো। এই ফাঁকে দরজাটা লক করে দিল ওরা।
ওপাশের লোহার গ্রীলের গেইটটাও লাগিয়ে দিল।
তারপরে ভারী টেবিল, আলমারি, গ্যাস সিলিন্ডারসহ আরও অনেককিছু এনে গেইটের উপরে রাখলো।
এই মুহুর্তে দানবরা ভেতরে ঢুকতে পারবে না নিশ্চিত হয়ে ওরা যে যেখানে পারলো বসে পড়ল।
এতক্ষণে দম নেওয়ার সময় পেল। ওদের প্রত্যেকের শরীর ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে আসছে।
ধুলোর চাদর বেছানো, ময়লা মেঝেতেই শুয়ে পড়ল সবাই।
তারপর কিছুটা ধাতস্থ হতেই উঠে পড়ল আবার। দেখতে লাগলো কে কতটুকু আঘাত পেয়েছে।
দেখা গেল, অন্য সবাই তেমন কোন আঘাত না পেলেও আর্চি আর লুকের অবস্থা বেশি একটা ভালো না।
আর্চির ডান পা টা মচকেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে গেছে।
ক্ষতগুলো দিয়ে এখনো রক্ত বেরোচ্ছে। লুকের হাত পা না মচকালেও আর্চির
মত তার শরীরেও অনেক ক্ষতের তৈরি হয়েছে।
সিয়ারা আর রাফিম ওদের দু’জনের চিকিৎসা করতে বসলো।
এম্মা বাকি সবার ছোটখাটো ক্ষততে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল।
.
চিকিৎসা শেষে ওরা কোথায় এসেছে সেটা দেখার অবসর পেল। পুরো ঘরটা দেখে বুঝলো, ওরা কোন শপে এসে ঢুকেছে। বিভিন্ন ধরনের লোহার পাইপ, গ্যাস সিলিন্ডারসহ আরও অনেক এক্সেসরিজ রয়েছে। তবে সবকিছুই ধুলো আর মাকড়সার জালে ছেয়ে আছে। ধুলোগুলো ওদের নাকে মুখে গিয়ে রীতিমতো কাঁশছে ওরা। এখানে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হবে না। সরে পড়তে হবে। কিন্তু কোথায় যাবে? চারিদিক থেকে হাজারে হাজারে দানব ঘিরে রেখেছে। এখান থেকে বেরোনো ওদের পক্ষে অসম্ভব। বেরোতে গেলেই পড়বে দানবদের হাতে। একটা দু’টো কিংবা এক-দেড়শো নয়, হাজার হাজার। সময়ের সাথে সাথে সেটা শুধু বাড়ছেই। তাছাড়া এই মুহুর্তে ওদের কাছে একটাও আগ্নেয়াস্ত্র নেই। একটা পিস্তল থাকলেও সিলিন্ডারগুলো ব্যবহার করা যেত। এখন সেটাও নেই।
চিকিৎসা শেষে ওরা কোথায় এসেছে সেটা দেখার অবসর পেল। পুরো ঘরটা দেখে বুঝলো, ওরা কোন শপে এসে ঢুকেছে। বিভিন্ন ধরনের লোহার পাইপ, গ্যাস সিলিন্ডারসহ আরও অনেক এক্সেসরিজ রয়েছে। তবে সবকিছুই ধুলো আর মাকড়সার জালে ছেয়ে আছে। ধুলোগুলো ওদের নাকে মুখে গিয়ে রীতিমতো কাঁশছে ওরা। এখানে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হবে না। সরে পড়তে হবে। কিন্তু কোথায় যাবে? চারিদিক থেকে হাজারে হাজারে দানব ঘিরে রেখেছে। এখান থেকে বেরোনো ওদের পক্ষে অসম্ভব। বেরোতে গেলেই পড়বে দানবদের হাতে। একটা দু’টো কিংবা এক-দেড়শো নয়, হাজার হাজার। সময়ের সাথে সাথে সেটা শুধু বাড়ছেই। তাছাড়া এই মুহুর্তে ওদের কাছে একটাও আগ্নেয়াস্ত্র নেই। একটা পিস্তল থাকলেও সিলিন্ডারগুলো ব্যবহার করা যেত। এখন সেটাও নেই।
দানবগুলো কাচের দরজাটার উপরে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে চলছে। এতগুলো দানবের ধাক্কা আর কতক্ষণই বা সহ্য করবে পুরোনো কাচের দরজাটা? লোহার গ্রীলটাও তেমন মজবুত নয়। বলতে গেলে ওটা ওই কাচের দরজাটার থেকেও দুর্বল। কয়েকটা ধাক্কা খেলেই ভেঙে যাবে।
তাহলে এখন ওরা কী করবে? কোথায় যাবে? এতকিছু করেও শেষপর্যন্ত কি মৃত্যুকেই বরণ করতে হবে ওদের?
চলবে…..
চলবে…..
No comments