দ্যা ভ্যাম্পার কিং । পর্ব -৬



ইওবার্ড রাজ দরবারের উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলল ,
‘পৃথিবীতে আমাদের সৈন্য দলের প্রথম বাঁধা হবে আলো।
ভ্যাম্পায়াররা আলো সহ্য করতে পারে না। সুতরাং আমাদের রাতে হামলা করতে হবে।’
রাজ দরবারে উপস্থিত এক সৈন্য বলে উঠল, ‘
মহামান্য বাদশা আপনি এবং আপনার পরিবারের সবার উপর আলোর প্রভাব পড়ে না তাই না?
আমি লোক মুখে শুনেছিলাম চার্লসের পিতা নাকি ভ্যাম্পায়ার এবং মানব ছিলেন।’
“হ্যাঁ, আমার পরিবারের কারো উপর আলোর কোনো প্রভাব নেই।
কারণ আমাদের পিতামহ অর্ধ মানব এবং অর্ধ ভ্যাম্পায়ার ছিলেন।
কথিত আছে তিনি পৃথিবী থেকেই ভ্যাম্পায়ার জগতে আসেন এবং
তৎকালীন বাদশা তাকে ভ্যাম্পায়ারে পরিণত করেন।
পরবর্তীতে তিনিই ভ্যাম্পায়ার জগতে রাজা হন।’’
রাজ দরবারের একজন হুট করে বলে বসলেন, ‘
তার মানে আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজার ভিন্ন দেশি।’
ইওবার্ড সেই ভ্যাম্পায়ারের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘ভুলে যেও না একদা
এই ভ্যাম্পায়ার জগত ব্ল্যাক ভ্যাম্পায়াররা পরিচালনা করত। তারা ছিল সংখ্যা লঘু।
তবুও তারা তোমাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। ভুলে যেও না আমাদের পিতামহই তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন।
ব্ল্যাক ভ্যাম্পায়ারদের নিবংশ করে তিনি তোমাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেন। তোমারই তাকে রাজা
করেছিলে, তোমারই রাজতন্ত্র চালু করাও। এক মুখে দু’নীতি মানায় না।’
রাজ সভা পুরো নীরব। ইওবার্ড আবারও বলে উঠল, ‘ অতীত ভুলা মহাপাপের সমতুল্য।’
.
.
ইভান চুপচাপ বসে আছে। নীলান্তিকা নিজের ফোনের ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভ্যাম্পায়ার নিয়ে
অনেক পড়াশুনা করে নিলো । নীলান্তিকা ইভানকে প্রশ্ন করল,
‘ভ্যাম্পায়ারদের প্রধান দুর্বলতাই হলো আলো। এরপর হলো রুপোর বুলেট।
কিন্তু তোমার উপর তো আলোর কোনো প্রভাবই দেখছি না।’
“আমার দাদা ছিলেন মানব। তাঁকে ভ্যাম্পায়ার করা হয়।
তিনি পরবর্তী ভ্যাম্পায়ার জগতের রাজা হন। আমার দাদা যেহেতু অর্ধমানব এবং
অর্ধভ্যাম্পায়ার সেহেতু আমাদের পুরো পরিবারের কারো উপরই আলোর প্রভাব পড়ে না।
তবে ভ্যাম্পায়ার জগতের বাকিদের উপর পড়ে।’’
আচমকা ইভান দৌড়ে নীলান্তিকার সামনে চলে এলো।
চোখের পলকে ইভানের গালে একটা ঘুষি পড়ল। ইভান ছিটকে গিয়ে দূরে পড়ল।
নীলান্তিকা সামনে তাকিয়ে দেখল প্রায় ইভানের মতো দেখতে আরেকটি ভ্যাম্পায়ার।
নিশ্চয়ই ইভানের ভাই।
নীলান্তিকার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলো ইভানের ভাই। রক্ত চুষতে লাগল সে।
ইভান তেড়ে এসে তার ভাইকে ধাক্কা মারল।
এতে সে ছিটকে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ল।
.
.
ইভানের ভাইয়ের জ্ঞান ফিরতেই সে লক্ষ করল ইভান সে-ই মেয়েটির পাশে বসে আছে,
যে মেয়েটির উপর কিছুক্ষণ আগে সে আক্রমণ করেছিল।
ইভান তার ভাই ইহক এর জ্ঞান ফিরতে দেখে দ্রুত পায়ে তার কাছে গেল।
“ভাই, মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি। তার কোনো ক্ষতি করিস না।’’
ইহক আলতো হেসে বলল, ‘মেয়েটির ক্ষতি করা তো দূর মেয়েটির দিকে আমি নজরই দিব না।
তোর ধাক্কাই বলে দিয়েছে মেয়েটিকে এক চুল পরিমাণ আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি আস্ত থাকব না।
’ ইভান ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাসল।
ইহক নীলান্তিকার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। বিড় বিড় করে সে বলল,
‘ছিমসাম দেহ, গায়ের বর্ণ শ্যামলা, লম্বা চুল। সুন্দরী বলা চলে!’
ইভান ভাইয়ের কাঁধে চাপড় মেরে বলল, ‘এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিস কেন?’
“তোর বড় ভাই আমি। ছোট ভাইয়ের বউ নির্ধারণ করার অধিকার রাখি।’’
“হয়েছে হয়েছে।’’
ইহক নীলান্তিকার পাশে বসল, ইভানকে সে বলল, ‘আমার কামড় থেকে সে রক্ষা পাবে না।
তুই শুধু মেয়েটির রক্ষ রক্ষণ বন্ধ করেছিস। বাঁচবে না সে, আমার ভ্যাম্পায়ার দাঁতের কামড়।‘
“হ্যাঁ, দেখেছি। নীলান্তিকার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কী করা যায়?’’
“ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলি?’’
“আমি তো মানবকে ভ্যাম্পায়ার বানাতে জানি না।’’
ইহক হেসে বলল, ‘আমি অনুমতি চেয়েছি।’
“তার মানে তুই মানবকে ভ্যাম্পায়ার বানানে জানিস?’’
ইহক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। ইভান প্রশ্ন করল, ‘কিভাবে জানিস।’
“বাবা বেশির ভাগ সময়ই আমার পাশে বসে ভ্যাম্পায়ার ডাইরী লিখতেন।
ভ্যাম্পায়ার ডাইরীর চার ভাগের তিন ভাগ জ্ঞান আমার জানা।’’
“বাঁচানোর জন্যে যা ইচ্ছে কর। প্রয়োজনে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেল।’’
ইহক একটা চুরি দিয়ে নিজের হাত কাটল। তার কাটা হাত দিয়ে পড়া রক্ত একটি পাত্রে সে সংগ্রহ করল ।
ঘাড়ের ছিদ্রে কয়েক ফোটা রক্ত সে দিলো। এরপর দু’ঠোঁট ফাঁক করে পাত্রের সব রক্ত নীলান্তিকাকে খাওয়িয়ে দিলো।
ইহক ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিছুক্ষণের ভেতর সে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে।’
.
.
চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। নীলান্তিকা ভ্যাম্পায়ার রূপ নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসল। নিজের এমন অবস্থা দেখে সে কান্না করতে লাগল। ইভান গিয়ে তাকে সবটা বোঝাতে লাগল যে তাকে বাঁচাতেই বাধ্য হয়ে এমন করতে হলো।
.
.
গুহা পেরিয়ে ইওবার্ড তার সৈন্য দল নিয়ে পা রাখল পৃথিবীতে।
“আজ রাতের মধ্যেই এই দেশের সকল মানুষকে ভ্যাম্পায়ার বানাতে হবে।’’
ইওবার্ডের নির্দেশে সকল ভ্যাম্পায়ার শহরের দিকে এগুতে লাগল। মানবকে ভ্যাম্পায়ার বানানোর কৌশল ইওবার্ড তাদের শিখিয়ে দিয়েছে।
.
.
“নীল, কী হলো?’’
অনিশার ডাকে নীল পিছন ফিরে তাকালো, সে বলল, ‘আসছে মহা বিপদ। আজকের রাত হবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাত। ’

চলবে…
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url